অতনু সিংহ-এর কবিতা

এইসব গ্লুমি দিনমান


সন্ধ্যার মেঘমালা


দীর্ঘ যানজটে
স্তব্ধ ভিড়ের ভিতর থেকে
সাততলা উপরে
উঠে আসছে ঘুম
মনে হয়, সন্ধ্যে নামার আগে
আর্দ্রতার ভিতর
এইবার ঘুমিয়ে পড়বো
মনে হয়, তার আগে ছাদে যাই
সিগারেট আমাকে টানে—


তখন অনেক নীচে
একটি ময়ালকে জড়িয়ে ধরছে
দীর্ঘ আরেকটি অজগর!
তখন ময়লার ট্রাক
ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়!
কারও ব্যালকনি থেকে
আশ্চর্য একটি পতাকা দুলছে
তখন হর্ষ ও বেদনার ধারাপাত
বিকালের ট্রাফিক ক্রসিং জুড়ে…


তখন আকাশ হঠাৎ নীল
আর সন্ধ্যা নামার আগে
স্থবির ও ফ্যাকাসে একটি চাঁদ হতবাক চেয়ে আছে
মুখে মাংসের টুকরোটাকরা নিয়ে
একটি ছোকরা কাক উড়ে গেছে তার দিকে,
আমার কোথাও যাওয়ার নাই আর
আমার ভিতরে গান…
ঘুম আসছে মরফিন হয়ে—
‘উইল আই অলোয়েজ ফিল দিজ ওয়ে
সো এম্পটি সো এস্ট্রেঞ্জড!’


ছাদ

আকাশের দিকে তাকিয়ে একা একা ছাদের নির্জনে বসেছে বিকেল। তার মাগরিব আসবে বিষাদ নিয়ে। তার ঘরে বাতি জ্বলবে তারপর, স্বাভাবিক সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত জ্বলবে মেঘের আড়ালে। আড়ালে দৃশ্যপট গোছানো থাকবে। পরদিন বিকেল বসবে আবার মেঘলা দিনে ছাদের কার্নিশে। কেননা রাস্তা সুনসান। এই অসময়ে মুখে রুমাল দিয়ে দ্রুত ঘরে ফিরছে মানুষ… কোথাও কোনো যানবাহন নাই! আসলে অকারণ এমন মনে হয় একটি বিকেলের, যদিও সকলই স্বাভাবিক। শুধু আকাশের কাছে আটকে পড়া বিকালের পাশে এই শূন্য সময়৷ না ঠিক শূন্য নয়, দুয়েকটা চড়ুই এসেছে তার কাছে। তারা জিগায় বিকেলরে, ওই মিঞা, আপনে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন কেন হেথায়?


শ্রাবণ


গঞ্জের প্রাচীন প্রবাদে বৃষ্টি আসছে
আর এই ঘর ও দালান তুমি হয়ে গেছ
আহা দিনরাত…
এইবার নীরবে যাই,
এইবার হেডফোন ঘিরে গান
আলো নিভে যায়
আলো জ্বলে
ভিতরের জোনাক পোকায়


বারিধারা


হলুদ ছাতা মাথায় দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছো
তোমার ভেতরে দৃশ্যেরা মরে যাচ্ছে দারুণ


আমাদের জন্মান্তর হবে কথা ছিল, তাই সে সন্ধ্যায়
কোনো এক রূপের কাঙাল গেয়েছিল দৈন্যগান


সেদিন খুঁজতে খুঁজতে দৃশ্য-অদৃশ্যের মালিকের সাথে
মোলাকাত হয়েছিল আলো ও আবছায়ায়


তিনিও আমারই মতো উদ্ভট,
সাঁঝের তলায় দেখেছেন কার আলতা রাঙা চরণ


এই যে বিশ্বাস করলাম কিছু একটা আছে
আর অন্ধকার হাতড়ে গেলাম–


এখন নাছোড় পানির আওয়াজ অনর্গল…
সব ঝ’রে যাবে ব’লে যেন দুনিয়া তৈরি হয়

Facebook Comments

Posted in: July 2019, Poetry

Tagged as: , ,

Leave a Reply