ধারাবাহিক উপন্যাস : নীলাব্জ চক্রবর্তী

যখন সবাই ছিল সংখ্যালঘু অথবা বাথরুমের জানলা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে

নবম পর্ব

১৯

কোনও কোনও আউট-অফ-ফোকাস মুহূর্তে একজন পোলিটিক্যালি ইনকারেক্ট এবং সারাজীবনের জন্য আউট-অফ-ফোকাস মানুষ ভাবতে থাকে, শ্মশানের থেকে কবর ভাল। মনে মনে নিজেকেই জিগ্যেস করে, ডু আই ওয়ান্না ডাই অ্যাজ আ মুসলিম? তারপর একটু থমকায়। ভাবে, ধর্ম কী, রিলিজিয়ান কী, ধর্মের ইংরিজিই কি রিলিজিয়ান, রিলিজিয়ানের বাংলাই কি তবে… ব্যবহারে ব্যবহারে ছিঁড়েখুঁড়ে যাওয়া যাপন শব্দটারই বা মানে কী আসলে… তবে কি বাড়িতে আর সরস্বতী পুজো হবে না? সরস্বতী… সরস্বতী… সরস্বতীকে তার নিজের বান্ধবী, প্রেমিকা, দেবী, ভালবাসা… কতকিছু যে… বছরে একদিন ধুতি পরা… ওই অবধি যতদূর সে পৌত্তলিক… যতদূর পৌত্তলিক একটি সকাল… অথচ প্রতিটি দিনই তো সরস্বতীর… সর্বস্ব নামের শব্দটি সম্পূর্ণ নিঃশর্তভাবে নিরন্তর ছুটে যেতে চায় সরস্বতী পর্যন্ত…

অর্থাৎ
অবস্থান নামের একটা অচেনা বিন্দু
বারবার বিদ্ধ করছে
রুটকে ম্যাপ ভেবে
কাঁচের ক্যাপসুলে
সে
মানে
একটা উঠে আসা দিন
একটা থার্ড ফ্লোর
ব্রেকফাস্ট টেবিল থেকে
এই আমার লাল টুপির গল্প যতদূর
দৃশ্য ভেঙে ফেলে
আর কিছুতেই
পরের পাতায় যেতে পারছি না সরস্বতী…

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

আমার কষ্ট হচ্ছে

কথা বলতে চাইছি তোমার সাথে

তোমার ইচ্ছে

অর্থাৎ

নির্বাসনের ভেতর বসে

না-শেখা ভাষার ভেতর বসে তোমাকে চিঠি লিখছি সারাদিন ধরে

লিখছি

জ্যে পঁজ তুজুর আ ত্বোয়া

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

# * # * #

এ সমস্ত রেডিওশহর কার কথা বলে চলে আসলে? প্রতিটি স্পষ্টতা প্রত্যাখ্যাত হতে হতে কোথায় ফিরে যায়? না-হওয়া একটা দিন, একটা লাঞ্চবক্সের পাশে, কতখানি থেকে যায় একটা না-হেঁটে আসা? যৌনতা কি আসলে একটা পাথর, যা খালি গড়িয়ে গড়িয়ে নীচের দিকে পড়ে আর ক্ষয়ে যায়? তুমি কি তোমার ইচ্ছের ভেতর থেকে যাওয়া একটা কাঁচের দৃশ্য? সম্পর্ক মানে ঠিক কী আসলে? শরীর মানে কি একটা অসম্পূর্ণ বাক্য? অথচ ভাষা মানে আমি তো এতদিন ভাবতাম শরীরের ভেতর চলে যাওয়া একটা ঋতুদীর্ঘ মোনোলগ… ভাবতাম, একটা অক্ষরের পাশে আর একটা অক্ষরের বসতে চাওয়ার তীব্র আকুতি থেকেই আমাদের যাবতীয় লিপি-আবিষ্কার…

দাড়ি কামাতে কামাতে খেয়াল হয় ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের ডাক্তার বলেছিল অনেকের দাড়ি কামাবার সময় স্ট্রোক হয়, চান্স থাকে। গালের কাছে না কি গলায়, কী একটা শিরা না ধমনী, হুঁ, চাপ পড়লে… দাড়ি কামাতে কামাতে টের পাই ব্লেডের ওই উজ্জ্বল মসৃণতাই আসলে দাড়িটা কামিয়ে দিচ্ছে। এইটুকু ভাবার পর রক্ত দেখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে। গাল-গলায় ভরে নিতে ইচ্ছে করে ওই মসৃণতার ঔজ্জ্বল্যটুকু। রক্তে, বস্তুতঃ, ওই লাল রঙটুকু ছাড়া আর আছেটাই বা কী? একজন এ পজিটিভ থেকে একজন ও নেগেটিভের মধ্যে কতটুকু দূরত্ব? রক্তের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত! শ্রেণীবৈষম্যের চূড়ান্ত দুই মেরু যেন। অথচ, লোকে জানে, এ পজিটিভ আর ও নেগেটিভ হলেও; আসলে ওইজন নেগেটিভ নয়, বরং যথেষ্টই পজিটিভ, হাসিখুশী এবং চমৎকারিত্বে ভরা। আর এইজনই আসলে বড় নেগেটিভ, ভ্রান্তি ও দুঃখবিলাসী, ক্রমে বিব্রত ও হতাশ। তাহলে কী দাঁড়ালো ব্যাপারটা? এ আর ও-র মধ্যেকার সেই সীমাহীন ও চূড়ান্ত দূরত্বটুকু যেন রয়েই গেল… রয়েই গেল?

ফলতঃ, দুটি বিপরীতমুখী চিহ্ন ও যোজ্যতার মধ্যে পড়ে থাকা পয়েণ্ট অফ কনট্রাফ্লেক্সার সারারাত জেগে থাকল সেবার। পরদিন সকালে, দূরের ধানক্ষেতের দিকে চলে গেল। অফিসপাড়ার দিকে চলে গেল। বিভাষার দিকে চলে গেল। সংশয় সংশয়। অথচ ভাষায় ফিরতে চেয়েছিল কেউ। কমলা রঙের অভ্যাসে ফিরতে চেয়েছিল। বালিশ উল্টে রেখে চলে যেতে চেয়েছিল আরেকটা অসম্পূর্ণ বাক্যের দিকে। ভালবাসতে বাসতে বিশ্বাস করে ফেলতে চেয়েছিল সিনট্যাক্স তো একটা ফাঁদ আসলে।

এইভাবে শব্দকে বন্ধ ভাবছে খুলে রাখা স্মৃতি… ভাবছে, পরিসরের সবটাই রাজনৈতিক… নিজেকে ছুঁড়ে দিচ্ছে আর ভালবাসছে ফিরে আসা ঝনঝন… তুমি হয়তো জানতে যে রুটির সবটাই গাণিতিক… অর্জনের সবটাই ওয়ান-ওয়ে স্মৃতি… তবুও, ব্লেডের নিপুণ ভেতরে চলে যেতে যেতে মাংসের মন, দেখতে পাচ্ছে, আঙুলে একটার পর একটা খণ্ড দৃশ্য জড়িয়ে যাচ্ছে… ভুলে যাওয়া আর ভুলে না-যাওয়া জড়িয়ে যাচ্ছে… এখনও কেন যে বুঝতে পারছ না, লিখতে বসার এই সময়টুকুই, কার্যতঃ, তোমার সাথে কখনও খুব টেকনিক্যাল হয়ে…

# * # * #

মূল চরিত্রদের আশেপাশে ঘুরঘুর করা কয়েকটি অসংলগ্ন উচ্চারণ –

— আরে, ও তো প্রোমোটার! পয়সা কম করেছে নাকি? জানিস না? ওর বাড়ির একটা পোষা কুত্তা মারা যাওয়ার পর বাড়ির ছাদে প্যাণ্ডেল করে ২০০ লোক খাইয়েছিল। সিরিয়াসলি, জানিস না! এত পয়সা… অথচ দ্যাখ, ওর নিজের অফিসে বসে এগ্রিমেণ্ট করার পরও আমার পাওনা, ন্যায্য, ৩০ হাজার টাকা দিল না! আমার কি হারামের টাকা? এইসব ছোটখাট পেমেণ্ট ওর কাছে কোনও ব্যাপার? দেবে না! আমার কাছে তো ওটা অনেক টাকা… চিন্তা কর, এখন সেই হারামী লোক আমায় পার্টি দেখায় পার্টি অফিস দেখায়! আরে পার্টি! আগে তো করতো সিপিয়েম! সিপিয়েম করেই তো উঠল ওপরে। এখন কয়েকবছর জোড়াফুল ধরেছে… আবার তো গেরুয়া পার্টির লোকদের সাথেও তলায় তলায় খাতির আজকাল…

— এসব ফালতু নন-ক্রিয়েটিভ, নন-প্রোডাকটিভ কাজে এত এনার্জি এত সময় নষ্ট করো কেন বল তো?

— ইইহ, আবার উচ্ছে ভাজা! আরে বাঁড়া ৮০ টাকা কিলো উচ্ছে… ৪ জনকে দিতে না দিতেই শেষ। ভাজলে তো এইটুকু হয়ে যায়… ডাল-ভাত-ভাজা-ডিমের ঝোল খাইয়ে ৭০-৭৫ টাকা দাম নিলে কাল থেকে কেউ আর আসবে খেতে? এভাবে আর বেশীদিন ভাতের হোটেল আর চালাতে পারব না রে ভাই… এমনিতেই ১৮০ টাকা কিলো পেঁয়াজ… বাপের জন্মে কেউ শুনেছে কোনোদিন!

— আপনি থানার মধ্যে সিগারেট বিক্রি করছেন!

— দাদা, ভল্যুমটা একটু কমাবেন প্লিজ? সকালবেলা তো… খুব অসুবিধা হয়…

# * # * #

দলিতকে গাছে বেঁধে মারধর

পড়াশোনা করার ‘অপরাধে’ এক দলিত ছাত্রকে গাছে বেঁধে মারধর করার অভিযোগ উঠল গুজরাতের পাটানে। ঘটনাটি ১৮ই মার্চের। ওই দিন স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ডের পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল ১৭ বছরের ওই নাবালক। অভিযোগ, স্কুলের বাইরে পেশায় সরকারি বাসের কণ্ডাক্টর রমেশ পটেল নাবালককে জানায়, তার সঙ্গে একটু কথা আছে। একটু দূরেই মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিল আর এক ব্যক্তি। দু’জনে মিলে বাইকে করে ওই ছাত্রকে গোরাদ গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে একটি গাছে বেঁধে তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকেন। মারধরের কারণ জানতে চাইলে ওই দুই ব্যক্তি নাবালককে তার জাত তুলে গালি দিয়ে বলেন, “তোর পড়াশুনা করা উচিত নয়, তোর শ্রমিকের কাজ করা উচিত।” এই ঘটনায় প্রমাণের অভাবে রমেশকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
*
— দাদা, ভল্যুমটা একটু কমাবেন প্লিজ? সকালবেলা তো… খুব অসুবিধা হয়…

# * # * #

বেঙ্গালুরুতে আক্রান্ত কাশ্মীরি যুবক, ধৃত ৪

বেঙ্গালুরুতে এক কাশ্মীরি পড়ুয়া ও মডেলকে মারধর করার অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুর একটি কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন বছর চব্বিশের আবসার জারুর দার। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিংও করেন তিনি। আবসার জানিয়েছেন, ২০ মার্চ প্রত্যেক দিনের মতোই জিমে গিয়েছিলেন তিনি। তার পরে পাঁচ-ছজন কাশ্মীরি বন্ধুর সাথে হ্যাল কারখানার কাছে এইসিএস এলাকায় একটি কাফেতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ পাঁচ-ছজন যুবক কাফেতে ঢুকে দাবি করে, আবসার ইভ-টিজিং করেছেন। তার পরেই তাঁকে মারধর শুরু করে তারা। আবসারের অভিযোগ, তাঁকে কাফের বাইরে টেনে এনে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়। তখন আবার হামলাকারীরা দাবি করে, আবসার জোরে মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, “আমার বন্ধুরা না বাঁচালে হয়তো মরেই যেতাম।” আবসারকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিতিন, মঞ্জেশ, গৌতম, অভি নামে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সকলেরই বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ওই যুবকেরা বেঙ্গালুরুর কুণ্ডলাহাল্লি এলাকার বাসিন্দা। তবে কেন এই হামলা তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলওয়ামা হামলার পরে নানা শহরে কাশ্মীরিদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু আবসারের বক্তব্য, “আমার সঙ্গে আমার কাশ্মীরি বন্ধুরা ছিল। কাশ্মীরিদের নিশানা করতে চাইলে তো ওদেরও মারধর করা হত। আমিও বুঝতে পারছি না এই হামলার কারণ কী। ৩ বছর বেঙ্গালুরুতে আছি। এমন ঘটনা কখনও হয়নি।” আবসার জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা জামিন পেয়েছে। তাই তিনি কলেজেও যেতে পারছেন না।
*
— দাদা, ভল্যুমটা একটু কমাবেন প্লিজ? সকালবেলা তো… খুব অসুবিধা হয়…

# * # * #

১২ কোটির দ্য ওয়াল এল দেশে

ভারতে এসে গেল ‘দ্য ওয়াল’ – সবথেকে বড় স্ক্রিনযুক্ত এবং মহার্ঘতম টেলিভিশন। ১৪৬ ইঞ্চির ৪কে ডেফিনিশন, ২১৯ ইঞ্চির ৬কে ডেফিনিশন এবং ২৯২ ইঞ্চির ৮কে ডেফিনিশন স্ক্রিনের এই অতিকায় টেলিভিশনগুলির দামও স্ক্রিনের মাপের সঙ্গে মানানসই, সাড়ে তিন কোটি টাকা থেকে শুরু হয়ে সবথেকে বড় স্ক্রিনের ডিসপ্লেটির দাম ১২ কোটি টাকা। দেশের আল্ট্রা হাই নেটওয়ার্থ ইণ্ডিভিজুয়াল এবং কর্পোরেট হাউসগুলির কথা মাথায় রেখেই দ্য ওয়ালের মডেল ভারতে আনা হল বলে নির্মাতা সংস্থাটির তরফ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তাঁরা আরও জানান, অতি-ধনী ক্রেতাদের ব্যক্তিগত হোম-থিয়েটার তৈরি বা গেমিং কনসোল হিসেবে এগুলির ব্যবহার আশা করছেন।
*
— দাদা, ভল্যুমটা একটু কমাবেন প্লিজ? সকালবেলা তো… খুব অসুবিধা হয়…

(চলবে)

Facebook Comments

Leave a Reply