শুভ আঢ্য-এর কবিতা
কাসাহারা ও রবীন্দ্রনাথ
১৭
কার্পাস বনে মৃতদেহটি সমাধা করা গেল। মৃত্যুর সময়ে বডিটিতে কোনো সুতো ছিল না। কাসাহারার অদূরে তার দেহে আঁকা ছিল ভ্যান গঘের স্টারি নাইট, তারাগুলো জ্বলছিল ও খসছিল, যুগপৎ। হাতে উল্কি ছিল একটি। মেয়েটি অ্যাকটিভিস্ট ছিল বোধহয়। বৃষ্টির অ্যাক্টিভিটি নিয়ে প্যারানরমাল চর্চা সে’ই প্রথম শুরু করেছিল বলে শোনা যায়। শোনা এমনও যায় যে মৃতদেহটি কার্পাসবনের ভেতর বস্ত্র হয়ে উঠেছে এখন। তার বুনন শান্তিনিকেতনের পরিবেশ নষ্ট করছে। তার ভাষা আশ্রমিক নয়। তবু সেটি সমাধা করা গেল। ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন…’ গানটি নিয়ে কিঞ্চিৎ পান (pun) বাজারে প্রচলিত। অপ্রচলিত শক্তির উৎস নিয়ে বৃষ্টির জল জমিয়ে, তা থেকে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিদ্যুৎচালিত চুল্লী তৈরি করা যেতে পারে। ঘটনাটি উনিনশো সালের প্রথম দিকের ঘটনা। তার পরে এসব অ্যাক্টিভিটি ঘটবে, পরে এ নিয়ে ইনিয়ে ও বিনিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টাও হবে। মেয়েটির গঠনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনাও হতে পারে। লুইসেন্ট বৃষ্টি নিয়ে কোনো মাস্টারপিস আঁকেননি। বৃষ্টি একটি খুবই সামান্য ব্যাপার, কাসাহারায় প্রায়শই বিকেলের দিকে তাকে দেখা যায়।
১৮
হাতির ঝিল আমি দেখিনি। শুনেছি বাচ্চারা হাতির ছবি আঁকার সময় ঝিলের কথা ভাবে না। তাদের শেখানো হয় চিড়িয়াখানায় হাতি থাকে। বন্যতা মানুষের অসহ্য। বশ্যতা সে একটি শিশুর থেকেও আশা করে। যদিও শিশুরা মানসিকভাবে বন্য। হাতির ঝিলে যাবার কথা ভাবতে ভাবতে কফি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। পনের মিনিট পরের ট্রেন মিস হয়ে গেলে এখানেই রুটি আর লঙ্কা মুর্গী সাঁটিয়ে নেওয়া যায়। হাতিগুলোও কাসাহারা দেখেনি। তারা জানে না, কাসাহারার মাথায় ক্লাউড কম্পিউটিঙে তারা থাকে। তাদের কোনো ঘর নেই। এইসব আসলে শ্রাবণের খেজুর। এসব নিয়ে ভাবগতভাবে হারমোনিয়ামে গাওয়ার মতো গান হয় না। গিটার নিয়ে হাতির ঝিল যাবার কথা ভাবা ছেলেগুলোকে প্রায়ই মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে দেখি এখানে। তাদের টি-শার্টে চে, তারা বিপ্লবের কথা বলে, বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবে-টাবে। ঠাকুর সাহেব বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা করেছিলেন। হাতির ঝিল সেখানে থাকলে হয়তো সেখানেই ছেলেমেয়েদের বসিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করতেন। বশ্যতা ও বন্যতা একটি বাইনারি সিস্টেম। সে লজিকে সবসময় মানুষকে ধরতে চাইলে হাতির ধূসর রঙকেই অস্বীকার করা হয়। কাসাহারায় কোনো নিয়ম নেই। স্বীকার ও অস্বীকার শুধুই দু’টো শব্দ যাকেও স্বীকার বা অস্বীকার করা যায়।
১৯
দুহাজার কিমি দূরে পরকীয়া করছে যাদের স্বামীরা, তাদের এয়ো স্ত্রীরা অনেকেই কাসাহারায় আসে। তারা জানে ওখানে আলো জ্বললে কাসাহারার দেওয়ালে ছায়া পড়বে। তারা দেখতে পাবে, তাদের সোয়ামী পর নারী গমনের সময় আগুপিছু না ভেবে কেবলমাত্র গলা খাঁকারি দিয়ে নিচ্ছে। তারা জানে পাহাড়ের শহরে আলো খুব তাড়াতাড়ি জ্বলে ওঠে। পাহাড় নিভে যায়, আর সেখানকার মেয়েরা খলবল করে ওঠে মাছের মতো। কাসাহারায় মাছের বেশ কিছু প্রিপারেশন পাওয়া যায়। মাছগুলো প্লেটে শুয়ে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, আর দেখে, সেখানে পুরুষমাছ কিভাবে মাৎস্যন্যায়ের দিকে চলে যাচ্ছে। এসব নিয়ে দু’হাজার কিমি দূরে অন্য একটি ক্যাফেও হয়তো আছে। সেখানে এয়ো’রা তাদের শাঁখা ও পলা খুলে বসেছে। সেখানেও জ্বলে আলো। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে এমন কিছু ভাবা বিশ্বভারতী নিয়মবহির্ভূত। তিনি সাধক। তিনি ভুল করে চারুলতা লিখে ফেলেছিলেন বলে শোনা যায়। যারা পরকীয়া করছে তাদের ঘড়িতে ডুয়াল ডায়াল থাকে। তারা একেবারেই অ্যাডজাস্টমেন্ট বিশ্বাসী নয়। একইসাথে দুই সময়ের দিকে নজর রাখে। পাহাড়ে সময়সংক্রান্ত কোনো নিয়ম পথচলার সময় মানা হয় না।
২০
“বৃশ্চিক রাশির নিচে যে মানুষ শুয়ে আছে ভাষাহীন” তাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কথা হয় না বলে জিরাফেরা কাসাহারাতে একা একাই কফি অর্ডার করে। তাদের গায়ের হলদে রঙে আলো পড়ে আরও বেশী করে হলুদ লাগে। গলা উঁচু হবার কারণে তারা দেখতে পায় বৃশ্চিক রাশির নিচে মানুষগুলো শারীরিকভাবেও নির্বাক শুয়ে আছে। তাদের ওপরে পিঁপড়েরা আলোচনা করছে, মৃতদেহগুলো সৎকারের ব্যাপারে। জিরাফগুলো তাদের বোঝাতে পারছে না যে, মানুষগুলো মৃতদেহ নয়। সেই রাশি থেকে বেরিয়ে তারাও হয়তো কোনোদিন কাসাহারায় চিকেন মোমো খেয়ে যাবে। রবীন্দ্রনাথ জ্যোতিষশাস্ত্র সম্বন্ধে উদাসীন ছিলেন। ওঁর হাতে কোনো ছবিতে আঙটি দেখা যায় না। বৃশ্চিক দংশন হওয়া জিরাফগুলো সঙ্গীতভবনের পিছনে রেওয়াজ করে প্রতিদিন বিকালে। তাদের গানের মাষ্টার লিপ রিডার। ছড়ি নেড়ে তিনি ডিরেকশন দেন ও জিরাফগুলোকে খোলা গলায় গাইতে উৎসাহিত করেন। শান্তিনিকেতন একটি নিস্তব্ধ ও শান্তিপূর্ণ জায়গা। সেখানে এসব নিয়ে কোনো সামাজিক চাপানউতোর এখনও অব্দি নেই।
(উদ্ধৃতি ঋণ – জয়দেব বসু)
Posted in: December 2019, Poetry