মণিদীপা সেন-এর কবিতা
অন্তস্থ
বৃন্তে বাতাস লেগেছে। ঈষৎ মধ্যাহ্নে খুঁটে খাচ্ছে বুকের একমাত্র শস্য। বাড়ি প্রয়োজনীয় শুধু ছাদের জন্য। আকাশের সাথে আর একটু উচ্চতার সংসর্গ। খোলা মলাট থেকে সুতো ছিঁড়ে পাতারা ঘিরে ধরছে। এটুকুর জন্যেই গতরাত থেকে অযাচিত অশান্তি, একলা হওয়ার তাড়নায় উন্মুখ খিস্তি – তারপর চুপ। খিদে মারিনি। মাঝরাত পর্যন্ত পুষেছি। যত্নে জমানো ক্ষোভ মধ্যম পুরুষে উগরে যখন আলো ফুটেছে – রচনা করেছি সেতু, শুয়ে পড়া আর ঘুমিয়ে পড়ার মাঝে। অর্থাৎ সেই দুর্লভ প্রেক্ষাগৃহে ছিলাম যেখানে আমি একলা দর্শক, একলা ও ইউনিক এক সিনেমার।
বহু বছরের সম্পর্করা সাজসজ্জা ছেড়ে এক লম্বাটে স্নানঘরে নগ্ন। বুক পর্যন্ত পা ঢাকা দিয়ে মুখময় জলীয় নুন ও আশঙ্কা- ও এলোনা কেন? বালির প্রাচুর্যে ঢেকে যাওয়া নদীগর্ভ থেকে উঠে আসছে তার সঙ্গী, হাতে ঘন কালো স্যুটকেস ; মধ্যাহ্নের রোদে প্রতিফলকের কাজ করছে। ক্রমশ বিস্তৃত হতে থাকা আমি অন্তস্থ তড়াগ, নাহ! সে এসেছে সেভাবেই -থাকবে বলে যেভাবে চলে গেছিল।
আহুতি
যে শেষ জঙ্গলটা পুড়ছে, ওখানেই। এমনিতেও নেমে যাচ্ছে অক্সিজেন স্তর । মৃত্যু শুধু ফুসফুসের দায় কেন হতে যাবে? লকেটের মুখ খুলে দিলাম। কাঁচা মুক্তোর মত কয়েক ফোঁটা … ব্যাস।
চড়চড় করে কাঠ ফাটছে। উদভ্রান্ত পশুর ক্ষুর, রিদমলেস! চিতলের গা থেকে একটা একটা খুলে যাচ্ছে সাদা টিপ। পালকের সরু সরু নরম ক্রমশ গুটিয়ে আসছে।
হু হু বেড়ে চলেছে শুকনো পাতার ধুনি। চোখ মেলে, মেলতে চেয়ে দেখে নিচ্ছি সদ্য পোড়া আকাশ, আজ যেন তারও গন্ধ আছে, ঝাঁঝ আছে! মাটির উপরে গোড়ালির ক্ষত যেমন।
অল্প আধারে জমা স্মৃতির অপভ্রংশ। কোমরে জড়ানো কালো সুতোর অচল পয়সা ছুঁই। তার চামড়া মসৃণ, ধর্ম চুম্বক। তার পরিসীমা ধরে ঘুরতে ঘুরতেই জেনেছিলে নাভির উত্তরমেরু।
এখন আগুনে গোধূলির রেলপাটিতে কান পেতে আছি আমরা। গুমগুম শব্দে এগিয়ে আসছে নিয়তি। আজ, শ্রেষ্ঠ নদীতে তলিয়ে যাওয়ার দিন। এই তো শেষ জঙ্গল। এইবার, তোমার লকেটের মুখটা, খুলে দাও।
Posted in: February 2020, Poetry