গ্রন্থ আলোচনা : বাসু আচার্য

‘The “Spring Thunder” And Kolkata: An epic story of courage and sacrifice (1965 – ’72)’ by Dr. Amit Bhattacharyya

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক শ্রী অমিত ভট্টাচার্য নকশালবাড়ি ও কলকাতা বিষয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের গ্রন্থ রচনা করেছেন। বইটির নাম ‘The “Spring Thunder” And Kolkata: An epic story of courage and sacrifice (1965 – ’72)’। শ্রী ভট্টাচার্য অনেকদিন ধরেই নকশালবাড়ি আন্দোলন ও তার বিভিন্ন ধারা নিয়ে গবেষণারত। তাঁর ‘Storming the Gates of Heaven’ কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলির ইতিবৃত্ত জানার ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী বই। ১৯২০ থেকে স্বাধীনতার সময় অব্দি বাংলার স্বদেশী এন্টারপ্রাইজগুলির ওঠাপড়ার ইতিহাস সম্পর্কেও দুই খণ্ডে তাঁর প্রণিধানযোগ্য কাজ রয়েছে। তাই একথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে, শ্রী ভট্টাচার্য আমাদের দেশের বিপ্লবী ইতিহাসের অন্যতম অগ্রণী লেখক ও গবেষক।

আগেই বলেছি, আমাদের আলোচ্য বইয়ের কলেবর খুব দীর্ঘ নয়। কিন্তু ক্ষুদ্র কলেবর সত্বেও নকশালবাড়ি আন্দোলন কিভাবে গড়ে উঠেছিল এবং ছড়িয়ে পড়েছিল কলকাতার মতো একটি কসমোপলিটান শহরে তার সুন্দর বিবরণ পাওয়া যায় এই বইতে। নকশালবাড়িতে কৃষক অভ্যুত্থানের গড়ে ওঠা, তার প্রাণপুরুষ কমরেড চারু মজুমদারের সংক্ষিপ্ত জীবনী, আন্দোলনের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক লাইন ইত্যাদি নিয়ে শুরুর আলোচনা থেকেই মন কেড়ে নেন লেখক। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি নকশালবাড়ির ইতিহাস এবং রাজনীতি ব্যাখ্যা করেছেন, তুলে ধরেছেন চারু মজুমদারের চিন্তার মৌলিক দিকসমূহ। এছাড়াও তিনি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন ভারতবর্ষে শ্রেণি রাজনীতির বিভিন্ন বাঁক, তার শোষণের বিবিধ রূপ। কলকাতায় নকশাল আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়া এবং ক্রমশ তার এক বিপুল আকার ধারণ—এই নিয়ে বেশ মনোযোগসহকারে কাজ করেছেন শ্রী ভট্টাচার্য। এই বইয়ের আরও একটি বিশেষ দিক হলো, কলকাতায় কমিউনিস্ট বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত এলাকা, স্মৃতিসৌধ, বাড়ি এবং আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবিশেষের কয়েকটি দুর্লভ আলোকচিত্র এতে সংযোজন করা হয়েছে, পরিশিষ্ট অংশে স্থান পেয়েছে কলকাতায় কমিউনিস্ট বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দু-একজন পার্টিকর্মীর স্মৃতিচারণ।

কিন্তু ভালো কাজের সাথে সাথে কিছু সীমাবদ্ধতাও তো থাকে। শ্রী ভট্টাচার্যের এই গ্রন্থটিও তার ব্যতিক্রম নয়। বইতে কলকাতা পার্টির তিলজলা এলাকার দুই নেতাকর্মী কমরেড কমল সান্যাল এবং কমরেড অগ্নি রায়েব হত্যার ঘটনা স্থান পেয়েছে। শ্রী ভট্টাচার্য্য এঁদের কলকাতা জেলা কমিটির নেতা বানিয়ে দিয়েছেন, যদিও এঁরা আদতে ছিলেন তিলজলা এরিয়া কমিটির লোক, কমল সান্যাল ছিলেন সেই কমিটির সম্পাদক। ১৯৭৩ সালে এই হত্যার তদন্তের দাবি করে বিহার নেতৃত্বকারী টিমের নেতা কমরেড জহর একটি লিফলেট প্রকাশ করেন। সেটির কথা শ্রী ভট্টাচার্য উল্লেখই করেননি। উল্লেখ করেননি যে, এই খুনের পেছনে কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন কমিশনার ও কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা মুকুর সর্বাধিকারীর নামও এক সময় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের তরফ। এছাড়া কমরেড সরোজ দত্তের শহীদের মৃত্যুবরণ সম্পর্কেও আরেকটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন ছিল। পুলিশের হাতে কমরেড সরোজ দত্তের খুন হওয়া ও তৎকালীন পার্টিতে সেই নিয়ে গড়ে ওঠা দুই লাইনের লড়াই প্রসঙ্গে শ্রী ভট্টাচার্য আশ্চর্যজনকভাবে নীরব থেকেছেন। কলকাতা পার্টির থেকে দীপক-দিলীপ চক্রের লিফলেট প্রকাশ এবং তার বিপ্রতীপে কমরেড চারু মজুমদারের শহীদ স্মরণে রচনা এবং তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দুই লাইনের সংগ্রাম নিয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন ছিল। সমন্বয় কমিটির যুগ থেকে সিপিআই (এম-এল)-এর পার্টি কংগ্রেস অব্দি উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা এলাকার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক নিশীথ ভট্টাচার্য। তিনিই পার্টির প্রথম বড় নেতা যাকে পুলিশ পাকড়াও করতে পেরেছিল—উত্তর কলকাতার বুদ্ধু ওস্তাগর লেন থেকে। তাঁর রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কেও কিছু বলার দরকার ছিল।

যাইহোক, ছোটখাটো ভুল সত্বেও শ্রী অমিত ভট্টাচার্যের আলোচ্য বইটি নবীন পার্টিকর্মী ও সাধারণ পাঠকদের যথেষ্ট সাহায্য করবে বলে মনে করি। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই সেতু প্রকাশনীকে, এমন একটা বই এত যত্নসহকারে প্রকাশ করার জন্য।

গ্রন্থ : ‘The “Spring Thunder” And Kolkata: An epic story of courage and sacrifice (1965 – ’72)’ by Dr. Amit Bhattacharyya
প্রকাশনী : সেতু প্রকাশনী
বিনিময় : Rs. 250 (pb)

Facebook Comments

Leave a Reply