চিয়ার্স : তানিয়া চক্রবর্তী
বোর্হেস বলেছিলেন “দেশ সবসময়ে গোল্লাতেই যায় কিন্তু কীভাবে কীভাবে যেন বেঁচেও যায় ফের”—ঠিক এভাবেই তো সভ্যতা প্রাণ পায়। আমাদের সৃষ্ট যে ভারসাম্যহীন, অসন্তোষমুখর সময় আমাদেরই মাথার ওপরে উঠে যায় তাতেই আমরা নড়ে উঠি। আর স্থিতাবস্থা, সে আসলে সভ্যতার ভ্রম নামক বিরতি—সে কখনোই আসেনা! মানুষের কাঠামোই এমনভাবে তৈরী সে রাগ করবে, সে হিংসা করবে, সেই ভালবাসবে। যেমন একজন খুনি পিতা—সে হত্যাকারী, সে অন্ধকার, সে ধ্বংস—আবার সেই একজন বাবা, সেই স্নেহ, সেই আলো। দেহ যেমন একটা স্ট্রাকচার, দেশও একটা স্ট্রাকচার। যে কোনো আন্দোলন প্রথমে আন্দোলন থাকে, মর্মে লাগলে তা অভ্যুত্থানের মুহূর্ত ধরে প্রকট হতে থাকে। তাই দেখতে হবে দেশ বিরাট অংশে বা ক্ষুদ্র অংশের কোন বোধকে উস্কে দেয় মানবিক বোধ নাকি দ্বন্দ্বের বোধ! আর মানবিক বোধই অন্তিম পরিণতি। কারণ ধ্বংস বা যুদ্ধ বা ভেদের ফল শূন্য। একজন সন্ত্রাসীও শূন্যকে গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে না সেও দল বাড়াতে চায়। ফলে যতই ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়াকরণ চলুক না কেন শেষ অবধি ফাঁক দিয়ে মানবিকতাই জিতে যায়। দাবানলের পরে যে ক্ষুদ্র চারাটি বেঁচে যায় জীবনের স্বীকৃতি সেই দেয় বীরের মতো। যে জায়গায় সব ধর্ম, সব মানুষ স্থান পায় সে জয়ী, সে বিরাট, তার একতার মতো ধনী আর কিছু নয় কারণ সেখানকার ১০জন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সারা পৃথিবীর ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতি ধরে রাখে সেই জায়গার জন্য। সে জায়গার প্রতি অসন্তোষ তৈরী হতে পারে না। সস্তা মানবিক আবেগ যদি কেউ বাদ দিতে বলে, তা বাদ দিয়েও এটাই আলো, এটাই সত্য যে আমার কাছে পৃথিবীর সবাই আছে। দল বলে কিছু হয় না, দলের সামনে আমি আঙুল তুলতে পারি বলেই তো নির্বাচন। দল আসলে দুটো—ন্যায় আর অন্যায়। বিশ্বাস আর অবিশ্বাস। আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসব হল অন্ধকারের সমানুপাতে থাকা জয়গান। শোককে যাপন করে অতিক্রম করতে পারে কেবল জীবন কারণ তার স্তরে স্তরে বিশ্বাস আর সৃষ্টি লুকিয়ে আছে। জার্মানির কবি গটফ্রিড বেন সেই কারণে বলেছিলেন যে কোনো স্রষ্টা পরিস্থিতি দেখে যত না বিচলিত হবে তার সৃষ্টি নিয়ে তার চেয়ে ঢের বেশী যেন বিচলিত হতে পারে, কারণ সমস্ত পরিস্থিতির সে প্রেক্ষক। সুখে-যন্ত্রণায় তার একমাত্র বিশ্বাস সে লিখে যেতে পারবে কারণ তার প্রতিবাদের চেয়ে অনেক জরুরী তার সৃষ্টির অনুভূতিকে লালন করা। যে জনগণ একদিন শিল্পীকে অস্বীকার করে সেই জনগণ তাঁর সৃষ্টির কাছে মাথা নত করে বসে থাকতে পারে কারণ জীবনের সমস্ত অনুভূতি জ্যান্ত ও গতিশীল। সে দুঃখে, শোকে, সুখে, হিংসায়, প্রেমে কোথাও স্থিতি পেতে পারে না! এই গতিশীল জনসমুদ্র শৃঙ্খলা ও নিয়মভঙ্গের যৌথ আধার। এই রক্তাক্ত মাটিতেও তাই বারবার ফুটে উঠবে গোলাপ। এই কালো ধোঁওয়ামাখা আকাশেও শেষ অবধি জ্বলজ্বল করবে তারা। সারা পৃথিবীজুড়ে যেন বড়দিন সবার থেকে বড় হয়ে আসে আমাদের কাছে। রেড ওয়াইন ছোঁয়া ঠোঁট চুম্বনের আলোয় ভরিয়ে দেবে সন্ধ্যের মোমবাতিদের। কেকমাখা মুখে আতরমাখা ছেলেটা বাবার হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে পার্কস্ট্রিট। যেখানে গল্পের শেষে সবার জন্য মৃত্যু লেখা আছে সেখানে বেঁচে থাকাটাই বিশ্বাস। এই বিশ্বাস এই পৃথিবীর কেউ ভাঙতে পারবে না কোনোদিন। জোর করে কিচ্ছু হয় না, যুগে যুগে প্রমাণিত। একটা ঘরে জেহাদ করালে অন্যঘরে প্রেম হবে, হবেই—কারণ আমরা সবাই কবিতা, সবাই ছবি, সবাই শিল্প, সবাই জ্যান্ত—ভীষণ ভীষণ জ্যান্ত। যতদিন মানুষ ধবংসের লীলায় মাতবে ততদিন মানুষ উৎসব করবে। জীবনে বাড়তে থাকার সবচেয়ে মায়াবী একক বিশ্বাস। এই মায়াকে কেউ লুপ্ত করতে পারবে না। বিশ্বাসী জীবন তোমাকে চিয়ার্স।
যে আলো খুলে পরে যাচ্ছে
তা তোমার নয়, তা সকলের
উদ্ধারকালে তোমার জিভে
মধু দিয়ে ফন্দি মাপা হচ্ছিল
ওটাই ওরা চায় !
ক্যাকটাসের দিকে তুমি খুললে চোখ
আলোয় আলোয় ঝলসে গেল সব
তোমাকে চিহ্ন করে যুদ্ধ শুরু হল
যুদ্ধ থামাতে যুদ্ধে নেমো না তুমি
ওটাই ওরা চায়!
একবার বাঁচার জন্য
অর্জিত সব নিলামি করে দিচ্ছ তুমি
ওটাই ওরা চায়!
একবার বাঁচার জন্য বারবার মরে যাচ্ছ তুমি
ওটাই ওরা চায় !
এখনো বিশ্বাস ভাঙেনি তোমার
চিয়ার্স–চিয়ার্স—চিয়ার্স
এটা ওরা চায় না…
Related posts:
Posted in: Cover Story, December 2019
ভালো…Blake এর Human Abstract মনে পড়ছে। Human[e] is prophylactic against the human…