জয়শীলা গুহ বাগচী-এর কবিতা
দিনলিপি
২৯.০৫.১৯
প্রতিদিন অগুন্তি মায়ার কথা আমি লিখে রাখি মায়ার ভেতর। সারাদিন পাখিজন্ম, পোশাকজন্মের পর দুইহাত, চোখ, ঠোঁট, ঊরু, নিতম্ব,পরিধি, মোহকুঞ্জ সব পেতে দিই খাতায়। খাতা ভরে ওঠে জল…জলজ দ্বীপে। যেসব ভেসে থাকার নাম নারকেল পাতার যোগ বিয়োগ, সেখানে আমি প্রশ্নচিহ্নের অরূপ মেনে নিই। কতখানি চিহ্নহীন রূপ দেবে মাথায়? মাথার প্রকাশ থেকে একটি শব্দ, একটিই ধ্বনি, ধারণাকে মিথ্যে করে দিয়ে জলজ হয়। কোন হিসেবকে তুমি বলে মেনে নেব? কোন অক্ষরে অনুদিত হবে কথা? এক একটা জন্ম পার হয়ে যাই তোমার অসমে। তুমি অলঙ্কার লেখ, আমি কোমল রে ছুঁয়ে জেগে উঠি ঘুমের অলিতে গলিতে। তোমার নাম দিই, তোমার আকারে দিই বিষণ্ণ লতা। এইসব তুমি আমির জগতকে আমরা রোশনচৌকি অথবা নূর বলে ডাকি। এভাবেই তালি আর ফাঁক থেকে ছড়িয়ে যায় শ্বাস, ছড়িয়ে যায় মাধুরী সাজানো মাথায়। আমাদের পরবর্তী হিসেবের থলে নিশান উড়িয়ে দেয় দূরে। ভাঙচুর মেনে পরবর্তী আমি তোমার রোশনচৌকি ঘিরে নূর সাজিয়ে দিই।
৩০.০৫.১৯
যখনই মনে হয়েছে পালাতে হবে, তখনি নিজেকে দুটো সংখ্যার মাঝে রেখেছি, অথবা দুটো সময় ফ্রেমের মাঝখানে। এই অবস্থানে বহু মানুষ থেকে যান। তাদের গা থেকে জোনাকি ওঠে , হাওয়া দেয়। আমি সেইসব ছায়া হতে চেয়ে সময়কে ভুলে একটি হওয়া, না হওয়া বোধ হব। এইভাবে যদি না পালাই তাহলে আর কীভাবে হতে পারে? ধরা যাক ফুটপাথ ধরে হাঁটছি, হাঁটতে হাঁটতে আমি ফুটপাথ ভাবলাম, ফুটপাথ আমাকে ভাবল। আমি কিছুটা ফুটপাথ হোলাম, আর ফুটপাথের সাথে জারণের মাঝে আমি পালাতে সক্ষম হলাম। অথবা এমনও হতে পারে চেহারা পাল্টেও নেওয়া যায়। যেমন আলাদা আলাদা চোখ বসানো হল, দাঁতের পাটিতে, দুই কাঁধে অথবা কিছু অদৃশ্য, অকল্পনীয় প্রত্যঙ্গে। প্রতিটি চোখের দেখা দেখে প্রাপ্ত তথ্য অবস্থানগত কারণে আলাদা। এই আলাদা আলাদা ধারণার মাঝের ফাঁকটুকু আমার পালানোর এক একটি দরজা। যেখানে রক্তমাংসের সাথে কিছুটা বিদ্যুৎ যোগ হয়, সেই ঝলসে ওঠার মাঝে একটি ফাঁকের ধাঁধা থাকে।
এইসব প্রত্যেকটি পালাবার দরজায় তুমি দীর্ঘ চুমু রেখেছো। আর আমি অবাক হয়ে দেখছি পালাবার পথটা তোমার ভেতর ঝরনার মতো ঝরছে। আমি পালাতে গিয়ে আঁজলা ভরে পালানো খেলাম। খেতেই থাকলাম।