হিন্দোল গঙ্গোপাধ্যায়-এর কবিতা
যেসব দ্রাঘিমা আমিও দেখিনি
১
জ্বাল দেওয়া দুধের মতো এই রোদ, আমাদের সমস্ত পূর্বপুরুষ বেরিয়ে পড়ছেন মশলা ও ধাতুর বাণিজ্যে | শিখে ফেলতে হবে, কিভাবে আরো নিখুঁত করা যায় দৈনন্দিন ভুল এবং মিথ্যেগুলো। জারুলগন্ধ মজে ওঠা শরীরে একটু আলাপের জন্যে আমি যুদ্ধ করি, আর দেখি আসবাব থেকে খুলে আসছে কাঠের বিসমিল্লা। ভর, ছায়া, কামাচার দিয়ে পৃথিবীর গন্ধ নির্মিত হয়…. দ্য নাম্বার ইউ হ্যাভ কলড ইজ আনরিচেবল এট দ্য মোমেন্ট ….
.. ভেবেছিলে, কথা না বলেই সবকিছু এড়িয়ে থাকা যাবে। এমনকি, নীল থেকে শুষে নেওয়া যাবে রঙটুকুও। পরোয়ানা জারি হওয়ার পূর্বসন্ধ্যায়, তোমার উরুসন্ধি অঞ্চলে কিছু ঝলসানো মানুষ, সীমান্ত-তার থেকে একে একে উপড়ে তুলছে কাঁটা…
২
মনসুর ফকিরের এই আড্ডায় ঋতুপর্বের মতো আগুনের রং বদলে দিচ্ছি পেন্সিলে। স্থির বলেই এখনো ডিভোর্স হয়নি বেঁধে রাখা আলোদের, ভাবতে ভাবতে ফেরিঘাট দৃশ্য পায়। ভেসে আসছে জংলা গন্ধ, জলের গন্ধ যার মধ্যে অলিখিত মিশে আছে জলজ শরীর। মাংসের টুকরোগুলো ঝলসে উল্টে নেওয়ার ফাঁকে মনসুরের ভাঙা লালচে দাঁত ঝিকিয়ে উঠতে দেখি। ওর সঙ্গে আমি নৌকো শব্দটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। খাঁচার ভেতর অচিন পাখি যাওয়া আসার ব্যাপারটা যে প্রাণের নিরন্তর শরীর বদলানো, সেটা নিয়ে কিছু আগেই আমরা কথা বলেছি। গীতায় এর উল্লেখ পুরোনো বস্ত্র ছেড়ে নতুন বস্ত্র পরার উপমায়, শুনে হাসে মনসুর। ঠুকে নেয় কলকে’টা। আকাশটাও এত লাল আমি চোখ ফেরাতে বাধ্য হই। যে মেয়েটি কাল এসেছে, তার নাম শুনলাম বিশাখা।
##
যুদ্ধ অথবা’য় বারণ উঁকি মারে ভোরালি আজানে। ফিরে আসছে সেই চোখ যা দিয়ে আমরা দ্বীপপুঞ্জ দেখেছিলাম একদিন, আর টের পেয়েছিলাম যথেষ্ট সবুজ জানা হয়ে উঠলো না আজও। ডি’ নিরো অভিনীত একটি ছবিতে মনে পড়ে, মার খাওয়া তামাম ক্ষত জিভ দিয়ে চেটে পরিষ্কার করে দিচ্ছে প্রেমিকা। কেউ খোলার আগে দরজার অনুমতি নিই নি, অথচ সমস্ত অপমানের দিকে পিঠ ফিরিয়ে আমি প্রলেপ শিখছি মুঠো মুঠো আলগা হাওয়ায়। পৃথিবী থেকে বৃত্তটুকু কুড়িয়ে নেওয়ার ম্যাজিক আড়ালে সামান্য দূরেই অ্যান বসে আছে, কখন আমি মিস করবো ভাওয়েল..
###
কথারা কথা হয়ে ফুটছে , তখন কবিতা আমাকে বলেছিলো ক্ষয় কোনো রোগ নয়। আগামী বর্ষায় তোমার মৌবনে যাবো, এরই মত একটা পর্যায় বরং। উপনিষদে যম নচিকেতা’কে দান-বিধি শিক্ষা দিয়েছিলেন। শূন্য ড্রিবল করতে করতে বাকিদের হাতে আমি কতটুকু তুলে দিতে পারি! আলাপ না হওয়া বাড়িগুলোর সাথে কিছু পাতা উল্টে আসি আজ। ভাবো, ভাস্কর আর জীবনানন্দ পাশাপাশি মাথা নিচু করে চুপচাপ হেঁটে চলেছেন একটা দীর্ঘ রাস্তা বরাবর, আর টুপ্ টাপ নিস্তব্ধতায় নতুন শীতের পাতা ঝরে পড়ছে, পড়েই চলেছে দুজনের মাথায়….
####
কোনোদিন মা’কে ভেঙে দেখলে আমি পৌঁছে যাই মসী থেকে আলোকের অভ্রান্ত বাই লেনে। পুজো এসে গেল এবারেও। এর মধ্যে একটা বিষাদ আছে। আমাকে অবশ্য আগেই বলা হয়েছে এত কথা ভাববার সময় এখন নয়, বলবার তো নয়ই। প্রতিটি দ্বৈত ওঠানামায় আমার সামনে প্রকট হয়ে উঠছে নদীর অবয়ব, এবং তা চিরে নৌকো এগোনোর ছলাৎ শব্দের মানে। অপার্থিব এই চেতনায় শিউরে ওঠা সবকিছু আমি কোথাও লিখবো একদিন। শুধু ফিসফিস স্বরে শুনতে পাচ্ছি, ও বলছে, ‘আমার নামের মানে যদি শাখাহীন হয়, তবে বিভোর মানে রাত বুঝে নিতে আপনার এত সময় লাগে কেন?’
৩
অংক মিলে গেলে
চলরাশি ও ধ্রুবক বন্ধু হয়ে যায়।
একটা লিখে ফেলার ধারণা মাথার ভেতর,
দস্যুর মত অতর্কিত ঢুকে পড়তে চাইছে-
সেই প্রথম
আমি সাদা পোশাকের পুলিশ দেখেছিলাম,
তার নির্লিপ্তি ও যুগপৎ সজাগতায়
ভেবেছিলাম এবার একটা শেষদৃশ্যের মহড়া প্রস্তুত করা যেতে পারে।
অসময় কি একটা ব্যাধি?
যথেষ্ট ভেবে আমার মনে হয়েছিল
সময়ের আগে নেতিবাচক বসানোয়
প্রহর উল্টোদিকে ঘোরানোর এক মস্ত রসিকতা রয়েছে
মরে যাওয়ার ধাক্কায়
শুভাশিসের চোখ উলটে গেছিল
ওই অবস্থায় আমাদের দেখে, সে হেসে চিয়ার্স বলতে পেরেছিল কি’না
তা নিয়েও আমি ভেবেছি কম না
মেঘের যে ছায়া পড়ে
তা পাহাড়ে হাঁটলে বেশ বোঝা যায়।
আলো এবং কাচের ভারিক্কি
আজ নির্মোহ ঝেড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হল
শুধু আসার আগে তোমাকে বলা হয়ে ওঠেনি-
আমাদের দেখাসাক্ষাৎ এর দিন, ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে…
Posted in: August 2019, Poetry