অনুবাদ কবিতা : স্বপন রায়
ক্রিসমাস
রুডইয়ার্ড কিপলিং
আবছা ভোর, তেঁতুলিয়া-গাছগুলোর ওপারে গেরুয়াহলুদ আকাশ
যাঁতায় নিমগ্ন গেঁয়ো মহিলারা ঝুঁকে আছে গুঁড়ো শস্যের দিকে
আর টিয়া ডাকছে টিয়াদের, নদী ধরে ধরে ‘হে সাথি’ ‘ও সখা’
শুরু হল এর ভেতরেই আরেকটা দিন, আমরা বলি ‘ইস্টার ডে’, এভাবেই
ওহ ধুলোময় হাইওয়ে উফ দুর্গন্ধ ভরা গলিপথ
আহ্ ঝুলে থাকা আঠালো কুয়াশা
আর বাড়িতে খুশির রঙ মিশে যাচ্ছে শাদা-টকটকে লাল ‘বেরি’ গাছের ছায়ায়
এখানে এই খুশির আবহাওয়ায় কোথায় আছে নির্বাসিত ভারত
এমনকি তার অংশমাত্র?
সূর্য উঠে এসেছে আর তাকানো আকাশও ঘন নীল
জোয়াল বইছে গৃহপালিতরা
একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে তাদেরই একজন নিয়ে চলেছে নদীর ধারে, ঘাটে
ধোঁয়া উঠছে চাকা চাকা
হে রাম, ডেকে উঠছে কেউ, ধীরে নিয়ে যাওয়ার সময়, যদি সে শোনে
হে রাম, যদি সে ভাল হয়ে যায়, ভেবে কে যেন আবার বলছে, রাম রাম
আমরা আমাদের প্রার্থনা নিয়ে আছি
আর আজ আদেশ করছি, ‘আনন্দ করো, ভাল খৃষ্টান যারা, আনন্দ করো!’
এবার তেঁতুল গাছের লাগোয়া আকাশে সূর্য, উষ্ণ মাথার ওপরে
বাড়িতে বইছে বড়দিন, দিন গড়াতে গড়াতে পাণ্ডুর
চলছে স্বাস্থ্যপানের হুল্লোড়
কারা যেন বলছে, খুব ভালবাসি তোমাদের, কাল থেকে ভুলে যাবে যদিও
আবারও বলবে, একটি বছর পরে
ওদিকে আরেক ভারত, শ্রমে বাঁকা, রোগা, ব্যথায় কাতর
সশ্তা যৌবন বিক্রিও হচ্ছে সহজে
উৎকৃষ্ট সোনাও আমরা পাচ্ছি, নিচ্ছি, জমছে
পুরোটাই লাভ, মেরী ক্রিসমাস
আমাদের লাভই পুরোটা, হুল্লোড় করো হুল্লোড়
ধূসর সন্ধ্যা নামল, মুহ্য ছায়া তেঁতুল গাছেদের
টিয়ারা ঘরে ফিরছে
সূর্য ডুবছে বাড়ির কোণটায়
আর এই শেষ কিরণের আলোয় আমি দেখলাম একটা শেকল
সারাজীবন ধরে ঝলসানো একজন নারী
সারাক্ষণ কাজে, অল্প বেতন, প্রাচীনা, ছিন্ন পোষাক
ভারতবর্ষ
যেন আমাদের বিষণ্ণ সৎ-মা
যদি আরও একটা বছর দেওয়া যায়
যদি ওর মন্দিরে আমরা যাই, দেখতে পাবো
ওটাই ওর ঘর, কুঁড়ে ঘর, আমরা চলে আসবো
ফিরেও দেখবো না
রাত নামে তেঁতুল গাছের শরীরে
প্যাঁচারা কোরাস শুরু করে
মন্দিরে বেজে ওঠা শঙ্খের ডাক ছড়িয়ে পরে
নিস্ফলা দিন পেছনে ফেলে
সামনে থাকা নিরাশার দিনগুলোর জন্য, চলো আমরা হুল্লোড় করি
বলি, মেরী মেরী মেরী ক্রিসমাস
আমাদের মজুরদের দুঃখ টুঃখ পড়ে থাক, চলো আমরা আনন্দ করি
বন্ধুরা, প্রতিবেশিরা
যদি কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, যদি হাসতে হাসতেই কেউ
আর তারপর বেশ দুঃখও নেমে আসে
আমরা আরেকটু ধনী হব, নাকি অনেকটাই
কিছুটা বিদ্রুপ করে চলে যাওয়া ক্রিসমাসকে মনে করে
Posted in: Cover Story, December 2019
খুব মসৃণ অনুবাদ… ভালো লাগল
ভালো লাগলো… এই সংখ্যার জন্য, এই সময়ের জন্য লেখাটা খুবই প্রাসঙ্গিকও…