দেবাশিস ঘোষ-এর কবিতা

বুলাদির ব্রা বদল

সংলাপ জারিত হলে কাঁচা লঙ্কা মুড়ি ইত্যাদি
বিকেলের মেঘে উড়ে বারান্দায় মিনারের ছায়াপাত ঘটে যায়
আলোর ভিতরে তোমার বিন্যাস দেখে ফেলি
অসতর্ক বুলাদির ব্রা বদল মুহূর্তের পাতলা কিশোর
আবছায়া বয়ে যাওয়া তারপর তারপরে গোলাপী রোদ্দুর
দ্রৌপদীরা ঘরে ফেরে সন্ধ্যা হলে পল্লীর স্নিগ্ধতাও ফেরে
বুলাদি তখন সব চকচকে টেনে এনে
মুখমন্ডলে রাখা ট্রেঞ্চের খাঁজে খাঁজে গোঁজে
কিশোরের জল বাড়ে ধীরে ধীরে কুয়াশা নিকেশ
ও হরি এটাই তবে ! এরকমই ঘটে চিরকাল!
তোমার প্রশ্রয় পেলে মেঘ থেকে তারা ছিঁড়ে এনে
মাথাভর্তি সমুদ্রের চুলে আটকে দেব
গাছে গাছে পাখীদের খেতে দেবো ক্যাডবেরী সুধা

কাকের প্রকারভেদ

পিচ রাস্তায় এক চৈত্র কাক
ছোট্ট তার ছায়া
চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি – অভিজ্ঞ কাক
বটের ঝুড়ির মতো তার কোনো শাখা নেই
একেবারেই আদি এবং অকৃত্রিম কাক
জীবনে কতরকম কাক দেখেছেন প্রশ্ন করলে
ভোলা দাস সবসময়ই উত্তর দেন সাড়ে সাঁইত্রিশ রকম
প্রশ্ন রাখুন সাড়ে কিভাবে
তখনই ভোলা দাসের কী ভীষণ হাসি
ঠিক ছমিনিট পরে হাসি থামলে তিনি উত্তর দেবেন
সবাই একটু বাড়িয়েই বলে থাকে তাই তিনি মাত্র আধ
ততক্ষণে আপনি প্রশ্ন রাখতে ভুলে গেছেন সাঁইত্রিশই বা কিভাবে!
ভোলা দাস বলে যাবে এক নম্বর কাকেরা খুব ভদ্র হয় এরা এলিট শ্রেণীর
দ্বিতীয় শ্রেণীর কাক ভীষণ বাঁচাল হয় সকাল থেকেই চেঁচাতে থাকে
তৃতীয় শ্রেণীর কাকেরা দার্শনিক প্রকৃতির হয়
এরপর হয়তো ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার নেতা কাকের শ্রেণীর তালিকাও
ভোলা দাস দিয়ে দেবেন
কিন্তু আপনি বাড়ি ফিরবেন বলে আসি তবে ভোলাবাবু বলবেন
ভোলা দাস তখনি একটি গ্লাস থেকে চায়ে চুমুক দেবেন
তারপর সন্ধ্যা নেমে আসবে পাহাড়ের ওপার থেকে
ঘষা কাচের মতো ছদ্মবেশী অন্ধকার এলে
আমরা দাঁড়িয়ে যাব কয়েক মুহূর্ত
হঠাৎ কাকতাড়ুয়ার কথা মনে পড়ে যাবে
মনে পড়ে যাবে একবার একজন নিঃসঙ্গ কাককে দেখেছিলাম
শহরের উপকন্ঠে – বিষণ্ণ, ভৌতিক কাক
তার চোখে বিকেলের কালো মেঘের টাটকা কাজল
সেসব কাকের কথা টেলিফোন টাওয়ারের গোপন গহ্বরে
মুহূর্মুহু উড়ে আসে
আমি ক্ষীণ শ্রবণশক্তিতে বলেছি
কাকের গোপন ব্যথা প্রেমহীনতার ব্যথা

দাগ

ভীষণ সম্রাজ্ঞী হতে শিখেছো নিজেকে
প্রকাশ্যে ঘুরিয়ে দেওয়া মুখের চাদর
এইসব বিপর্যয় রোঁয়া ওঠা অনুভূতি বুক পকেটে
খচ খচ বিঁধে চলে সমস্ত দুপুর
রাজপাট অবলুপ্ত কিংবা কাল্পনিক
তোমার উদ্ধত নাক অবজ্ঞায় পরিপূর্ণ চোখের উঠোন
মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আমার আঙুল ছুঁয়ে রক্তকণায়
খাদ্যরত সাপের মতোই নিজেকে প্রসার করি
তোমার পুরোটা অবজ্ঞাকে জায়গা করে দিই
নাই দিলে শ্বেতপত্র নাই দিলে সোঁদা চুম্বন
অবজ্ঞাই ছুঁড়ে দাও, দেয়ালভর্তি করে দাগ দিও

Facebook Comments

1 thought on “দেবাশিস ঘোষ-এর কবিতা Leave a comment

  1. তিনটি কবিতাই ভীষণ সুন্দর !! ” বুলাদির …. ” এ ‘ও হরি ‘ এক্সপ্রেশন্ এর দুর্দান্ত প্রয়োগ !!

Leave a Reply