মেঘ অদিতি-র কবিতা

হারার এবং..


**
তার একহাতে অজস্র পাখির আবাস
অন্যহাতে রুটম্যাপ, সময় কম্পাস
অনেক দূরের কোনো স্মৃতি যেন বলে যায়—
আজও কোথায় হাওয়া বইছে জোর

পথে পথে শবের স্তূপ আর বিবর্ণ শহরের কান্না। ধ্বংস শেষে এরা সব কুড়িয়েছে প্রকৃতির ক্রোধ। এখন একে একে জড়ো হচ্ছে ধর্মগুরু যত। বাড়ছে স্পর্শ বিষয়ক জটিলতা.. এইসব থেকে সরে এসে পড়ি অভ্রভেদী বরফচূড়ায়। প্রতিধ্বনিময় সংঘাতের ভেতর ডাক দিই, একটানা- হারার.. হারার…

গিরিজনি বলয়ের মীনগর্ভ থেকে দেখা দেন তিনি। হাইনরিশ হারার, দ্য অস্ট্রিয়ান মাউন্টেনিয়ার। সময়কে ভাঙতে ভাঙতে হিমচূড়া থেকে গড়িয়ে দেন শব্দ, অবাঞ্চিত গর্ভের মতো অধোমুখি স্তব্ধ আজ পৃথিবী, তোমাদের অনুতাপ হয় না? ঝুরঝুর আগুনে দু’হাত সেঁকে ক্রূরমুখে বলি, আপনি মিথ্যে।

মৃদু হাসেন হারার, এভাবেই পৃথিবীর আনাচকানাচ তৈরি হয় অন্ধতার সংযোগ।

সারা রাত শব্দরা পুড়ে যায় পাঁচটি প্রদীপের সাথে
সারা রাত মুখোমুখি, আমি ও হাইনরিশ হারার..



**
কীভাবে মেঘ ভেদ করে জেগে আছে
অনির্বচনীয় সৌন্দর্যে হিমালয়ের পশ্চিম খুঁটি
ক্রমে শূন্যে উঠে চূড়া যেন স্বর্গ চলে গেছে
প্রস্তরমূর্তির মতো দাঁড়িয়ে, দেখি-
ধেয়ে আসছে তীব্র তুষার ঝড়
হাইনরিশ হারারের পায়ে এখন ফ্রস্টবাইট
এবং সামান্য পরেই ‘এনিমি এলিয়েন’ হারার
বন্দী হবেন বৃটিশ সেনাবাহিনীর হাতে
সময় ১৯৩৯…
তাকে রাখা হবে
দেরাদুন ডিটেনশন ক্যাম্পে

কালপর্বে আপনারা যারা
হারারকে অসহায় ভাবছেন
তাদের বলি, আয়নায়
আপনারও ছায়া পড়েছে দেখুন
আয়না কী বলে?

… সামনে ঘোরপ্রলয়
অন্ধতার পর্দা ছিঁড়লে দেখতে পেতেন
আপনাদেরই চর্বি গলিয়ে
প্রদীপ জ্বালবেন ঈশ্বর স্বয়ং
ক্যাসিনো ও স্পর্শবিহীন
অযৌন রণভূমিতে দাঁড়িয়ে
ধাবমান ওই কালো কুয়াশার জন্য
আর সামান্যই অপেক্ষা

ঘন নীল সংকটের দিনে, বহুদূরে
একটা টিয়েপাখি তার টুকটুকে ঠোঁটে
অবলোকিতেশ্বরের উদ্দেশ্যে এখন বলে চলেছে
ওঁ মনিপদ্মে হুঁম..
ওঁ মনিপদ্মে হুঁম..


=====================================
‘আ ট্রিবিউট টু হাইনরিশ হারার’ সিরিজের দু’টি কবিতা
অস্ট্রিয়ান মাউন্টেনিয়ার ও লেখক।
নাঙ্গা পর্বত হাইকিং-এর জন্য জার্মান-অস্ট্রিয়ান অভিযানে যোগদানের অনুমতি পেলেও আরোহণ পর্ব শেষ হবার আগেই ভারতে অবস্থানকারী ব্রিটিশ বাহিনী তাদের পুরো দলকে গ্রেফতার করে এবং দেরাদুনে তাদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে রাখা হয়। হারার তার তৃতীয় প্রয়াসে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তী সাত বছর তিনি তিব্বতে কাটান।

Facebook Comments

Posted in: April 2020, Poetry

Tagged as: , ,

Leave a Reply