মৌ দাশগুপ্ত-র লেখা
কুড়ি শব্দের লেখা
১.
মাস্ক
দুদিন নিরন্ন মালোপাড়া।চারচাকার গাড়িটা আসতেই দেখা গেল চাল নয়, মাস্ক এসেছে।পেটের জ্বালায় কচুপাতা খুঁজছে মালোশিশু, মুখে মাস্ক বাঁধা।।
২.
অ-সুখ
ফিরহাদ আর ফটিক, দুই ভিন্নধর্মী রোগীর করোণা সেন্টারে একই স্টেথোস্কোপে, একই থার্মোমিটারে চিকিৎসা হচ্ছে। মন্দির মসজিদ ধর্ম মানে, চিকিৎসালয় মানেনা।।
৩.
নিশ্চিন্ত
বামহাতে এখনো প্লাস্টার।এই নার্সদিদিকেই সেদিন লাঠি মেরেছিল। আজ তার হাতেই করোনা পজেটিভ সন্তানকে তুলে দিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেল্লো সুখলাল।
৪
শোধ.
সুরমার দু’মুঠো চাল ফেরত দেওয়া হয়নি। মহিলাসমিতির হয়ে ত্রাণ দেওয়ার সময় সুরমা থলেতে তাই দু’মুঠো চাল বেশিই ঢেলে দিল দেবী।
৫.
ডিপ্রেসন
লকডাউনে ব্যারিস্টার স্বামী – ছেলে, প্রফেসর বউমা, হস্টেলবাসী যমজ নাতনী সবাই গৃহবন্দী।ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠে চন্দ্রিমা জানেন অসুখটার আরেক নাম স্বজনবিরহ।
৬.
শিক্ষা
জন্মদিনের কেক বানাচ্ছিল রাকা, স্কুলফেরতা মেয়ে বল্লো,
– ‘কেক না, রুটি বানাও মা,লকডাউনে পাড়ার কুকুরগুলোকে কেউ খেতে দেয়নি, খাইয়ে আসি।’
৭.
বিধিলিপি
সুরাত থেকে বিনারসদেই সীতামারি যাচ্ছিল অন্নু, পরিযায়ী শ্রমিক। মাঝপথে জ্বর-কাশি। অতিমারী নাকি অনাহার, অন্নুর শেষগতি কে লিখবে কে জানে!
৮.
প্রতিহিংসা
সিগারেট কিনতে গিয়ে পিঠে কালশিটে পড়েছে তপনের। প্রাণের বন্ধু বাণ্টিকে মাঠে থাপ্পড় কষিয়ে তপনের আটবছুরে ছেলে বললো, “শালা পুলিশের বাচ্চা”।
৯.
মিলমিশ
বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার দুদিন আগেই লকডাউন । সুরমার শুচিবাই আর বউমা তিথির তেলমশলা ছাড়া রান্নাতেই নাকি স্বাস্থ্যের সুরক্ষা।খিটিমিটির সংসার এখন শান্ত।
১০.
নুনেপোড়া
ইউটিউব দেখে বিরিয়ানী বানিয়ে দেখে নুনপোড়া। লকডাউনে বাজার বন্ধ।উচ্চবিত্ত শালিনীদের দুপুরের মেনু সেদ্ধভাত, ফুটপাথের নিরন্ন সন্নোবাইদের নুনপোড়া বিরিয়ানী উৎসব।
১১.
করোণা
পরিযায়ী মিছিলে পোয়াতী সুরতিয়াও ছিল। ফুটপাথেই মেয়ে রেখে চোখ বুজলো।মিডিয়ার দৌলতে সরকারী অনাথাশ্রমে ঠাঁই পেল, নামও পেল সদ্যজাতা, ‘করোণা’।
১২.
কারো সর্বনাশ কারো পৌষমাস
লকডাউনের অজুহাতে বন্ধই হয়ে গেল রুগ্ন পটারিপ্ল্যান্টটা।খবরে প্রকাশ, দুশো লোকের রুজিরোজগার বন্ধ করে নাকি দুশো ফ্ল্যাটবাড়ির আবাসন তৈরি হবে।
১৩.
অনলাইন
লকডাউনে ফুচকাওয়ালা রামলাল মোবাইলে অনলাইন দোকান খুলে ঘরে-ঘরে পান সিগারেট নেশার জিনিষ পৌঁছে দিচ্ছে , ফুচকাও।রোজগারও বেড়েছে। ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার জয়।
১৪.
সশঙ্ক
আগাছায় ঢাকা বন্ধ প্ল্যান্টের ভাঙা চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে দেখে ছুটে এলো সবাই। শুকনো আগাছার জ্বালানিতে পুড়ছে আপাদমস্তক প্ল্যাস্টিকমোড়া লাশ।
১৫.
মুখচেনা
বারোদিন হেঁটে গুজরাট থেকে গ্রামে ফিরল সুখবাহার। বিনাচিকিৎসায় বাপ মরেছে।অনাহারে মা। খালিবাড়িতে সরপঞ্চের গুদাম।বিনামুখোশেই চেনামুখগুলো কেমন অচেনা এখন।
Posted in: April 2020, Poetry