কে কার রেজিস্টার! : অনিমিখ পাত্র

‘ব্রহ্মান্ড ছিল না যখন

মুন্ডমালা কোথা পেলি?’

  • সাধক কবি কমলাকান্ত ভট্টাচার্য

এলাম আমি কোথা থেকে

 আফ্রিকার সাভানা তৃণভূমি। লম্বা লম্বা ঘাস আগাছার জঙ্গল। মধ্যে মধ্যে উঁচু গাছেরা। কতো হাজাররকমের পশু পাখির বসতভিটা। ভূমিতে মাংসাশী শ্বাপদেরা। উঁচু গাছগুলোয় পাখি, সাপ, বাঁদর আর কিছুটা বাঁদর কিছুটা গোরিলার মত দেখতে এক পশু। ফলমূল, আকন্দ তার খাবার। মাংসও সে খায়, তবে সিংহ বা কুকুরের মতো চোয়ালের জোর তার নেই, দাঁত অতো তীক্ষ্ণ নয়। সে দৌড়তে পারে না ওদের মতো দ্রুত। তবে তার সামনের দিকের দুটি পা একটু বেশি সচল, গাছের ডাল বা অন্য কোনো বস্তু সে থাবায় আটকে রাখতে পারে। ফলত, একজায়গায় তার বেশিদিন থাকলে চলে না। খাবার ফুরিয়ে আসে, এই গাছ থেকে ওই দূরের গাছে বাস উঠিয়ে নেয় সে। আমরা দেখতে পাচ্ছি তেমনই এক পশুকে এখন। পাখি কিংবা খরগোশের মতো তার স্থায়ী বাসা নেই। সে তৃণভূমির ভেতর দিয়ে চলেছে দূরের ঘন গাছপালার দিকে। তার পেছনে আরও কয়েকটি একই জাতের প্রাণী। এই মাঝখানের পথটুকু ভারী সতর্কতায় পার হচ্ছে সে। ধারালো নখদাঁতের বিপদ আসছে কিনা দেখতে গিয়ে একসময় সামনের পা দুটো তুলে মাথা মাটির সঙ্গে সমকোণে রেখে সে ঠাহর করতে চাইল। বেশ কিছুক্ষণ এই ভঙ্গিমাতেই পথ চললো সে। এই ভঙ্গিমাটিকে, আপনারা বুঝতেই পারছেন, দাঁড়ানো বলা হয়। বন্ধুগণ, আমরা ইতিহাসের পরমতম মুহূর্তটিকে প্রত্যক্ষ করছি এখন। এই পশুটির নামই দীর্ঘকাল পরে মানুষ রাখা হবে। তার সামনের ওই বিশেষ ধরনের পা গুলির নাম রাখা হবে হাত। আধুনিক মানুষের গল্পটা এইখানে শুরু হলো। সময় আনুমানিক ২০ লক্ষ বছর আগে।

আমাদের এই প্রাণীটি ওই হাতের সাহায্যে একদিন কতগুলো ডালপালা আটকে গাছের ওপর বিছানা পাততে শিখলো। তার ঘুম হলো নিশছিদ্র, পড়ে যাওয়ার ভয় থাকলো না। পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে, শরীরে এনার্জির জোয়ার এলো, মস্তিষ্ক হয়ে উঠলো অতিরিক্ত সচল। তারপর, ধীরে ধীরে কতরকম কায়দাকৌশলই না সে আবিষ্কার করতে লাগলো। আগুনকে বশ মানাল। অতিরিক্ত পুষ্টি আদায় করে নিল খাদ্যসম্ভার থেকে। আস্তে আস্তে আলাদা হয়ে যেতে লাগলো অন্যান্য জীবজন্তুর থেকে। ওই যে তারা দল বেঁধে চলেছে, নখদাঁত তেমন ধারালো নয় বলে তারা হাতে নিয়েছে লাঠি। এদিককার জঙ্গলে খাবার ফুরিয়ে এসেছে, তারা যাবে দূরে, আরও দূরে, নদীর পাড় ধরে। জঙ্গলের পশুরা ফন্দিফিকির জানেনা, তারা জানেনা এই মানুষ নামের জন্তুগুলি কী কী ভয়ংকর বিপর্যয় নামিয়ে আনবে হাজার হাজার বছর ধরে তাদের জীবনধারণের ওপর, হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড়ো যাযাবর জাতি। জানলে, তারা নিশ্চয়ই মানুষকে বিজাতীয় বলে চিনে নিত, বিদেশি বলে আখ্যা দিত, ওই গাছটা থেকে আর কোনোদিন নামতে দিত না।

আমরা দেখছি, খাবারের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে যাযাবর মানুষের দল ঢুকে পড়ছে আফ্রিকা সংলগ্ন ইউরোপে। মাত্র ৬০ হাজার বছর আগে (আনুমানিক)। তারা অবশ্য মহাদেশ কাকে বলে জানেনা, দেশ বলে ছোটো ছোটো গন্ডী কেটে দেওয়া হবে আরও অনেক হাজার বছর পর। কেউ তাদের বলছে না, তোমরা কেন এসেছ? তাদের গায়ের কালো রঙ হাজার বছর ধরে ইউরোপের ঠান্ডায় বরফে সাদা হয়ে যাচ্ছে। পাহাড় পর্বত মরু পেরিয়ে এক একটা দল পথের নেশায়, খাবার খোঁজার তাগিদে ঢুকে পড়ছে এশিয়ার অন্দরে কন্দরে। মাত্রই ত্রিশ-চল্লিশ হাজার বছর আগে দক্ষিণ এশিয়া হয়ে মানুষ পৌঁছে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। তার মানে, মাত্রই কয়েক হাজার বছর আগে, অধিকাংশ পৃথিবী ছিল মানুষমুক্ত। ‘মাত্রই’ – কারণ ২ মিলিয়ন বছর বয়স মানুষের, ডাইনোসরেরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে ১৬০ মিলিয়ন বছর। আজ যাকে স্থায়ী ভাবি, জ্ঞানচক্ষু ঈষৎ উন্মীলিত হলে, বোঝা যায় সে মহাকালের সময়সাগরে এক ফোঁটা জলকণা বই কিছু নয়! কোনো ব্যবস্থাই স্থায়ী নয়। কীরকম? কয়েক বিলিয়ন বছর পরে সূর্যটাই তার জ্বালানি ফুরিয়ে সাদা বামনে (white dwarf) পরিণত হবে। তার অনেক আগেই আমাদের সাধের এই সবুজ গ্রহটি যাবে ধ্বংস হয়ে। তারপর, সম্ভবত, একে একে নিভে আসবে সব নক্ষত্রের আলো। কোটি কোটি বছর সমগ্র মহাবিশ্ব থাকবে আলোকবিহীন, নিকষ অন্ধকারের গর্ভে। তারপর কতো কীই না ঘটতে পারে! বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের ইউনিভার্সটি নাকি সবেমাত্র শুরু হয়েছে, এটি আসলে শিশু মহাবিশ্ব। আর এই মহাবিশ্বেই, তার সামগ্রিক জীবনকালের বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন… ভাগের এক ভাগ সময়কাল জুড়ে প্রাণের অস্তিত্ব বিরাজ করবে। এই অভাবনীয় সময়-ক্যানভাসে ইতিউতি রঙের ছিটের মতো নানান সময়ে প্রাণের উদ্ভব হবে এবং মিলিয়ে যাবে। এই মহাপ্রেক্ষাপটে, হায়, কে কার রেজিস্টার বানায়?

যাকগে, মহাবিশ্ব থেকে চোখ ঘুরিয়ে আবার মন দেওয়া যাক মানুষের ইতিহাসে। যে মানুষ, ধরিত্রীর নিখুঁত ব্যবস্থাপনার মধ্যে, সম্ভবত, একমাত্র অনুপ্রবেশকারী। তখন, মোটামুটি মানুষের এক একটা দল ঢুকে পড়েছে সবক’টা মহাদেশে। তাকে কেউ বলেনি, পরিচয়পত্র দেখাও। প্রতিকূল জলবায়ু, জন্তুজানোয়ার সে জয় করেছে বুদ্ধির জোরে। দলবদ্ধ সংযোগের শক্তিতে। পৃথিবী ছিল মুক্ত। মানুষ আনলো ‘গেটো’ (ghetto) বা খোঁয়াড়ের কনসেপ্ট। বনাঞ্চল, যা স্বাভাবিক ধাত্রীভূমি, তাকে সে ঘিরে দিল বেড়া দিয়ে। জীবজন্তুদের ধরে এনে চিড়িয়াখানা তৈরি করলো। কে বলতে পারে, আমরাই আসলে এক কসমিক চিড়িয়াখানায় নেই? কিংবা সাই-ফাই ফিল্মের মতো, কোনো একদিন, অন্য কোনো প্রজাতির হাতে মানুষের চিড়িয়াখানা তৈরি হবে না? প্রকৃতির প্রতিকূলতা জয় করার পরই বোধহয় মানুষ এবার ভাঙতে লাগলো আপন প্রজাতিকেই।

দেখা গেল, সমুদ্রের স্রোতেরই মতো, হাজার বছর পরে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া পূর্বমানুষদের দল থেকে কেউ এশিয়ায় এলে তাকে আর আপন বলে মনে হচ্ছেনা। দীর্ঘকাল একেক জলবায়ু অঞ্চলে থাকতে থাকতে  দেহবৈশিষ্ট্য ততদিনে আলাদা হয়ে গেছে একেক দলের। ততদিনে মানুষের মনের মধ্যে জন্ম নিয়েছে হিংসা, দখলদারি, স্বার্থপরতা। মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস তাই একপক্ষে ক্রমবর্ধমান কলুষতার ইতিহাসও বটে। একটি সাপও আরেকটি সাপকে অধীন করে রাখার কথা ভাবে না। অথচ, ইউরোপ থেকে সাদা মানুষেরা, হাজার বছর বাদে ফের গেল আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়, মাতৃভূমি আফ্রিকায়। সেখানে অনেককাল আগে পৌঁছে যাওয়া মানুষদের আখ্যা দিল ‘আদিবাসী’, সম্মানজ্ঞাপনের জন্য নয়, খাটো করে দেখার জন্য। ছলেবলেকৌশলে, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের উৎখাত করে তারা হয়ে উঠলো আমেরিকান, গড়ে তুলল সাদা মানুষের দেশ। তারও কয়েক শতাব্দী পরে, এই এখন, আমেরিকার সেই দখলদারদের উত্তরসূরীরা বলে বিদেশিদের আর প্রশ্র‍য় দেওয়া যাবে না! অর্থাৎ, এক অর্থে বিদেশিরাই শত্রুতা প্রকাশ করছে বিদেশিদের প্রতি। আশ্চর্য নয়?

এই সামান্য কিছু বছর আগেও, আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু অংশের লোকেরা ভাবতেন, কালো চামড়ার মানুষেরা আসলে মানুষ নয়। তারা তাদের গলায় চেন বেঁধে ক্রীতদাস করে নিয়ে আসতে থাকলো তাদের ‘সভ্য’ দেশে। কোনো কোনো পশুর দল নেতা নির্বাচন করে, মানুষ প্রভু নির্বাচন করে।   সে নিজেই নিজেকে উপহার দিল একটা শব্দ – ট্রাজেডি। সেই গাছ থেকে নামা প্রথম মানুষটির কথা তার রেসিয়াল মেমোরি থেকে কতো সহজে মুছে দিতে পেরে গেল সে! মানুষের ইতিহাস আসলে অকৃতজ্ঞতার ইতিহাসও।

তারপর, বস্তুকণার ব্রাউনিয়ান গতির মতো মূলগতভাবে যাযাবর এই প্রজাতির নানাবর্ণের সদস্যেরা সারা পৃথিবীর কতো জায়গাতেই না ছড়িয়ে পড়লেন! মানবজাতি হয়ে উঠলো নানারঙের সুতোয় বোনা এক ম্যাজিক কার্পেট। তারপর, একদিন সে কতোগুলো দাগ টেনে দিয়ে দেখালো এই আমাদের দেশ আর ওই তোমাদের দেশ। একটি হিংস্রতম বাঘও ভাবেনা যে ওই জঙ্গলের আর সব বাঘ মরে যাক। মানুষ ভাবে, ওই দেশের, ওই জাতির সব লোক মরে যাক। নাৎসিরা লক্ষ ইহুদি মারলেন। ইহুদি তারা, নাৎসিদের কাছে সে পরিচয়ের শিশু, বৃদ্ধ, নারী, যুব, শিল্পী, বিজ্ঞানী কেউই মানুষ নন। যুদ্ধের শেষে আমেরিকানরা পরমাণু বোমা ফেলে দুটি দ্বীপ শহরকে ধ্বংস করলেন। পাঠক, সেই গাছ থেকে নামা প্রথম মানুষটিই যে এই মানুষের পূর্বজ, ভাবলে অবাক লাগেনা?

সময়কালের এই বিরাট প্রবাহের মধ্যে দাঁড়িয়ে ইচ্ছেখুশি যে কোনো এক একটা বছরের গায়ে দাগ দিয়ে কি চিহ্নিত করা যায় যে তুমি ঠিক এর পর থেকে অনুপ্রবেশকারী? যেদিন এই সবুজ গ্রহটা বিস্ফোরণে মিলিয়ে যাবে, মহাবিশ্বের অন্ধকারে কি তখনও উড়বে এই ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস এর তথ্যগুলি?

একটি স্পেসিমেন কাহিনি

নাম, ধরা যাক, পুষ্পরাণী। এইরকম নাম আজকাল কেউ রাখেন না। আমাদের পুষ্পরাণীও চলে গিয়েছেন। অধুনা বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ছন্দরা গ্রামের পুষ্পরাণী। সেই কোন্ স্মরণাতীত কালে শিশুকন্যাকে বুকে করে চলে এসেছিলেন পদ্মা পেরিয়ে। কখনো ফেরা হয়নি আর। ছোটবেলার তরুণীবেলার সই’দের আর কখনো দেখা হয়নি তাঁর। দেখা হয়নি বাবা-মা’র সঙ্গেও কোনোদিন।  তারপর, সম্ভবত, আর কেউ তাঁর বন্ধুও হয়নি। কী জাদুতে এক জন্মভূমি হুট বলতে বিদেশ হয়ে যায়! পুষ্পরাণী চলে গেলেন, ছন্দরায় কেউ জানলো না। আদৌ কেউ আছে কি সেখানে? ওহে চিরপুরনো হাওয়া, পৌঁছে দাও পুষ্পরাণীর খবর। বাধাহীন পাখিদের ঝাঁক, সইয়ের কাছে চিঠি নিয়ে যাও। নিরবধি গাঙের জল, আছড়ে পড়ো পুরনো পাড়ায়। তোমাদের চলাচলে আজও কোনো কাঁটাতার বসায়নি মানুষ।

বয়স বাড়লে মানুষ নাকি গাছের মতন হয়ে ওঠে। ছায়া দেয়, ডালপালায় কতোরকম পাখি এসে বসে। সংসার তাদের তখন বটবৃক্ষ নাম দিয়ে দেয়। হতেই পারতেন, কিন্তু আমাদের গল্পের পুষ্পরাণী তেমন ছিলেন না কিন্তু! তাঁর উপমা বরং হতে পারে শান্তসবুজ এক তৃণভূমি। সারাদিনমান যার ওপর মানুষজন হুটোপুটি করে, কিন্তু ধন্যবাদ দেয় না কখনো। আলাদা করে যাকে কখনো ‘বিশেষ’ বলে দাগিয়ে দেয় না কেউ। কিন্তু সে না থাকলে বাকি সব শিশুগাছ কোথায়ই বা আর ভূমি পেত?

এক মৃদু খরগোশের মতো জীবন কাটিয়ে গেলেন পুষ্পরাণী। কিংবা নিষ্কলুষ স্লেটের মতন। একটা ডায়েরিতে জীবনকাহিনী লিখতেন অবরে সবরে শুধু। সারাজীবন একটিবারও কারো প্রতি কোনো অভিযোগ যে করেন নি, সেই কৃতিত্বকেই এখন দুর্লঙ্ঘ পাহাড় বলে মনে হতে থাকে।

আসলে, হয়তো বা, নিজের মতো করে কিছু চাইবার বোধই হারিয়ে যায় পুষ্পরাণীদের। একবস্ত্রে জন্মভূমি ছেড়ে আসবার ওই অভিঘাত ভেতর ভেতর অনেকটা বোবা করে দেয় তাঁদের। ওপার বাংলায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীদের জমিদারির একটা অংশে তালুকদার ছিলেন পুষ্পরাণীর পরিবার। পশ্চিমবাংলায় এসে এদিকওদিক করতে করতে তাঁরা থিতু হন নদিয়া জেলায়। আবার নতুন করে বাস্তুভিটা গড়ে তোলার সংগ্রাম। কিন্তু ছেঁড়া শিকড় নতুন মাটিতে পুরোপুরি বসে কি কোনোদিন?

তবু তো, একটা ঠাঁই হলো, শিয়ালদহ স্টেশনে রাতের পর রাত পড়ে থাকা ছিন্নমূল এর শোকগাথা তাঁর নয়। যশোর রোড ধরে সম্বলহীন লক্ষ শরণার্থীর মিছিলেও তাঁকে পা মেলাতে হয়নি।

এ এমন এক সময়খন্ড, যখন এইসব বয়স্ক মানুষেরা এক এক করে সংসার থেকে ছুটি নিতে থাকেন। আমাদের বেড়ে ওঠার পুরনো পৃথিবী যেন সরীসৃপের মতো খোলস ফেলে নতুন এক সময়বৃত্তে নিজেকে ঢুকিয়ে নেয়। নাটকের অঙ্কবদল  হয়। কে না জানে, জীবন হলো শ্রেষ্ঠতম নাটক! অ্যান্ড দ্য শো মাস্ট গো অন।

নাটকটা সত্যিই চলছে। জীবননাটক। ইতিহাসের নাটক। সে নাটকের অঙ্কগুলি আবার ঘুরেফিরে মঞ্চে এসে যায়। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করে। নিজেদের মধ্যেই গোষ্ঠী তৈরি করে। মানচিত্রে দেশ আঁকে। দেশ বড়ো হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন। ভেঙে যায়। ভারত, জার্মানি, কোরিয়া। ভাঙা দেশ জোড়াও লাগে আবার। বার্লিন প্রাচীর ভেঙে যায়। দূর থেকে দেখলে বাচ্চাদের খেলা বলে বোধ হতে থাকে। শুধু এই খেলার মধ্যে পড়ে, অনেক অনেক পুষ্পরাণীর জীবনছক হয়ে পড়ে অন্যরকম। আপনভূমি বলে যাকে জেনেছেন, একদিন তার ওপর লালকালির দাগ টেনে একজন দূরদেশী সাহেব, নাম র‍্যাডক্লিফ, হাজার হাজার পুষ্পরাণীর জীবন বদলে দেন। তৈরি হয় এমন এক তথাকথিত  আন্তর্জাতিক সীমারেখা যা যায় মানুষের রান্নাঘর, ঘরদুয়ার, উঠোন আঙিনা দিয়ে। তারও কয়েক দশক পরে, এক দেশের কর্তাব্যক্তিরা বলে দেন, কারা কারা অনুপ্রবেশকারী। অধুনা ‘অনুপ্রবেশ’ শব্দটির জনপ্রিয়তা দেখে মহাসময়স্রোত হেসেও ফেলে হয়তো। মানুষের ইতিহাস, আসলে ইতিহাস ভুলে যাওয়ারও ইতিহাস হয়তো বা! এই বেবি ইউনিভার্সে তার হয়তো বা কখনোই বড়ো হয়ে ওঠা হলো না!

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট। পুষ্পরাণীর ডায়েরি।

Facebook Comments

1 thought on “কে কার রেজিস্টার! : অনিমিখ পাত্র Leave a comment

Leave a Reply