আঁচ … : তৃপ্তি সান্ত্রা
বসন্ত শেষ হচ্ছে। গরম। তবু হাফহাতা জ্যাকেট পরে আছি উলের। পিঠের ডান দিক শিরদাঁড়ার পাশে ব্যথা। চুঁইয়ে চুঁইয়ে সে নওল কিশোর লাং-এ চলে যাবে নাতো!
বসন্তের কোকিল কেশে কেশে রক্ত তুলবে, সে কেমন বসন্ত! এসব বলে লাভ নেই, এ পোড়া দেশে বসন্ত এমনই। দেবদাস থেকে সুকান্ত, নীতা থেকে তুলু… বুকের দোষ, ক্ষয় রোগ, থাইসিস, রাজরোগ, যক্ষা, টিবি… দূরে থাকো। ছোঁয়া বাঁচিয়ে। ছায়া বাঁচিয়ে। কলেরা, প্লেগ, ম্যালেরিয়া—গাঁয়ের পর গাঁ উজাড়। ছোঁয়াচে এসব রোগ নিয়ে ভয়ভীতি ছিল পুরনো পৃথিবীর। কে জানতো পঞ্চমুখী ওলের মতো দেখতে এক মায়াবিনী, ‘যাকে পাবি তাকে ছো’—মন্ত্রে কাঁপিয়ে দেবে টেকনোলজির ভিত, তার অহংকারের গথিক দেউল!
‘কোভিড ১৯’, করোনা অতিমারী রোধে লক ডাউনের নানা রকম স্তর পেরিয়ে এলাম। করোনা সঙ্কটের স্বরূপ বুঝতে কেন্দ্রিয় সরকার অহেতুক দেরি করছে। আমরাও নড়ে বসেছি মার্চের শেষের দিকে। চৈত্র মল মাস। ফাল্গুনে তাই বিয়ের ধুম ছিল। দোল উৎসব ছিল। করোনার খবরও ছিল টুকটাক। চীনে কী এক অসুখ হচ্ছে, লোকেশ্বরী চলে এসেছে। ইটালি থেকে ঝুলন চলে এলো ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। বসন্ত কেশে কেশে করোনার কথা জানান দেবার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আমাদের কি শুধু করোনা! কতরকম ভাইরাস তৈরি হচ্ছে আমাদের নাই করে দেবার জন্য। শেষ করে দেবার জন্য।
কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী সরকার, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ভয়ঙ্করভাবে কুঠারাঘাত করছে ভারতের মহান সংবিধানের ওপর। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম শুরু হল ধর্মের ভিত্তিতে দেশের আইন প্রণয়ন। লাগু করল সিএএ। ১লা এপ্রিল থেকে শুরু হবে এনপিআর কার্যকরি হওয়ার কেন্দ্রিয় প্রয়াস। সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে। অখণ্ড ভারতের ভূমিপুত্রদের আইনের জালে ফাঁসিয়ে, দাস শ্রমিক বানাতে চাইছে আমাদের দেশের সরকার। জান কবুল করে লড়ছে শাহীনবাগ, পার্কসার্কাস। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বসেছেন মূলতঃ মুসলিম মেয়েরা।
সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে শহরে, মফস্বলে। ৩ ফেব্রুয়ারি, আমাদের শহরেও যে মিছিল হল তা অভূতপূর্ব। আসলে দীর্ঘদিন ধরে আধার, ভোটার, প্যানকার্ড, রেশন কার্ড—সব নিয়ে তুমুল অনিশ্চয়তায় রয়েছেন মানুষজন। রাস্তায় বেরোও, ওরে বাবা, সবাই এক একটা জ্বলন্ত ফার্নেস। সরকারি ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না কেউ। ‘কাহজ আমরা দেখাব না’—সেলেবদের বিজ্ঞাপিত মুখের চেয়েও গনগনে রোদে, খিস্তির বন্যার মাঝে দাঁড়িয়ে রিক্সাওয়ালা খোকার বাণী বেশি ইন্ “- ক্যানে। দ্যাখাব ক্যানে। সব আছে।
– উই ভুটার। আদধার। কিন্তুক দিখাব ক্যানে। দিখাবো না।”
এ সব উত্তেজনার মাঝে করোনার বিপদ নিয়ে আগাম ভাবিনি। ১লা এপ্রিল। ১লা এপ্রিল। সরকারী ষড়যন্ত্র যেন কিছুতেই মেনে না নেয় সাধারণ মানূষ। আমরা প্রাণপন প্রস্তুত প্রতিরোধের জন্য।
এর মাঝে করোনা চলে এলো। টানা ১০১ দিন আন্দোলন চালিয়ে (১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯-২৪ মার্চ, ২০২০) শাহীনবাগকে থামতে হল। পার্কসার্কাস নিরাপদ দূরত্বে বসে সাতজন করে আন্দোলন চালাবার কথা ভেবেছিলেন। জানি না সেটা কী পর্যায়ে আছে।
মৃত্যুভয় বড় ভয়। একমাত্র লক-ডাউনই যেখানে দাওয়াই, সেখানে ঘরে না থেকে উপায় নেই। তো সিএএ… ইত্যাদি নিয়ে যে আন্দোলন, কোথায় যেতে পারে! নাকী নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে! কে নিশ্চিহ্ন হবে, আন্দোলন নাকী মানুষ!
মানুষ না থাকলে আর আন্দোলন কীভাবে হবে। আর এই করোনা সময়ে দেখি, মানুষকে নিশ্চিহ্ন করার চূড়ান্ত আয়োজন!
সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর কথা বলা হচ্ছে করোনা থেকে বাঁচতে লক-ডাউন কালে। সচেতন অনেকে এই শব্দবন্ধ নিয়ে আপত্তি করেছেন, বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব নয়, রাখতে হবে ফিজিক্যাল দূরত্ব।
কিন্তু আসল সত্যি হল, সামাজিকভাবে আমরা সব সময়ই এই খেটে খাওয়া মানুষ থেকে বহু দূরে। আমরা কি তাদের প্রতিবেশী মনে করি? একই ভূখণ্ডের, একই সমাজের মানুষ বলে মনে করি? সোশ্যাল ডিসট্যান্সের কথা কর্পোরেট ভারতবর্ষ খুউব ভেবেচিন্তেই বলে।
দুম্ করে লক ডাউন হয়ে গেলে, তাঁদের তিনশো মাইল পায়ে হেঁটে ফিরতে হতে পারে; না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, পায়ে ফোস্কা ফেলে কবে থেকে, কত বছর ধরে তাঁরা হাঁটছেন। কিন্তু শারিরীক দূরত্ব তারা রাখবেন কী ভাবে? তারা কোথায় কীভাবে থাকেন, জানি আমরা?
বাড়িতে তাদের শোওয়ার ঘর, খাওয়ার ঘর আলাদা? এরা সুস্থ স্বাভাবিক যাপনের কথা ভাবতে পারেন? আছে সেই পরিকাঠামো? আর্থিক অসাম্যের খাঁড়ার নীচে দাঁড়িয়ে তারা জিডিপির হার বাড়ায়। ভারতের মোট সম্পদের ৭৩ শতাংশ রয়েছে মাত্র এক শতাংশ মানুষের হাতে। তারা এই সম্পদ উৎপাদনকারী দাস মাত্র। উৎপাদিত সম্পদ কতখানি সুষমভাবে মানুষের মধ্যে বন্টন করা হল, এটা আর রাষ্ট্রের ভাবনার কেন্দ্র নয়। রাষ্ট্র এদের ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত। লক-ডাউন পর্ব হচ্ছে ঝেড়ে ফেলার সুবর্ণ সময়।
হাতিয়ার পুলিশ প্রশাসন। হাতিয়ার ঘরবন্দি জীবন। উপভোগকারী বিত্তবান মানুষ। উচ্চবিত্ত সমাজ। কেন ঘর থেকে বেরিয়েছিল। কেন মাস্ক নেই। কেন হাত ধুস না। খাবার চাস। ঘরে ফিরতে চাস। কেন লক-ডাউন মানিস না। তোদের জন্য আমরা মরব নাকী? কি নাম?
করোনার চেয়েও বড় ভাইরাস ‘অপর’। সাম্প্রদায়িক হিন্দুর ইসলামোফোবিয়া অনেক বড় ভাইরাস। শুধু সংখ্যালঘু নন, তাবৎ দলিত বহুজন শ্রমজীবী মানুষও বড় ভাইরাস। এইরকম ভাইরাস চিহ্নিত সারা বিশ্বজুড়ে। করোনার নামকরণ ‘চাইনীজ ভাইরাস’ করেছেন, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট। আমেরিকায় ভাইরাস ছড়াবার কারণ নাকী এশীয়—বিশেষতঃ চিনা ও হিস্পানিক মানুষেরা!
চিনকে দায়ী করে আমাদের কেউ কেউ কী উত্তেজিত। যেমন উত্তেজিত করোনা ছড়ানোর সমস্ত দায় তাবলীগ জামাতের উপর চাপিয়ে। ১১-১৩ মার্চ জামাতি সম্মেলনের আগে পিছে হয়েছে ৯-১০ মার্চ হোলি, ১০-১২ মার্চ পাঞ্জাবের শিখদের পবিত্র উৎসব, ১৪ মার্চ গোমূত্র পার্টির হিন্দু মহাসভার জমায়েত, ১৭ মার্চ তিরুপতি দর্শনে যান ৪৯,২২৯ জন ভক্ত। সংসদের অধিবেশনও হয়েছে এর মধ্যে। সরকার থেকে শুরু করে সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত ধর্মপ্রতিষ্ঠান করোনার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি, গাফিলতি করেছেন। কিন্তু সব দায় শুধু ওই নন্দ ঘোষদের। বিশেষ সম্প্রদায়ের।
দিনে দিনে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে। তারা আগে অপুষ্টিতে, ডেঙ্গিতে, কালাজ্বরে মারা যেতো; করোনায় মারা যাবে তাতে আর আশ্চর্য কী! কাল কী করে মারা যাব, তা নিয়ে ভেবে লাভ আছে! আজ যে ক্ষিধার জ্বালায় মরি!
এতো পিলপিল মানুষ। এতো পেট। এতো ক্ষুধা। এদের শ্রমের ওপ্র দাঁড়িয়ে সভ্যতার ইমারত। করোনায় না মরুক এরা এমনিই মরবে। কর্মহীন শূণ্য হাত। আর্থিক অসাম্য। ন্যায়, নিরাপত্তার অসাম্য। কেমন হবে পরবর্তী পৃথিবীর চেহারা! জীবিকা পালটে যাচ্ছে মানুষের। কালকের শ্রমিক আজকের ফল বিক্রেতা। বিভিন্ন পেশার কাজ হারিয়ে, চাকরির স্থায়িত্ব হারিয়ে সমাজের ভারসাম্যে যে পরিবর্তন আসছে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
আর্থিক বছরে আসেসমেন্ট ইয়ার মার্চে আটকে নেই। ই.এম.আই টাকা দেবার সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা পিছিয়েছে। অনলাইনে স্কুল কলেজে পাঠ শুরু হয়েছে। এনপিআর শুরু করা যায়নি ১লা এপ্রিল থেকে। পপুলেশন রেজিস্টারে যাদের বাদ দেবার আয়োজন, সেই সংখ্যালঘু দলিত বহুজনেরা করোনা যুদ্ধে, শাসকদলের স্বৈরাচারে, দাগিয়ে দেবার রাজনীতিতে যথেষ্ট কোণঠাসা। একশো তিরিশ কোটির মধ্যে একশো দশ কোটি মানুষই এই ভারত। টিভি, মিডিয়া, খবরের কাজ=গজ তাদের নিয়ে কথা বলে না। গরিবের জন্য কোনও সমাধান নেই। করোনা সময়ে কর্পোরেট ইন্ডিয়া আরো বিচ্ছিন্ন মানুষের থেকে। তাদের অনাহারে মৃত্যুর ভয় নেই। করোনা প্রতিরোধে যা যা করণীয় করতে পারছে। পারে। ঘরবন্দী হয়ে বোর না হবার আরও অনেক উপকরণ।
নিরাপদ দূরত্বে থেকে বিশ্বাস হতে মন চায় না পৃথিবীর গভীর গভীর অসুখ এখন। বিকেলে শুধু পাখির ডাক। কোকিল। দোয়েল। টুনটুনি। শালিখ। কাক তো আছেই। বুলবুলিও ফাঁকতালে আসে। আমগাছের মাথা, দো-তলা ছাড়িয়ে তিনতলা ছাদে। নিচু ডালের আমগুলোর ছাদে লুটিয়ে পড়ার দশা। বাঁশের ঠেকা দিতে হবে। সুপুরি গাছ টুপটাপ ফল ঝরায়। মাধবীলতা এমন গা ঘেঁষাঘেঁষি আড্ডা দেয়, মনে পড়ে পুরোনো বাড়ির উঠোনের কথা। ১৮ মার্চ সম্ভবতঃ শেষ বেরিয়েছিলাম। আলমারি ভরা কাপড় কী যে অপ্রয়োজনীয়! কত সামান্য আয়োজনে জীবন চলে যাচ্ছে। সকালবেলা, দুপুরবেলা, বিকেল-রাত্রি দেখা—ঘরে ঘরে বোকা বাক্স আসার আগে কতভাবে যে দেখতে পারতাম পৃথিবীকে। শব্দ আর গন্ধ দিয়ে চিনতে পারতাম চরাচর। ভালোবাসার মানুষদের।
শৈশব হারিয়ে ফেলা শিশুরা। নিরাপদ বলয়ে থাকা শিশুরা হয়ত এটুকু পাচ্ছি করোনার দিনগুলিতে।
এর মাঝে লেখা হয় না। পঠনপর্ব আছে। কিন্তু দেখছি অত্যাধুনিক পরীক্ষামূলক কবিতা, গদ্য কোনওটাই নিতে পারছি না। দু’একটা বই পড়ে তবু পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখলাম বইয়ের পাতাতেই।
দেবাশিস প্লেগের পিডিএফ পাঠিয়েছে। যন্ত্রে বই পড়তে ভালো লাগে না। ১৮ এপ্রিল- ৬,২৩১টা ইঁদূর মারা গেল। এপ্রিল ৩০—প্রথম মৃত্যু। মৃত – মিশেল। আর পড়িনি।
করোনা সময়ে ঘরে বসে ফল মাছ মাংস অঢেল পাবার উন্মত্ত আনন্দ শুনছি আত্মীয়-পরিজনের। কেন জানি সে আনন্দ হয় না, হলেও দোষের ছিল না। যে সামাজিক পরিকাঠামো আমাদের বড় করে—অনেক মানুষের না পাওয়া, অপমান, লাঞ্ছনাকে পূর্বজন্মের কর্মফল এবং নিজেদের যাবতীয় পাওয়াকে মঙ্গলময় ঈশ্বরের কৃপা বলেই মনে করে, তা এই স্বার্থপরতাই শেখায়। এসব মানতে ভালোবাসিনি। প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু ধর্মগ্রন্থ, ব্রাহ্মণ্যবাদ, জাতিভেদ প্রথা কী সুক্ষ্মভাবে যে কাজ করে সেই দর্শন বা রাজনীতি খুব ভালোভাবে বুঝিনি।
অস্থির সময়ে খুব যে লেখা হয় তা নয়। এই সময়ে বরং কিছু অনুবাদ করা যায়। কানচা ইলাইয়ার ‘হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু’ অনুবাদ শুরু করেছিলাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেই কাজটাই সত্যের মুখ চিনিয়ে দিচ্ছে। সাতটি অধ্যায়ে শৈশব, পরিবার-জীবন, বাজার সম্পর্ক, ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্ক, দেবদেবী মৃত্যু এবং হিন্দুত্ব নিয়ে আলোচনায় লেখক, দলিত বহুজন ও হিন্দুদের আর্থসামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যকে নিরীক্ষণ করেছেন।
দলিত বহুজন জাতির উৎপাদন-ভিত্তিক সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে অন্য পার্টির দায় ছিল না, কম্যুনিস্টদেরও নিপীড়নকারী এবং নিপীড়িতের সাংস্কৃতিক পার্থক্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। উৎপাদন-ভিত্তিক সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে তাঁরা ভয় পেতেন। ক্ষমতা উচ্চবর্ণের হাতে। তারা নিজেদের মতো ব্যবহার করেছেন। করেন। ভুবনায়নের মোড়কে মুক্ত বাজার, কর্পোরেট শক্তির রমরমা মাটি কেড়ে নিয়ে শহরের ফুটপাথবাসী করেছে যে জনসম্পদকে – তাদের রাজনীতির খেলাটা খুব স্পষ্ট বোঝা যায় এখানে।
কানচা বলেছেন… ‘ব্রাহ্মণ্য, নবক্ষত্রিয়, বানিয়া বুদ্ধিজীবিদের কাছে আমার অনুরোধ : প্রায় তিনহাজার বছর ধরে আপনারা শুধু শিখেছেন কীভাবে শিক্ষা দিতে হয় অন্যদের—দলিত বহুজনদের। এখন আমাদের নিজেদের স্বার্থে এবং এই মহানদেশের স্বার্থে, আপনাদের শোনার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পড়তে হবে। আমাদের কথা পড়তে হবে। যে মানূষ নতুন প্রশ্ন শুনতে চায় না, নতুন উত্তর জানতে চায় না, তার পতন অনিবার্য। অনিবার্য তাঁদের ধ্বংস।” যে ১১০ কোটি মানুষ সম্পর্কে আমরা উদাসীন শতাব্দী প্রাচীন লড়াইয়ে টিঁকে থাকার কঠিন প্রাণশক্তি নিয়েই তাঁরা ঘুরে দাঁড়াবেন। অনিবার্য ধ্বংস এড়াতে পাল্টাতে হবে আমাদের ধ্যানধারণা।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেই অন্যরকম ভাবছেন। দাঁড়াচ্ছেন লড়াকু দলিত বহুজন, সংখ্যালঘুদের পাশে। শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ, অসহিষ্ণু হিন্দুত্ববাদ, মৌলবাদ—হিন্দু, মুশলমান, ক্রিশ্চান… শতাব্দীর তৃতীয়, চতুর্থ দশকে শব্দগুলোর কী মানে পাল্টে যাবে না?
‘কোল-আঁচল, খোল, আঁচল নিয়ে তিন টুকরো ভারত যেন একটা পাট শাড়ি।
এসো জড়াই / জড়িয়ে, গুছিয়ে পরি’…
মাস্টারমশাই প্রভাস বলেছিলেন— ‘শব্দের মানে পালটে যায় জানেন তো! এই যে নতুন প্রজন্ম—ভুবনায়নে নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে—হিন্দু, মুসলমান, জাতি-ধর্ম—এই শব্দগুলো নিয়ে, এতো যে যুদ্ধ মহড়া, আস্ফালন, হানাহানি—ভবিষ্যতে এরা এই জাতি পরিচিতি অস্বীকার করবে—কোনও মানেই থাকবে না শব্দগুলোর।”
বর্ষীয়সী পৃথিবীর এসব কী আকাশকুসুম কল্পনা! থাক এই কল্পনাটুকু। আমি থাকব না। আমরা থাকব না। হয়ত থেকে যেতে হবে অনন্ত লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে। অনুবাদ সত্যিই রাজনীতি। যা প্রতিহত করে। বৈষম্যমূলক পৃথিবীতে এই প্রতিরোধ, লড়াইয়ের আঁচ বাঁচিয়ে রাখি… করোনার দিনগুলিতে।
Posted in: April 2020, Cover Story
Valo laglo….apnar lekhar ‘আঁচ’ .