বিশ্বরূপ বিশ্বাস-এর কবিতা

১.

বহুবার সরাসরি ম’রে যাবার পর শেষবার জীবাশ্ম হ’য়েছি। মেয়ের স্তন আর রমণীর স্তন কোথাও যেন পৃথিবীতে বাড়বাড়ন্ত ভাবে-ই এক জিনিস। যে শূন্যের কাছে গিয়ে গীতা প’ড়েছি পুণ্যাত্মার জন্য দিবারাত্র সেই তীর্থ মন্ত্রের নিসর্গশোভা শরীরের মদ মাৎসর্য যোনি। সীতাহারা নয়নের ম’ণির এই সামগ্রী নাম হ’লো রামনাম কিংবা রাবণ এই অবস্থার অবস্থানে। ফ’ণী হ’লো মাংস। নিজের পলাতক গাছের কাছে সম্পূর্ণ ধ্বংস হবার পর ঘরকে-ই দিয়েছি ধুলোবালি-লবণ-সমুদ্র-কবর।

এসেছি যেখানে সেখানে-ই খোদার মতন শেষ হবো। যৌনতার হাত পা মাথা খুলে প’ড়ে যাবো উর্বর মাটিতে বারবার। অভাবনীয় চিচিঙ্গা রান্নাবান্না ক’রে খাওয়াবো দুয়ারে ম’রে থাকা মেহমানকে। চ’লে যাবো চ’লে যাবো। সত্যি-ই ব’লছি বাস্তুসংস্থান-জমিজমা ছেড়েছুড়ে চ’লে যাবো। আর কতো-ই-বা নাচবো। কাঁদবো। হাসবো। গাইবো আর কতো-ই-বা। পরস্পরের মৈত্রেয়ক ধ’রে থেকে আর কতো-ই-বা মহিলাকে ক’রবো সঙ্গম মৈথিলী-সংগীতে। অথবা রাত্রিকালীন মৈথুনে।

বৃষ্টি ধোয়া দুর্ঘটনায় আরাম দ্যায় বাচ্চার মাথা প’চে যেতে যেতে। ভালো-ই হয় অবশেষে যখন নারকেল থেকে বিতাড়িত হয় অভিঘাতের সরু সরু আপেল। ঘুমহীন বালিশ। সর্বব্যাপী ঝড়ের বাড়ি। খর্ব ব্যাপী বউ পালানো-রোদ্দুর। পৃথিবীর ঘর ততটা-ই দূর যতটা সুদূরে জীবনের সমাপ্ত মহার্ঘ অন্ধকার ছাড়ে। যতটা জাল দেহকে ধ’রে নিয়ে সোজা প্রগতির সাগরে জিরিয়ে দ্যায় মাংস শাদা শাদা নুনে। লবণ আর আগুনে ছাড়িয়ে দ্যায় ছাল।

রিপুর লগ্নষষ্ঠস্থান থেকে রিঠে ফল ছিঁড়ে নিয়ে দেহের চামড়া পরিষ্কার ক’রেছি। রিরংসা ধুয়ে মুছে গ্যাছে। রিক্তহস্ত ভ’রে গ্যাছে ফুলে ভরা রিকাবের মতন। ব’নের রুরু অরণ্যচারী হরিণের মতন বিস্ময়জনক হরিণী সেখানে। বিস্ফারিত বিহরণী সেই পরীপ্সা প্রাণের নিঃস্ব নেকড়ে। যেন ঘোরেফেরে নূপুরনিক্বণে নরকের নীহারিকায়। যেন অতিদূরে ফেলে যায় সুদূরের লাল সিঁদুর। প্রাণীবল্লভ উঠানের কালো ইঁদুর সেই ইতিবৃত্তের শৌণ্ডিক। শৌর্যশালী দুনিয়ার তির্যক রোদ্দুর।

তরুণ ১টি স্টেশনের নাম ষোড়শী নগর। কালো-শার্টফাটা বিকাল এখন প্ল্যাটফর্মে। এই জংশনে মহাফেজখানা সহজে বিভীষিকা জ্বালবে। অবসরে বাঘের থাবা সহস্রাব্দ পিছনকে আগে টেনে আনবে হত্যাকাণ্ডের কাছাকাছি। মশা আর মাছিও থাকবে অশ্বারোহণের চরাচরে জাদুবলে। কিছু ডালপালা ধ্ব’সে গেলে দুনিয়ার পরে গাইড থাকে মৃত গাছ। আমাদের হারানোর ধারণা বাড়ে তখন। বাড়ে তখন মৃত্যু আর বিবাদের বিধান।

শোধনীয় ঋণ যোগনিদ্রায় পরিশোধ ক’রে ভাটিয়ালি গান গাই। পৌর্বদেহিক পাপাচার ক্ষ’য়ে ক্ষ’য়ে এখোন সূর্য ওঠে জীবনের দক্ষিণপ্রান্তে। এখোনার পানদোষ নেই। এখোনার পানকৌড়িও নেই পুকুরের জলে। তীব্র নৈষ্ঠুর্য নৈসর্গিক। নৈশ সংসার গৈরিক অথচ গেরিলা নয়। ন্যায় অন্যায় সমান্তরাল দায়িত্বজ্ঞানে যেন নিষ্পন্নার্থ গ্রহ কণিকা। সিগারেট ধরাচ্ছি আগুন জ্ব’লছে না তাই। ফুসফুসও পুড়ছে না তাই। কেবল ঠোঁট দাহনে দাহনে হ’চ্ছে গ্রস্তাস্ত-কয়লা। কিংবা লৌকিক লোষ্ট্র।

সাবলীল সংসার সত্যি সত্যি-ই আকাশে তারা ফোটাতে পারে। চিবিয়ে রাখা হাড়ের পুঁটলির নাম সন্ধ্যাবেলার সন্ন্যাস। প্রায় শরীরকে সারাজীবন পালঙের ক্ষেতে তাড়িয়ে মেরে বিশ্রী সাড়াশব্দ দিলো না তো চাঁদ। কিংবা অস্তগিরির সূর্য। সাধ আর আহ্লাদ ফুরিয়ে গ্যালো ফালতু ফালতু। ফুসফুসে এলো পুড়ে যাওয়া ছাই। ভাঙাচোরা অনন্তসকাল। একবার গাল টিপে ফ্লিমে কিংবা ফুটপাতে হেসে দিলে ন’ড়ে যায় সমস্ত নিকোটিন। প’ড়ে যায় গাল।

ইস্টিমার অস্থিমারে শব যায় আমার। শুয়ে শুয়ে বংশধর রক্ষী হ’য়ে তারিখ কত কার কেউ জানে না। ডায়েরিতে বিস্ফোরণ ছটফট করে ঈরিত সকালে। মানুষ মাত্র-ই চুমো দ্যায় সন্তানের মুখের দেওয়ালে তথা সন্ততির গালে। কপালে যদি ঘনিষ্ঠ-ঘি না জোটে চিদানন্দ হয় কি ঘুমালে দিনরাত। চির চিন্তনীয় বিষয়কের হাত বাতাস নির্ভর বদ্ধপরিকর। কম্পাস কাঁটায় গেলে ঝড় বাড়ে আর্তকন্ঠর ভাঁড়ে পরার্থপরতা ভ্রাম্যমান। পাহাড়তলিতে কত অলিগলি তুমি জানো কি হে আকিঞ্চন।

জানি না জানি না যাত্রা শেষে কার নিরাপদ মৃত্যু। কার যাত্রীবিদ্যা শশকের চেয়ে গৃহবাসী পেয়ে রূঢ় হয় অস্বাভাবিক। ডাঁটা যদি শাদা হাঁসের দিক নির্দেশ করে জলে, তবে বছরের দশমিক প্রসার কৌশলে ডিম দ্যায় ধানক্ষেতে। গ্রহের গ্রহণ যোগ্যতা তাৎক্ষণিক আকাশপারে চিরকালীন সিমেন্টের ছাঁচে ঢালাই হয়। একবার পৃথিবীতে ম’রে গেলে আরো দ্বিতীয় জীবন পাই যেন ডোরা ডোরা দাগে। ছদ্মবেশ আর পাথরের সংরাগে দুনিয়ার জায়মান বিদেহী আত্মা। দুনিয়ার জায়মান টান টান উত্তেজনার দেহাতি গান।

চরিত্র অপচয় ক’রে হাজতে গ্রেফতার হয় ক’জনা। আমার স্বভাবসুলভ স্বীকার দিয়ে ক্ষীর ক্ষীর নীড় মোহন নিশাচরে অথবা চরাচরে নষ্ট-বিনষ্ট মরুভূমি। বিলুপ্ত প্রায় সসাগরা। এই কারণে-ই আমাকে ধরাধরি ক’রতে নেই। এই কারণে-ই আমাকে করাকরিও ক’রতে নেই আর পাঁচজন মানুষজনের মতন সহজ সিদ্ধ। বরং আমাকে সহস্রায় সহাধ্যায়ী হ’য়ে শেষ-পরিশেষ হ’তে দিতে হয়। বরং আমারে ম’রে যেতে দিতে হয় নিঃসহায় সচকিত মরার মতন। আমাকে ধরবার প্রয়োজনে নিজে শেষ হ’তে নেই কোনোদিন-ই।।

২.

এই শুয়ে পড়ার অভ্যাসে বিছানা যন্ত্র টানটান। স্থির আয়ু।
পরমেশ্বর সেক্স। অনেকদিন পটভূমি ক’রে দিয়ে বাচ্চা
বের হ’য়ে যায়। বাগানের লোহার থামে নামে মুগ্ধ সব মুখ
ঠোঁট পাছা। বর্ষীয়ান হ’য়ে আছে গোখরোর দাঁত।
গোখরোর মাথা। সে মাথায় চুমে যায় পুন্নাম বউ।
কিলকিঞ্চিত তাঁবুঘরে সে মাথায় প্রসব করে রোগা যুবক।
কিরাতের ব্যবসা ব্যবসায়ী হয়। LOVE হয় লোভ হয়
জীবনের ঘাম বেচে। কবিতা লেখার নাম বেচে LOVE
হয় লোভ হয়। দুঃখ ক’মে আসে কবিতার চাপে গল্পের
চাপে না। কম খরচা ক’রে প্রতিস্থাপন লেখার কেউ কেনে
না। বাজারের লোভ ও মাংস গাঁয়ের পুকুরে কেউ চুবিয়ে
দেয় না। পাড়ার কুকুরকে দেয় না কেউ কষা মাংস।
জীবনের কিমাতে স্তনের ধার কিমাকার। জীবনের
করাতে বাড়ির রাত চাঁদের বন্দিশবন্দুক। আমার তো খুন
ক’রতে সদিচ্ছা হয় বনজ্যোৎস্নায় অনেকদিনের না মরা
গোপানাঙ্গকে। ভাবি কেটে দিলে ছেঁটে দিলে রমণী পাবে
কি। ভাবি মুঠোর চাপে ছিঁড়ে দিলে বাচ্চা হবে কি।
আসক্ত জন্মচক্রে বাঁধা আছে যে নাড়ি। ভাবি সে নাড়ি
পুড়িয়ে দিলে হাড়মাংসে পচন ধরে কি। দেখতে হ’লে
ক’রতে হবে করার মতন যত্নকরা মৃত্যু। বিশ্বাস দাও
নিরাপত্তা আমায় তুমি মেরে ফেলবে না। মারতে-ই যদি
হয় পৃথিবীর মাথা কেটে সাজিয়ে দাও বন্ধনে। সাজিয়ে
দাও বজরায়। যেন দেখে ম’নে হয় কতকালের ঘাটেরমরা।।


Profile_Pic_Biswarup_Biswas

পরিচিতি: স্বল্পকালের সুদীর্ঘ সময়ে লেখালিখি শুরু। লেখালিখির আশৈশব-প্রধান অনুপ্রেরণা প্রতাপ রায় এবং সার্বিক অস্তিত্বকে রক্ষা করার আত্মিক স্বজন পৃথিবীর সমস্ত গাছপালা পশুপাখি নির্জন-মাঠঘাট শ্মশান চুল্লী নদী সমুদ্র পাহাড় প্রেতাত্মা মরদেহ ফেসবুকের প্রিয় মানুষেরা এবং পুকুর পাড়ের নিবিড় বাড়িটি। ও ইত্যাদিদের অলৌকিক সমাহারের সঙ্গে একটি অফুরন্ত জীবন সুন্টু। জন্ম ২১শে জুলাই। আত্মহত্যা প্রবণ। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ‘দুঃস্বপ্নের রাত’ (২০১৪), ‘ঈশ্বরের থিয়েটার’ (২০১৮)। অহনা সরকারের সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত পত্রিকা—‘শূন্যাঙ্ক’।

Facebook Comments

1 thought on “বিশ্বরূপ বিশ্বাস-এর কবিতা Leave a comment

Leave a Reply