আদিদেব মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা
এলেজি
কে তুমি, ছুটতে ছুটতে অকস্মাৎ পাথর হয়েছ, অথবা পাথর থেকে বেরিয়ে আসবে, দেবে ছুট, তোমার সঙ্গীরা এগিয়ে গেল যে, তুমি হরিণ, হরিণের মধ্যে ঈশ্বর, ইলান্ড, বন পার করে যাও, হয়তো ঝর্ণায় এসেছিলে, হয়তো কামার্ত হয়েছ, হয়তো বাঘের গন্ধ পেয়েছিলে –
আমি হই পরবশ, অস্থিগুলি হিম হয়, চাই গুহার দেওয়াল, কামরার মাপ তো জানি না, কোথা ফিতে, কোথা বা আন্দাজ, এ নয় বিদ্যুৎবাতি, নক্ষত্রের তলে বসে ঠুকেছি পাথর, আগুন জ্বলেছে আর বারবার ঝলসে গেছে তোমার মাংস, আছি খাদ্যহীন, তোমাকেই বড় যত্নে দেখি, নিরীক্ষণ করি –
কে তুমি, হরিণের ঈশ্বর বুঝি, ইলান্ড, বনের প্রেত হয়ে এসেছ কামরায়, দু দণ্ড বসো, দাপাদাপি করো, আহা, উৎসবের রাত, সুখের গান, সুখের ঝর্নার ধ্বনি, আগুনকে ঘিরে গোল হয়ে সেই নাচ –
কে তুমি, হারানো দিন, জনহীনতায় বসে আছি, ইলান্ড, জলে ভরে আসে মুখ, হরিণের ঈশ্বর, নীরবে তোমার জন্য অশ্রুপাত করি!
জুন, ২০১৯
দিকশূন্য ঘরের দিকে যাই
আমাকে জাগাও, ও স্বর, কণ্ঠস্বর, তুমি শুদ্ধ সা দাও, ভাঙতে ভাঙতে হও জ্যান্ত ভাঙচুর, ঘনকে ঘনক লাগে, তুড়ে যায়, বুঝি প্রস্তরযুগের ব্যথা, কিংবা জাদুঘর কোনো, তারই মহনীয়তা, তারই সিঁড়ির তলে দাঁড়িয়ে দেখেছি, সারি সারি ছায়া, খিলান, গথিকতা, মনে মনে বলেছি ‘বিশাল আকাশ আছে, আছে নীল রেখা বিষুবের’
আমাকে জাগাও, স্বপ্নের ছবিতে টোকা দাও, যখন কাফের ভেতর মদ মুখে আমি বসে ছিলাম, আমার বন্ধুটি বসে ছিল, যখন আমরা বলছিলাম, ‘রক্তে ভরে গেল চোখ, ঢাকা পড়ে গেল চরাচর’, যখন একটা কুকুর শুঁকছিল আমাদের জুতো আর আমরা মদ মুখে বসেছিলাম, অন্ধকার কোণা ও অন্ধকার কাফে, আমরা বলছিলাম ‘প্রিয়তমা, অন্তহীন আগুনের ওপারে আছ তুমি’
আমাকে জাগাও, যখন অঝোর বৃষ্টি, যখন নগরীর থেকে দূরে, বুড়ো আঙুল ব্যথাময় হল, আলোর পর আলো, হর্নের পর হর্ন, কত যে বছর ধরে হাঁটলাম, হাড় হিম শীতে কেঁপেছি আর আবছা হয়ে গেছে নিউ ইয়র্ক, বিড়বিড় করে বলেছি ‘যেহেতু আমি তোমাকে বিশ্বাস করি’-
আমাকে জাগাও, গুলতানিতে, সাঁঝের আড্ডায়, যখন জ্যান্ত হয়ে ওঠে ইতিহাস, যখন শরীরে ছাতা গজায় ও ছড়িয়ে পড়ে, অস্ত ও আকাশের পটে এই শহর আরো মলিন হয়, আমরা মুখে মদ নিয়ে বসি আর বলি ‘টাকা ফেরত দাও আহাম্মক, চেয়েছি হৃদয় দিতে আর তুমি দাবি করলে আত্মা’-
আমাকে জাগাও, বেদনায়, নিরালায়, উৎসবহীনতায়, যখন হতাশা ঘিরেছে, যখন ধোঁয়ায় ভরে আসে ঘর, হিমে ভরে আসে মাথা, তার বাড়িতে বন্ধুটি কীভাবে আছে জানি না, তার কি দুর্দশা, জানি না, রাস্তা থেকে রাস্তায় হাঁটি, আলোকিত জানলায় চোখ রেখে বলি ‘দোলা দিলে স্বপ্নের মতো, চোখ ভরে এল রক্তে আর ঢাকা পড়ে গেল চরাচর’…
জুন, ২০১৯

পরিচিতি : জন্ম ১৯৯৪। প্রকাশিত বই – ‘আমি ফাটিয়ে দেব’ (২০১৭), ‘ট্রায়ো’ (২০১৮), ‘আগামী পর্দায় দ্রষ্টব্য’ (২০১৯), ‘সমবেত আর্তনাদ’ (২০১৯)। সম্পাদিত পত্রিকা – ‘তৃতীয় বিশ্ব’ (২০১৮)।
Posted in: Poetry, September 2019