সম্পাদকীয়
হাসি এবং হাসির কারণ আমাদের সমাজে খুব গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ হাসির অবকাশটুকু। এগিয়ে থাকা উৎপাদিকা শক্তির সাথে পিছিয়ে পড়া উৎপাদিকা শক্তি-উদ্ভূত চেতনার অশুভ আঁতাত, ফ্যাসিবাদ, ডিএ না পাওয়া, মাইনে না বাড়া, শিক্ষকদের অবহেলিত অনশন, মব লিঞ্চিং পেরিয়ে আমরা ডাচিনি স্মাইলেই পৌঁছতে চাই।
হাসি মানুষের আবেগের এক ‘স্বাভাবিক’ প্রকাশ। হাসলে মানুষের শরীর ভালো থাকে, হৃদয় ভালো থাকে। হার্ট এ্যাটাক হয় না। বলা হয় হাসি মানসিক উদ্বেগ বৃদ্ধি করে যে হরমোন তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সে’কারণে আজ জায়গায় জায়গায় লাফিং ক্লাব দেখতে পাওয়া যায়। ডাক্তাররা বলছে—সকাল-বিকেল হাসুন, হার্ট ভালো রাখুন। সচারচর বয়স্ক মানুষেরাই ডাক্তারদের এই সদপরামর্শে কর্ণপাত করেন এবং লাফিং ক্লাবে ভিড় জমান। একদল বৃদ্ধ মানুষ একজোট হয়ে ফ্রি হ্যান্ডের সাথে হা..হা..হি..হি.. করছে—এই কৌতুককর দৃশ্য আমাদের সকলেরই পরিচিত।
সত্যিকার হাসি নাকি মুখ নয় চোখ দেখে বোঝা যায়। হাসি যখন চোখের পেশিকে কুঞ্চিত করে তখন সেটা আসল হাসি, অন্যথায় নয়। আসল হাসির ক্ষেত্রে দু’রকম পেশির সমন্বয় প্রয়োজন হয়—ঠোঁটের পেশি ও চোখের কোণার পেশি। বিজ্ঞানীরা এই ধরণের হাসিকে ‘ডাচিনি স্মাইল’ নাম দিয়েছেন।
হাসি নিয়ে এত কিছু সচারচর জানার দরকার পড়ে না। হাসি ডাচিনি না ডাকিনী—জেনে কী হবে? কিন্তু ঐ কালুর জন্যই নেট ঘেঁটে ঘেঁটে জানলাম।
গত তিনদিন ধরে কালু হাসছে।
কালুকে রসগোল্লা দেওয়া হচ্ছে … ও একটু হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে
বারবার একই দৃশ্য!
কালু তো কোন লাফিং ক্লাবে যায়নি! তবে কী কালু কোন ‘সামাজিক হাসি’ হাসছে?
আমরা দুঃখ ভুলতে, আনন্দ প্রকাশ করতে বা আবেগ প্রকাশ করতে হাসি। আর সে’ভাবেই আমাদের হাসির মধ্যে সামাজিক উদ্দেশ্য থাকে—খুশি করতে, বিরক্ত করতে, ব্যঙ্গ করতেও আমরা হাসি। এখন মুশকিল হল ‘হাসি হাসি পরব ফাঁসি’ বলে হাসিকে আমরা যেকোনো জায়গাতেই বসিয়ে দেই। মায় হায়েনার গায়েও বসিয়ে দিয়েছি। সে বেচারা একটু কমিউনিকেট করার চেষ্টা করছে আর আমরা দিব্য তাকে ‘হায়েনার হাসি’ আওড়াচ্ছি। না শিম্পাঞ্জী হাসতেই পারে, মানুষের নিকটতম আত্মীয় বলে কথা! কচ্ছপ বা জেব্রা—তারাও নাহয় হাসল! অসুবিধা কী আছে? একজনের দৃশ্যমান দাঁত আছে, অন্যের নেই। সুতরাং যেকোনো এক্সপ্রেশনকেই হাসি বলা যেতে পারে।
তা ব’লে কালু হাসবে?! একটি দেশী কুকুর!
ছানবিন করে জানা গেল, কালুর জন্ম হয়েছিল এক অধ্যাপকের বাড়ির গ্যারেজে। হাই ব্লাড সুগারে সেই অধ্যাপকের মৃত্যুর পর কালুর ঠাঁই হয় রাস্তায়। তারপর থেকে পৃথিবীর ব্লাড সুগার আক্রান্ত মানুষদের প্রতি সলজ্জ করুণাবশত কালু আর রসগোল্লা খায় না।
হাসি এবং হাসির কারণ আমাদের সমাজে খুব গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ হাসির অবকাশটুকু। এগিয়ে থাকা উৎপাদিকা শক্তির সাথে পিছিয়ে পড়া উৎপাদিকা শক্তি-উদ্ভূত চেতনার অশুভ আঁতাত, ফ্যাসিবাদ, ডিএ না পাওয়া, মাইনে না বাড়া, শিক্ষকদের অবহেলিত অনশন, মব লিঞ্চিং পেরিয়ে আমরা ডাচিনি স্মাইলেই পৌঁছতে চাই। নচেৎ সামাজিক হাসিই সই! সেই অবকাশটুকুর সন্ধানেই আমাদের ‘হাসির গল্প’ সংখ্যা। পাঠক আপনাদের দরবারে …
