টিপু সুলতান-এর কবিতা
ঝিঝি আলো
একা ঘুমাতে পারি না, আম্মুর কাছে দৌড়ে যাই
অমাবস্যার গাঢ় অন্ধকার নিস্তব্ধ কবরের পাশে
মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে ডুমুর গাছ
ভাঁটফুল গন্ধ ছড়ায়, বাঁশপাতা ফোঁস ফোঁস করে
মাতালের মতো লাফ দেয় একচোট জীবিত শব্দ
চোখ জ্বল জ্বল, দূরে ঘাড় ফেরানো আবছায়া অন্তর;
নিস্তব্ধ মিশ্রণে ক্ষয়ে যায় নমিত ভয়ে শরীর-ঘাম
চুপিসার গাঢ় হরিতালে দীর্ঘ হরফে গাঁথি
ফজরের আযান, পাখিরডাক, শোরগোল জীবিত সকাল
শরীর কাঁপানো ঝিঝি আলো খুলে পড়ে…
নারকেল পাতার চশমা
আমার একটা ভাবনা ছিল কারোর আঙ্গিনায় গাছ হই।
রোদ ভাঙা সন্ধেয় সাহেবলোকের স্ত্রী হাঁটা বারান্দায়-
প্রতিদিন চোখ বুলিয়ে সলজ্জ হাসে মন থেকে
তাঁর জন্য লম্বা জীবন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত যুগের মত রাশভারে-
ধাঁধাঁ লাগানো মহাকালের গান-বয়কট করে বিচ্ছিন্ন;
ফ্ল্যাটমুখি উঠানে বাচ্চাদের জটলা পাকানো কৌতুকী পা
অস্থির উদাহরণ ভাঙে-একজনের ভেতর আরেকজন
ঢুকে পড়ে রক্ত সংবরণ ব্যাপারটা, নারকেল পাতার চশমাও;
জলভেজা মোমের আত্মদেমাগ
জলভেজা মোমের আত্মদেমাগ অনুবাদ করতে করতে
আমি নীলডাউনের ছাত্র হয়ে পড়েছি-
পূর্ণদৈর্ঘ্য শহরের কাটছাঁট শরীর, হাড়গোড় গড়ানো
ব্যস্ত নগরীর শাহবাগ পাঠ, ঠোঁট ভেজানো ডাবের জল-
আলোছায়া নগরী পেরুনো শহিদ মিনারের ক্লান্ত জেদ
তেত্রিশ বার অনুবাদে ছিঁড়েছি, গেঁথেছি, তারপর দাঁড় করেছি
মাংস বাঁধানো পথচারীর গন্তব্য; কেবল নাগরিক বিশ্লেষণ!
একদিন এই পথ বাঁকে
হাঁটছি পথের সঙে-গৃহবধূর উঠান ধরে
পেছনে সরে যাচ্ছে অনাগত পথ,
খুঁটছি ফাল্গুন-বাতাসের গোপন গল্প ভাড়া দিতে দিতে
পুরান ঢাকার তিন গলি মাথায় কিনেছি বসন্ত-বৈশাখ;
একদিন এই পথ বাঁকে, নিশকালো কুচকুচ কাকডুব
নগরীর মদ পানে-কোকিল ধ্বনি ফুটতে ফুটতে
দোয়েলচত্বরে কেটে যায় একটি বৃহস্পতিবার-
সন্ধ্যার আলোটুকু গিলে খায় নিরঞ্জন দুপুরের বর্ষা
জ্যোৎস্নার পুকুরে মেঘ খেলে-রাজহংসী নাচ!
কুয়াশা ভাঙা রোদ
সরে যাচ্ছে শহরের উঠোন ভরা প্রার্থনা
অতল বৃক্ষদের কানে কানে গোপন ধ্বনি
ক্লান্ত ঘামের বসন্ত আছড়ে পড়ছে রিকশার প্যাডেলে-
ব্যস্ত বাসিন্দারা ভাঁজখোলা সিঁড়ির আড়াইতলা দালানে
চৌঘরি পুরাতন অন্ধকার শোয়ানো-কুয়াশা ভাঙা রোদ
বেগানা মাকড়সার বিপ্লুত পথ খুঁজতে খুঁজতে
টিয়ে ডাঙরের মতো অসংখ্য উড়ন্ত পাখির স্বপ্ন আঁকছে।
চোখে আমরি উত্থানের গল্প, পেটে খিদের কারখানা
কেবল রক্ত আর মাংস পোড়া দিনমান কবিতা হরতাল দিনে
এই আমাদের মৃত্যুপুরী, নুনঝাল-সংসার-প্রিয়তমা;
সবুজ টিশার্ট
প্রথমে মানুষ পাঠ করি। তারপর অসমাপ্ত বুননে
মুদ্রিত সকল অনুবাদে ঢুকে পড়ি সজ্জন আবাদে
লেকের পাড়ে এই রাম শহর, নিরোদ দালানবাড়ির নিচে
আলোর গন্ধ, কালোর ভেতরে এলাহীকাণ্ড!
জ্যোৎস্নার সন্ধ্যা ক্যাফে অমাবস্যা রাত,
বাতাসে রাতজাগা পাখির জারিগান
মৃতরা শোনে,মৃতরা হারায়-
সেপটিপিনে গেঁথে ওঠো আরও অনাবিল ধ্যান-
আঙুলের কণ্ঠস্বরে নেমে যাক
মাতাল বিষের দাউদাউ চাহনি, প্রণয় শিল্প;
উপহার খোঁজো অক্ষয় গহীনে
ধ্বনিত শব্দ ফাঁক করে ঢুকে পড় সমুদ্র ফেনায়-
হিরণবনের সবুজ টিশার্ট, ছড়িয়ে দাও ফুলের সরোবর।