তন্ময় ধর-এর কবিতা

শিলালিপি ১

সে বাসভূমিতে বড্ড অনভ্যাসের দ্বিধা এঁকে রাখো তুমি। একটি শিশুগাছের উচ্চারণ থেকে আমাদের রাত্রি ভিজতে থাকে হংসধ্বনির অস্থিরতায়। পাথরের সব ধর্ম থেকে জেগে থাকাটুকু কুড়িয়ে নিয়েছো তুমি। এই হাওয়ার দাগ ফিরে আসতে চাইছে মৃত্যু কিম্বা সুগন্ধি সেজে।
আমাদের জীবাশ্ম ধর্ম সাজানো আছে। তোমার চোখ থেকে ভেঙে পড়া কিম্বা হারিয়ে ফেলা একটা খেলায় জন্মান্তরের বয়স বাড়ছে হু-হু করে। মাংস, নখ এবং জলরঙে পৃথিবীর প্রথম বীজগণিত থেকে রক্তপাতের হিসেবে ভুল হচ্ছে। শুধু আলোর অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে পেরিস্টলসিস।
পশু ও পাখির সমস্ত কান্না থেকে আমি তোমার মৃত দেহখন্ড বয়ে চলেছি বহুকাল। এই পাগলী নদীর নাম হয়ত দেবগর্ভা ছিল। অন্যান্য মৃত্যুরসে আস্তে আস্তে ভিজতে থাকেন ভৈরব ক্ষীরখন্ডক। শীতল ঠোঁট থেকে উড়ে যায় পাখির ছায়া।

শিলালিপি ২

যৌনতার ভিতর চুপ করে আছে একটা অ্যাকোয়ারিয়াম। একটি মাছের ভিতরে দু’টি মাছ ক্ষুধাহীনতার বিশাল বুদবুদ তৈরি করে দিচ্ছে আমাদের নিওলিথ অন্ধকারে। জল সামান্য কাঁপে নি। বাণমুখ এক স্মৃতিহীনতা আস্তে আস্তে সরিয়ে নিচ্ছে মাছের কঙ্কাল।
শীতল অরন্ধনের দ্বিধা থেকে আমরা শিখছি বিকল্প আহারের কৌশল, ফেনা ও অভিনয়। অতল থেকে তুলে আনা এক বায়ুনিরুদ্ধ মাছের খাবার ছড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের বিরতিতে। আমাদের অস্থিরতা থেকে স্থিরত্ব তুলে নিয়ে যাচ্ছে শাদা মৎস্যভুক শঙ্খচিল। কাঁচের দেওয়াল থেকে খুব আস্তে গড়িয়ে পড়ছে শব্দ।
দৃশ্যের নাগাল থেকে অনেকটা দূরে তখন আমাদের প্রেম বদলে ফেলছে পিপাসা। কথার ভেতরে ধোঁয়ার গন্ধে ভরা অন্নের জন্ম হচ্ছে। তীব্র উত্তাপে অভ্যস্ত হচ্ছো তুমি। আমি অনভ্যস্ত হচ্ছি তীব্র ক্ষুধার চঞ্চলতায়।

শিলালিপি ৩

জলের বিম্ব ভেঙে তোমাকে এখানে এনেছি আমি। আর জলের তীব্র ঢেউয়ে অন্ধ রূপ ও প্রতিরূপ ফেলে গিয়েছে মায়া-শুশুক। আমার জলছবির ওপর নখ ঘষতে ঘষতে তুমি বলে চলেছো আগুনের উপকথা। শীতল মাংসের হাড় থেকে আমার ব্যাধজন্ম সাড়া দিচ্ছে তোমার অমরত্বে।
আগুনের কারুকাজের ভেতর থেকে তুলে আনা একটা কামড় রূপান্তরিত হচ্ছে অন্য এক কামড়ে। কামড় আটকে থাকছে না আমাদের দেহবোধে কিম্বা জন্মহীন নক্ষত্রস্তবকের আলোয়। তুমি আর আমি এত দীর্ঘকাল খুঁড়ে খুঁড়ে দেখেছি, তার আশেপাশে কোন প্রাগিতিহাস নেই।
আগুন সামান্য উসকে দিই আমি। সতীদেহখন্ডের তীব্র কমলা রঙের নীচ থেকে বোবা এক খাদ্যপিন্ড বের করে আনেন ভীরু ঈশ্বর। তোমার হাড় থেকে অগণন পাখির চিৎকার শুরু হয়। পৃথিবীর হিমমন্ডলে তখন শস্যরাত্রি নামছে। পুব আকাশের বাউলরঙা আলোয় তখন ভাসছে মৃগশিরা

শিলালিপি ৪

নিরীশ্বর এক মুখ দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের দেহদৃশ্যের ওপাশে। তার ভ্রূমধ্যে লালচে রঙ ছোঁয়ানোর চেষ্টা করলেন ভ্যান গঘ। আমাদের ঘুম থেকে সাড়া দিল প্রাণের প্রতীক এক শূকপাখি। খিদের ভেতরের ঘরগুলো আমরা সাজিয়ে নিলাম।
বোবা কান্না শুনে মাংস এসে জড়ো হয় আমাদের মিলনদৃশ্যে। দৃশ্য সরতে থাকে স্মৃতিহীনতার দিকে। স্মৃতিহীন বর্শাফলকের শব্দ আস্তে আস্তে ফুটো করে দেয় অহঙ্কার। প্রবেশ্য শিলাস্তর থেকে জল ঢুকতে থাকে বর্ণিকাভঙ্গে।
এখান থেকে শিলালিপি সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পথ খুঁজতে গিয়ে তুমি আর আমি এক অনন্ত ভুলভুলাইয়ার ভেতর ঢুকে পড়ি।

Facebook Comments

Posted in: April 2020, Poetry

Tagged as: , ,

Leave a Reply