গণতন্ত্র, করোনা, ফ্যাসিবাদ এবং এই সময় – একটি মুক্ত গদ্য: বাসু আচার্য
সারাবিশ্বে লকডাউন হেতু ইকোলজির উন্নয়ন ঘটিয়াছে। মানবজাতির অত্যাচারে ক্লিষ্ট ওজোন লেয়ার অধুনা অবরুদ্ধকরণে পুনরায় হৃষ্টপুষ্ট হইয়াছেন। হরিদ্বারের পথে পথে তো অ্যান্টিলোপগণ শৃঙ্গ নাড়াইয়া ইভনিং ওয়াক করিতেছে! নেটিজেনবর্গ সেদৃশ্য দেখিয়া যারপরনাই উৎফুল্ল: “অহো! পশু সমাজ আপন হৃত চারণভূমি রিক্লেম করিয়াছে! কী আনন্দ!” পৃথ্বী আবারও শ্যামল হইয়াছে! ইকোলজি তড় তড় করিয়া আগে বাড়িয়া উড়াইয়া দিয়াছে বিজয়কেতন। পত পত করিয়া সে কেতন, সামাজিক দূরত্বকে কদলী প্রদর্শনপূর্বক, এক্ষণে হাওয়ার সহিত সোশাল ইন্টারকোর্সে ব্যাপৃত। প্রকৃত প্রস্তাবেই শুভ সংবাদ আসিয়াছে! দুনিয়ার পরমায়ু বাড়িয়া গিয়াছে, বাহে!
কিন্তু সমস্যা এই যে, ইকোলজির এই পৌষ মাসে ইকোনমির সর্বনাশা সংকট-ধ্বনি শুনিতে পাইতেছি। অবশ্য, তাহা মোদিভক্ত মধ্যবিত্তের কর্ণগোচর হইতেছে কিনা বলিতে পারিনা। মনোমোহন সর্দারের পরামর্শে গ্যাটে দস্তখত করিয়া নরসিংহ আন্না যাহা করিয়াছিলেন তাহাতে দেশের কাপড়-চোপড় এমনিতেই খসিয়া পড়িয়াছিল। অবশিষ্ট ছিল আন্ডারওয়ারটুকু। কিছু না পাইয়া শেষে মোদী-অমিত-যোগী তাহাতেও টান দিয়াছেন। যোগী তো আবার এক কাঠি বাড়া। যে শ্রমবাহিনী বর্গ হইতে সমাজ হইবার অভিমুখে গতিশীল হইয়াছিল “অর্গানাইজড্”-“আনঅর্গানাইজড্” বিভাজনের ভিত্তিতে, তাহা আরও জোরের সঙ্গে শ্রেণিভূত হইতে শুরু করিয়াছে, সরকার বাহাদুরের জবরদস্তি ভি.আর.এস স্কিমে লেবরশক্তি বিক্রেতার নাম নথিভুক্তিকরণের মাধ্যমে। যোগী তাহার উপর উত্তম পরিমাণে বেগন স্প্রে করিয়া স্কিন বনাম মিউকাস মেমব্রেন বিতর্ক উস্কাইয়া দিয়াছেন। অপরদিকে, সুযোগ মতো আদানি-আম্বানি-মেহুল সারাভাইরা লজ্জা নিবারণের সর্বশেষ ডুমুর পাতা, থুড়ি, পার্লামেন্টের মাথায় সশব্দে মুতিয়া দিয়াছে।
তাই চূড়ান্ত পর্বে “করোনা” হইয়া এবার দেশ যে একেবারে নাঙ্গা হইয়া গিয়াছে ইহা নূতন করিয়া উল্লেখ না করিলেও চলে। এই উলঙ্গের, রবিবাবুর ভাষায়, কোনো পরিচয় নাই। কিন্তু প্রয়োজন তো আছে। খাদ্যের, বাসস্থানের, পরিচ্ছদের, শিক্ষার, চাকুরীর। পরিচয়ের সাম্য যদি প্রয়োজনের অসাম্য আনে, তাহা পরিত্যাজ্য। আমি তো এভাবেই বুঝি। কিন্তু, মিত্র, আপনি? আদৌ বুঝেন কি? বলুন না… বলুন!
নাঃ, গৃহে তণ্ডুলাদি স্টক করিয়া ল্যাপটপে শেয়ার বাজারের পরিবর্তে হালে লুডো ক্রীড়া করিতে ব্যস্ত “আপনি” এর উত্তর দিবেন না, আমি জানি। ইহা তো আর শি জিংপিংয়ের সক্ষম পোঙায় অক্ষম যষ্টিদানপূর্বক আত্মরতি ধরনের আত্মপ্রসাদ নহে! “কী ছিঁড়িয়া লইবে যদি উত্তর না দিই”! লেঃ!
জাতীয় সড়কে অবিশ্রান্ত ভুখা মিছিলের লহর দেখিয়া আরও এক মহাসত্য উপলব্ধি করিয়াছি—আসলে ফ্যাসিবাদ বলিয়া কিছু নাই। যাহা আছে তাহা গণতন্ত্র। শুধুই গণতন্ত্র। শোষকের গণতন্ত্র শুষিবার। শোষিতের, মানে ওই শ্রমিকের আর কি, ভরপুর গণতন্ত্র রহিয়াছে—মরিবার। মাঝে, মানে আমার-আপনার মতো শাসিতেরও যাহা আছে তাহা গণতন্ত্রই। মস্তিষ্ক বিক্রয় করিয়া হাঁটুতে হাত বুলানোর।
অতএব, চলুন, কালবিলম্ব না করিয়া বাজারে যাই। দু’ঘণ্টার নিমিত্তে লকডাউন উঠিয়া গিয়াছে। আজ মুর্গি সস্তা। ১০৫ টাকা মাত্র।
Posted in: Cover Story, March 2020