রঙ্গন রায়ের কবিতা
আমি এবং আমি
আমার কাঁধ ব্যাগ দেখে কেউ কেউ বলে,
“তোর চেহারা একদম কবিদের মত মাইরি”,
আবার উস্কোখুস্কো চুল দাড়ি দেখে মন্তব্য আসে
“ভাই তুই তো একদম সায়েন্টিস্ট লুক নিয়ে নিয়েছিস”,
কোনো সময় আবার পারিপাট্য দেখলে
“তোর শরীরে পুরো লেখক আছে গুরু”
খালি আমি জানি, আমি একদম সাধারণ একটি ছেলে
চশমা পরি, সাইকেল চালাই, এবং আর পাঁচজনের মতই
নিজেকে অরাজনৈতিক বলে পরিচয় দিই,
সকালে আলুসিদ্ধ ভাত খাই আর বান্ধবীদের সান্নিধ্য কামনা
করি ভয়ঙ্কর ভাবে।
দেখুন, আমি সবুজ পাঞ্জাবি পরলে টিএমসিপি
লাল পরলেই এসএফআই, তাই
এখন ইচ্ছে হলেও গেরুয়া পাঞ্জাবি পরতে খুব ভয় লাগে …
কিভাবে লোকে আমাকে অবলীলায় কবি – বিজ্ঞানী – লেখক
আর গিরগিটি বানিয়ে দেয়।
অথচ আমি সারাদিন চেষ্টা চালাই সবাইকে মানুষ ভাবতে
কিন্তু মানুষ আমায় কিছুতেই মানুষ থাকতে দিচ্ছে না
নভেম্বর, এসো
দেখো অনেক দিন পর আমি ক্লিন শেভ করেছি
এখন আমি সভ্য ভীষণ, তুমি বলো এমন দিনেই আমাকে রোমান্টিক লাগে –
বারান্দায় বৃষ্টি শেষ হয়ে গেছে গত বর্ষায়, তবুও স্বপ্নে তুমি খুব বৃষ্টি দেখো
বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তোমার একটি পুরুষ দরকার, খুব মন খারাপ হলেও –
তোমার হাতে মশা কামড়ালে ফুলে ওঠা জায়গায় আঙুল দিয়ে নক্সা আঁকো
আমি সত্যিই ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ি –
বান্ধবীরা আমায় কাপুরুষ বলে চলে যায়, আমি কালপুরুষ শুনি
কোমড়ে অসি নিয়ে তারকা খচিত এক দুর্দান্ত পুরুষ!
শিউলি ফুলের মত অক্টোবর ঝরে পড়ে,
তোমার শুকনো ঠোঁটের মত শীত আসে
এখনও তুমি প্রতিদিন শ্যাম্পু করবে, আর আমি গন্ধ খুঁজে পাবো আমার পাড়ায়!
এখনো তুমি শাসন করবে রাত করে বাড়ি ফিরলে, ঠান্ডা লাগালে –
আর আমি চিৎকার করে তোমায় ডাকলেই মায়ের মত বলবে, ‘এই তো আমি’
অথচ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ভালবাসার কথা বলা হলোনা কোনোদিন –
তুমি জানো, ভোরের প্রথম আলোর গন্ধ ফুঁটে উঠলেই
আমি ফিসফিস করি, গালে হাত বুলাই, তারপর ফের পাশ ফিরে শুয়ে পড়ি

পরিচিতি : জন্ম ও বসবাস জলপাইগুড়িতে। গল্প ও কবিতা দুইই লিখতে ভালোবাসেন। সাম্মানিক স্নাতক স্তরে পাঠরত বর্তমানে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ – ”প্রাপ্তবয়স্কতার পূর্বদিক”।
Posted in: Poetry, September 2019