কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে হোয়াইট কলার শ্রমিকদের বর্তমান ও ভবিষ‍্যত : তন্ময় দাস

শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্ববানে রবিবারের প্রতীকী লকডাউন ও বিকেলের অভিনন্দনের কাঁসর, থালা এমনকি গ‍্যাস সিলিন্ডার বাদন উৎসব শেষে যখন সান্ধ‍্য খবরে ঘোষণা হয় পরের দিন বিকেল ৫টা থেকে আগামী ২১ দিন প্রথম দফার পূর্ণ লকডাউন চলবে আই.টি কর্মচারী প্রকাশ (নাম পরিবর্তিত) ও তার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয়, পরের দিন মানে সোমবার সকাল সকালই মজুত করার বন্দোবস্তে লেগে যেতে হবে।

পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে ঠিক বুঝতে না পেরে অন্তত মাস দুয়েকের ব‍্যবস্থা রাখতে হবে এই হিসাবে সব লিস্ট করে নিল প্রকাশ ও তার স্ত্রী। লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথে প্রকাশের কর্মক্ষেত্র থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আপাতত বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ হবে। মানে কেতাবি ‘ওয়ার্ক ফর্ম হোম’ এবং সেটা সোমবার থেকেই। কিন্তু মজুতের ব‍্যবস্থাটা আগে করতে হবে, ফলে রিপোর্টিং ম‍্যানেজার কে ফোন করে জানিয়ে দিল যে সোমবার প্রকাশ ও তার টিম মেটরা কাজ নাও করতে পারে।

অন‍্য ভারতবর্ষে তখন খোপরীর ইলেক্ট্রিক কানেক্সন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বা জলের লাইন, জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কাজ বন্ধ, খোপরি ছেড়ে দিতে হবে। যারা ভীষণ ভাগ‍্যবান তারা সপ্তাহ দুয়েকের টাকা পেলেও বাকিরা নয়। মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন পকেটে টাকা নেই। কয়েক ঘন্টা বাদ থেকে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। কারুর বাড়ি বিহারে, কাজ করতো নয়ডায়, কারুর ঘর মুর্শিদাবাদের প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে, কাজ করে মুম্বাইয়ে। কেউ ফিটার, কেউ সোনার কারিগর, কেউ রেস্টুরেন্টের কুক। ভবিষ‍্যতহীন হয়ে গেল এক লহমায়।

প্রকাশদের অঞ্চলের ছোটো ও বড় মুদির দোকানদাররা পাশের ওয়ার্ডের যে পাইকিরি বাজার থেকে জিনিস আনে, প্রকাশরা সেখানে আগে যাওয়া ঠিক করে, কিছুটা সস্তায় পাওয়া যাবে তাহলে। মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম দিনে হাতে টাকার অবস্থা ভালো নয়।

প্রতিতুলনাটা হাস‍্যসকর শোনালেও এটা নির্মম সত‍্য যে প্রকাশের মতন আই.টি কর্মচারীরা ডলারে বেতন পান না (অন-সাইট বা বডি শপিং এর ব‍্যতিক্রম ছাড়া) আর বেতন এবং পরিশ্রমের(অবশ‍্যই কায়িক পরিশ্রম নয়) তুল‍্যমূল‍্য বিচার যদি হয় তাহলে তাৎক্ষণিক ভাবে বেতনের পরিমাণ অন‍্যান‍্য ভারী ও বৃহৎ শিল্পের থেকে বেশি হলেও পরিস্থিতির বিচারে আদৌ কোনো ফারাক হয়না। বৃহৎ পুঁজির দাঁত ও নখে সমপরিমাণ ধার এখানেও। শুধু প্রয়োগের কিছু তফাৎ।

প্রকাশদের সম্পর্কে বলতে বা জানতে গেলে আই.টি ইন্ডাস্ট্রির বৃহৎ পরিসর সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। আই.টি কর্মচারী মানে শুধুই সফটওয়‍্যার বানানো নয়। সাপোর্ট সার্ভিস, কল-সেন্টার, ডেভলপমেন্ট, ওয়েব ডেমলপমেন্ট, ওয়েব সিকিউরিটি সার্ভিস, হোসটিং সার্ভিস, হার্ডওয়্যার টেকনলজি, টেকনলজি ট্রেনিং, পার্সোনাল ডেভলপমেন্ট ট্রেনিং যারা ‘ই-লার্নিং’ বা ‘ক্লাশরুম’ ট্রেনিং দেয় তারাও আই.টি এমপ্লয়মেন্ট-এর আওতায় আসে। এরা প্রত‍্যেকেই একে অপরের পরিপূরক।

২০১৭ তে ভারতের মোট GDP এর ৮ শতাংশ এসেছিল ইনফরমেশন টেকনলজি এবং তার সহযোগী কোম্পানি গুলোর থেকে। ইনফরমেশন টেকনোলজিতে প্রত‍্যক্ষ কর্ম সংস্থানের পরিমাণ ছিল ৪ কোটির কাছাকাছি আর আই.টি সহযোগী কোম্পানি গুলোতে কর্মরত ছিল প্রায় ১০ কোটি মানুষ।

ক্রেতা ও বিক্রেতার যে বন্ধন আমরা অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম হিসাবে ধরি তাতে কোভিড-১৯ এর পরবর্তীতে দীর্ঘ লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজির বিকাশের হার তলানিতে ঠেকবে বলে বিষেষজ্ঞদের অভিমত। ফলতঃ পুঁজির স্বাভাবিক নিয়মে সে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন‍্য উৎপাদক শ্রেণীকে আগের থেকে আরো বেশি বঞ্চিত করা শুরু করবে। বঞ্চনার প্রকৃতি, শিল্প ও তাতে সংযুক্ত কর্মীদের যোগ‍্যতার পরিপ্রক্ষিতে আলাদা হবে। আই.টি ইন্ডাস্ট্রি চাইলেও এই বৃত্তের বাইরে থাকতে পারবে না।

শ্রীমতি গীতা গোপিনাথন (ইন্টার ন‍্যাশানাল মানিটরি ফান্ড এর অর্থনৈতিক কাউন্সিলর ও রিসার্চ ডাইরেক্টর) এপ্রিল ২০২০ তে জানাচ্ছেন কোভিড-১৯ এর প্রকোপে বিশ্ব অর্থনীতি যে অভূতপূর্ব লকডাউন পরিস্থিতির মধ‍্যে দিয়ে চলছে তাতে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধি হবে ঋণাত্মক তিন (-3) শতাংশ, যা ২০০৮-২০০৯ এর অর্থনৈতিক অচলাবস্থার থেকেও মারাত্মক। এর তুলনা হতে পারে শুধুমাত্র গত শতকের ঘটে যাওয়া অতুলনীয় মন্দার সাথে (1930’s The Great Depression)। এখানে একটা জিনিস মনে রাখা অত‍্যন্ত জরুরী যে ভারতবর্ষের অর্থনীতি সেই সময় বিশ্ব অর্থনীতির সাথে এখনকার মতন সম্পৃক্ত না থেকেও প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল ।

আই.এম.এফ এর শ্রীমতি গোপীনাথনের আশঙ্কা যদি সত‍্যি হয় এবং তা হওয়ার সম্ভনাই এক্ষেত্রে বেশি কারণ অন‍্যান‍্য মন্দার তুলনায় এই মন্দা পৃথক তার মানব সম্পদ হারানোর দিক থেকে। মানব সম্পদের মৃত‍্যু বা অনুপস্থিতি মানে যেমন ক্রেতার পরিমাণ কমে যাওয়া, আবার উৎপাদকেরও সংখ‍্যা হ্রাস। ক্রেতার সংখ‍্যা কমলে উৎপাদ হ্রাস আর উৎপাদন হ্রাস হওয়া মানে উৎপাদনের সাথে যুক্ত শ্রমিকের মজুরি হ্রাস, লে অফ, কর্মহীনতা, যা বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।

ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে লকডাউনই একমাত্র সমস‍্যা নয়, নোটবন্দী পরবর্তী আভ‍্যন্তরীণ মন্দার সমস‍্যাও রয়েছে। কোভিড-১৯ এর লকডাউনের পূর্ববর্তী সময় থেকেই ভারতীয় অর্থনীতি মন্দায় ছিল। ২০১৬ এর নোট বন্দির পর থেকেই ভারতের বেকারত্ব উর্দ্ধমুখি। CMIE (center for monitoring Indian Economy) তাদের রিপোর্টে জানাচ্ছে বিশ্বব‍্যাপি কোভিড-১৯ এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার আগে ভারতের অভ‍্যন্তরে বেকারের সংখ‍্যা ছিল ৩.৭৯ কোটি, ২০১৬ এর নোটবন্দীর পরবর্তী সময়ের থেকে যা বহুগুণ বেশি। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় অর্থনীতিকে দ্বি ফলা সমস‍্যার সাথে যুঝতে হবে।

এই পরিস্তিতিতে যদি আই.টি ইন্ডাস্ট্রি এর অবস্থান দেখি তাহলে ভারতীয় আই.টি কোম্পানি গুলোর মধ‍্যে TCS ইতিমধ‍্যে জানিয়ে দিয়েছে ২০২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক এবার মন্দায় চলবে কারণ হিসাবে TCS এর সি. ই. ও. মিঃ গোপীনাথন জানিয়েছেন তাঁদের ব‍্যবসায়িক ভিত্তি মূলতঃ ট্র‍্যাভেল ও হসপিটালিটি নির্ভরশীল, এবং অধিকাংশই মার্কিন ক্রেতা। আর কোভিড-১৯ এ এখনো অবধি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ মার্কিনীরা। গত অর্থবর্ষে TCS ২৪,১৭৯ জনকে তাদের কোম্পানি ভুক্ত করলেও আপাতত নতুন করে কর্মী সংখ‍্যা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই শুধু নয়, বর্তমান কর্মীদের বেতন বৃদ্ধিও স্থগিত রাখা হয়েছে। এখনো অবধি কর্মী সংকোচনের কোনো প্রক্রিয়ার কথা ভাবা হয়নি। জুন ২০২০ তে ২য় ত্রৈমাসিক এরপর TCS আবারো তার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব‍্যাবস্থা নেবে (সূত্রঃ ইকনমিক টাইমস, এপ্রিল ১৬, ২০২০, আনন্দি চন্দ্রশেখর)।

ইনফোসিস CFO বালাকৃষ্ণন জানাচ্ছেন কোভিড-১৯ পরবর্তী আগামী এক বছর ভারতীয় আই.টি এর বৃদ্ধি থমকে থাকবে অথবা সূচক ঋণাত্মক দিকে যাবে, কারন যে দীর্ঘমেয়াদী মন্দার মধ‍্যে ভারতীয় আই.টির ক্রেতারা (মূলত আমেরিকা) ঢুকতে চলেছে তাতে তারা নতুন কোনো আই.টি বাজেট রাখবে তো নাই এমনকি কিছু কিছূ ক্ষেত্রে যে কাজ চলছে বা যেগুলি পাইপলাইনে আছে তার বাজেটও কমানোর চেষ্টা করবে। ভারতীয় আই. টি মহীরুহদের এই বার্তায় পরিস্থিতির গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়।

তবে এখনো অবধি আশার কথা কোন বৃহৎ পুঁজির আই.টি কোম্পানিই খরচ কমানোর জন‍্য তাদের কর্মী সংখ‍্যা হ্রাস করার কথা ঘোষণা করেনি, অন্তত ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত তো নয়।

কিন্তু সিঁদুরে মেঘ জমছে অন‍্য কোনে। মোটামুটি ২০২১ অর্থবর্ষের ৩য় ত্রৈমাসিক অবধি বড় পুঁজির আই.টি কোম্পানি গুলির কাছে প্রোজেক্ট পাইপলাইন আছে কিন্তু তারপর? লক্ষনীয় যে অন‍্যান‍্য অর্থবর্ষের মতোন আই.টি কোম্পানিগুলি ২য় ও ৩য় ত্রৈমাসিক এর কোনো আগাম হিসেব/পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি।

এছাড়াও আই.টি ইন্ড্রাস্টিতে একটা বিরাট (প্রায় ৮৫৫ টি Big.Jobs-এর হিসাব অনুযায়ী) অংশ জুড়ে আছে আই.টি স্টার্টআপ যা দেশী ও বিদেশি সেই সব শিল্পের কাজ করে যারা বাজেটের অভাবে বড় পুঁজির আই.টি কোম্পানির কাছে যায় না। কোভিড-১৯-এর অভিঘাতে সেই সমস্ত সার্টআপ কোম্পানির বেশির ভাগই ব‍্যয় সংকোচনের জন‍্য সরাসরি লে-অফ এর পথে হাঁটবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে প্রায় ১.৫ লক্ষ লোক নতুন করে কাজ হারাতে চলেছে, বাকিরা বেতন সংকোচনের শিকার হবে(সূত্র: INC42.COM – ১১ই এপ্রিল, NATIONAL HERALD, ৫ইএপ্রিল)। কেউ জানেনা এই পরিস্থিতি কত দিন বা মাসের জন‍্য বহাল থাকবে। অবস্থা এখন এমন নয় যে একটি কোম্পানি থেকে কাজ হারিয়ে কর্মীরা নতুন কিছু খুঁজে নেবে। এখানে উল্লেখ‍্য এই কর্মীরা সকলেই স্কিল্ড ফলতঃ তাদের বার্ষিক আয়ও তদরূপ । তাহলে নতুন করে কাজ হারানো এই ১.৫ লক্ষ মানুষ ও তাদের সাথে জুড়ে থাকা পরিবার গুলোর সামাজিক সুরক্ষার দ্বায়িত্ব না নিলে আগামী দিন গুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংযোগে তৈরী হওয়া অর্থনৈতিক শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে ক্রমাগত।

কিন্তু দায়িত্ব কে নেবে? একটি জনগণতান্ত্রিক দেশের সামাজিক সুরক্ষার দ্বায়িত্ব প্রথমতঃ ও একমাত্র সেই দেশের নির্বাচিত সরকারের। কিন্তু রোগের প্রাদুর্ভাব চলাকালীন, মড়ক ঠেকানো ছাড়া অর্থনীতিতে পুনঃ প্রাণ সঞ্চারের জন‍্য কোন আন্তরিক প্রচেষ্টার রূপরেখা সরকারী ভাবে এখনো অনুপস্থিত।

বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ পাওয়া, এই মূহুর্তে বেতন সংকোচনের আওতায় না আসা বড় পুঁজির আই..টি কোম্পানির ছায়ায় থাকা কর্মচারীরা এখনো জানে না আগামীতে কি হতে চলেছে। বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত কি এমন ভাবেই চলতে পারা যাবে নাকি অর্থ সংকট থেকে বাঁচতে কর্মীসংকোচনের পথে হাঁটবে কোম্পানি গুলো অথবা ব‍্যয়সঙ্কোচনের জন‍্য ২০০৮-এর পদ্ধতির (সমস্ত বেতন হ্রাস, বেতন বৃদ্ধি বন্ধ) পুনঃ প্রয়োগ করবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। কেন্দ্রীয় সরকার এখনো পর্যন্ত কর্পোরেট ট‍্যাক্স ছাড় দেওয়া ছাড়া আর কিছুই ঘোষণা করেনি। তার কাছে আদৌ কোনো সদর্থক পরিকল্পনা আছে কিনা তাও স্পষ্ট নয়।

আই.টি কোম্পানির কর্মচারীদের রক্ষা কবজ খোঁজা ছাড়াও সরকারের আরো একটি দায়বদ্ধতা থাকে, আই.টি ব‍্যবসার কেন্দ্রগুলিকে ঘিরে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ও স্বাধীন কর্মসংস্থান গুলোর সাথে যুক্ত পরিবার গুলোর সুরক্ষা গ্রহণ। গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে থাকা আই.টি হাব ও এস ই জেড কে কেন্দ্র করে যে বাজার গড়ে উঠেছিল তা হতে পারে সিগারেটের দোকান, খাবারের দোকান, বা হোম ডেলিভারি (জোম‍্যাটো বা উবের এরমতো প্রতিষ্ঠিত ডেলিভারি চেইনের বাইরে) তাদের কি ভাবে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাদ‍্য ও স্বাস্থ‍্য সুরক্ষা দেওয়া যায় তার কথা সরকারকেই ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার দায়বদ্ধ দুটি কারণে। প্রথমত এঁরা নিজেরাই তাদের ক্ষুদ্র উদ‍্যোগে সাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা করেছে দ্বিতীয়ত ভীষণ স্বল্প পরিমানে হলেও ক্রেতা ও বিক্রেতার অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে সচলতা বজায় রেখেছে। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে বা আগামীর ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা ‘ভারচুয়াল অফিস’ যদি আই.টি ইন্ডাস্ট্রির ক্ষত সারিয়ে তোলার ওষধি হয় তাহলে বলা বাহুল‍্য যে আই.টি হাব বা এস ই জেড গুলিতে কর্মীসংখ‍্যা কমবে ফলতঃ এই ক্ষুদ্র বিকল্প আয় এর ক্ষেত্রও সংকুচিত হবে।

তবে কোভিড-১৯ মানব সম্পদের যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে এবং এর প্রতিষেধক না আসা অবধি যেমন ক্ষতি করে যাবে, তার সাথে সাথে বিশেষতঃ আই. টি এর ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব‍্যবসার (যেমন ব‍্যাঙ্ক, ইনসিওরেন্স, বিদ‍্যুৎ ও পরিবহনের) সুরক্ষা নিয়ম মেনে, ‘সিকিওরড ওডিসি’ বা ‘ক্লায়েন্ট সাইট’ এর গতানুগতিক ব‍্যবসা পদ্ধতি মেনে চলা ছাড়া নতুন করে ভাবার সুযোগ ও করে দেবে।

স‍্যোসাল ডিসটেন্সিং বজায় রাখার জন‍্য যদি আরো বেশি করে ভিডিও কল-এর ব‍্যবহার শুরু হয়, বেতন না কেটে যদি বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ বাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক খরচ কমানো যায়, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া যদি অন-সাইট কমিয়ে বিদেশী ক্রেতার খরচ কমানো যায় এবং সর্বোপরি এই সবের মাধ‍্যমে যদি জীবন ও জীবিকার মধ‍্যে ভারসাম‍্য ফিরিয়ে আনা যায় (যা কিনা আই.টি কর্মচারীদের জন‍্য প্রায় দুঃষ্প্রাপ‍্য) তাহলে হয়তো তিন শতাংশ ঋণাত্মক বৃদ্ধির পরিস্থিতিতেও টিঁকে থাকা যাবে।

অন‍্যথায় আই.টি ইন্ডাস্ট্রির ক্রমাগত পরিবর্তিত প্রয়োজন ও প্রতি মূহুর্তে কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন বা কোম্পানি গূলোর আভ‍্যন্তরীণ ব‍্যবসায়িক মডেল নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার ফলে কোম্পানি যখন ক্ষতির মুখোমুখি হয় তাহলে কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষার জন‍্য কোনো নূন‍্যতম শ্রমিক আইন না থাকার সুযোগে যদি বৃহৎ পুঁজি তার মেড ইজি পদ্ধতিতে ব‍্যয় সংকোচন করে প্রতিযোগীতায় থাকার অভ‍্যাস, কলেবর কমিয়ে দায়বদ্ধতা থেকে হাত ধুয়ে ফেলার সহজ পদ্ধতি গ্রহণ করে তাহলে EMI ও ক্রেডিটকার্ডে জড়িয়ে থাকা আই. টি ও তার সহযোগী কোম্পানির কর্মচারী ও তার পরিবারের ভবিষ‍্যত অনিশ্চিত করে দেবে ভিন রাজ‍্যে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের মতোই। একই সাথে এই ‘হোয়াইট কলার’ শ্রমিকদের ঘিরে গড়ে ওঠা বাজারও ধাক্কা খাবে।

[লেখক – লেখক আই.টি ইন্ডাস্ট্রিতে ফ্রন্ট এন্ড ডেভলপার হিসাবে কর্মরত।]

Facebook Comments

Leave a Reply