আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়-এর কবিতা
অপকেন্দ্রিক
১
যে মেয়েটি কেবল মুখ দেখে নুনের কৌটো এগিয়ে দিতে পারে খাবার টেবিলে, তাকে বেশ কাছ থেকে দেখেছি আমি।
তার সুখ-দুঃখ-ক্ষোভ-বিরক্তি সবকিছুই। না-পাওয়ার সংসারে অভাবের সদব্যবহার জানে সে মেয়েটি। কেমনরকম ভালো লেগে যায় তাই। ও গান ভালোবাসে, আমি ভালবাসি নিজেকে, মাঝে মধ্যে দামি সাবান কিনি, নতুন জামা, আর কেউ ভালো গান পাঠালে এগিয়ে দিই ওর দিকে। বদলে ও নুনের কৌটো এগিয়ে দেয়, বিষম খেলে ছিপি খুলে দেয় বোতলের…
২
দাদুর কাঠের আলমারির লকারের দিকে আঙুল তুলে জিজ্ঞাসা করলেই মা বলত ওখানে ঝগড়াঝাটি থাকে বড়দের। এরপর অনেকবার সেই চাবির খোপে চোখ দিয়ে দেখেছি কিছুই দেখা যায় না অন্ধকার ছাড়া। আমি জানতাম ঝগড়াঝাটি মায়ের কান্না আর বাবার সান্ত্বনার মতো দেখতে, তবু ইচ্ছা করত চোখে দেখি একবার। দরজার পিছনে মোজার ব্যাগে থাকত সে চাবি, যেমন থাকে আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত ঘরে, ছোটোদের নাগালের চেয়ে একটু উঁচুতে।
মা ভাবেনি একদিন হাতে পেয়ে যাব ব্যাগ, খুলে ফেলব লকার। তারপর বড়দের ঝগড়ায় আর কোনোদিন আটকে রাখা যাবে না ঘরে। চোখে এক বিপুল জিজ্ঞাসা নিয়ে সে এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়…
লকার জুড়ে শুধুই অন্ধকার, কোনো এক কিশোরীর গানের খাতা ঘুমিয়ে রয়েছে এককোণে।

পরিচিতি : জন্ম ১৯৯৪-এর বর্ষাকালে উত্তরপাড়া শহরে। বিজ্ঞান শাখায় স্নাতক আকাশ পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য। কবিতা ও গদ্যের বাইরে বাগান, গাছপালা, পাখি, কুকুর, কলকাতা, বন্ধুবান্ধব, গান, প্রচ্ছদ, মানুষ ও টকদই-বোঁদের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। ‘মাস্তুল’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনার পাশাপাশি ‘বইঘর ডট ইন’ নামক বাংলা বইয়ের অনলাইন সেলিং প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম কার্যকরী সদস্য। বর্তমানে একটি ওয়েব পোর্টালে কর্মরত। প্রকাশিত বই- ‘আরও গভীরে মেঘ’ (পাঠক, ২০১৬), ‘হাঁটছি এখন’ (আঙ্গিক-মাস্তুল, ২০১৭), ‘জ্যোৎস্নার ছৌ’ (আঙ্গিক, ২০১৮), ‘অস্ত্র উপচার’ (তবুও প্রয়াস, ২০১৮), ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ (আদম, ২০১৯), ‘মঞ্চে ডেকে নিচ্ছি’ (আজকাল, ২০১৯)।
Posted in: Poetry, September 2019