স্মরণ ১৪ – উমাপদ কর

প্রেক্ষাপট : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মৃণালিনী দেবীর বৈবাহিক জীবনের সূচনা ১৮৮৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর। ১৯০২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু হয়। মাত্র ১৯ বছরের বৈবাহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ একাধিক পত্র লিখেছেন স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে। নিজের ব্যস্ত জীবন, কর্মকান্ডের মধ্যে কবি বারবার চেয়েছেন স্ত্রী’র সাথে এক ভালোবাসার, বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে। স্ত্রীর মৃত্যু কবিকে কতটা ব্যথিত করেছিল তা ছত্রে ছত্রে উল্লেখিত রয়েছে ‘স্মরণ-১৪’ কবিতায়।
স্ত্রী-বিয়োগের এই বেদনা রবীন্দ্রনাথ ও কবি উমাপদ করকে কি কাছাকাছি আনে? আমরা দেখতে চাই ১৯০২ সালের এক ব্যথিত হৃদয়ের কবির অনুভূতি কতটা সদৃশ বর্তমান সময়ের কবি উমাপদ করের পত্নীবিয়োগের অনুভূতির সাথে।
স্মরণ – ১৪
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দেখিলাম খানকয় পুরাতন চিঠি—
স্নেহমুগ্ধ জীবনের চিহ্ন দু’চারিটি
স্মৃতির খেলেনা ক’টি বহু যত্নভরে
গোপনে সঞ্চয় করি রেখেছিলে ঘরে।
যে প্রবল কালস্রোতে প্রলয়ের ধারা
ভাসাইয়া যায় কত রবিচন্দ্রতারা
তারি কাছ হতে তুমি বহু ভয়ে ভয়ে
এই ক’টি তুচ্ছ বস্তু চুরি করে লয়ে
লুকায়ে রাখিয়াছিলে; বলেছিলে মনে,
‘অধিকার নাই কারো আমার এ ধনে।’
আশ্রয় আজিকে তারা পাবে কার কাছে!
জগতের কারো নয় তবু তারা আছে।
তাদের যেমন তব রেখেছিল স্নেহ,
তোমারে তেমনি আজ রাখে নি কি কেহ?
প্রতিস্থাপন :: উমাপদ কর
তোমাকে লিখিনি
দুলে যাই একটু একটু খুলি
আমার লেখা আমাকেই পড়াচ্ছে আজ নীল খাম
কোথাও কি জল পড়ে যাচ্ছে শুধু শুধুই
শুধু শুধুই মুখশুদ্ধির কৌটোটা খোলা পড়ে আছে
কে আর দেখবে !
আলমারির ভেতর লকার, লকারের ভেতর ঘুমোনো লকার,
সেই তোমার শ্বেতপদ্ম, লুকিয়ে জাগাতে
যত্ন করছে নিজেকে নিজে হলুদ অক্ষর এখন।
কেন যে খুলে ছড়ালাম !
চন্দ্রমল্লিকা ফুটিয়ে দেখাতে, একটা টবের নাম দিয়েছিলে ‘উমা’
যত্ন-আত্তিতে ছাড়িয়ে মিচকি সে আমাকেই দেখত
মল্লিকা আর তুমি ঝরেও কোত্থেকে যে আজও মিটিমিটি
তোমার নিজস্ব যেটুকু, কিছু কি মহৎ, দামি, অশেষ?
এক-টাকা নতুন নোটের অখরচ বান্ডিল
বড়োজোর বিয়ের গন্ধ-সাবানখানা
আর ভুলে যাওয়া বিবাহবার্ষিকিতে টুকরো কাগজে লেখা
মোড়ানো এক কুচি রজনীগন্ধার অভিমান
সব পড়ে আছে, সব, একবার দেখতে পার
এক কোণে তোমাকে রাখার দায়
কেউ যে নিল না ! ভালোবাসা আমার, বইতে থাকি
Posted in: Cover Story, May 2019