করোনা ডাইরি : নির্মল হালদার

 ১

লাউসেনবেড়ার রাস্তায় কুসুম গাছের নিচে রঘুনাথ।
আমার কাছে দেশলাই ছিলনা বলে রঘুনাথের কাছেই খোঁজ করলাম।

পুরুলিয়া শহর থেকে হাঁটতে হাঁটতে আমার যাওয়া। ক্লান্তি ঘুচাতে একটু দাঁড়াতেই হয়। একটু জল খেতেই হয়।
তারপর একটা বিড়ি।

রঘুনাথের কাছে জুড়ে দিলাম গল্প। সে খুব বেদনার সঙ্গে বললো,আমি আর কি কথা বলবো ভাই——গাজন পার হয়ে গেল।ই বছর নাচের বায়না নাই হলো।

পুরুলিয়া জেলায় চৈত্র সংক্রান্তিতে গাজন শুরু হলেও বৈশাখ জ্যৈষ্ঠতে ও চলে গাজন পরব।
আর পরব মানেই, ছো নাচ নাচনি নাচ। চা-তেলেভাজার দোকান।বুট-মটর ভাজা।জিলাপি-গজা।ঝানডি খেলা।

রাতভর পরব।

বাঙলা মদের গড়াগড়ি।

ইবার ধূলা উড়ছে।

ই সময়েই নাচের বায়না পেলে
নাচিয়েরা দু-চার টাকা পায়।
মুখে হাসি পায়——
কেননা, এতদিন মহড়া চললো
ইবার পরবে নাচতে সুযোগ এলো।
কিন্তু কীসে কী হলোরে ?একটা কে এলো,উ ভগবান লয়—–তবে কী শয়তান?
এমন শয়তান যার ডরে–ভয়ে গোটা পৃথিবীটাই কাঁপছে।

কুথা যাবো ভাই—-নিজের গাঁ ছেড়ে?

ভকতা ঘুরলো নাই। পূজা হলো নাই—-শিব বাবাও কী
হামদের উদ্ধার করবে নাই?

রঘুনাথের কথা শুনতে শুনতে
চা–তেষটা পেলো।তাকে বললাম,একটু চা পাবো কোথায়?
কুথাও পাবে নাই——
মাইল খানেক চলো,হামি ঘরে খাওয়াবো——রঘুনাথ বললেও আমি না করলাম।

গাজন হলোনা বলেই কুটুম এলো নাই।অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেছে যারা তারা ঘরে আসে।
ইবার সবাই আসতে পারে নাই।আটকে গেছে অনেকেই মাঝ পথে।
কি কপাল কি কপাল——
কপাল চাপড়ায় রঘুনাথ।

আমি কপালের ঘাম মুছি।

বৈশাঘেই গরম লাগছে বেশ।
রঘুনাথ কে বললাম, একটু জল খাই—-চলো।

সামনেই পেলাম গরাম থান।
একটা ভাঙ্গাচোরা টিউকল।
অনেক পাম্প করলে,জল ওঠে।

প্রাণ ওঠে।

যে প্রাণের ভয়ে সারা দেশের মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে। যে প্রাণ রক্ষা করতে মানুষের পাগল হওয়ার যোগাড়।

বট–অশথে নতুন পাতা এলেও নতুন করে বাঁচার কথা রঘুনাথরা ভাবতেও পারছেনা।

আমি কী করবো?

নিজেকে নিজের দুঃখ-বেদনা থেকে উদ্ধার করলেও
রঘুনাথ দের কি ভাবে কি পথে রক্ষা করবো জানিনা।

জানিনা বলেই, হেঁটে বেড়াই।

পুলিশ দেখলেই আমাকে ধরবে। আমি কোনো আইন মানছিনা।

করোনা–ভাইরাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর অনাহার। আতঙ্ক।
কাজ নেই। কাজ নেই।

কাজ নেই।

সবাই কী যেতে পারে
যেখানে অনেক সংগঠন
আহার বিলি করছেন?

অনেক পরিবার আছে যাদের একসময় অনেক ছিল এখন নেই,তারাও মানসম্মানের ভয়ে লজ্জায় নিজেদের খাদ্য সামগ্রী বাইরে গিয়ে সংগ্রহ করতে পারবে না।

সর্বনাশের খাল খোঁড়া হয়ে গেছে, ইবার কি করবি করৃ তোরা—–

রঘুনাথের চলে যাওয়া পথের দিকে বৈশাখী মেঘ আসছে।

বৃষ্টি আসুক।

নন্দ লালের উঠোন বলতে
ঘরের বাইরে রাস্তা।
বাসনকোসন ধোওয়াধুয়ি থেকে খাট পেতে শোওয়া।ঘুম অব্দি।
ছোটোরা খেলাও করে।

বাইকের শব্দ এলে ঘরের ভেতর থেকে কোনো মহিলা কণ্ঠস্বরের সাবধান বাণী—-
গাড়ি আসছেরে গাড়ি
দেখবি—–

উঠোনে বা রাস্তায় শুকোয়
ধামসা–মাদল।

এই মুটরুডি গাঁয়ে ধামসা–মাদলের মাত্র দুটি ঘর।দু
ভাইয়ের ঘর।

নন্দ লাল ও আনন্দ রুহিদাস।

তারকমঠ স্কুল ছাড়িয়ে নন্দদের ঘর।

কখনো কখনো শুনবে মাদল বাজছে।ধামসা বাজছে।তার মানে তখন মেরামতির কাজ চলছে। বাজিয়ে দেখে নিচ্ছে দু ভাই। অথবা একজন।

দু ভাইয়ের এই জীবিকা।

গাজনের আগে থেকেই ধামসা বিক্রি শুরু।এই সময় থেকেই ছো–নাচ।ধামসা লাগবেই।

ই বছর একটাও বিকালো নাই।কুথা থেকে কি এক রোগ এসেছে,সোবকে খেয়ে দিছে—– শুনা পাছি। তা জন্ন
পূজা বাদ।মেলা –টেলা বাদ।
ভিড় চলবেক নাই।

ত হামদের পেট চলবেক কিসে?
ইটার জবাব কেউ দিছে নাই।
সব বাবুদের মুয়ে কুলুপ।

নন্দদের সারাবছরের যে টুকু রোজগার ধামসা –মাদল বিকেই।

মাছিও উড়ছে নাই।

চাষজমিও নাই যে ধানধুন থাকবেক ঘরে।
পেটে গামছা বেঁধে শুয়ে থাকতে হবেক।

নন্দর এরম কথায় কাঁচা রাস্তার ধূলা বেশি বেশি উড়তে থাকে। কিন্তু আটকাতে পারেনা ভয়।

লদিও যেতে পারে নাই
যদি রোগের পকা ঢুকে যায়!
লোকে ত বলছে তাই——
বাইরে গেলেই রোগ। শুধু
ঘরে নিজেকে বন্ধ করো। সবসময়।

পেট ত আর বন্ধ হছে নাই।
তা বাদে ছেলাছুলিরা আছে।উয়াদের খণে খণে খিদা।কি করে বন্ধ করি।

বৈশাখ মাস—–নিরনের মাস
ধামসা—মাদল ও শুখায় শুখায় মরবেক।

মরলেও পুড়াবার জায়গা নাই।কি দিন এলোরে!হামার তিন কুড়ি হয়েছে,হামি মরলে
কি হবেক!
শুনরে আনন্দ শুন—–
যত পারবি বাজা—–
ধামসা বাজা——-
মাদল বাজা——
কাল যদি মরে যাই!

পেট দাবড়ি না দিয়ে
চল্—–
দু ভাই মিলে ছেলাছুলি লিয়ে
মাদল বাজাই।

ধামসাটা তুলতে লারবো ।অত তাকত নাই।উয়াকে গড় করে
আয় লাচি ——–

মুটরুডির রাস্তায় জনপ্রাণী নাই।এই ভর দুপুরে গাছপালা স্তব্ধ।এই বেলা চুলহাতে আগুন নাই।

নন্দর বৃদ্ধ বাপ এক নাতিকে বলছে —–এরে এ নেতাই
সজনা গাছটায় উঠরে
পাতা পাড়লেও সিঝা খেতে পারবো।

আনন্দ বলে,আগুনটা কুথা পাবি বাপ—–?

মানুষ কেন বেইমান

এবছর বলতে পারলম নাই দাদা——- পুষ পরবের পর থেকেই আমাদের রিয়ার্সেল আরম্ভ হয়েছিল। চৈত আসতেই, রিয়ার্সেল বন্ধ। শুনতে পেলাম, “করোনার পদধ্বনি।”

“পদধ্বনি পালাটি” এবছর হওয়ার ছিল বিশুদাদের গাঁয়ে।
গাজন পরবে——বছরে একবার যাত্রা করি আমরা।
গাঁয়ের লোকের কাছে একটা রিঝ। ছেলেপুলেরা যাত্রায় পাট করবে দেখেও ফুর্তি।
কি বলবো দাদা, হলো নাই।

সে বছর মায়ের কোলে মাটির ভগবান—–সবাই বাহবা দিয়েছিল।
মায়ের পাটটা যে মহিলা করেছিল দারুণ করেছিল। দারুন।
গোলকুণ্ডা ড্রেস হাউসে বলে দিয়েছিলম, এক নাম্বার ফিমেল আর্টিস্ট চাই——-।
জবরদস্ত না হলে পয়সা দিব নাই।

জানেন তো দাদা, ড্রেস হাউস
আমাদের সাপ্লাই দেয়। যেমন ধরুন, প্রথমে ফিমেল আর্টিস্ট।

গ্রামে তো আর ফিমেল আর্টিস্ট নাই। বাইরে থেকে আনতেই হয়। উয়াদের পাট
ড্রেস হাউস পাঠায় দেয়। যাত্রা দিনে ঠিক পৌঁছে যায় সন্ধ্যায়।
তারপর স্টেজে নেমেই মাত।
কি বলবো দাদা, কি হাততালি পড়তে থাকে।
আমরা যারা পাট করি
আমরাও হুদকে উঠি। দেখুন না, এ বছরটা কেমন হলো?

মানুষ কেন বেইমান বলার আগে বলতেই হচ্ছে, করোনা বেইমান।

সেদিন দেখা হলো, ড্রেস হাউসের গদাধর দার সাথে।
খুব দুঃখ করছিল।
এই সময়টাতে তাদেরও দুপয়সা রোজগার হয়। শুধু তো আমাদের গাঁয়ে নয়, এদিক-ওদিক সে দিক যাত্রা হতেই থাকে। সব জায়গায়
ড্রেস হাউস। লাইট মাইক জেনারেটর সুর পার্টি। ফিমেল আর্টিস্ট মেকআপ। সব সব দেয়।

এবছর সব ফাঁকা।
গদাধরদা একটাও পয়সা পেলো নাই।
চৈত-বোশাক-জষঠিতে যা পারে দু পয়সা করে লেয়।
মাথা থাপড়াছে ই বছর।

গেল বছর দাদা
হিরোর পাট করেছিলম বলে,নাম হয়েছিল।
যে হিরোইন করতে এসেছিল
তার বয়েসটা ছিল বেশি।তবে
গায়ে গতরে চেকনাই ছিল।

ফিমেলরাও পয়সা পেলো নাই।শুনেছি গদাধর দার কাছেই,ওই ফিমেলদের রোজগারেই সংসার চলে।

এবছর কি হলো গো দাদা!

হায় হায় করছে সবাই।

গরু মোষ ছাগল ভেড়া হাঁস মুরগি খেতে পাবে কিনা কে জানে। চাষবাস টা হবে কিনা কে জানে।

যাত্রা করবো।
গাঁ ঘরে চাঁদা করবো।
সেটাতেও ভারী উৎসাহ।
কে কি পাট করবে কত চর্চা চলতো ।কুলহিতে গল্প করতে করতে মাঝ রাত।
সবাইকে বলা হতো,পাট মুখস্থ না করলে পরের বছর আর পাট দিব নাই।
আর ই বছর পাট করবো কি,
একসাথে বসতে পারছি নাই।
বসতে পারছি নাই কুলহির মুড়ায়।

সারাদিনেই গাঁ -টা শ্মশান শ্মশান লাগছে দাদা। মনটা হু হু করছে।

গেল বছর হিরোর পাট করেছিলাম বলে, এ বছর সখ করে ভিলেনের পার্ট নিয়েছিলম। নিজের রাগ গুলা ঝাড়বো।

হল নাই হল নাই দাদা।
ভিলেন হয়ে গেল, করোনা।
এ বছর স্টেজ তো নাই। বলুনতো, কোথায় দাঁড়ালে
জোর গলায় বলবো, ভিলেন ভিলেন ভিলেন
করোনা তুই বড় খল। তুই বড় বদমাশ
তোকে তাড়াবোই তাড়াবো—–এই বলে রাখছি।

গদাধরদার মুখটা ভাসছে খুব।আলো ঝকমকানো আমাদের স্টেজ, সেদিন তো গাঁয়েও আলোর ঝলকানি দেখতম
গদাধরদাও কোন কোন বছর দেখতে এসেছে আমাদের যাত্রা পালা।
একবার এক ফিমেলের পাট ভাল লেগেছিল বলে,তার বুকে সেফটিপিন এ আটকে দিয়েছিল ১০০ টাকার একটা নোট।
এখনও মনে আছে,গদাধর দার হাসি। আমার বুকেও বাজছে এখনো হাততালি আর হাততালি।

আচ্ছা বলুন তো দাদা হাততালি দিলে করোনা পালাবে?
উয়ার পাটটা চলছেতো চলছেই—- আর ভাল লাগছে নাই।

আচ্ছা বলুন তো দাদা,
করোনার ডাইরেক্টর কে?

বৈশাখ মাসের রোদ তরতরিয়ে বাড়তে থাকে।
মন্টু গোপের ছেলেদের “ভখ”–এর মত ।
সবসময় খাই খাই——।

মন্টুর তিনটে সন্তান।দুই মেয়ে একটি ছেলে। মন্টুর মা বাবাও আছেন। তাদের বয়স হয়েছে। কর্ম ক্ষমতা নেই।

পুরুলিয়া শহর থেকে ৫–৬ কিমি দূরে মন্টুদের গ্রাম—–
বালিগাড়া।

মন্টুর কাজ ড্রাইভারি।
চার চাকার ছোট গাড়ি চালায়। মাল নিয়ে যায় বিভিন্ন গ্রামে।

এখন?

আসা যাওয়া চলবে না।
গাড়ি চলবেনা।
মন্টুর কাজ বন্ধ।

পেট বন্ধ নাই।

সে শহরের বড় হাট থেকে প্রতিদিন কিছু শাক কিনে নিয়ে আসে চকবাজারে।

ক-পয়সা লাভ করো?
মন্টু উত্তরে জানায়—-
৬০–৭০টাকা।

সে বলে, কি করবো দাদা
ঘরে চুপচাপ বসে থাকলে
কে খেতে দিবেক?
আর বসে থাকলে, হাত পা অচল হয়ে যাবে। তিন তিনটা ছেলে মেয়ে
বুঝতে পারছেন তাদের খিদা কিরকম।
লকডাউন কবে খুলবেক
তার অপেক্ষায় থাকলে, সবাই যে মরবো।
৬০–৭০ টাকাতে নুন মসলাটা হয়। বেটা বেটির জন্য এক প্যাকেট বিস্কুট হয়।

মন্টুর পাশেই কৃষ্ণপদ গোপ।
সেও বিক্রি করছে লাল শাগ।
লটারির টিকিট বিক্রি করে
প্রতিদিন শ তিনেক রোজগার ছিল।
এখন, যেদিন যেমন।
৫০ টাকা হলে ভালো। কিন্তু দেখা যায় একেকদিন ৩০–৪০হতে হয়না।ঘরে লিয়ে যেতে হয় দু-চার মুঠা শাগ।

শাগেই বা কত সিঝাব?
ছেলার মা চেঁচাতে থাকে।
সেই চ্যাঁচানি যেন আমার কানে এসে ঢুকলো।

লটারির টিকিট বিকা টাকা
আর শাগ বিকার টাকার অনেক তফাৎ। আগে যেমন
সপ্তাহে তিন দিন মাছ মাংস হতো এখন এক দিনও হয় নাই।
ব্যাটা বিটিরা বলে, এ বাবা বাবা মাংস নাই আনবে?
তখন কৃষ্ণপদর মাথার ঠিক থাকে না। ঘরের দেয়ালে মাথা ঠুকতে থাকে।

কৃষ্ণপদর বয়স হলো দু কুড়ি। সেও কোন কালে শুনে নাই, এমন রোগের কথা।
ই বাবা এমন রোগ যে, পৃথিবী শুদ্ধ হয়ে গেল!

হে মা শীতলা আমাদের রক্ষা করবে।
ছেলে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে
মনে মনে প্রার্থনা করে কৃষ্ণপদ গোপ।

দক্ষিণ বহাল থেকে সাইকেলে সবজি নিয়ে আসে সতীশ মাহাত।

এখন তো দু চার টাকা বেশি লাভ করছ সতীশ——-
আমার কথায় হাসতে হাসতে বলে, এত লাভ যে রাখার জায়গা নাই দাদা।

ক্যানে ক্যানে?
আমার প্রশ্নে সতীশ বলে, মাথার ঘাম ঝিটে
এইযে দেখছেন ঝিঙ্গা লাউ বেগুন
লকডাউনের আগে পাইকার কে দিলে, থোক টাকা পেয়েছি। এখন কেউ লিছে নাই। বড় বড় হাট গিলা পুলিশে বন্ধ করে দিয়েছে। কুথায় বিকবি বিক।
তুমাদের চকবাজারে আসি খুচরা বিকতে।
লাভ নাই লাভ নাই। বিচের দামটাই উঠবেক নাই।

বৈশাখের রোদে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে আসার পরিশ্রমে
সতীশের মুখে ঘাম।

সবজির থলি থেকে গামছা বের করে ঘাম মুছে নেয়।
আমি জানতে চাইলাম, জলের বোতল নাই?

পাড়া থানার কাছে একটাই হোটেল। রমেশ মোদকের হোটেল।
ব্যাংকে যারা আসে দূর দূর থেকে, ব্লকে যারা আসে কাজের জন্য
তাদের মধ্যে কেউ কেউ হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে।
তো পাড়াতে একটাই হোটেল রমেশের হোটেল।
সবাই চেনে।

হোটেলে রাঁধুনি বলতে রমেশ নিজেই। থালা-বাটি হাঁড়ি কড়াই ধুতে রমেশ।
কাজের লোক রেখে বেতন দিয়ে খাবার দিয়ে, রমেশের পোষাবে না।
রমেশ নিজে পরিশ্রম করে বলে, দিনের শেষে ৩০০টাকা দেখতে পায়।

অনেক কষ্ট করে জমিজমা বিক্রি করে, তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। আরো একটি মেয়ে আছে। ছেলে কলেজে পড়ে। তাকেও খরচা দিতে হয়।

আর খরচ দিতে পারবো বলে মনে হয় না। এক মাসের উপর হোটেল বন্ধ হয়ে আছে।
পেট তো আর বন্ধ হয়ে নাই, পুঁজি ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। দুবেলা।
এবার কবে উঠবে লকডাউন, কে জানে। বেড়েই চলেছে।

রোদ বাড়তে বাড়তে
অজিত পরামানিকের তেলেভাজার দোকানে।

চা-বেগুনি–চপ।

ভোর পাঁচটায় অজিত দোকানের ঝাঁপ খুলে দেয়।
বারোটা সাড়ে বারোটায় ঝাঁপ বন্ধ।
আবার বিকেল দিকে।

অজিতের বাপ ঠাকুরদা তাদের জাত ব্যবসা চুল দাড়ি কাটার কাজ করতেন না।
তাদের বাড়ি ছিল পাড়া থেকে
সামনের গ্রামে।চাষজমিও ছিল।
তারপর আস্তে আস্তে নিয়মে অনিয়মে সব শেষ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে অজিত তার পরিবার নিয়ে পাড়াতে গেড়ে বসেছে।
সংসার তো চালাতে হবে। পরিবারের মুখে দিতে হবে হাসি।

কিন্তু হাসি যে কেড়ে নিতে চাই
ওই যে কি এক ভাইরাস এসেছে। নামটা মনে থাকছে নাই।
সারাদিন ঘরে-বাইরে ফিসফিস। ভয় ধরাই দিছে ।

ঝাঁপ বন্ধ্ই আছে।
খুললেই, জেল–জরিমানা।
পেটটা খুলা আছে বলে, বেশি
বেশি জ্বালা।

এইতো হাল ভাই
যেন ভুলে না যাই তার জন্য সকাল হলে, দোকানটার বাইরে এসে বসি
একবার করে। যেন মনে থাকে
আমার একটা দোকান আছে।

আমাকে খুলতে হবেক।

Facebook Comments

Leave a Reply