অনুবাদ কবিতা : হিন্দোল গঙ্গোপাধ্যায়

গ্রীক কবিতা – অর্থনৈতিক অবনমন ও ব্যয়সংকোচের আলোকে
তৃতীয় কিস্তি

[Source: http://urbantimes.co/2013/09/the-face-of-austerity-angela-merkel-in-street-art-around-europe/]

Pavline Marvin (১৯৮৭)

পাভলিনা মার্ভিনের কাজ এখন মূলধারায় স্বীকৃতি পাচ্ছে| তিনি একজন ব্লগার হিসাবে শুরু করেছিলেন| এথেন্সে জন্মগ্রহণকারী হলেও তিনি সাইরাস দ্বীপের আর্মুপোলিস শহরে বড় হয়েছিলেন। তাঁর বিষয় ইতিহাস ছিল  কিন্তু টাকিস সিনাপুলোস ফাউন্ডেশনে কবিতা নিয়ে পড়াশোনার পর তিনি কবিতাকেই জীবনের মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন| তাঁর কবিতা, বই, থিয়েটার রিভিউ, এবং শিশুদের সাহিত্য প্রিন্ট ও অনলাইন দুই মাধ্যমেই ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে


আগাছাগুলো

আমার সব আগাছা তুলে ফেলা উচিৎ ছিলনা,
একটা ডাঁটিও অবশিষ্ট নেই
এখন এই বঞ্চনার মরসুমে
দেখো, কি পড়ে আছে
আমাদের শূন্য আবাদজমি
ভাঙা জাহাজের প্রতিমায় যার মাঝে আমি বসে আছি
মৃত্যুব্যবসায়ী পাখিদের মত,
রক্তস্নাতা কীটপতঙ্গের মত,
আর চারপাশে, ফসলের বিক্ষিপ্ত স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে

                                                      
(মূল গ্রিক থেকে ইংরেজি অনুবাদ – ক্যারেন এমেরিখ)


যথাযোগ্য নির্বাসন

সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত বুঝে আমাদের সন্তান দুঃখ পেয়েছিল,
তাই গর্ভপাতের কিছুক্ষণ আগে, রহস্যময়ভাবে ঝরে গেল সে স্রাবের সঙ্গে
একটি দ্ব্যর্থহীন আত্মহত্যা, কি আশ্চর্য বিদ্রূপ!
আমাদের অনুপূর্ব ছোট্ট সৃষ্টি,
এখন একটা অনন্য ক্ষুদ্র পোকার মত
হাসপাতালের বর্জ্যের মধ্যে পড়ে আছে|
আমি দুঃক্ষিত নই
তুমি, প্রিয়?
অশ্রু মুছে ফেলো গালের দুধারে
আমি যদি ও’কে হাতের চেটোয় নিয়ে তোমার দিকে ধরতাম
তুমি প্রতিহত হয়ে দূরে তাকাতে|
এমনিতেও, এটার সম্পর্কে তুমি ঠিক কি মনে করো?
মাত্র আরেকটা ছোট সম্মানিত মৃত্যু,
যার অন্যদের মতোই, কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নেই

                                              (মূল গ্রিক থেকে ইংরেজি অনুবাদ – ক্যারেন এমেরিখ)


Kiriakos Sifiltzoglou (১৯৮৩)

থেসালোনিকির অ্যারিস্টট্ল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন ডিগ্রী সম্পন্ন করার পর কারিয়াকোস সিফিল্টজওগলু তার নিজের শহর ড্রামা ফিরে আসেন, যেখানে তিনি এখন বসবাস করেন এবং আইনজীবী হিসাবে কাজ করেন। ২০১১ সালে প্রকাশিত ডিনোস সিওটিসের সংকলনগ্রন্থ “অতিরিশোর্ধ তিরিশ কবি” তে অন্যান্য নামী তরুণ কবিদের সাথে কারিয়াকোস স্থান পান|

অর্ধসত্য থেকে

১.
পরিস্থিতির উচ্চতা থেকে
উচ্চতা হারিয়ে গেছে
আমরা এখন শুধু পরিস্থিতির সঙ্গে বোঝাপড়া করি
ওরা এটা ভালোভাবে জানত, সেই সজ্জিত ব্যক্তিরা
যারা বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়ার ছলনায়
আপাতদৃষ্টিতে গান গেয়েছিল

২.
ধরে নাও, উদাহরণস্বরূপ, যদি ভাগ্যে থাকে, তোমার হাতে একটা গ্যাস লাইটার আছে আর সেটায় গ্যাস ভরতে হবে কোণার কিয়স্ক থেকে, আর ধরো, তুমি সেখানে হেঁটে গেলে, আতঙ্কিত হয়ে তত্ত্বাবধায়িকার সুউচ্চ স্তন ধরে ফেললে, আর তছনছ করে ফেললে গত শতকের ‘ডেইলি ওয়ার্কার’, যা স্পেনীয় গৃহযুদ্ধ বিষয়ে তোমার ভাবনা, আরেকবার ভেবে দেখার জন্য প্ররোচিত করছিল|

তুমি কি তবে জ্বলে উঠবে?

আর যদি ওঠো, তবে কি তার জন্য অনুতপ্ত হবে?

৩.
ট্রাকচালকেরা,
ঝিঁঝি আর ফড়িংদের সেলাম করে
শিঙা বাজায়;
কারণ তারা ছড়িয়ে বেড়ায় শ’তিনেক বোঝাই কবিতার উপকরণ|
ড্রামামাইনের[১] উত্তর হয়ত, হয়ত –
সমাজের গঠনগত দ্বৈততায় ভাবিত হতে পারে
অথবা যুথচর সংস্থার ধারণায়
যা পাঠ্য নাট্যবিষয়ক সমাজবিজ্ঞানে

চুলোয় যাক টায়ারগুলো

                                                 (মূল গ্রিক থেকে ইংরেজি অনুবাদ – ক্লো হারালামবৌস)

_____________
[১] ড্রামামাইন একটি ওষুধ যা মোশন সিকনেসের সাথে জড়িত আচ্ছন্নতা, বমি ও তন্দ্রাভাব সারাতে ব্যবহৃত হয়।

Giannis Palavos (১৯৮০)

ছোটগল্পকার গিয়ানিস প্যালভোস গ্রিসের সেরা নতুন লেখকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। থেসালোনিকি এর অ্যারিস্টটল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা অধ্যয়ন করার পর, তিনি এথেন্সের পেন্টিয়েয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তাঁর ছোট গল্প একাধিক পুরস্কার জিতেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের বেস্ট শর্ট স্টোরি অ্যাওয়ার্ড (২০০৫) এবং গ্রিক ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড (২০১৪). ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ ও আমেরিকান লেখকদের মূল থেকে তাঁর অনুবাদ বহু গ্রীক পত্রিকা এবং ওয়েব প্রকাশনাগুলিতে প্রকাশিত হয়েছে|


পাসওয়ার্ড

দুটো দীর্ঘ গ্রীষ্মের ছুটিতে আমি যখন গ্রামের বাড়ি যেতাম, প্রতিবেশীর থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা চুরি করতাম| সে প্রথমে তার এই পরিষেবা অসুরক্ষিত রেখেছিল, তারপর যখন বুঝতে পারল একদিন যে কেউ সেটি চুরি করছে, তখন একটা পাসওয়ার্ড ঝটপট বানিয়ে ফেলল| কাফেনিওনে বসে আমি একদিন ওর জন্মতারিখ জিজ্ঞেস করেছিলাম| কারণ দেখিয়েছিলাম ওর রাশিবিচার করতে চাই| বাড়ি এসে আমি তারিখটা পাসওয়ার্ডের জায়গায় লিখে ফেলি| দুটো গ্রীষ্ম জুড়ে এভাবেই নামিয়েছিলাম অসংখ্য গান, এমনকি আমি ভেবেছিলাম ওকে একটা জন্মদিনের শুভেচ্ছাপত্র পাঠাবো| আজ, উনিশে জুন,  ২০০৯, আমি গ্রীষ্মাবকাশে যাব বলে বেরিয়ে বাস ধরে গ্রামে পৌঁছে গেলাম| আর কফিনটা দেখতে পেলাম রাস্তায়| মায়ের দিকে ফিরতে বলল, “গাড়ির ধাক্কা খেয়েছে| সত্যি কি অবিচার… এইটুকু ছেলে…” | আমি ফিরে গেলাম আমার ঘরে, ল্যাপটপ খুললাম আর যন্ত্রচালিতের মত টাইপ করে ফেললাম পাসওয়ার্ডটা|

                                              (মূল গ্রিক থেকে ইংরেজি অনুবাদ – ক্যারেন ভ্যান ডাইক)

Facebook Comments

Leave a Reply