সম্পাদকীয়
শীতের এক কুয়াশা মাখা ছোট বেলার দিনকে মানুষ হাসতে হাসতে বড় করে দিল। এই হাসির অবকাশের জন্যই মানুষের বেঁচে থাকা। তাই সে জানলোও না এ্যাজটেক সভ্যতার হুল্লোড়, পৌত্তলিকতা কখন অপৌত্তলিক ধর্মের স্রস্টার জন্মদিনকে ছুঁয়ে দিল। দিনটা সত্যিই বড় হয়ে গেল—উৎসবে, সমারোহে। মোড়ে মোড়ে যীশুর জন্মের কাল্পনিক দৃশ্যের মূর্তি তৈরি হল। কোনও কোনও দেশ মেতে উঠল এক সপ্তাহ ব্যাপী ‘পোসাডাস’ বা আশ্রয় প্রার্থনায়। যেমনটা সন্তানসম্ভবা মেরী যোহানের সাথে আশ্রয় চেয়ে বেড়িয়েছিলেন বেথলহেমে। আশ্রয় পাওয়ার এই গল্প মানুষের অনন্ত খোঁজের সুপ্তস্থল। এর সাথে ঘুমের মাঝে বালিশের পাশে রাখা মোজাতে যদি সান্তা তার ক্যান্ডি আর ফলের উপহার রেখে যায়, যদি সেই মোজা হয়ে ওঠে সব-পেয়েছির সুলুকসন্ধানী। তখন যীশুকে ছাড়িয়ে উৎসব আরও দু’কদম এগোয়, হয়ে ওঠে স্বপ্নপূরণের মিথ।
আজও দেখা যায় শিশুরা ক্রিসমাস ট্রি বা ক্রিসমাস কেক সাজাতে গিয়ে তাদের খেলনাপাতি, এমনকি পোষা বেড়ালছানাটিকেও হাজির করে। রাশিয়ায় যে বাচ্চাটি গ্রেগরিয়ান নববর্ষে ইয়াঙ্কা সাজায় তার সাথে আমাদের কৃষ্ণনগরের বাচ্চাটির স্বপ্ন কেমন যেন ছুঁয়ে থাকে। তারা হয়ত কেউ জানে না যীশুর জন্মের কাহিনী অবলম্বনে আঁকা ছবি বা বানানো স্থাপত্যে পশুগুলো অনেক পরে যুক্ত হয়েছিল। কে জানে সেই যুক্ত হওয়ার কারণ কী? হয়ত সরাইখানার মেষপালকদের বা গোশালার গল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্যই যুক্ত করা হয়েছিল। বা হয়ত, এই ভাবে মানুষের উৎসবে যুক্ত হয়েছিল প্রকৃতি।
আজ যখন চতুর্দিকে বিযুক্তির কথা শোনা যায়। মানুষের স্মৃতিকে স্থায়ীভাবে ভারাক্রান্ত করে উদ্বাস্তু শিশুর স্রোতে ভাসা মৃত মুখ বা নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে মিছিলে চলা পুলিশের গুলিতে শিশু মৃত্যুর সংবাদ তখন হয়ত সত্যিই মনে হয় সান্তারা সত্যি হোক এই পৃথিবীতে। সত্যি হোক লালকমল আর নীলকমল। আমরা এই বিযুক্তির পৃথিবীতে, হন্তারক সভ্যতাকে প্রত্যাখ্যান করে ফিরে যাই রূপকথার দুনিয়ায়।
সে’কারণে ‘অপরজন’-এর এবারের নিবেদন—‘সান্তা আসছে’।
এই বার্তাটুকু আমাদের প্রত্যাখ্যানের শক্তিকে সংহত করুক …
ডিসেম্বর ২০১৯
Posted in: December 2019, Editorial