নাট্য-সমালোচনা : সৌরভ দত্ত
দুঃসময়ে সময়োচিত নাটক: দ্বিখন্ডিত

একটা মানুষের মধ্যে দুটো বিপরীতধর্মী মানুষের অস্তিত্ব ভীষণ ভাবে সত্য। কিন্তু কেমন করে সেই মানুষ দুজনের চেহারা উন্মোচিত হয় তা চোখের সামনে তুলে ধরার গল্প দ্বিখন্ডিত। মনের ভেতর পুষে রাখা প্রচন্ড হিংস্র মানুষটিকে টেনে বের করার গল্প দ্বিখন্ডিত। খুব ছোট পরিসরে বিরাট বড় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার নাটক দ্বিখন্ডিত।
ছোট নাটকে বড় কথা বলার যে মুন্সিয়ানা তা খুব বেশি মানুষের থাকেনা। নাটককার সৌভিক সেনগুপ্ত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি গল্পকে অবলম্বন করে এই দুরুহ কাজটি করেছেন অত্যন্ত নিপূন ভাবে। রাজডাঙা দ্যোতক এর এই নাটককে এক কথায় কেউ বলতে পারেন মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার, কিন্তু গল্প বলার পদ্ধতি এমন ভাবে এগিয়েছে চুড়ান্ত ক্লাইম্যাক্স এর আঁচ কোনো ভাবেই অনুমান করা যায় না আগে থেকে।
নাটকের শুরু থেকেই মঞ্চে চলতে থাকে দুটো মানুষের গল্প। একটি পার্কে তাদের আলাপ। কেউ কারো পূর্ব পরিচিত নয়। প্রধান চরিত্র মনোরঞ্জন প্রতিটি ছুটির দিনে পার্কে বসে সময় কাটায়। একদিন এক আগন্তুকের সাথে তার দেখা। কথা শুরু। কথায় কথায় সময় গড়ায়। নিতান্ত সাধারণ মানুষের চেহারায় মনোরঞ্জন তার জীবনের সীমাবদ্ধতা, অসহায়ত্ব, না বেঁচে বেঁচে থাকার গল্প শুনিয়ে চলে আগন্তুককে। কথা পাল্টা কথায় মনোরঞ্জনের ভেতরের মানুষটার খোলস একটা একটা করে খুলতে থাকে। নিজের থেকে, নিজের কৃতকর্মের থেকে পালাতে থাকা একটা মানুষ ছাপোষা মুখোশে কীভাবে নিজেকে ঢেকে রাখে উন্মোচিত হয় তার রহস্য। গল্প করতে করতে মনোরঞ্জন ভাবতেই পারেনা আগন্তুকের সামনে সে প্রকাশ করে ফেলেছে নিজের ভয়ঙ্কর অতীত। ভাঙতে থাকা মনোরঞ্জন যখন আগন্তুকের পরিচয় জানতে পারে ততক্ষনে সে ধরা পড়ে গেছে।
এই নাটকের নির্দেশক শুভাশিস ভট্টাচার্য দারুণ ভাবে গড়ে তুলেছেন নাটকটিকে। মঞ্চসজ্জায় কোনো গিমিক নেই। মূল বক্তব্যের সাথে সাজুজ্য রেখে রয়েছে ধূষর রঙের উপযুক্ত প্রয়োগ। প্রধানত দুটি চরিত্রের কথোপকথনের নাটক হলেও বিভিন্ন পরিস্থিতির সাব-প্লট ব্যাক্ষা করতে নির্দেশক সাহায্য নিয়েছেন কোরিওগ্রাফের। মনোরঞ্জনের চরিত্রে শান্তনু নাথ এবং আগন্তুক (পুলিশ অফিসার) এর ভূমিকায় ব্রতীন গঙ্গোপাধ্যায় অনবদ্য। মূলত সংলাপ নির্ভর নাটকের মেলোড্রামায় আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। দুই অভিনেতা সে পথ থেকে নাটকটিকে স্বজত্নে দূরে রেখেছেন।
আজকের সময়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে মানুষের মনে যখন অন্ধকার প্রবেশ করানোর সর্বোত চেষ্টা চলছে সেই সময়ে এই নাটক একটা বলিষ্ঠ বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছে। এই কাজের জন্য রাজডাঙা দ্যোতক এর এই প্রযোজনা প্রশংসার দাবি রাখে।
নাটক — দ্বিখন্ডিত
নাটকটার — সৌভিক সেনগুপ্ত
মঞ্চ — দেবাশিস দত্ত
আলো — সৌমেন চক্রবর্তী
মঞ্চ নির্মাণ – অজিত রায়
আবহ – শান্তনু নাথ
কোরিওগ্রাফি – প্রসেনজিৎ বর্ধন
মঞ্চ নির্মাণ – অজিত রায়
আবহ – শান্তনু নাথ
কোরিওগ্রাফি – প্রসেনজিৎ বর্ধন
সম্পাদনা ও নির্দেশনা — শুভাশিস ভট্টাচার্য
প্রযোজনা — রাজডাঙা দ্যোতক

Facebook Comments
Posted in: Criticism, November 2019