তন্ময় ধর-এর কবিতা
মৎস্য
জল নেই। তবু ঈশ্বরকে আদিম মাছের রূপ নিতে বলছো তুমি। সংসার স্বচ্ছ অ্যাকোরিয়াম হয়ে মাছের খাবার খুঁজছে আমাদের অভিনয়ে। সাঁতারের মত একটা হাত থেকে শব্দ খুলে পড়ছে
আলো পড়ছে মাছের চোখে। মাছের সাহসী ব্লাডার থেকে উঠে আসছে পিতৃকূলের সোনালী আংটি। অভিনয়ের খাদ মিশে উজ্জ্বল হচ্ছে সোনা। স্বপ্নের ভিতর ক্রমশ ঘন সবুজ অন্ধকার হচ্ছে জল
আমাদের ব্যস্ত পায়ে ঠেকল মাছের কঙ্কাল। জগদীশ গুপ্তের ‘হাড়’ গল্প থেকে একটা অন্য জলস্তর আটকে গেল আমাদের গলায়
কূর্ম
তারপর অর্ধেক জল ও অর্ধেক মাটিতে আগুনের রঙ পাতলা করে দিচ্ছেন ভ্যান গঘ। ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়া অতিকায় এক কাছিমের কাছে আমরা বসে আছি। শক্ত-হয়ে-ওঠা একটা কামড়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে মৃত সন্তান, ধর্মচক্র ও ঢেউ
সমুদ্রের সর্বত্র আমরা ডুবিয়ে রেখেছি মুখের লবণ। তবুও ওক্টাভিও পাজের ছুরি নিয়ে ‘নীল চোখ’ খুঁজতে খুঁজতে কেউ আটকে গিয়েছে আমাদের নগ্নতায়। জলরঙের ওপর মাংসের টুকরোগুলো আরো ছোট হচ্ছে
দীর্ঘায়ু এক সাঁতারের মধ্যে ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের অভিনয়। পিছন ফিরে দেখি, জল এবং স্থল থেকে মস্ত একটা হাঁ-মুখ আমাদের অপেক্ষায় রয়েছে
নৃসিংহ
বিদীর্ণ এক মাংস দু’রকম মশলার সাথে কথা বলছে। আমাদের খুঁজতে বেরোচ্ছে। আমরা দু’জন নীল আর লাল আগুন হয়ে তখন লুকিয়ে আছি গগনেন্দ্রনাথের সিঁড়ির পেছনে। খালি পেটের সামনে দাউদাউ করে জ্বলছেন নীল তারা ও বোধিসত্ত্ব
মাংসের রেসিপি থেকে আমরা আস্তে আস্তে নিরীশ্বর হচ্ছি। গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে আসছে আলো, জন্মান্তর, ফাঁদ, খাঁচা, সেতু ও প্রলয়ের জলের হিসেব। খিদেয় ছটফট করে উঠছে নুড়িপাথরের খেলাধুলো
খেলার নিয়ম থেকে সিংহরাশির উল্কাবৃষ্টি পর্যন্ত মৃত সন্তানকে নিয়ে হেঁটেছি আমরা। হেসেও ফেলেছি নতুন খিদের প্রয়োজনে। সিলভিয়া প্ল্যাথ আবার গ্যাসবার্ণার জ্বালিয়েছেন
বুদ্ধ
সিদ্ধার্থ, হারমান হেস। পৃষ্ঠা ওল্টানোর আগেই গর্ভে শেষবার নড়ে উঠল মুমুর্ষু সন্তান। সমুদ্রের তল থেকে বোবা কান্না আমাদের শরীরে আটকে গেল। ভূমিস্পর্শ মুদ্রা থেকে একটি শাদা কবুতর আমাদের হাতে তুলে দিলেন বুদ্ধ
দীর্ঘ হাওয়ায় ময়লা হয়ে উঠল কবুতর। এক শস্যক্ষেত্রের অন্ধকারে আমরা হারিয়ে গেলাম। এক নক্ষত্র থেকে অন্য নক্ষত্রে, এক নীহারিকা থেকে অন্য নীহারিকায় ছুটে চলল আমাদের খিদে। অনেক নীচে পড়ে রইল গান্ধার ভাস্কর্যের শীতলতা
চন্দনকাঠের এক তীব্র মূর্তি ঢুকে গেল আমাদের রক্তের ফিসফাসে। সন্তানের আঙুলের পাশে নতুন একটা রঙ লাগালাম আমরা
কল্কি
ঘোড়ার খুরের শব্দ আস্তে আস্তে আবছা হয়ে আসছে। ডানদিকে বর্ণান্ধ শিল্পী কনস্টেবলের রঙ। আর বাঁদিকে আংশিক অন্ধ বিনোদবিহারীর ম্যুরাল। অনেক হিসেব কষে আমরা ঘোড়ায় চেপে বসেছি
সামনের দিকটা পুরোপুরি বসন্তকাল। গোলাপী রঙের অগণন ফুল আমাদের প্রেম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ কার্তিকের কুয়াশায় জল খাওয়ার অনেক আগেই আমরা হাসি-কান্না চেপে কামড় দিয়েছি চিকেন
কাটলেটে
নাক্ষত্রিক তরবারী আর এক মনপবনের নৌকার গল্প বলছেন অন্ধ প্রপিতামহী। আমাদের অচেনা জলের গ্লাসে কেঁপে উঠছে দোটানা রাত