দেবরূপ সরকার-এর কবিতা
পাহাড়ে লেখা কবিতাগুচ্ছ
১
মানুষের
জীবিকা-জীবন নিয়ে ভাবি
ভাবি, জীবনের জীবিকা ও তার মানুষ নিয়ে।
সাড়ে তিন হাজার ফুট উচ্চতায়
দাঁড়িয়ে
পাইনের বীজ কুড়োচ্ছি এখন
আর এক স্থানীয় বৃদ্ধা
সটান
নেমে যাচ্ছেন ঝরনার কাছাকাছি–
সেখান থেকে ক্রমাগত ভেসে
আসে
জলের শব্দ আর প্রণয় বাতাস।
কিছুদিন পর আবারো ফিরে
যাবো
শহরের কোলাহলে, মৃত হরিয়ালি আর
নিষ্প্রভ মননের শ্মশানপুরীতে।
কিছুদিন পর ফের ভেঙে যাওয়া
গাল নিয়ে
স্থানীয় বৃদ্ধাসব, নিদারুণ নেমে যাবে
ঝরনার কাছে, চিরায়ত ধ্রুবকের কাছে।
২
পাহাড়ি
রাস্তায় দেখি দেশলাইবাক্সের মতো
অবলীলা ঝুলে আছে বেশ কিছু
গাড়ি।
এখানে ঘন-ঘন বেঁকে যায় পথ,
পর্যায়ক্রমিক ভাবে রাস্তার চড়াই ও উৎরাই;
বেশ কিছু স্থানে তাজা
ধ্বসের চিহ্ন
আবার, কিছু স্থানে রাস্তা এতোই সংকীর্ণ যে,
বুক হিম হয়ে আসে সকলের।
আমার ভয় করেনা। আমি দেখি সব,
দেখে শুনে নির্লিপ্ত থাকি। এখন যদি
এই ঘটমান সভ্যতার মুখে
লাথি মেরে
সব ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়া
যেত
নিরাকার অব্যক্ত অসীমে–
তাহলেই বেশ হতো!
৩
বহু দূরে
ডিনামাইট ফাটে,
সম্ভবত রাস্তা নির্মাণের
কাজ চলছে পাহাড়ের বুকে,
আর সে শব্দ ভেসে আসে বাতাসের
বেগে।
শহুরে বিষণ্ণতা আমি নিয়ে
এনেছি
যে আহুত দুর্গমতার কাছে,
তার চেয়েও, বহু, বহুদূরে
সভ্যতার যোগাযোগ ছুটে
যায়
অগুনতি সবুজের বিনিময়ে।
এখন রাস্তা জুড়ে পাইনের
বীজ, জংলি ফুল,
আর এক বাদামী বিড়াল নাড়িভুঁড়ি
হাট করে
পড়ে আছে রাস্তার মাঝামাঝি। ওপরে
দুটো চিল অথবা দুটো বাজ
কিম্বা শকুনি।
আমি ঠিক চিনিনা ওদের।