ধারাবাহিক গদ্য : সিন্ধু সোম
পর্ব-৯
রাজস্থান ডায়েরিস-১৭
খেয়াল। তানের থেকে মনের মোড় বেশি। পলেস্তারার আলো। জল ধরে রাখা রাস্তা। আয়নায় ঝঙ্কার তোলে হাওয়েলী। ধা ধা ধিন। বেহালার আবহ। বিবাহিতা বাজারে গিয়েছে। নতুনার দিকে তাকাতে তাকাতে ছবি। মোনালিসার পাশে অন্তহীন লাল শালু। কুকুরের চোখ জ্বলজ্বল করছে। আর একটু এগোনো। ঠুক ঠাক। হাতুড়ি পড়ে রাতে। রক্ত। পুকুর। মানসিংহের সাজাওট মনে পড়ে। ঝল ঝল ঝলাৎ। লিওনার্দো ফিচ করে হেসে একটা চুরুট ধরান। দাড়িতে বিনুনি। ঢিল দেয় না আধুনিকতা। মোনালিসার বাঁধানো কাঁচের বুকে দোল খায় ক্যালকুলাসের পেন্ডুলাম। টুং টাং। গ্লাসে গ্লাসে ঠোকা। নোটবুকের কাটাকুটি। ফ্রেম বাঁধানো রাতে আমার শীত করে খুব। কেমন একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটি। আসলে শীতের রাতে আমার মনে পড়ে যায়…………একটা খুন।
“নতুনা ঠিক তোমার মুখের আদল, জানো!”—ছবি ছুঁতে ইচ্ছে করে। মোনালিসা অবাক হয়। “নতুনা কে?” “ঐ যে বললাম, একদম তোমার মতো দেখতে। ঐটুকু আর কিছু স্পর্শ সে রেখে গিয়েছে আমার কাছে কেবল! পরিচয়।” মোনালিসা টেবিল খোঁটে। অপরিচিত অপরিচিতার নক্সা কাটে। নক্সী কাঁথার মাঠে একা ফরাস। পাশ ফেরেন প্রতাপ। ঠক্। গ্লাসের বোল। টেবিল চাপড়ায় একটা শঙ্খচিল। আমি বুঝতে পারি নেমে যাচ্ছে ও। মোনার ধাতে নেই অসহায়তা। এতদিন যে পুরুষের চোখের ছেদ উপেক্ষা করতে পারে, সে অলাতচক্রের মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে দিয়েছে। নাভির থেকে একটু উপরে। ভুসসস্। সোডায় ভাসে এক একটা বহির্দ্বন্দ্ব। বিটকেল বিড়ালের চোখের চারপাশে পোকা থ্যালথ্যাল করে। খাঁজে খাঁজে বাদামী রাত। থরে থরে শরীর সাজানো। আমার ডান কাঁধে হাত রাখেন সাদে। মোনালিসা অন্যরকম হাসে।
ফাঁকা সমস্ত হোটেলের খিদে পায় থেকে থেকে। অন্ধকার। খিদে জমায় ভিখারিনীর মায়ের মতো। মানিকের রেখে যাওয়া বোতলে জীবন ভরে রামী রজকিনী। টাকা সাতেক লিটার দরে। আমার আবার শীত করতে থাকে। পাখা বন্ধ করি। মোনালিসা ঘনিয়ে বসে। লিওনার্দো-র পছন্দ হয় না। এক টানে ছিঁড়ে ফেলেন মাতলামো। ভেঙে আসে ইজেলের দোলাচলতা। অহং-এর বাড়িতে অস্ত যায় ছন্দ। বেহালার কান্না। আমার আরও আরও এবং আরও শীত করে। কুয়াশা কাটতে থাকে পূর্বের ঝাড়বাতিতে। কাঁচুলি তুলে বুকের তিল দেখায় দিগাঙ্গনা। ভেলভেটের মতো অন্ধকার বুকে দপ করে জ্বলে ওঠে দাম্পত্য। শৈলেশ্বরের খাতা মনে পড়ে। তিন বিধবার থান। চাঁদ হয়ে ওঠে নিরাকার।
“তিন বিধবা গর্ভ করে শুয়ে আছি পুণ্য বিছানায়
হে ঘোড়া, কলকাতায় তিনগেলাস স্বাস্থ্যসুধাপান
পরিত্রানীহীনতা হাসে পুরুতের নামাবলীগীতা
ধাতুধর্ম সাতবার গড়াগড়ি খায়………” [১]
ঝসসসস্। ফ্লাশের সঙ্গে মিলিয়ে যায় পাহাড়ের রেচন। মোনালিসা বলে, “কে তুমি?” এতক্ষণে? আমি খুনি। বলতে পারি না। জিভ নড়ে শুধু। গ্লাসটা তুলে নিয়ে তাতে দুচামচ চাঁদ দিই। গলির কুকুরের মতো লালা আসে আমার মুখে। যে উত্তর নিজের গলায় ফোটে, তাতে চুমুক দেয়া চলে। নিবেদন হয় না। উঁচু নীচু সংকল্প নিয়ে এগিয়ে আসে সে। আমি ওর জন্মে তাকাই। লিও-র জেনেসিস আমাকে নিস্তব্ধ করে। গির্লান্দেও চুলে হাত বোলায় নিজের। আমি ইশারায় বারণ করি। মুহুর্তের পানশালায় বিমূর্ত হয়ে ওশরুম থেকে বেরিয়ে আসে জোৎস্না। মেঘের সিঁদুর খেলা। এই গলিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কতদিন। গুটি গুটি চার পাঁচ জন আমি বেরিয়ে আসি রাস্তায়।
হলুদের দ্বিধা জ্বরের মতো পুড়ছে। মোনালিসার কোলে বাদুড়ের মতো ঝুলে আছেন লিওনার্দো। জোরে কেঁদে উঠছেন মধ্যে মধ্যে। বালির স্রোতের বিপরীতে ঘষ্টানির আওয়াজ শোনা যায়। আলোর বিপরীতে অন্ধকার নয়। ছিল না কখনও। অন্ধকার গ্লাস। আলো বুদবুদ। এখন রাস্তাটা অনেক দূর অবধি দেখা যাচ্ছে। বিবাহিতা। হেঁটে আসছে একা। আসুক। আসতে আসতে আমি আর একবার মোজার্তের ৪০ নম্বর শুনে ফেলব। কাকে ছোঁ মেরে আসবে প্যাঁচা। আজ একটা খুনের গল্প বলব। রাতের আকাশ ঘনিয়ে আসে। লাশ কেউ খুঁজে পায় নি। আসলে বালি আর রক্তের শরীরে কম্পাঙ্ক মাথা খোঁড়ে। ওকে আমি অনেক দিন আটকে রেখেছিলাম। ঘরটার কিচ্ছু ছিলনা। না মুখ না পায়ু। দেয়াল আঁচড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে তুলেছিল ও। আমার স্পষ্ট মনে আছে দেয়ালের দাগ গুলো। বারকোডের মতো। আমার ভিতরে একটা বাঘ নখ আছে। মাঝে মাঝে ঝিলিক দিলে মন্দ লাগে না। শেষে যখন মাথাটা লটকে গেল। বমি বমি আর বমির মধ্যে পচে গেল শরীরটা আমি ওটাকে চুপি চুপি ফেলে দিয়ে এসেছিলাম চাঁদে। তাই জ্যোৎস্না আজ এতটা বিবর্ণ। মাঝে মাঝে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদ। ‘ও’ টা কে? কে? কে?
“ওকি! পিছনে কে ও?” বিবাহিতার আর্তনাদ। ভালো লাগে। চন্দ্রভান গঘ আর গগন পাল চায়ের দোকানে গিলোটিন নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। ইতিহাসের আবর্তকে ফার্স বলে মার্ক্স সবে স্ট্রিটলাইটটা জ্বালিয়েছেন। অজয়ের ধার থেকে একটা আধপোড়া সিগারেট দিয়ে গেছে পায়রা। বেহালার ঘাটের অভাবকেই বেশি জীবনের কাছাকাছি লাগে। বিবাহিতা আলু থালু হয়ে ছুটে এসে জোরে ঝাঁকুনি দিল। আমার হাত থেকে আগুন ছিটকে পড়ল রাস্তার একপাশে। তুলতে গিয়ে দেখি এক বিরাট জাহাজ। নামল এক জোড়া জুতো। গন্ধে নাড়ি উল্টে আসছে। আমার হাত থেকে ভায়োলিন খসে গেল। আমি ভেজা হাতে বিবাহিতার হাত ধরে দৌড়ে পেরিয়ে এলাম সিকি মাইল। পিছনে তাকাবো না। দৈত্যপুরীর হদিস যাবে হারিয়ে। দিতিকে খোঁজা যাবে না। “সব যে হয়ে গেল কালো…”! কানে আসছে। বিবাহিতার চোখে মৃদু হাসি। নেশার ঘোরে আমি তিনমহলা বৈপরীত্য পেরোচ্ছি। তলপেটে চাপ। ঘাম হচ্ছে প্রচণ্ড শীতেও। শিরদাঁড়া বেয়ে টুপটুপ ঘাম পড়ছে। বিবাহিতা থমকে দাঁড়াল। ধাক্কা। দেয়ালে ঠেসে ধরলে। বিবাহিতার চোখে অনুকম্পা নেই। আমার আর কিছু করার রইল না। কান দিয়ে গলগল করে ঢুকে পড়ছে সুর। পিপাসা। পিপাসা। জল দেয় না কেউ। ও আমাকে আদর করে। আদর করে। আমি বিরক্তির গালিচার মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছি অসাধ্যের রাস্তায়। সাধনা আমার ছুঁড়ে ফেলা শ্রাবণের খুঁট ধরে রয়েছে। প্রবল ঝড়ের পর মরুভূমির জঠরেও বৃষ্টি নামে। তখন আর সুরের ভয় নেই। হেমগন্ধে ভুর ভুর করছে উদয়পুর বাজারের এক কোণ। গন্ধওয়ালা জুতোর উপরে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছেন প্যাগানিনি। তাঁর আঙুল চলছে নিরবিচ্ছিন্ন। সমস্ত বিশ্বের চোখরাঙানিকে নিভিয়ে দিয়ে। সমস্ত নিন্দুকের ভার নিজের বুকের ক্ষতে বয়ে। আমি বিবাহিতার নাভিতে ফিসফিসিয়ে বললাম,”এমন ক’রে আমারে হায়, কে বা কাঁদায়…”! পথ যে ভাঙেনি তা আজ শুধু জানেন প্যাগানিনি। তাঁর চির একাকীত্বের দোসর সেই অহং। আর জানে খুন হয়ে যাওয়া প্যাগানিনির লা ক্যাম্পানেল্লা। ডেভিড গ্যারেট জানেন। আর জানি প্যাগানিনির পাশে নতুন গ্লাস নিয়ে বসা আমি। যার পায়ের থেকে বুকের সাধনা এক স্রোতে গিয়ে মিশছে বেহালার ছড়ের টানে, আর টানে, আরও টানে…
আলোকলেখ্য—স্বয়ং
২৮ শে অক্টোবর ২০১৮
রাত ৮টা ৫৭
ও রাঙা মরণে সখী পাখোয়ালি রাগে, বাঁশরী শরীরে কেন সঞ্চারী জাগে?
রাজস্থান ডায়েরিস-১৮
ভুড়ুক ভুড়ুক। হুঁকো টানে চিতার কাঠ। ফোয়ারা বেয়ে নামতে চাইছে ভুল। মরু। জলের খোঁজ। স্তব্ধতা বাসা বাঁধে পাতার তলায়। উদয়পুর। নারীবাদী লেকচারের শেষে এক একটা কবরখানা ওঁত পেতে থাকে। রাজপুতানার ঐতিহ্য। চোখ সামলে দাঁড়িয়ে পড়ি আমি। সময় কাজল মেখে এসেছে আজ। চোখের তারা ছিনতাই করে পথ। ছুরি হাতে মাথায় ফেট্টি। ঝুপ করে দুপুর আসে। শাঁখ বেজে ওঠে। প্রবালে ভাঁজ পড়ে বয়সের। ঝুমঝুম। ঝুমঝুম। ঝুম ঝুম। ঝুম ঝুম। ঝুম ঝুম। ঝুম ঝুম। ঝুমঝুমি সাপ বাস্তু হয় নি তখনও। বালির কোলে ঢলে পড়ে বালি। রাণীর মতো চারটে পাঁচটা মেয়ে ছুটে আসে গভীর থেকে গভীরতায়।
হাতের এপার ওপার। টিপ ভেবে এগিয়ে যাই। চন্দ্রবিন্দু! বিবাহিতা এগিয়ে গিয়েছে অনেকটা। মাথার ঝাঁকায় ঐতিহ্যের কুলফি বিক্রি করছে দপ্তর। চড়া রোদ। ঝাঁ ঝাঁ। বুকের হাওয়ায় চড়চড় করে অলিন্দ। কে কবে ফোয়ারায় স্নান করেছিল! এখনও দু একটা পায়রার বোলে জলের মাত্রা। স্মৃতি। রোদ বললে,”হলুদের রঙ। দেখ না চেয়ে! শুকিয়ে রেখেছি সৌধ। আমসি করে।” পলকে বাঁচায় অস্থিরতা। বলি,”স্মৃতি কোনওদিন সৌধে বসে নি ভাই। শ্মশান ঘাটে একবার হাত রেখেছিল হাতে। তারপর তো ‘সাঁস বহু’ করে মোটা হয়ে গেল খুব।”
মোনালিসা চিঠি নেবে। খাম। বান্ধবীরা দাঁত কড়মড়ি। মন্থরার মতো দূর থেকে হেঁটে আসছে আনুগত্য। ঢলঢলে। সময়কে খুব পছন্দ। দশহাত জিভ। গরম মশলার ফোড়ন দেয় সৃষ্টির পায়েসে। হচক পচক শব্দে ছুটছে পালকি। ধাক্কুনাবুড় হেঁইয়ানাবুড়। আমার চিবুক নেড়ে দিয়ে যান রাধাপ্রসাদ গুপ্ত। কলকাতার ফেরিওয়ালার ভিড়ে রোদ ঢেকে আসে। অদৃশ্য অস্তিত্বে ছোবল দিয়ে ফেরে শৃঙ্খলা। আমি সময়কে ঠোনা দিয়ে বলি,”যা যা, নাগর এলেন।” সময় ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,”ভালো হচ্ছে না কিন্তু! তুমি জানো দাগ আমার একদম পছন্দ নয়!” আনুগত্য অত কিছু বোঝে না। সে নিজের মতো নিবেদন করে। সময় ছায়ায় সরে আসে। আমার জামার খুঁট চেপে ধরে। এতক্ষণে দূর। দেখা যায়। রোদ ফেরে। রাজস্থান ভিখারি হয়ে দাঁড়ায়। আমার চোখে নাচে রাই,”ওকে আজ চলে যেতে বল না, ও ললিতা!” আশ্রমের পাশ থেকে বেরিয়ে আসেন উদয় সিং-এর রাণী। দুম দুম। কপট রাগে কিল দেয় সময়। বিষফোঁড়া। ট্যালট্যালে পুঁজ। ঝেড়ে ফেলার আগেই কাছে আসেন রাণী। ভাবনায় ছেদ। গুনগুন করে ভাবা হয়। জন্মান্তর। ছৌ নাচে আর কত্থকে গুলিয়ে যায় পটে।
রাণীর ভ্রূ পথের দিকে। আঙুল প্রসব করে দিক। দিগাঙ্গনা। লজ্জা। রক্ত আর লজ্জার পাশে হাঁটু গেড়ে বসেন হোমার। গলায় নূপুর পরে সময়ের চোখে দিতির জল। রাণীর হাতে চামড়া গিয়েছে পুড়ে। সেই ক্ষতের আকৃতি অবিকল সাফোর মতো। ‘সহেলীওন কি বাড়ি’-র খুব পাশেই লেসবসের কুয়াশা। রোদ ঝাড়ে রোজ। রোদঝাড়ুতে টোল পড়েছে। রাণী সময়ের ঠোঁটে চুমু খেলেন আলতো। চোখের তারা। আমার আঙ্গুল ভিজে এল। আমাকে বললেন, “আবার আখেরন? ভাইফোঁটা নেবে না? রাজা প্রতিবছর নিত জানো! রাতের ঐতিহ্যে।” আমি মুখ নামিয়ে আড়াল করলাম শতাব্দী। যমুনা তবে এল আবার এ জন্মে! যম হয়ে উঠতে পারি না। চেষ্টা করি। আমার কানের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেল হু হু করে মানবতা, অপমানবের গলা ধরে। ঠোঁটের উপর আজকাল শুল্ক বসাচ্ছে কাণ্ডারী। মানুষ হয়েই ফোঁটা নিই রক্তচন্দনে। হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার। হাঁকছেন আর ছুটছেন নজরুল। পিছন পিছন বিস্কুটের লোভে ছুটে আসছে একদল বিলিতি কুকুরছানা। মূর্খতা। কুকুরছানারা কোনোদিনই জানতে পারবেনা, শ্যামের বাঁশি সোনার ছিল না। ফেলে দেওয়া দধীচির উচ্ছিষ্টে গাঁথা তার শরীর। তাই নজরুল একবার জন্মান। একবার ভাষা পান। শুধু একবার।
“তুমি রবি, তব তাপে শুকাইয়া যায়
করুণা-নীহার-বিন্দু! ম্লান হ’য়ে উঠি
ধরণীর ছায়াঞ্চলে! স্বপ্ন যায় টুটি’
সুন্দরের, কল্যাণের…।”[২]
খস খস। চন্দ্রবিন্দুর অসুখ। ভেঙে আসা ফ্রেমে স্বপ্ন সাজিয়ে রাখে রাজকন্যে। প্রতিটা স্মৃতিসৌধের জড়ে লেগে থাকে আগাছা। কেউ শিকার করে। কেউ মরুভূমি ভালোবাসে। গাছের পাতার বুটিকে নাড়া দিয়ে লাফিয়ে ওঠে রোদ। ছায়া আসে ভয়ে ভয়ে। একটুকরো রুটি। ওর আঁচলে নিয়ে বসেছে এক পাগড়ি। ধুতিতে জাফরি কাটে সভ্যতা। হাত কয়েক তফাত। ঠনঠন। ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলল কেউ জ্বরঠোসা। আমার বস্তিতে পুরুষের শরীর খোঁজা ঠিক এরম। ছয় সাত বছরের শিশু হঠাৎ করে বুঝতে পারে একদিন পেটের নীচে একটা পৃথিবী থাকে। ঐতিহ্যের মোটা মোটা শিক। শিককাবাবে সুস্বাদু হয় অতৃপ্তি। মরুভূমির বুকে আমি আমার বস্তিটাকে মালিশ করি। ফুল এখানে ব্যর্থ। ফল তার কয়েক টনের সিসার সম্পত্তি নিয়ে থাকে। সুগন্ধে পচা পুকুর বোজানো যায় না। অস্তিত্বের মাটি লাগে। দিতির খোঁজ মরুভূমির বুকে আমার কান টেনে ফিসফিস। ঐতিহ্যের বহুতলের সঙ্গী হয়ে নিষ্পাপ দুর্গন্ধও একদিন নিজের ঐতিহ্য তৈরি করে নেয়। মর্ষকামী আঙ্গুল চালনা পাতা ভিজিয়ে রাখে। অনুভব করে না। জন্ম জন্মান্তর আমার দিকে চেয়ে থাকে সাদা পাগড়ির ছায়ায় জবাবদিহির অনুকম্পা চেয়ে একটা লোক। আমি তার হাঁটু অবধি দেখি। বাকিটা ঢাকা থাকে অহং-এর আনুগত্যে।
আলোকলেখ্য—স্বয়ং
২৯শে অক্টোবর ২০১৮
রাত ১০টা ২২
আস্তাকুঁড়ের পাশে ভোজসভা বাতিকে আসে নি, তারও ভেজা রাজপথ আছে
কুলহীনা কুচযুগ ভুঞ্জে প্রতীক্ষা, হৃদি নিজ বাসর সাজায়/ অঙ্গজ আমি প্রিয় জঘনে ভুবন ধরি, পথলীনা প্রস্তর প্রায়
_____________________________
[১] শৈলেশ্বর ঘোষ
[২] নজরুল
Posted in: April 2020, prose