অনুবাদ কবিতা : হিন্দোল গঙ্গোপাধ্যায়

গ্রীক কবিতা – অর্থনৈতিক অবনমন ও ব্যয়সংকোচের আলোকে

চতুর্দশ কিস্তি 

[https://www.infoaut.org/english/greece-austerity-and-the-questions-to-pose]

Katerina Iliopoulou (Born Athens, Greece, 1967)

ক্যাটরিনা ইলিওপৌলৌর বোধগম্যতা প্রাকৃতিক ও সামাজিক কল্পকাহিনীর পরিধিতে বিস্তৃত। তাঁর ‘শেয়াল’ চরিত্রটি যেন এক বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতিভূ, যা কবির কাছ থেকেই অর্জন করে নিয়েছে নেতৃত্বদানের শক্তি। তিনি ‘ফারমাকন’ পত্রিকার সম্পাদক ও কবিতাব্লগ greekpoetrynow.com -এর সহসম্পাদক। অনেক প্রবন্ধ, পর্যালোচনা লেখা ও ভিজুয়াল আর্ট (দৃশ্যকলা) নিয়ে কাজের মধ্যে, তিনি অনুবাদ করেছেন সিলভিয়া প্লাথ, মিনা লয়, রবার্ট হাস ও টেড হিউজেসের কবিতা।

শেয়াল

গাড়ির জোরালো আলোয় ও’কে একবার দেখা গেল
রাস্তা পেরোচ্ছে
একটা মেটে শেয়াল
আবার পরের রাতে
একটা ঝোপের আড়ালে তার মৃদু নড়াচড়া
আরেকদিন
ওর লেজ তুলি বুলিয়ে গেল অন্ধকারে
তারপর থেকে প্রতিক্ষণ
ওর পদচিহ্ন তোমার দৃষ্টিসীমায় রয়ে গেছে
ওর রোমশ, উষ্ণ শরীর
আমাদের মাঝে ধীরে যাতায়াত করে
বিরতিহীন এ চলাচল
‘কিন্তু কে তুমি? আমরা ও’কে প্রশ্ন করলাম
‘আমি’, ও বলল, ‘যেটুকু অতিরিক্ত’

সমুদ্রসৈকতে মিস্টার টাও

সমুদ্রের ধার থেকে একটা নুড়ি কুড়িয়ে নিয়ে
তিনি লক্ষ্য করলেন নুড়িদের এক লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে
এর কোন সোজাপিঠ আর উল্টোপিঠ নেই
দুটোই পরিপূরক, এবং একই
তারপর, যেহেতু আর কিছুই তিনি ভাবতে পারলেন না
তিনি স্থির করলেন নুড়ি পৃথিবীর শত্রু
আর সর্বশক্তি দিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেললেন
পড়ন্ত নুড়ি তৈরী করল সেই,
যাকে আমরা বলি ‘জলের মধ্যে গর্ত’

মিস্টার টাও প্রচন্ড টান অনুভব করলেন
নুড়িটার প্রতি এক অবর্ণনীয় বৈরিতা
তাই তিনি আরেকটা নুড়ি তুলে মুখে পুরে দিলেন
প্রথমে নোনতা স্বাদ
এটা সমুদ্রবিষয়
কিছুক্ষণ পরে আর কিছুই নেই
একটা গভীর ঠাসা শূন্যতা তাঁর মুখের ভেতর
তাঁর কন্ঠস্বরকে গিলে ফেলল

খুবই অবাক হয়ে, যদিও, তিনি আবিষ্কার করলেন
কোন শব্দ ছাড়াই তিনি কথা বলতে পারছেন
বাস্তবে তাঁর সমস্ত চাহিদাই গ্রাহ্য করা হচ্ছে
একঝাঁক সামুদ্রিক পাখি তাঁর পায়ে এসে নামল
উড়ে যাওয়ার সময়ে রেখে গেল একটা দুষ্পাঠ্য লেখা
মিস্টার টাও নীচে ঝুঁকে তৎক্ষণাৎ লেখাটা পড়তে শুরু করেন

সাইরেন

বিছানার চাদরেরা সাদা পাতা
প্রতি রাতে তিনি অক্লান্তভাবে লেখেন
জ্বরের ঘোরে শব্দ ভরে দেন
যেমন লোকে বলে কবিরা করে থাকে
কিন্তু সকালে সেই পাতারা হিংস্র জন্তু
ওরা তীব্র ঢেউ, উত্তাল সমুদ্র নিজেকে নিজেই মুড়ে রাখছে

সেখান থেকে কখনো একটা ভোঁ ভেসে ওঠে
তাঁর দিকে আর্দ্র তাকায়, আর তারপর
চোখগুলো খুলে ফেলে ওঁকে দিয়ে দিতে চায়
দুটো কাচের গুলি, সবুজ
মিস্টার টাও হাত বাড়াতে সাহস করেন না
কিন্তু কতদিন ধরে
তিনি এদের শীতলতার প্রত্যাশী হয়ে ছিলেন
তাঁর আঙুলগুলো ওদের ছোঁয়ার জন্য
সমুদ্রের ছত্রাকের মত কিলবিল করে ওঠে

ওর চোখদুটো সব ধুলো শুষে নেবে
যা আসলে সময়ের বালিঘড়ি
ওরা রক্তকে জল করে দেবে
আর সিলিকাকে বদলে দেবে স্ফটিকে
ওর কথাই রইল
তবে মিস্টার টাও সবকিছুই দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলেন
এরকম স্বচ্ছ বাড়িতে কেউ থাকতে পারে?

মূল গ্রীক থেকে ইংরেজি অনুবাদ – এ. ই. স্টলিংস

Facebook Comments

Leave a Reply