অর্ধেকের খোঁজে: নিজস্ব বুননে ভারতীয় নারীদের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ – অমৃতা সরকার
নবম কিস্তি : দ্বিতীয় পর্ব
‘কৃষ্ণের রাধা’ থেকে ‘রাধার কৃষ্ণ’ হয়ে ওঠা : মুদ্দুপলানির ‘রাধিকা সান্ত্বনম’-এর নির্বাচিত অনুবাদ
দ্বিতীয় পর্ব
এই সংখ্যায় রইল ‘রাধিকা সান্ত্বনম’-এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের নির্বাচিত অংশের অনুবাদ। এই অধ্যায়ের পুরোটা জুড়েই ইলার সঙ্গে কৃষ্ণের সুখী দাম্পত্য নিয়ে রাধার অস্তিত্ব সংকট আঁকা হয়েছে। সবকিছুকে মেনে না নিয়ে রাধা এখানে সেই নারী হয়ে উঠছেন যিনি নিজের যৌনতাকে অবদমিত করতে চান না, যন্ত্রণাকে বুকে চেপে না রেখে ব্যক্ত করতে চান। এমনকি নিজের টিয়াকে যিনি সৌরি (কৃষ্ণ) ও ইলাকে দেখতে পাঠিয়ে তার মুখ থেকে শোনেন কৃষ্ণের যৌনতার বর্ণনা। ভয়্যার, স্যাডো-ম্যাসোকিসম সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে রাধা প্রবল নারী এই অধ্যায়ে। মুদ্দুপলানির ভাষাও তছনছ করে চলে পিতৃতান্ত্রিকতাকে। কৃষ্ণের যৌন আবেদন বর্ণনা করার সময় শুধু ‘পুরুষালি’ মোটিফ নয়; অনায়াসে ব্যবহৃত হয় নদী, বৃষ্টির মতো মোটিফও। তবে এই অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারীবাদী ঝোঁকটি হল রাধার কৃষ্ণকে নিজের পুরুষ হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণে। রাধা যখন জানান যে যৌনতাকালীন কৃষ্ণ ‘সমান’ থাকতে চান সবসময়, আমরা বুঝতে পারি রাধার কৃষ্ণ অল্টারনেটিভ ম্যাসক্যুলিন।
দ্বিতীয় অধ্যায়
রাধার ঠোঁটের মধু যে পায় সে ধন্য
কৃষ্ণকে শাসন করে যে, সে ধন্য
***
“মন দিয়ে শুনুন হে ভগবন”
ব্যসদেবের বিশ্রুত পুত্র শুক মুনি রাজা জনককে বললেন।
মধু ঝরা স্বরে তিনি বলে চলেন রাধিকার মানভঞ্জন
***
দীর্ঘ রাত শেষে কৃষ্ণ ছেড়ে যায় ইলাকে
ঈর্ষা চেপে রেখে, ধীর স্থির রাধা ইলাকে তার ঘরে নিয়ে আসে।
***
“দেখ, কতটা ধ্বস্ত করেছে সে তোকে
কতবার তাকে সাবধান করেছি আমি
আয় আমার সঙ্গে, একটু জিরো”।
ইলাকে নিয়ে যেতে যেতে রাধা বলে ওঠে।
***
মেহেদির আভা তার দুই গালে
যেন কৃষ্ণের কুণ্ডল
স্তন দুটিতে ঝকমক করছে তাম্বুলের লাল ছিটে
যেন বা কৃষ্ণের কৌস্তুভ মণি জ্বলছে
তার তছনছ হওয়া ঠোঁটের লালিমা
যেন বা কৃষ্ণের বাঁশি
তার এলোমেলো চুল, আলগা বেণী
আদি শেষনাগের মত, যাতে কৃষ্ণ শুয়ে আছেন।
***
সৌরি যেমত নিজ আভায় দীপ্ত,
সেইমত ইলা আসে, রাধা সঙ্গে
দাসীরা এগিয়ে আসে, সলা পরামর্শে মাতে।
***
“পুরুষের কামড়ের নেই কোনও উপশম
মেখে দেখতে পারো চন্দনচূর্ণ,”
“আঁচড়দাগ ম্লান হয় না, কুমকুমে ঢাকতে পারো”।
“জঙ্ঘার ধ্বস্ত নীল মেলায় না, সুগন্ধী জলে নেয়ে দেখতে পারো”
“রতি খেলা তোমাকে ক্লান্ত করেছে, সারা শরীরে চন্দন লেপন করতে পারো।’’
“কাম বেলা আপাতত শেষ,
এবার ওর দুই গালে লাগিয়ে দাও সুগন্ধী তেল”।
“ভেষজ লতাপাতা ফিরিয়ে আনুক জৌলুস
“পান খেতে দাও ওকে” কলতান বলে।
***
ওদিকে, শীতল সুগন্ধী জলে স্নান সেরে,
নতুন কাপড় পরে, চন্দন মেখে, প্রভু অন্ন গ্রহণ করেন পরিতোষ সহকারে
দাসীরা ঘিরে থাকে তাকে।
***
একদিকে দাঁড়িয়ে থাকে ইলা,
হাতে সুগন্ধী পান,
অপর দিকে বসে আছে রাধা,
কৃষ্ণের পায়ের পাতায় ঝুঁকে আছে বুক,
রতি কামনায়।
***
তানপুরার ঝঙ্কারে কোমল চরণ ছন্দে মেতে ওঠে
গোলাপি ঠোঁটে মধুর গীত বয়ে চলে
যুবতীরা গায় গাঁ দেশের গান।
***
তারপর, বিশিষ্ট রাজপুরুষ কুম্ভক তার অনুচরবৃন্দসহ
নিমন্ত্রণ জানাতে এলেন যাদবকুলশ্রেষ্ঠ, সমুদ্রদেবের জমাতা, দানবদলন কৃষ্ণকে।
***
কুম্ভকের আগমন বার্তা শুনে, কৃষ্ণ এবং রাধা তাকে আহ্বান জানালেন, যথাযথ আপ্যায়ন করলেন। কুম্ভক কৃষ্ণ ইলাকে নিজগৃহে আমন্ত্রন জানালেন, সঙ্গে আসার জন্য রাধাকে বিশেষ অনুরোধ করলেন। রাধা বলল, “মহাশয়, আমার অনুমতির প্রয়োজন কিসের? আমাকে বিশেষ নিমন্ত্রণ জানানোরই বা দরকার কি? আমি যাব অন্য কোনও সময়।এইবার, নবদম্পতিকে নিয়ে যান” । তার কথায় প্রীত হয়ে কুম্ভক সানন্দে ইলা আর কৃষ্ণকে নিয়ে চললেন।
***
তারপর সেই শূন্য গৃহে,
রাধা দেখে সেই প্রশস্ত শয্যা যাতে সে তার কৃষ্ণের সঙ্গে শুয়েছিল,
শূন্য শয্যা তার বুক নিংড়ে বার করে দীর্ঘশ্বাস।
মনে পড়ে সেই মিঠে ফিসফিস, চোখের জলে অন্ধ হয় চোখ
বারে বারে শুকের মুখে কৃষ্ণ নাম শুনে টনটন করে বুক
কামনায় বিহ্বল হয় দেহ, যখন শরীরের মনে পড়ে কৃষ্ণ স্পর্শ ।
***
মন্মথের তীরবিদ্ধ রাধা, অস্থির, যেন সূর্য তাকে গলায়
বিড়বিড় করে যেন কোনও প্রেমকীট কামড়ায় তাকে
স্তব্ধ, যেন মাথায় ভেঙে পড়েছে আকাশ!
***
চাঁদের নরম জোছনা তার শরীর ছুলে, সে জ্ঞান হারায়
মধুপের গুনগুণ স্বরে ঢলে পড়ে
মৃত্যু যেন তাড়া করে তাকে
সুবাতাস তার অঙ্গে ধরায় জ্বালা
রাহুর নিঃশ্বাস যেন বা
থরথর করে কাঁপে সর্বাঙ্গ
কামের প্রবল আক্রমণ রাধা প্রাণপণ সামলায় ।
***
টিয়ার মিঠেবুলিতে বিরক্ত রাধা,
হাঁসেদের সুরেলা ডাকে বিব্রত, ভীত রাধা
শয়নকক্ষে ডুবে থাকে নিজ ভাবনায় ।
***
এভাবে পুড়তে পুড়তে, দগ্ধ রাধা ভাবে:
“এই চোখ কি তাকে আবার দেখতে পাবে চোখের মন ভরে?
এই কান কি কখনো শুনতে পাবে ওই দানবনাশনের বাঁশি ?
কখনো কি সুযোগ হবে তার পা ধুইয়ে দেওয়ার?
এই শরীর কি কখনো তার আলিঙ্গনে মথিত হবে?
আমরা দুজনা কি আর কখনো একসাথে সাঁতার দেব দীঘির জলে?
কি আছে ভবিষ্যতের মুঠোয়?
হে ইশ্বর! কিছু ভাবতে পারছি না আর!
সমস্ত রসের ধারক তিনি
প্রেম ও করুণার আধার
অনঙ্গবিজয়ী তিনি
সেই মদন গোপালকে পাওয়া
কি কখনো ফুরাবে আমার?”
***
“কৃষ্ণের পেশীবহুল উরু
ওহ! কি সুঠাম ও শক্তিশালী
নাগরী ইলা অথবা নাগমণি !
কেউই তাতে টোল ফেলতে পারে না”।
***
“সেই বাঁকানো সরু গ্রীবা যাতে দোলে মহাসর্প
সেই ঘাড় যেখান থেকে শঙ্খের মত ঝোলে মহার্ঘ কৌস্তুভ
গোপাল স্বামীর কোমর জড়িয়ে থাকে পীতবস্ত্র
ঠিক যেন তার চক্র”
***
“আজানুলম্বিত বাহু
আয়ত চোখ দুটি যেন কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করছে
কাঁধযুগল উঁচু হয়ে উঠে যেন সেই ফিসফিস শুনতে চাইছে
দীঘল শ্বাস ফেলে মনদুখ রাধা,
তাকে মনে করে, চোখে হারায়।
***
“নীলাদ্রির মসৃণতল কি কখনও তার মসৃণ চুলের তুল্য?
যমুনার কালো জল কি তার চুলের চেয়েও কালো?
আঁধারপতি রাহুর পুচ্ছও কি তার অনিঃশেষ কেশদামের সমান?
তার চিকন চিকুর কি অগ্নির ঔজ্জ্বল্যকেও হার মানায় না?
***
খোলা চুল, তার সুন্দর মুখকে ঢেকে রাখে খানিক
গোপালের সেই অপূর্ব উজ্জ্বল দীর্ঘ কেশ !”
***
শ্রীহরিকে মনে করে ব্যাথায় নীল রাধা
টিয়াকে শোনায় বিরহের কথা:
***
“অনুক্ত আরক্ত উচ্চার, প্রেমময় আঁখিপাত
তীব্র আলিঙ্গন আর সোহন ভঙ্গি !
একবার এ স্বাদ পেলে, কোন নারী তাকে যেতে দেবে দূরে?
কেউ না, কেউ না, শুধু পিশাচিনী আমি ছাড়া !”
***
ফিরে আসব মূহুর্ত কাল পরে, সে বলেছিল
কিন্তু কত মূহুর্ত অতিক্রান্ত, সে ফেরেনি!
নিঠুর পুরুষ, কেন ফিরে এল না সে?
দয়া হয় না?
মনের কোথাও কি নেই আমি?
নাকি আরও খারাপ কিছু ঘটেছে, সে সমর্পিত ইলাতে?
হে রাম! মন্মথের বাণে আমার মন ক্ষতবিক্ষত, পুড়ে যাচ্ছে সকল কিছু
শোনো আমার কথা, প্রিয় শুক”
***
“আমার চোখ কেবল হরিকে খোঁজে
কান শুধু তার, একমাত্র তারই স্বর চায়
নাক শুধু চায় তার শরীরের ঘ্রাণ
ঠোঁট শুধু চায় তার ছোঁওয়া
গাল অপেক্ষা করে তার নখের আঁচড়ের
স্তন চায় তার দৃঢ় আলিঙ্গন
এই বাহু শুধু তাকে জড়াতে চায়
এই দেহ কেবল তাকে পাশে পেতে চায়
প্রতিটি অঙ্গ তাকে চায় আলাদা ভাবে?
যদি রক্তাক্ত হই
লুকতে হবে কেন?
জীবন মরণ বাঁধা আছে সেই প্রেমের দুনিয়ায়
যা শুধু
হরি আর আমার
***
রাধার ব্যাথার কথা শুনে
দরদী শুক বলে:
“শোনো গো মেয়ে,
তোমাকে সর্বস্ব দিয়েছে যে,
সে কি করে অন্যের কথা ভাবতে পারে?”
***
“ওগো মেয়ে
যেন তোমার গ্রীবা
যেন তোমার কোমর
যেন তোমার উরু
যেন তোমার গোড়ালি
যেন তোমার ভ্রূজোড়া
যেন তোমার নাক
যেন তোমার চুলের খোঁপা
যেন তোমার সুন্দর মুখ
এমনটি ভেবে
তিনি ধারণ করেন শঙ্খ এবং চক্র
দণ্ড ও খড়্গ
কৌস্তুভ, বাঁশি, ময়ূরপুচ্ছ আর পদ্ম
কি করে তিনি তোমাকে ছেড়ে যাবেন?
চিন্তা কোরো না কৃষ্ণকুন্তলা
শীঘ্রই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনব”।
***
“এমন দাবি কোরো না,
যাকে নড়ানো ব্রহ্মারও অসাধ্য,
তাকে তুমি কী করে ফেরাবে?
“তোমার শুভকামনায় আমি তাকে ফিরিয়ে আনবই”।
শুক কথা দেয়।
***
মিঠে বুলির সেই টিয়া পাখি পদ্মনেত্রের খোঁজে চলল
আর রাধা দাসীদের সঙ্গে নেমে এল বাগানের সবুজে
অপেক্ষায় রইল সে…দীর্ঘ …দীর্ঘ অপেক্ষা…
***
“এখনো ফেরে না কেন সেই সুন্দর শুক
সে কি পথ হারিয়েছে?
আদৌ পৌঁছেছে হরির কাছে?
দেখতে পেয়েছে সেই মনচোরাকে?
আমার কথা বলেছে তাকে?
নাকি সে নিজেই সমর্পিত সৌরির মিষ্টি কথায়?
***
প্রিয় মনে মনে অন্য নারীকে ভাবলেও
আমার মাথায় ব্যাথা শুরু হয়
যন্ত্রনায় অবশ হয়ে যায় সব
এ যদি প্রেম নয়, তবে কী?”
***
“যখন তাকে চুম্বন করি, সেও ফিরিয়ে দেয় চুম্বন
বলে, “বঁধু , তোমার ঋণ শুধলাম”।
যখন তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট চেপে ধরি, সেও তাই করে
বলে, “সুন্দরী, তুমি যে তৃপ্তি দিলে, ফিরিয়ে দিলাম তা”
তার গালে গাল রাখলে, সেও তাই করে,
বলে, সুকেশী, আমরা এখন সমান”
আমি তাকে জড়িয়ে ধরলে, সেও আমায় জড়ায়,
রতি খেলার সময়, সেও সাড়া দেয় প্রবল ভাবে,
বলে, “মীনাক্ষী, এ কারবার সমানে সমানে”
কী নটখট কৃষ্ণ আমার!
আর কত কী মনে করব?
কী করি এখন?”
***
শুককে ফিরে আসতে দেখে
যেন প্রাণ ফিরে আসে,
কুঞ্চিত কেশ রাধিকা উতলা হয়ে ওঠে
এস, শুক আমার, এস”
পাখিটি এসে বসে তার কব্জির উপর
মনমরা
হতাশ।
***
রাধার ঠোঁট কাঁপছে, নাকের পাটা ফুলছে
মধুর স্বরে শুধায়:
***
“দেখলে তাকে?
চেয়ে দেখলে তার সুন্দর মুখ?
তার কথা শুনলে?
তার স্বর কি তোমাতে আসক্তি জাগালো?
তুমি কি তার বুকের উপর জিরোলে?
সে তোমায় আপ্যায়ন করলো?
দুষ্টুমি করলো তোমার সাথে?
এখানে আমি একলা আকুল
সে কি অন্য নারীতে বিভোর?
সে বিনা জীবন দুঃসহ!”
***
এ কথা শুনে টিয়া নিজেকে স্থির করে,
স্পষ্ট গলায় বলে
“ওগো সুবচনী, সেদিন তুমি আমায় যে কৃষ্ণকে ফিরিয়ে আনতে পাঠালে…”
***
“কিন্তু কী বলি আমি তোমায়?
কী ভাবে বলি ,কী দেখলাম হরির ঘরে?
তাকে ঘিরে ছিল সহস্র যুবতী।
***
এক গোপিনী তাকে বুকে টানছে
আরেকজন চুম্বন ভঙ্গিমায়
কেউ আবদার করছে রাধার মত আদর কর
কেউ সুমিষ্ট ভাবে কাছে ডাকছে
কেউ বা দেখাচ্ছে কপট রাগ
কোঁকড়া চুলের এক মেয়ে বাতাসে চুম্বন ছুঁড়ছে
কেউ আবার তার পা টিপে দিচ্ছে
তাকে ছুঁয়ে যায় কেউ খেলাচ্ছলে
কেউ বা দেয় উস্কানি”
***
কথা বলার সময় নয় এ, ভেবে আমি আমগাছে গিয়ে বসলাম
যুবতীরা জড়ো হচ্ছে, চুপ করে দেখতে থাকলাম
***
এক সুন্দরী এসে বলে, “চতুর চূড়ামনি! তোমার ছলাকলায় মোহিত আমি
আমাদের সখীকে অনঙ্গের মর্জির উপর ছেড়ে দিয়ে
এইখানে গোপিনীদের সঙ্গে রতিখেলা কি ঠিক ?”
***
“ইলার সখী বুঝতে পেরে সে তাকে জড়িয়ে ধরে
আদায় করে কথা, সে যেন ইলাকে না বলে এইসব কথা!”
***
সমস্ত কামদৃষ্টি সরিয়ে রেখে, উদ্ধত কামলেখা শরীর
না দেখে তিনি এগোন
ইলার সখী খুলে ফেলে কাঁচুলি
এগিয়ে যায় মোহনের দিকে
বুকের মাঝে খেলা করে বেণী
কামময় চারপাশ
***
“কৃষ্ণের চুল এলোমেলো
খুলে পড়ছে গলার হার
পায়ের মল আওয়াজ তুলছে
ঘামে ভেজা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে
সে তবু ভেবে যায় কেবল ইলারই কথা”।
***
“সৌরি আসে ইলার ঘরে,
সুন্দর তরুণী ফুটে উঠে প্রেমে ও কামে,
কন্ঠার নিচে জেগে আছে বুক,
চোখে কামনার চমক, মুখ বাসনা বিভোর,
দুর্মর কৃষ্ণের কাছে আসে সেই মেয়ে।
কৃষ্ণকে জড়িয়ে ধরে সে, টেনে নেয় শয্যায়,
সম্পূর্ন জেগে উঠে সে কৃষ্ণের শরীর জাগায়।
***
অজান্তে সেই ঘরে ঢুকে
কিছু পুতুলের আড়ালে লুকিয়ে
দেখি তাদের রতি খেলা
***
“একে অপরকে ছুঁয়ে ছেনে,
হেসে, ফিসফিসিয়ে মিঠে কথা, রতিখেলা শুরু হয় আকুল চুম্বনে,
প্রবল আলিঙ্গনে, দংশনে,
উৎসাহে, আর্তিতে, “আহ! কি অপূর্ব! হে ঈশ্বর কি অদ্ভুত!
অসামান্য! চমৎকার! থেমো না”
কোন ভাষা নেই বর্ণনার?
***
যখন অনঙ্গনাশন তাকে জড়িয়ে ধরতে যায়
সে মেয়ে ছেনালি করে এগিয়ে আসে
বুক চেপে ধরে তার বুকে
কৃষ্ণের ঠোঁট আঁকড়ায় তার ঠোঁট
প্রত্যুত্তর দেয় সে
তার খোলা পিঠে কৃষ্ণের নখ গেঁথে যায়
সে আঁচড় দেয় কৃষ্ণের গালে
***
এভাবেই তারা মশগুল হয় রতির আনন্দে
ভিন ভিন আদরের ধরণে তৃপ্ত করে এক অপরকে
***
“কৃষ্ণ যত আসনে রতি তে মাতে
সে সাড়া দেয় অনায়াস।
কৃষ্ণ যখন চূড়ান্তে পৌঁছায়
ইলা তাকে পুনরায় বিদ্ধ করতে প্ররোচনা দেয়”।
***
রতিখেলা নয়, এ যেন প্রেমের যুদ্ধ
প্রেমে কামে বাসনায় ডুবে গিয়ে
নিজেকে প্রকাশ করে সে মেয়ে,
ছলাকলায় মাতে তার মুরারির সঙ্গে ।
***
“সুতীব্র আনন্দ দিয়ে
শরীরি প্রেমের সকল সাধ মিটিয়ে
ব্রহ্মানন্দে পৌঁছে
হরি আনন্দ সায়রে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়”।
রাধিকা সান্ত্বনমের দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত হয় এই ক্ষণে । লিখে চলেন মুদ্দুপলানি সাহিত্য সঙ্গীত এবং নৃত্যে যার দক্ষতা কৃষ্ণের আশীর্বাদে প্রশ্নাতীত।
Posted in: March 2020, Translation
প্রতিটি অনুবাদে অমৃতা নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন। আসলে এই কাজটি একটা প্রজ্ঞা দাবি করে। অমৃতা যাত্রাপথে যে তা আহরণ করছেন নিয়ত তা বোঝা যায় শব্দচয়ন দেখে। একটিও অতিরিক্ত শব্দ নেই, একটি বিশেষ সময়কালের মেজাজকে, নাটকীয়তাকে অবিশ্বাস্য মোলায়েম ভাবে দুধের সর তোলার মত তুলে যাচ্ছেন। অতুলনীয়।