রাজা সাহা-এর কবিতা

মাকে না-পাঠানো চিঠি 

মাস-মাইনে হাতে আমি যতটা অসহায় একজন পিতার ছকে, স্বামীর ছকে, তার চেয়ে ঢের বেশি অপরাধী সেই লোকটার কাছে যার দিকে তুমি বারবার ছুঁড়ে দিয়েছ বাসি রুটি। যার ক্যানভাস মাড়িয়ে তুখোড় প্রেমিকেরা তোমায় নিয়ে কাঠপুতুলের দেশে বেড়াতে গেছে

কত সহজেই একদিন সেই লোকটার রং-তুলি বেচে কিনেছিলাম চাল ডাল নুন। আর সে দৃশ্য থেকে অদৃশ্যে মিলিয়ে গেছে বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না করে। এখন আমি এক ভাঙা মিছিল ও নেতিয়ে পড়া স্লোগানের ভিতর নিঃশব্দে হাঁটি। ফিরে ফিরে যাই তার মুখাগ্নির ছবির কাছে

ধারণার ওপারে পাতলা কুয়াশায় মোড়া তিস্তার মোহমায়া। ভরা জোছনায় তুমুল মদ গিলে আমি শুনেছি ঝরাপাতাদের নিশিডাক। এই সব অতলের প্ররোচনা। তুমি বোঝ আমিও বুঝি আমাদের ঘুমহীন উন্মাদ রাতে কেন সেই লোক নেমে আসে!

আমরা দুজনেই অভিশাপগ্রস্ত। বহুদিন খবর রাখিনি একে অপরের। বহুদিন নালিশ ছুঁড়িনি খোলা আকাশের কাছে। আজকাল পুরোনো পাড়ার দিকে গেলে অথৈ নোনা গন্ধ ভাসে। শুনেছি, ইদানীং বাতিল শরীর থেকে তুমি বিষ ছড়াও বাতাসে। ধারাবিবরণী দাও, পরি কাকার মেয়ে কার সাথে হোটেলে যায়, কত রোজগার করে প্রতি মাসে। যেন কী নিঁখুত সাদা-কালো প্রহেলিকা। প্রতি পেগে ভুলে থাকবার কৌশল। অথচ শুধু তুমি জানো আমিও জানি, আমরা অভিশাপগ্রস্ত, গল্প বলার ছলে আসলে জড়ো করতে চাইছি পোড়া কাঠ…প্রিয় মুখ

 

অসুখ বিষয়ক

মিথ্যে মিথ্যে অসুখের সংস্কারে বহুদিন আমি আয়নায় দাঁড়াইনি। আর সেই সুযোগে বন্ধুরা কেমন বুড়িয়ে গেছে। প্রাক্তন প্রেমিকারা আরও সুন্দরী এবং মা হয়েছে নদীমাতৃক আবহাওয়ায়

অসুখের অজুহাতে চাকরি গেছে বেশ কয়েকবার। বেকারত্বের ফাঁকফোকর দিয়ে দেখেতে পেয়েছি বন্ধ পার্টি অফিসের সামনে বৃদ্ধ কমরেডের দীর্ঘশ্বাস। এশিয়ার বুকে ধর্ম নামক গভীর ক্ষত

ডাক্তার আমাকে চশমা দিয়ে বলেছেন, “বাঁচতে চাইলে দৃষ্টি সংকুচিত করে নিজের দিকে মনোনিবেশ করুন শুধু”। তারপর, আমি আর বেপথে যাইনি। পাহাড়, জঙ্গল এমনকী শ্মশানেও না। তারপর ৮৯ কেজি থেকে ৬৭ কেজিতে ভোল পালটেছে আমার

আজ একটু অন্যরকম সকাল। ত্রিসীমানায় একটাও ফেরিওয়ালা কিংবা পাখি নেই। আজ আমি বাধ্য ভীষণ। ডাক্তার বলেন এমন দিনেই নাকি আমি সুস্থ মানুষ। কবিতা সম্পর্কিত সমস্ত দস্তাবেজ পুড়িয়ে প্রোফাইল পিক বদলাতে পারি


Profile_Pic_Raja_Saha

পরিচিতি : জন্ম ও বসবাস শিলিগুড়ি শহরে। নাটক, কবিতা, গদ্য, কুটুম কাটাম নির্মাণ ইত্যাদি সৃজনশীল কাজ ভালোবাসেন। ফোটোগ্রাফিতেও কবিতা তুলে আনতে পারেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ – “এবং সিরাজ”।

Facebook Comments

Posted in: Poetry, September 2019

Tagged as: , ,

Leave a Reply