অনুবাদ কবিতা : হিন্দোল গঙ্গোপাধ্যায়

গ্রীক কবিতা – অর্থনৈতিক অবনমন ও ব্যয়সংকোচের আলোকে

ষষ্ঠ কিস্তি

Grrek_Austerity_Aug19
[চিত্রসৌজন্য – https://marxiststudent.com/generation-y-a-generation-lost-to-austerity/]
 

Dimitris Athinakis (Drama, 1981)

যুদ্ধ-পরবর্তী কবিদের যেমন মনোলিস আনাগনোস্টাকিস এবং তাসোস লেভাডাইটিস-এর প্রভাব দিমিত্রিস অ্যাথিনাকিসের কথোপকথনের সুর এবং সম্ভাবনার অপ্রত্যাশিত বাঁককে অবহিত করে। তিনি যথাক্রমে এথেন্স, থেসালোনিকি এবং আমস্টারডামে থিওলজি, বিজ্ঞান  এবং দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন। একালের গ্রিসের সর্বাধিক প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ক্যাথিমেরিনি’তে সম্পাদক এবং সামাজিক মিডিয়া সংস্থা মিডিয়েনেরেস এর সৃজনশীল পরিচালক হিসাবে তিনি অ্যাথেন্সের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব| তিনি ইংরেজি সাহিত্য ও কল্পবিজ্ঞান অনুবাদও করেছেন|

দুর্বলতা

কিন্তু এইসব মৃত মানুষেরা কোথায় যায়?
মানুষ
যখন মরে , তখন কোথায় যায়, বাবা?

তার চোখদুটো আমাকে দেখে
গভীর, সুন্দর দুটি চোখ
মাঝে মাঝে ভাবি ওদের নিয়ে লিখব
কেন তারা এখনো আমায় ধূমপান করতে দেয় না,সেটা জানতে

কেন তুমি আমায় এখনো ধূমপান করতে দাও না?

আজ আমি সমস্ত পোশাক গায়ে চাপিয়েছি
যাতে কেউ না বুঝতে পারে আমার ওজন কমে গেছে
চুল ঝরে গেছে
পেট হয়ে গেছে আতিথেয়তাশূন্য
এই জুতোজোড়াই আমার একমাত্র শুধু

মনে নেই, বাকিগুলো আমি তোমার ব্যাগে ভরে দিয়েছিলাম?
তুমি
বলেছিলে সবকটিই তোমায় মানিয়ে যাবে মাপমত
কিন্তু
কিভাবে? তুমি বরাবর লম্বা
আমার
এখনো মনে পড়ে বাঁধা জুতোর ফিতেরা
কেমন
সহাস্য হয়ে উঠত তোমায় দেখতে পাবে বলে

আমার এখনো মনে পড়ে
কেমন হেসে উঠত সেই পোশাকেরা
যাদের পরে আমি বাইরে বেরোতাম
সমস্ত ভাঁজ ও দাগ, বক্ররেখা তৈরী করত হাত ও বগলে
কারণ আমি দুর্বল, শীর্ণ
জামারা আর ঠিকমত গায়ে হয়না আমার
তাই দুটো তিনটে একসাথে গায়ে চাপিয়ে নিই
ঘাড়ে আটকে থাকে বোতামআঁটা উলের সোয়েটার
এগুলো স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি
যেদিন থেকে পোস্টাপিসে, আমি ফেলে এসেছি আমার সব মাফলার

আমি ওগুলোকেও বাক্সে ভরে দিতে চেয়েছিলাম
কিন্তু
একজন কেরানির খুব পছন্দ হয়ে গেল বলে
তাকেই
দিয়ে দিলাম
আমার
সবকটা মাফলার, ভাবো!

সেদিনের পর থেকে আমি আর লিখিনি
একাকী শুধু বসে থাকতাম ডেস্ক-চেয়ারে
একটু ক্ষুব্ধ
কারণ জানি ধূমপানের অনুমতি পাবো না
তাই আমি নিজেই ধোঁয়া হয়ে উঠলাম
নেমে এলাম ঘরের ছাদ অবধি উঠে আবার চেয়ার পর্যন্ত
আর বারবার পুনরাবৃত্তি করলাম এই কাজের
ঝুলবারান্দা, এই বাড়িটার মতোই যা বড়, অথবা ঠিক ততটাই ছোট
সেখান থেকেও ঘুরে এলাম কিছুক্ষণের জন্য|
আমার সামনে একটা ধোলাইখানা
আর ঠিক তার উল্টোদিকে আমি দাঁড়িয়ে
যেন একটা প্রতিযোগিতা
কে বেশিক্ষণ ভালোভাবে ঝুলে থাকতে পারে

তার চোখ, তার চোখদুটো সুন্দর
আমার পছন্দের জুতো পরে নিলে তারা বদলে যায় একটু
তার চোখেরা, আসলে এমন কয়েকটা শব্দ
যা কখনো ব্যবহৃত হবে না কোনো কবিতায়
সেই চোখদুটি আমার বাবার

ব্যাগটি ফিরে এসেছে
– “ভবিষ্যতে আমাদের সাথে আর এরকম মজা করবেন না, মশাই!”
– “
কি বলছেন? হাস্যমুখ বাঁধা জুতোর ফিতেরা কত সুন্দর!”

আমি আবার তোমার চোখদুটো দেখতে চাই

আজ রাস্তায় বেরিয়েছিলাম
পাহাড়ে মৃতদেহ জমে ঢিবি হয়ে রয়েছে
বিরাট চাকাওয়ালা একটা বড় ট্রাকে, এক এক করে,
আমরা তাদের তুলে ফেলি
মনে হয়, প্রশস্ত কোনো যাত্রার জন্য ওরা প্রস্তুত হচ্ছে

কিন্তু
এইসব মৃত মানুষেরা কোথায় যায়?
মানুষ
যখন মরে , তখন কোথায় যায়, বাবা?

আমার বাবাকে একটা কবিতায় নামিয়ে আনতে পারলাম শেষমেশ
কিন্তু ধূমপান ছাড়তে পারলাম না
যতবার আমি জুতোর ফিতে বাঁধি
আয়নার সামনে যেন একটা স্তুপের মধ্যে মিশে যাই
আর নিজের দিকেই দেখি অনেকক্ষণ

আমি নতুন দিনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি
যা হাতের কাছে পাই, গায়ে চাপিয়ে মাঝে মাঝে
পোস্টাপিসে ঘুরে আসি

আমি স্ট্যাম্প ভালোবাসি
এই জিভ ঠেকিয়ে রাখার জন্য
আমি ওদের সবসময় রাজি দেখতে পাই

মূল গ্রিক থেকে ইংরেজি অনুবাদ – ক্যারেন এমেরিখ

 

Facebook Comments

Leave a Reply