এনআরসি: বাঙালি নিধন যজ্ঞ ও সস্তা শ্রম তৈরির এক ষড়যন্ত্র : সুকুমার মিত্র
‘অতীতে একবার সব হারিয়ে এখানে এসেছিলাম, এবার হয়তো ফের আর একবার সব হারাতে হবে। কিন্তু, এবার কোথায় যাব তা জানি না। আমাদের দেশ কোনটা, সেটা যদি দিলীপবাবু বলে দেন তবে অনিশ্চয়তা কাটে। ততদিন পর্যন্ত ঘাড়ধাক্কা খাওয়ার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী?’- সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এই আশংকাই এখন গোটা রাজ্য তথা দেশবাসীকে তাড়িত করছে।
অথচ, স্বাধীনতা ঘোষণার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন,‘আমরা সেই সব ভাইবোনদের কথা ভাবছি, যাদের একটা রাজনৈতিক সীমারেখার দ্বারা আমাদের থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছে এবং যাঁরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করতে পারছেন না। তবে যাই ঘটুক না কেন, তাঁরা আমাদেরই একজন এবং ভবিষ্যতে আমাদেরই একজন হয়ে থাকবেন। ভাল বা মন্দ, যাই হোক না কেন, সব কিছুতেই আমরা তাঁদের সমান ভাগিদার থাকবো।’
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব বিল ২০১৬ কে আইনে পরিণত করার মাধ্যমে স্বাধীনতার সময় দেশের সরকারের নাগরিকদের ও প্রতিবেশী দেশে বসবাসকারী মানুষদের উদ্দেশ্যে দেওয়া মানবিক প্রতিশ্রুতি মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করে না। আসামের পর এবার গোটা দেশে প্রথমে এনপিআর (জাতীয় জনগণনা পঞ্জি) ও পরে এরআরসি(জাতীয় নাগরিক পঞ্জি)-তৈরিতে হাত দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। তার আগে অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সামনে সান্তনা হিসেবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে খুড়োর কলের মত তুলে ধরবেন। বিভাজন ও মেরুকরণের মাধ্যমে দেশে স্থায়ীভাবে ফ্যাসিস্ট রাজ কায়েম করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে বিজেপি দল ও তাদের থিংক ট্যাংক আরএসএস কাজ করে চলেছে।
আশার কথা, আমাদের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি বাদে রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দল সহমত হয়ে এনআরসির বিরোধিতা করেছে। বিজেপি তথাকথিত বিশুদ্ধ নাগরিকপঞ্জি তৈরির মাধ্যমে সংঘ পরিবারের তাবেদার গোষ্ঠীদের রাষ্ট্র বা তাদের ঈপ্সিত হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির পথে এগুচ্ছে এক এক ধাপ করে। এনআরসি–হল তার চূড়ান্ত পর্যায়ের এক কদর্য খেলা। নাগরিকত্ব বলতে কি বুঝি সে ব্যাপারে আমাদের মত উপমহাদেশে বারবার ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতেই হবে। যেখানে রাষ্ট্রের সীমানা রাজনৈতিক কারণে বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্টভাবে ‘বিশুদ্ধ নাগরিক’ একটি কল্প কথা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। নাগরিকত্ব হলো কোন একটি রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যক্তিমানুষের রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে অস্তিত্ব রাখার আইনগত স্বীকৃতি। এখন প্রশ্ন হলো এই স্বীকৃতির ভিত্তি কী? সেটা কি নিছক ভৌগোলিক, নাকি রাজনৈতিক মতাদর্শগত? যদি সেটা ভৌগোলিক হয় তবে বলা যায়, রাষ্ট্র আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই প্রত্যেক মানুষ তার নিজস্ব ভূগোলের অকৃত্রিম নাগরিক। রাষ্ট্র যে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা দেয় তা মানব প্রজাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া। সাধারণ মানুষের সাথে থাকে একটি বিশেষ ভূগোলের নাড়ির যোগসূত্র। সেই ভূগোলের মাটির গন্ধ মেখে সেই সব মানুষেরা বেঁচে থাকেন। সেই মানুষদের নিজস্ব ভৌগলিক গণ্ডিকে যখন রাজনৈতিক স্বার্থে ভাগ করে ফেলা হয় তখন সেই মানুষের কি কিছু করার থাকে? কিন্তু বাস্তবে কি ঘটে সেই মানুষদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করা হয় যে সে আজ থেকে এক নতুন রাষ্ট্রের বাসিন্দা। রাষ্ট্র বদলে গেল রাজনৈতিক কারণে সঙ্গে সঙ্গে কি দেশটা বদলে যায়? দেশের সংজ্ঞা ব্যাক্তি মানুষের কাছে নিজের মত করে এক একটা রয়েছে। একই রাষ্ট্রের গণ্ডির মধ্যে থেকে শহরে কাজের জন্য থাকা মানুষ সপ্তাহান্তে যখন গ্রামের বাড়িতে ফেরেন বলেন দেশের বাড়ি যাচ্ছি। কি বলবেন এই মানুষটিকে। রাষ্ট্র তার প্রয়োজনেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করে এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। পরে এক সময় তা সংখ্যাগুরুর জাতীয়তাবাদের রূপ নিয়ে ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়। অন্যদিকে সংখ্যালঘুর মধ্যে আর এক ধরনের পাল্টা জাতীয়তাবাদের জন্ম দানা বেঁধে তার থেকে জন্ম নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদের। এই বিচ্ছিন্নতাবাদের মনোভাবকে বিরত রেখে সেই সংখ্যালঘু মানুষগুলো তাদের মত যুক্তি দিয়ে দেশের মাটি আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। ভারতের মত দেশে তাঁদের সেই স্বপ্ন দেখিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। সেই সংবিধান উগ্র জাতীয়তাবাদী নাগরিকত্বের তত্ত্বকে নস্যাৎ করে মানবিক নাগরিকত্বের এক ভাবনায় দেশের সমস্ত মানুষকে এতকাল ভাবিয়েছে। আর ভাবাতে পেরেছে বলেই বিশ্বের বৃহত্তম সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ভারত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। কিন্তু আগামি দিনে সেই চরিত্র নিয়ে এই ভূ-খণ্ড কতদিন ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছে। আসামে এনআরসি তালিকা থেকে প্রায় ২০ লক্ষ দেশের মানুষকে বে-নাগরিক ঘোষণা করা হয়েছে। ফরেনার্স ট্রাইবুনালে এখন তাঁদের ভবিষ্যত ঝুলছে। বলা হচ্ছে ট্রাইবুনালের রায়ে অসন্তোষ থাকলে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যাবে। কথাটা যতটা সহজে রাষ্ট্রের পক্ষে বলা হচ্ছে বাস্তবে এ দেশের মানুষের হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট তো অনেক দূরের কথা মুনসিফ কোর্ট বা জেলা জাজেস কোর্টে মামলা লড়ার সামর্থ্য রাখেন কত শতাংশ মানুষ। এবার প্রশ্ন, বে-নাগরিকদের কে নেবে? কেনই বা নেবে? নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ-রা ভালই জানেন এদের কেউ নেবে না।
পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে খোদ অমিত শাহ এনআরসি এই রাজ্যেও হবে একথা বলে গিয়েছেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি বারবার বলছেন এই রাজ্য থেকে ২ কোটি বাঙালিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বাস্তবে যে এটা সম্ভব না তা আসামের প্রায় ২০ লক্ষ বে-নাগরিকদের প্রশ্নে বিজেপি ও তার সরকারের অবস্থান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। অমিত শাহ, রাজ্যসভায় বলেছিলেন: “দেশের মাটির প্রতি ইঞ্চি অবৈধ অভিবাসী এবং অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের নির্বাসন দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী।” আমরা জানি, ভারতের সাথে বাংলাদেশের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তন চুক্তি নেই, যা বলা হচ্ছে তা গা জোয়ারি কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সরকারি সফরে বাংলাদেশে গিয়ে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করেননি। বরং তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে আসামের এনআরসি হ’ল ভারতের “অভ্যন্তরীণ বিষয়”।
প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায় এন.আর.সি না এনআরসি-র নামে বাঙালি নিধন যজ্ঞ? এটা বুঝতে হলে আসুন দেখে নেওয়া যাক এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের শাসক দল কোন পথে বাংলায় এন.আর.সি চালু করার প্রেক্ষিত তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামে এন.আর.সি অর্থাৎ জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ বে-নাগরিক হয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। কোথায় হবে তাদের স্থান? এন.আর.সি হাঙরের গ্রাসে বিপন্ন বাঙালি, বিপন্ন বাঙালির জাতিসত্তা।
এবার ভয়ংকর সেই এন.আর.সি-র লেলিহান আগুন আসাম ছাড়িয়ে ঝড়ের গতিতে ধেয়ে আসছে গোটা বাংলাকে গ্রাস করতে। বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করতে। কেউ নিস্তার পাবে না, সেই ভয়াবহতা থেকে। শুধুমাত্র হিন্দু-মুসলিম নয়, বর্ণ হিন্দু-নিম্ন বর্ণের হিন্দু, ঘটি-বাঙাল সংঘর্ষ বা এক কথায় বলা যায় গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের নাম এন.আর.সি। আসামে এন.আর.সি-র ক্ষেত্রে কাট অফ ডেট ছিল ২৫ মার্চ, ১৯৭১। বাকি দেশে এন.আর.সি-র কাট অফ ডেট ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাই।
বিজেপি হিন্দুদের মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত এ দেশে বসবাস করা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এটা প্রচার চালানো হচ্ছে সুকৌশলে যে এন.আর.সি হলে বাঙালি মুসলিমদের দেশছাড়া করা যাবে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ চূড়ান্ত করার জন্য এই প্রচার। মুসলিমদের বিশাল সংখ্যক তারা এপারে বসবাসকারী যুগ যুগ ধরে। দেশভাগের পর হিন্দুদের এক বড় অংশ উদ্বাস্তু হয়ে এপার বাংলায় ও পাঞ্জাবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এদের কাছে বৈধ কাগজপত্র বলতে এন.আর.সি কর্তারা যা যা চাইবেন তা দাখিল করা কোনও মতেই সম্ভবপর নয়। আসামের অভিজ্ঞতা সেই কথাই বলে।
জেনে রাখা দরকার, ভারতের নাগরিকত্ব আইনে ৫টি ভিন্ন ভিন্ন পথ তৈরি করা হয়েছে, যে পথগুলির কোন একটির মধ্য দিয়ে একজন বিদেশি ভারতের নাগরিক হতে আবেদন করতে পারেন। সেগুলি হল- (১) জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অর্জনের পথ (২) রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জনের পথ (৩) ন্যাচারালাইজেশন-এর নিয়মে নাগরিকত্ব অর্জনের পথ (৪) সিটিজেনশিপ বাই ডেসেন্ট (৫) নতুন এলাকা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলে কিভাবে সেখানকার মানুষ নাগরিকত্ব পাবেন সে সম্পর্কে নীতি, পদ্ধতি ও পথ। দেশান্তরিত মানুষদের ক্ষেত্রে মাত্র তিনটি পথে নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব আইনের ১৪এ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিটি রাজ্য এন.আর.সি বা নাগরিক পঞ্জি করতে বাধ্য।
মিথ্যা প্রচার এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে, এপার বাংলার ঘটিরাও বিজেপিকে ভোট দেবে। কারণ তাদের বিজিপি বোঝাচ্ছে দেশভাগের পর ওপার বাংলার বাঙালরা এসে তোমাদের চাকরি ব্যবসা শিল্প সংস্কৃতি রাজনীতি সব কব্জা করে ফেলেছে। নিজভূমে আজ তোমরা কোনঠাসা। তাই ওই বাঙাল গুলোকে তাড়াতে হবে। তাহলেই তোমরা ওদের শূন্যস্থান দখল করে নিতে পারবে। কথাটা ঘটিদেরও মনেও ধরেছে। তাই তারাও বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে, আগামিতেও দেবে। এরাই বিজেপিকে তাড়া দেবে দ্রুত এন আর সি আনার জন্য।
বাংলায় বসবাসকারী বিহারি হিন্দুস্থানী এতকাল তারা পাশাপাশি বাস করেছে। এবার তাদের মনের মধ্যের বাঙালি বিদ্বেষ খুঁচিয়ে তোলা শুরু হয়েছে। বাঙাল আর ঘটি, হিন্দু-মুসলিম, বর্ণ হিন্দু-নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে সংঘর্ষে তারা দুর্বল হয়ে পড়লে বাংলার মালিক হিন্দিভাষী তোমরাই হতে পারবে। তাই অবাঙালি প্রায় সব ভোটই বিজেপির দিকে যাবে।গত লোকসভা নির্বাচনে শিল্পাঞ্চলের ভোট ফলাফল সেই ইঙ্গিতই দেয়।
বাঙালি হিন্দুরা কি ঘটি, কি বাঙাল সকলে মনে রাখবেন, এন.আর.সি নিয়ে একেবারে ডাহা মিথ্যে কথা বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(CAB) আইনে পরিণত হলে হিন্দুরা নাগরিকত্ব পাবে। ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (CAB)-এ কোথাও হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে লেখা নেই। লেখা রয়েছে, নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করার অধিকার দেওয়া হবে। তবে তার আগে সেই ব্যাক্তিকে ঘোষণা দিতে হবে, ‘আমি একজন বিদেশি নাগরিক।’ এই ঘোষণা দেওয়ার পর নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করবেন। আবেদন করার দিন থেকে তাকে ছিন্নমূল বা দেশহীন বেনাগরিক হয়ে থাকতে হবে। অর্থাৎ তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। চাকরি থাকবে না। প্যানকার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাশপোর্ট সবটাই অকেজো হয়ে যাবে। তারপর যদি নাগরিকত্ব পান তাহলে না রেহাই পেলেন। আর যদি না পান, তাহলে? মনে রাখবেন, এন.আর.সি-র মাধ্যমে আসলে দেশ থেকে মুসলিম বিতাড়ন নয়, বাঙালি বিতাড়নই আসল উদ্দেশ্য। বাঙালিকে নানা ভাগে ভাগ করে হিন্দুরাষ্ট্র, হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি চাপানোর জন্যই বাংলায় এন.আর.সি। এন.আর.সি–র ছলে এক কথায় বাঙালি নিধন যজ্ঞ শুরু করতে চায় কেন্দ্রের মোদি-অমিত শাহ নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।
যদি আসামের মত এনআরসি-র ফলে দুই কোটি (বা সংখ্যাটা যাই হোক না কেন) বে-নাগরিক চিহ্নিত হন তাঁদের অবস্থা কি হবে? আসলে ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা এই মানুষগুলিই কর্পোরেট পূঁজির সস্তা শ্রম হিসেবে ভবিষ্যতে কাজ করবে। একেবারে দাস শ্রমিকদের মত দশা হবে দেশের এক বিশাল সংখ্যক হত দরিদ্র মানুষদের। দেশের সাজাপ্রাপ্ত জেলবন্দীরাও জেল কোড অনুযায়ী নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। সাজা শেষে সম্পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে বাকি জীবন যাপন করতে পারেন। কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা বে-নাগরিকরা কোনও সুযোগ-সুবিধাই পাবেন না। অমানবিক নির্যাতন নেমে আসবে কোটি কোটি প্রান্তিক মানুষগুলির জীবনে। হ্যাঁ, সেক্ষেত্রে প্রধানত মনুবাদের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ব্রাহ্মণ্যবাদীদের শিকার হবেন দেশের বিশাল সংখ্যক সংখ্যালঘু মুসলিম, দলিত ও আদিম জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষেরা। এরকম পরিস্থিতিতে এনপিআর ও এনআরসির বিরুদ্ধে আবেদন নিবেদনের পথে নয় প্রত্যক্ষ গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে অমানবিক এই ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত না করতে পারলে খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষ বিশেষত বাঙালির কোনও নিস্তার নেই।
[লেখক – বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সম্পাদক।]
Posted in: Cover Story, November 2019
ভালো লেখা।