সম্পাদকীয়

Aparjan cover-Januaryরাষ্ট্রনায়ক টোলে দাঁড়িয়ে ফুং ফাং কিছু বলেই ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন ‘বোলিয়ে ইয়ে 2ab কাঁহাসে আয়া হ্যায়?’ ছাত্ররা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। কড়ি বরগায় চোখ তুলে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল। কঠিন অঙ্ক! কোন ছাত্রের জানার কথা নয়। কারণ তাদের সিলেবাসে নেই! তবে কি Vedic Math এর উৎস? বোঝা গেল অঙ্কটা কঠিন আরও এজন্য যে সিলেবাসে নেই। অগত্যা শরণাপন্ন হওয়া গেল বোস আইনস্টাইন রামানুজ ইত্যাদি প্রভৃতি অঙ্কবিশারদদের। তাঁদের পাশাপাশি বসিয়ে সেই অঙ্কটা সমাধানের কথা বলতেই সবাই পূর্বোক্ত ছাত্রদের মতই পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। বললেন ‘এই অঙ্ক বিজ্ঞানের সঙ্গে তালুক রাখে না। সে অর্থে সিলেবাস বহির্ভূত এবং অবশ্যই অসম্ভাব্যতার অঙ্ক, পলিটিক্যাল ম্যাথ হতে পারে। উৎস ঠিক বলা যাবে না তবে রাজনৈতিক ইতিহাসের চ্যাপ্টার ১৯২৫, নাগপুর ভার্সন হলেও হতে পারে!
সেটা একটা যুদ্ধ। যুদ্ধ মানেই ইতিহাস। ইতিহাস আজকের যুদ্ধের বিষয়। ইতিহাসের কথা উঠতেই রোমিলা থাপার ইরফান হাবিবের শরণাপন্ন হওয়া গেল। হয়ে জানা গেল সুপ্রিম কোর্টের এক সাম্প্রতিক মামলার রায় দেখার পর তাঁরা ইতিহাস বিস্মৃত। বললেন পলিটিক্যাল হিস্ট্রি এখন হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত! শুধু তাই নয় এই সেদিন দেখলেন না সার্জিক্যাল … গলা কাটা হল একটা জন্তু আর একটা মানুষের । তারপর কোদাল দিয়ে ইহাকা মাটি উহা … ঘটলো দেবতার আবির্ভাব!! তাও আবার মানুষের হাতে। মানুষ পুজো পেল না। এটাও এখন ইতিহাসের একটা পৃষ্ঠা। পৃষ্ঠপোষক বাকিরা … একটু একটু করে অতীতের গর্ভেই সিঁদ কেটেছে…তেতো লাগেনি কারো। সহনশীল বলে ‘মোর নাম খ্যাত’ হয়েছে …বেশ চলছিল। কিন্তু চলল কই! চলছে কই!!
রফার ফল অনেকটাই রিফু করা বসন যেমন। না হয় স্বাদু না হয় টেকসই।
একদিন এক মাস্টার মশাই ‘প্রজা আসলে ধনতান্ত্রিক দিবসে’র আগে ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন
‘তেরঙ্গায় রং কটা?’ এটা আবার প্রশ্ন হল? সবাই এক স্বরে এক সুরে বলল ‘তিনটে স্যার।’ কেবল একটি ছাত্র বলল ‘না স্যার পাঁচটা’! মাস্টার মশাই তাকে কান ধরে বেঞ্চের ওপরে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ছেলেটি অমান্য করে নি। আবার তিনটে মানতেও রাজী হয় নি। মাস্টার মশাই জিজ্ঞেস করলেন ‘তোমার পাঁচটা রং বল।’ ছাত্রটি বলল ‘স্যার, গৈরিক, সাদা, সবুজ, মাঝখানের চক্রটা স্যার নীল, চারটে হল… আরেকটা, স্যার, লাল।’ লাল কোথায়? স্যার, ওই চারটে রংয়ের সাথে মিলিয়ে আছে রক্ত—আসফাকুল্লা, ভগৎ সিং—হাজারো শহীদের রক্ত। রক্ত লাল স্যার, ওরা রক্ত না দিলে চারটে রং আসতো না স্যার…. সেজন্যেই বলেছি পাঁচটা ….স্যার…’তুমি বস’ বলে মাস্টার মশাই বেরিয়ে গেলেন….

ওই ছেলেগুলোই রক্ত ঢালতে, আজ আবার যত সব কঠিন অঙ্ক মিলিয়ে দিতে, রক্ত ঢালতে রাস্তায় নেমেছে…এমন যুদ্ধটাই বাকি ছিল…

আজ তাই ধর্মে-বর্ণে-মানুষে-দেশে-দেশে যে যুদ্ধজিগির, তা আমাদের গুগাবাবা’র হাল্লারাজার কথা মনে করায়। প্রজাদের খাবার নেই, বস্ত্র নেই–রাজা চলেছে যুদ্ধে …

এই সংখ্যা সেই যুদ্ধজিগিরের বিরুদ্ধে, এই সংখ্যা জিগিরের বিরুদ্ধে মানুষের প্রাণপণ লড়াইকে কুর্ণিশ জানাতে …

অপরজন
জানুয়ারি ২০২০

Facebook Comments

Posted in: Editorial, January 2020

Tagged as:

Leave a Reply