সাম্যব্রত জোয়ারদার-এর কবিতা

কোকিল ডেকেছে তীব্র রাঁচি-ধানবাদ হাইরোডে

কুয়াশার নীল আস্তরণ— ভোর হয়,
পাহাড়ের দিকে গেছে যে পথ ভৈরোর
বিদ্যুতের খুঁটি পার করে, আলোয়ান

গায়ে নকশি পাড় নেই, গরম চাদর

জড়িয়ে চলেছে মেঘ হাওয়া দিচ্ছে ভোরে

পাহাড়ের দিক থেকে নেমে আসছে গাড়ি
তার আলো সারপেনটাইন নীল আস্তরণে মিশে যায়।

ভোরে চলে যাব— আলো জ্বলা সেতু পার
করে, নীচে নদি শ্রীবাস্তবের নৌকা ট্রামলাইন
দু’একটা পাখি ফুলবাজার জনতা ট্রাভেলস্
পোস্তাবাজারের বস্তা ভ্যান ঠেলে ঠেলে
মার্চের শরীরে পাতা ঝরে যাওয়ার
পর, পল্লবের সম্ভাবনা নিয়ে ভোরে
চলে যাব— কারশেড পার করে করে।

অ্যাসবেসটসের ছাদ অটো দাঁড় করানো রয়েছে,
উঁচু টাঁড় জমি ধরে ট্রেন চলে যাওয়ার দৃশ্য
দাঁড়িয়ে দেখছে শিশু— ইট বের করা
দেওয়াল, জানলার পাশে জড়িয়ে ধরেছে
বট— বহুদূরে মোবাইল টাওয়ারে রোদ
এক টুকরো খেত বাদাবন গ্রামের ভিতরে
পথ ভাঙাচোরা নালার উপরে রাখা
নড়বড়ে কালভার্ট— ভোট এসে গেছে

তাই ঘরে ঘরে ডিশঅ্যান্টেনা পুষ্প ফোটে।

দূরে অই বনতল মেষ-পালকেরা
লাঠি হাতে দাঁড়িয়েছে যেন চৌকিদার—
লুঙি পরা কাঁধে গামছা পথ পরিশ্রমে
এই দেশ তাঁর জন্য ইঁদারা খোঁড়েনি,
মহুলের উঁচু গাছে রোদ্দুর ফুটেছে
বনতলে যাব একা ছায়ায় দাঁড়িয়ে
এই কথা ভাবি— দূরে মেষ-পালকেরা
লাঠি হাতে পায়ে গ্রাম্য হাওয়াই চপ্পল
জঙ্গল ভেদ করে চলে খাঁ খাঁ দুপুরের…

মাথায় খড়ের বিড়া মাটির কলসি নীচে ফুটা
পিরীতির তীব্র ফুল ফুটে আছে লোহারদাগায়
জলস্তর নেমে গেছে পিপাসায় শিকড়ের কাছে
পোকা ঘোরে, করতলে রং মেখে গাছকে সাজায়
বউ ঝিরা, মাথায় ঘোমটা দিয়ে হাঁটে, সুর করে
মার্চের রোদ্দুরে হাঁটে জলস্তর নামে জিলা লোহারদাগায়

রাঁচি-ধানবাদ হাইওয়ে পথ চলে— দুই পাশে
শুখা জমি টিলাবাঁধ জংধরা লোহার কাঠামো পড়ে আছে
মোটরবাইকের গতি ধাবমান রোদ্দুরের মত
ছিঁড়ে দিচ্ছে নিস্তব্ধতা তারপর ফের— দুই পাশে

কোকিল ডেকেছে তীব্র রাঁচি-ধানবাদ হাইরোডে।

Facebook Comments

Leave a Reply