হল্লা বোল : অনন্যা চন্দ

সভ্যতার প্রদোষ মূহুর্ত থেকে চলেছে মানুষের অস্তিত্বের লড়াই। অধিকারের লড়াই, সম্মানের লড়াই। তাতে বাদ পড়ে না শিশুর জন্ম থেকে বৃদ্ধের মৃত্যুও; মাতৃগর্ভে একটি শিশু আসার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় তার লড়াই। প্রথমতঃ তার কাঙ্খিত হওয়ার লড়াই। দ্বিতীয়তঃ শারীরিক লড়াই। এরপর মাহেন্দ্রক্ষণে জন্ম। তারপর থেকে শুরু হয় বাকি লড়াই। কথায় আছে – ‘কোল আলো করে শিশু জন্ম নেয়’। এখন প্রশ্ন হল – এই ‘কোল আলো করে যে জন্মগ্রহণ’ করল তার ভবিষ্যত কতটা আলোকময়? এক হতে পারে – সে অন্যকে অন্ধকারে রেখে নিজে আলোকিত হল। আবার এও হতে পারে অন্যের কোল আলো করার জন্য নিজে অন্ধকারে থেকে গেল। অর্থাৎ এই আলো করার বিষয়টি খুব অদ্ভুত। লড়াই কিন্তু চলেইছে। জন্মের আগে তার লড়াই ছিল, সে কি পৃথিবীতে জন্ম নেবে? জন্মের পর আবার আকাঙ্খার লড়াই। যেখানে মান্ত্র হল – সে ছেলে না মেয়ে? ভুমিষ্ঠ শিশুর লড়াই শুরু। সমাজ-সংসার সহজেই লড়াই-এর অস্ত্র ধার্য করে দেয়। ছেলের খেলার সাথী বাঘ, সিংহ বা বন্দুক। মেয়ের খেলার সাথী পুতুল বা খেলনাবাটি। বাঘ, সিংহ, বন্দুক সবটাই শক্তির পরিচায়ক। তাই শুরু হয়ে যায় শাসন করার ট্রেনিং। আর পুতুল বা খেলনাবাটি—পুতুল কে? শিশুকন্যাটি? নাকি তাকে ছোট থেকেই ট্রেনিং দেওয়া হয় অন্যকে নিজের হাতের পুতুল করার জন্য! আর শিশুকন্যার খেলার সামগ্রী বাঘ, সিংহ নয় কেন? তার কি গর্জনের প্রয়োজন হতে পারে না!! আর যাতে সে গর্জে উঠতে না পারে সেই জন্যেই কি খেলনাবাটি!! যাতে ছোট থেকেই তার মধ্যে ঘরের কাজের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়—আর বদ্ধ জগতের পুতুল হয়ে সমাজের চোখে সংসারী হয়ে ‘বেঁচে আছি’ বলে ‘বেঁচে থাকার’ প্রহসন করতে পারে! অর্থাৎ ছোট থেকেই শিশুর লড়াই শুরু যেখানে তার যুদ্ধক্ষেত্র হল তার বাড়ির পরিবেশ। তাই যারা বলেন লড়াই শুধুমাত্র রাজাদের কাহিনী, তাদেরকে বলি লড়াই শুধু বর্তমান রাজার নয়। লড়াই ভাবী রাজারও।
শিশুর খেলার জগতের পরিধি এবার বিস্তার লাভ করতে থাকে। ঘরের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে এবার সবুজ মাঠ। যেখানে সমবয়সী অনেকের মাঝে নিজের অস্তিত্বের লড়াই। একজনের চোখ বেঁধে ‘কানা মাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ’ – বলে তাকে একপ্রকার নির্যাতন করা। অদ্ভুত ভাবে, যে প্রথমে চোখ বাঁধা থাকার ফলে মার খেয়ে থাকে, সে-ই যখন আবার অন্যপক্ষ হয় তখন সেও একই কাজ করে। অর্থাৎ নির্যাতিত হওয়ার রাস্তাই তাকে নির্যাতন করতে শেখায়। অবস্থার ফেরে একবার সে শোষিত, পরের বার সেই শাসক।
শিশুর বয়স বাড়তে থাকে, বাড়ির রাজাবাবু, দেশের রাজাবাবু হওয়ার জন্য স্কুলে ভর্তি হয়। স্কুলে সবচেয়ে বেশি ঝোঁক ক্লাস মনিটর হওয়ার প্রতি। যতটা না শিশুর, তার চেয়ে বেশি তার বাব-মা’র। শিশুর অবচেতন মন বলতে থাকে—‘মনিটর হলে সবাই আমাকে মানবে। টিচাররা আমায় বেশি ভাল করে চিনবে।’ এবং সবচেয়ে বড় কথা হল টিচার না থাকলে ‘I am the supreme of the class’। আর বাবা-মায়ের চেতনা মন – ‘আমার ছেলে/মেয়ে ক্লাস মনিটর’। অর্থাৎ টিচারের অনুপস্থিতিতে ‘আমার আত্মজই হল শাসক’। এই মনিটর ব্যতিরেকে বাকি বাচ্চারা যারা চুপ করে কথা শোনে, টিফিন টাইমে টিফিন দিয়ে তাকে হাতে রাখতে চায়, তার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলায়, তারা আজীবনকালের শোষিত শ্রেণীতে পরিণত হয়। আরেক দল বাচ্চা ক্লাসে থাকে, যারা—কিছুতেই মনিটর-এর আনুগত্য স্বীকার করে না। টিচারের দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নেয় আর প্রতিনিয়ত নিজের সাথে নিজের অস্তিত্বের লড়াই চালাতে থাকে। তার কাছে প্রশ্ন—সে আসলে কী? বা কে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই অবাধ্য বাচ্চাগুলি বাড়িতে এর জন্য খুব বকা খায়। মারও খেতে পারে। ফলে সেই বাচ্চা প্রতিনিয়ত গুরুজনরূপী শাসকের দ্বারা শোষিত। শাসক-শোষিতের সূত্রপাত তাই শুধুমাত্র পুঁজিপতি ও শ্রমিক শ্রেণীর মিটিং-মিছিলের স্লোগানের নয়। এই মার খাওয়া, বকা খাওয়া শিশুগুলো প্রতিনিয়ত এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে হয়ে ওঠে গোঁয়ার। যেখানে সে নিজের কাছে নিজেই শাসক। তাই মনিটরও তার কাছে যেমন, অন্যান্য বাচ্চারাও তার কাছে একই রকম।
ওই মধ্যপন্থার বাচ্চারা মনিটরেরও অনুগত আবার দুষ্টেরও অনুগত। তার কারণ তাদের নিজস্ব কোন বক্তব্য তৈরি হওয়ার সুযোগ পায় না। বাবা-মায়ের কথায় তারা মনিটরের অনুগত। আর নরমের যম দুষ্টের অনুগত নিজের তাগিদে। এক্ষেত্রে দুরকম আনুগত্য দেখা দেয়। এক, তার কথা মেনে নিয়ে। দুই, তাকে এ্যাভয়েড করে। অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ করার প্রয়োজন নেই। ভালোটাও তাদের কাছে ভালো আর মন্দটাও তাদের কাছে ‘বাধ্য’র ভালো। কারণ মন্দকে মন্দ বলার ‘আওয়াজ’ তার নেই। তার নেই বললে অবশ্য ভুল বলা হয়—তার প্রতিবাদ করার যে অধিকার আছে, তার যে অন্যায়ের বিরুদ্ধাচারণ করার অধিকার আছে—এই বিষয়টিই তার মধ্যে তৈরি হতে দেন না তার সুবিধাবাদী বাবা-মা। কারণ তাদের মতে—‘কাকে কখন প্রয়োজন হয় তা তো জানা নেই’ বা শেখানো হয়—‘তোমার পেছনে ১০টা লোক থাকলে তবে তুমি প্রতিবাদ করার কথা ভাবতে পার’। প্রশ্নটা হল পেছনে ১০ জনকে দেখে নিশ্চিত হয়ে প্রতিবাদের কথা বলতে শুরু করলে সত্যিই কি তার প্রতিবাদী সত্ত্বাটা তৈরি হয়? এ কি অনেকটা ‘নিজের জঙ্গলেই শুধুমাত্র বাঘ রাজা’—তেমন শোনায় না?
মধ্যপন্থার বাচ্চাগুলোর ট্রেনিং কিন্তু চলতেই থাকে। সুবিধাবাদী হওয়ার কৌশল শেখানো হতে থাকে। সত্যিকে ‘সত্যি’ না বলে ‘আসলে ওটা অনেকটা সত্যির মত’—এ’কথা বলতে শেখান হয়। আর শেখায় কারা? বড়রা। যখন তারা প্রশ্ন করে— ‘সত্যিকে, সত্যি বলব না কেন?’ তখন তাদের বোঝান হয় ‘সত্যিকে সত্যি বললে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সত্য-মিথ্যার মাঝামাঝি বলবে। কারণ তাহলে তোমায় কখনই সমস্যায় পড়তে হবে না।’ বাচ্চা শিখল ঝামেলা এড়িয়ে চলাটা Smartness-এর পরিচয়। আর যে বাচ্চাকে কথায় কথায় শুনতে হয়, ‘আমি’ পৃথিবীটা তোমার চেয়ে অনেক বেশি ভালো করে দেখেছি। ওইসব প্রতিবাদ-আন্দোলন নিয়ে ভাববার কোন দরকার নেই। শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবো। অর্থই পৃথিবীতে শেষ কথা বলে।’ আচ্ছা বলুন তো, বাড়ির প্রিয়তম গুরুজনদের এহেন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শুধু নিজেরটা ভেবে, অর্থের টানে সেই ছেলে বা মেয়ে যখন ভবিষ্যতে বাবা-মা’কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়, তখন কেন সেই গুরুজনেরাই বলেন—‘আত্মজ আমায় দেখে না।’ ওনারা কেন ভুলে যান আত্মজর আত্মার বিকাশের বদলে অর্থের বিকাশের দিকেই তিনি তাকে ঠেলে দিয়েছেন।
গুরুজনদের পৃথিবী দেখার প্রসঙ্গে; কাছে থেকে জীবনকে দেখার প্রসঙ্গে যে দল বলতে পারে—“তুমি তো তোমার মত করে পৃথিবীকে দেখেছ, আমি আমার মত করে পৃথিবীকে দেখতে চাই।’—সেই দলই পারে নিজের অধিকারের কথা বলতে। শত সমস্যার মাঝে রুখে দাঁড়াতে। এক্ষেত্রেও অনেক সময়েই তাকে শুনতে হয় ‘স্বার্থলোভী’ শব্দটি। আচ্ছা নিজের স্বার্থের জন্য, নিজের জন্য প্রতিবাদ করাটা যদি স্বার্থলোভী হয় তাহলে তো এক্ষেত্রে আরেকটা প্রশ্নও এসে যায়—যে তাকে স্বার্থলোভী বলছে সে কি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে না পারার জন্য অন্যের গায়ে স্বার্থলোভী তকমা লাগাচ্ছে!! বলছে—আত্মকেন্দ্রিক!!—এ হেন ব্যক্তি নেতা হতে পারে না এ’কথা সত্যি তবে এও সত্যি যে ব্যক্তি নিজের অধিকারের লড়াই লড়তে পারে না, সে অন্যের জন্য লড়বেই বা কি করে??
শিশু এখন আর বহিরঙ্গে শিশু নেই। সে এখন বিদ্যালয়ের গণ্ডী পেরিয়ে মহাবিদ্যালয়ের পথে পা বাড়িয়েছে। সে এখন সব জানে। আর জানে তার বন্ধুরা। ‘আঠারো বছর বয়স মানে না বাঁধা’—একথা এখন অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। কোন বাঁধই তাদের বাঁধতে পারে না। একপক্ষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। তাদেরকে কিছুতেই বোঝান যায় না যে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলে তোমায় সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কারণ সে বোঝে প্রতিবাদ তার কাছে শিরদাঁড়া যাচাইয়ের লড়াই। আরেকপক্ষ থাকে যাদেরকে কোনভাবেই অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারার বাঁধনে বাঁধা যায় না কারণ তাদের কাছে বিষয়টি হল—‘ঐ প্রথমপক্ষ যদি লড়াই করে জেতে তাহলে তো ফল পাবই। তবে আর লড়াই করে লাভ কী?’—এরা বাবা-মায়ের সোনা ছেলে মেয়ে। ‘আমার ছেলে তো ঐসব আন্দোলন করতে যায় না। পড়াশোনা করে নিজের মত। নিজের মত থাকে। আমিও ওকে বিরক্ত করি না।’ পরবর্তীতে এই বাবা-মাকেই বলতে শোনা যায়—‘মেরুদণ্ডহীন ছেলে। বউয়ের কথায় ওঠে বসে।’ আরেক পক্ষ থাকে যারা ওই প্রথমপক্ষ আর দ্বিতীয় পক্ষের সংমিশ্রিত রূপ। যে প্রতিবাদের ভড়ংও করে আবার এর সাহায্যে ‘Career’ ও তৈরি করে। ‘তৃতীয়পক্ষ’ তাই বড় বেশি আকর্ষণীয়।
প্রথম পক্ষ এতদিনে জেনে গেছে সকলের জন্য তাকে লড়তে হবে। লড়তে হবে অন্নহারা শিশুর জন্য, গৃহহারা বধূর জন্য, কলকারখানার ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের জন্য, শিক্ষার জন্য, নিরাপত্তার জন্য আর … লড়তে হবে নিজেকে দেশের নাগরিক প্রমাণ করার জন্য। সংবিধান রক্ষা করার জন্য। ‘১৯৪৭ সালে ইংরেজ সরকারকে তাড়িয়ে আমরা যে স্বাধীনতা লাভ করতে চেয়েছিলাম আজও তা পারিনি’—একথা বলার জন্য। সে বলেই চলে—কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাঠে, ময়দানে, ঘরোয়া আড্ডায়, ধর্ণা মঞ্চে। ভাতের লড়াই আর ভিটের লড়াই লড়তে লড়তে সে যখন বলতে শুরু করে—‘শোন রে বেকুব, কান খুলে শোন দেশটা কারোর একার নয়’—তখনই যাদের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্ধকার হাতড়ে আলোর পথযাত্রী হওয়ার পথে ব্রতী হয়েছিল সেই তারাই চলে আসে সংসারের অভাব, বাবা-মায়ের স্বপ্ন, বৃদ্ধের যষ্ঠির দাবী নিয়ে। ছেলেটি বা মেয়েটি তখন বিবেকের লড়াই লড়তে থাকে। অবশেষে বেশিরভাগই কোল আলো করে জন্মানোর প্রচলিত কথাকে সত্যি প্রমাণ করতে অধিকারের লড়াইকে মানস প্রতিমা রূপে বুকের বাঁদিকটায় রেখে দেয়।
এই সমস্ত বাবা-মাদের মধ্যে বেশিরভাগই এমন থাকেন যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্কটে ভোগেন। প্রতি মূহুর্তে ভাবেন ছেলে বা মেয়ে আমার হাতের মুঠো ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই শক্ত হাতে ধরতে চান। মুঠো শক্ত করতে চান—আরও শক্ত মুঠো। ক্রমশঃ মুঠো শক্ত হতে হতে ছেলেটি বা মেয়েটির দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। সে বেসরকারীকরণের যুগে দাঁড়িয়ে বাবা-মা’র স্বপ্নলব্ধ সরকারী চাকরির জন্য যুদ্ধ করতে থাকে। বাবা-মাকে তখন বলতে শোনা যায় না—‘তুই যা করবি আমরা তাতেই খুশি।’ কারণ ওনাদের যে অস্তিত্বের লড়াই। সমাজ পরিবার পরিজনদের কাছে। তাই আরও উদ্যোগী হয়ে ওঠেন নানা পুজো-মাদুলীতে। নিজের রত্নের দ্যুতি যেখানে চোখে পড়ে না সেখানে গ্রহ রত্নের সাহায্যে ছেলে বা মেয়ের সরকারি চাকরি ‘Lock’ করার প্রচেষ্টা চলে। মেধাবী ছাত্রটির হয়ত প্রয়োজন হতে পারে কোন সামগ্রীর। তখন শুনতে হয়—‘কি হল যাদের জন্য প্রতিবাদ করতে বসেছিলি তারা দেবে না টাকা।’ ছেলেটি বা মেয়েটি বোঝাতে পারে না—‘এ প্রতিবাদ’ অন্যের জন্য নয়। তার নিজের জন্যও। যে কারণে আজ সে প্রতিবাদ করছে। সে কারণ দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। শুধু তোমার চোখ দিয়ে তুমি যে পৃথিবীটা দেখেছিলে এখন সেটা বদলে গেছে—তাই তুমি দেখতে পাচ্ছ না।’ কিছুতেই বোঝাতে পারে না যেখানে দু’দিন পরে ভারতবর্ষই প্রাইভেট লিমিটেড হয়ে যেতে বসেছে সেখানে সে ওই একই ভারতবর্ষে কিভাবে সরকারি চাকরি পেতে পারে?
রত্ন-মাদুলী-জ্যোতিষী-ঠাকুরবাড়ির প্রতি বাড়ির লোকের অগাধ বিশ্বাস কোথাও যেন ছেলেটি / মেয়েটির আত্মবিশ্বাসে আঘাত করতে থাকে। সে হতাশাগ্রস্ত হতে থাকে। ‘Depression’কে সে ‘Expression’এ পরিণত করতে পারে না। আর বাড়ীর লোকও Depression-এর ‘Conclusion’-এ পৌঁছতে পারেন না। কারণ তাদের কাছে মানসিক সুস্থতা নয় শারীরিক সুস্থতা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর যে দেশে নারী ধর্ষিতা হলে শুনতে হয় ‘মেয়েটি ছোট জামা কাপড় পড়েছিল বলে ছেলেটি বা ছেলেগুলি নিজেদের Control করতে পারেনি’ সেখানে কার মানসিক সুস্থতা নিয়ে কথা বলব—বক্তার? ধর্ষকের? না কি ধর্ষিতার!
মেরুদন্ডহীন মধ্যপন্থার মানুষজনের এসবে কিছুই এসে যায় না। Face Bookএ লেখা যেতে পারে বড়জোর ‘SHAME’। তার চেয়ে বেশি কিছু করার সময় কোথায়? কারণ জীবনটা তো ENJOY করার জন্য। আর প্রধানত এদের এই ‘SHAMELESS SHAME’-এর জন্য ওই তৃতীয় পক্ষের প্রতিনিধি দেশের নেতা হয়ে বসে। যার কাছে নিজের দেশটা অনেকটা ‘ট্যুরে’ যাওয়ার মতন। ঘুরতে গিয়ে ছোটবেলায় শুনতে পেতাম—‘এখন যা খুশি করা যায়’। এও ঠিক অনেকটা তেমনি। ঘুরতে এসে যা খুশি করা যায়। ঘুরতে আসা দেশের সংবিধান বদলে ফেলা যায় ক্ষমতার জোরে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে দেশদ্রোহীও শুনতে হয়।
আর তাই ২০২০ সালে স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা স্বপ্ন ফেরি করতে বেরোয় না। তারা নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করে। লড়াই-এ সামিল হয় JNU, সামিল হয় জামিয়া, সামিল হয় শাহিনবাগ, সামিল হয় পার্কসার্কাস। সামিল হয় পুরুষ, সামিল হয় নারী। সামিল হয় স্কুল পড়ুয়া। সামিল হয় বেকার বৃদ্ধ। শুধু সামিল হতে পারে না ওই সুবিধাবাদী মধ্যপন্থীরা। ফলে আন্দোলন অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের চেহারা নেয়। যেখানে অশ্বের ক্ষুরের আকারে দাঁড়িয়ে আন্দোলন চলে। হুঙ্কার ওঠে—‘হাল্লা বোল।’ তখন হ্রদবাসীর ‘জিও’-র রিং টোনে বাজে—
‘একদিন হবুচন্দ্র রাজা আর গবুচন্দ্র মন্ত্রী
আকাশ-নদী চলছে কেমন, দেখতে পাঠান সান্ত্রী।’

[লেখিকা – এ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চ-এর বাংলা শিক্ষিকা। ‘রঙ্গকর্মী’র প্রাক্তন অভিনেত্রী। লোকসঙ্গীত শিল্পী। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কবিতা গল্প প্রবন্ধ লেখেন।]

Facebook Comments

Leave a Reply