দীপ শেখর চক্রবর্তী-এর কবিতা
মরুভূমির বাদ্য
অবহেলায় ভেতর আমি পেয়েছি এক আশ্চর্য বন
তার সম্মুখে সমস্ত চরিত্র ছেড়ে নগ্নপ্রায় বসে থাকি
আমার ভেতর এক দানব আছে
তার এক পোষা প্রজাপতি আছে
দুজন খেলতে খেলতে গিয়ে ঢোকে গভীর বনে
ওমনি বুঝি সে বন এক উন্মাদিনীর বিরাট চিৎকার
গিলতে আসে,আমি বনের মায়া ছেড়ে ধীরে ধীরে মরুভূমির দিকে সরে যাই
এভাবে তীব্র জলকষ্ট নিয়ে ক্রমাগত বালি নিয়ে খেলা
এত দূর চলে গেছি পথে পিছু নেয় হাওয়ার নিঃশ্বাস
সেই দূরে শুনি এখনো পাখি ধরে খায় বনের উন্মাদিনী
আমি শুধু বালির ওপরে
লিখে রাখি মানুষের রেখে যাওয়া অবহেলা কেমন মরুভূমিতে বাদ্য হয়ে যায়
সে বাদ্য বাজাই আমি,দানব ও প্রজাপতি রাত্রিব্যাপী মরুভূমিতে নেচে নেচে ওঠে।
দীক্ষা
শরীরের বিরাট কুয়োয় একের পর এক পাথর পড়ে
উঠে আসে জল
গা ভেজায় না,মাথা না ঘষে শুধু
উপচে পড়া দেখে গোপনে মজা পায় শৌখিন পাঠক
কুয়োতে কোন ছাদ নেই ঘর গড়ে থাকার মতো
দিকে দিকে নারকেল পাতায় ঝুলে থাকে নিন্দের দেবতা
শুধু মাঝে মাঝে তাতে ঝাঁপ দেয় গ্রামের কোনও যুবতী কামনা
সে অতৃপ্তি গভীর হেমন্তের রাতে মাঠের পর মাঠ ঘুরে কাঁদে
এ কান্নার পিছু পিছু যাওয়া সহজ নয়
যে যায় ,গায়ে ধূলো মাখা সেই উন্মাদ দেখে
মুণ্ডিত মাথায় মাঠে এসে বসেছে জ্যোৎস্না
তার কাছে দীক্ষা নেয়
জানে
আগুনের প্রতিটি শিখা মানে ক্ষমা,নিজেকে পোড়ানো
সংসার
আমাদের উনুন নেই আর বাড়িতে
অথচ মা উনুনে যে কি করে মাথা ঢুকিয়ে বসে থাকে
এই এক রহস্য
দুহাজার এগারোর এক বিকেলে বাবা খবর বন্ধ করে এসে বারান্দায় বসেছিল
অথচ বাবা অবসর নিয়েছিল আরো ছ বছর পর
নতুন ইঁটের বাড়িতে জল দিতে দিতে বাবা বিকেলের আকাশে কান পেতে থাকে -কারো কোন গলায় কি শোনা যাচ্ছে?
কাস্তে হাতুড়ি তারা
সে জল ছিটকে আমার গায়েও লেগেছিল।বি টি রোড ধরে যেতে যেতে ভাবি,এখানে তুলো কল ছিল,এখানে সেই পুরোনো বাড়িটা
আর এই সেই গলি এক সন্ধেতে লীনা, সুমনের সেই ঠোঁটে ঠোঁটে ব্যারিকেড করা শিখিয়েছিল
লীনা হয়ত এখন সন্ধেতে ধারাবাহিক দেখছে শাশুড়ির পাশে বসে
কালো পট্টিখানা খুলে রেখে সেসব দেখে মা-ও।
শুধু আমি আর বাবা বারান্দার দুপাশের ঘরে দুটো চেয়ারে বসে থাকি।মাঝের দেওয়ালে বিষন্ন টিকটিকিরা শিকারের প্রার্থনা করে ক্যালেন্ডার ফুরোলে
সামনে সেই পুরোনো জলের কল,জং পড়ে গেছে
আমি হাতলটা দেখি
বাবা হয়ত দেখে কলকল করে সংসারে বলার মতো কথা এসে উঠোন ভিজিয়ে দিল
কান পেতে থাকি
মনে হয় বাবা যেন নিঃশব্দে ডেকে চলেছে-খোকা ঘুমোবি আয়
ঘুমোইনা কেউই কোনদিন
শুধু মায়ের রাত নটার রান্নার ঝাঁঝ বুক ভরে টেনে নিতে সারাদিন পাশাপাশি ঘরে বসে থাকি।
Posted in: February 2020, Poetry