অর্ধেকের খোঁজে: নিজস্ব বুননে ভারতীয় নারীদের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ – অমৃতা সরকার
দ্বিতীয় কিস্তি
নারীর শরীর ও আধ্যাত্মিকতার নিজস্ব পরিসর: “থেরিগাথা”র নির্বাচিত অনুবাদ
“থেরিগাথা” খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক অবধি রচিত পালি ভাষার কবিতা সংকলন। অভিজ্ঞ বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের পালিতে ‘থেরি’ বলা হত, এদের বোধ ও অভিজ্ঞতাই “থেরিগাথা”র মূল অভিমুখ। খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকের বৌদ্ধ টীকাকার ধম্মপালের মতে “থেরিগাথা”র কবিতাগুলি বাচিক ভঙ্গিতে নিজ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে অপরজনের কাছে উন্মোচিত করে, নিজের সাথে অপরের সেতু গড়ে তুলতেই আগ্রহী। তাই এই কবিতাগুলি বেশিরভাগই কথোপকথন রীতিকে অনুসরণ করে সংলাপে মগ্ন রয়েছে [ সূত্রঃ The Udana Commentry by Dhammapala, Translation: Mansefield, Peter, New Delhi : Oxford, Pali Text Society, 1994]। ‘প্রথম’ শব্দটি বহু ভাবে “থেরিগাথা”র সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কবিতাগুলি প্রথমদিকের বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের কবিতা। ভারতবর্ষের প্রথমদিকের কবিতা ধারার একটি ধারা “থেরিগাথা”। এই কবিতাগুলি ভারতবর্ষের মহিলাদের লেখা কবিতাগুলির প্রথমদিকের ধারা। এবং এটি বিশ্বের সর্বপ্রথম নারী সাহিত্য সংকলন। কবিতাগুলি আমরা পৃথক পৃথক ভিক্ষুণীদের নাম অনুযায়ী পাই। সেই ভিক্ষুণীদের সাথে কখনো কথা বলে অন্য ভিক্ষুণী, কখনো কামার্ত কোনো পুরুষ, কখনও আবার কাম রিপু নিজেই ‘মারা’ নাম নিয়ে প্রলোভন দেখাতে আসে। এই বহুস্বরিক কবিতাগুলির জন্য , ভারতীয় উপমহাদেশের নারীর নিজস্ব সত্তার খাত সন্ধানে “থেরিগাথা”কে আমরা উৎসমুখ হিসেবে ধরতে পারি।
পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতায় নারীকে কখনই আধ্যাত্মিক পথের দিশারী হিসেবে ধরা হয় না। ধরে নেওয়া হয় যে নারী নিজের সংসারী সত্তাকে গুরুত্ব দেবে সবচেয়ে বেশি। সংসার ধর্ম পালনের পর যদি সে আধ্যাত্মিক পরিসরে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তার দিশারী হবে গুরু। গুরু এখনও অবধি অধিকাংশই পুরুষ। “থেরিগাথা” এই পিতৃতান্ত্রিক ধারণার বিপ্রতীপে অবস্থান করে। এখানে প্রত্যেক নারীকে আধ্যাত্মিকতার সন্ধান যারা দেন তারা নিজেরা নারী। তাদের দ্বারা বর্ণিত আধ্যাত্মিকতার পথই নারীকে শেখায় না যে সংসারই নারীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিসর। একইসাথে তারা চিরায়ত পিতৃতান্ত্রিকতার ধারা মেনে নারীর শরীর, যৌনইচ্ছা এগুলিকে আধ্যাত্মিকতার প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন না। আমরা পাই, সেই সাহসী উচ্চারণ যেখানে ভিক্ষুণী হওয়ার আগে একই পুরুষকে সম্ভোগ করেন মা ও মেয়ে । নিজের রূপে নেশাতুর হওয়া যে পিতৃতান্ত্রিকতার ফসল তা ভিক্ষুণী নিজ অভিজ্ঞতা দিয়ে অনুধাবন করতে পারেন । আত্মজৈবনিক অভিজ্ঞতাকে নারীমুক্তির বীজতলা হিসেবে ব্যবহার নারীবাদের একটি অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ। পিতৃতান্ত্রিক ধারা যেখানে সবকিছু পূর্বলব্ধ জ্ঞান বলে ধরে নেয়, “থেরিগাথা”র কবিতারা অর্জিত আত্মজৈবনিক অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানে জোর দেয়। যে ‘বডি রাইটিং’ নিয়ে আজকের নারীবাদ এত সোচ্চার, তারই প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই সুভা নাম্নী ভিক্ষুণীর কথায়। সুভা কামার্ত পুরুষের সামনে নিজের মোহময় চোখ খুবলে নিয়ে স্রেফ যৌন কামনার বস্তু হিসেবে সেই পুরুষের হাতে তুলে দেন। পুরুষ ত্রস্ত হয়ে পড়ে নারীর বস্তুগত রূপান্তরে। পিতৃতান্ত্রিক পৌরুষের নারীকে বস্তু হিসেবে দেখার এই প্রবণতাকে নিজ শরীর দিয়েই ত্রস্ত করে তোলা ‘ফিমেল গথিক’ এর অন্যতম নিদর্শন হয়ে থাকে।
কবিতা অনুবাদের সময় স্তবক ও পংক্তি মূল পালি অনুসারে করা হয়েছে। ভাষান্তরের সময় একইসঙ্গে মূল পালি কবিতা ও Charles Hallisey কৃত মূর্তি ক্লাসিক্যাল লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত ইংরাজি সংস্করণ সোর্স টেক্সট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
আরেকজন উত্তমা
বুদ্ধ বলেছেন,
নির্বাণের দিকেই ধায় যে সাত পথ
হেঁটেছি তা’য়।
নিঃসীম শূণ্যতায় পেয়েছি আনন্দ!
নির্বাণ দিয়েছে তার সন্ধান
হয়েছি প্রকৃত বুদ্ধ কন্যা।
দৈবিক, মানুষিক সকল
ইন্দ্রিয় সুখেচ্ছা ঝরে গেছে।
চিরতরে ফুরিয়েছে জন্মের আবর্ত !
জন্ম আর পড়ে নেই সুমুখে।
সোমা
( মারা তাকে বলল )
সন্ন্যাসের পথ সুকঠিন।
নারীর পক্ষে তা কঠিনতর,
যার জ্ঞান দুই আঙুল প্রমাণ ।
( সোমা উত্তর দিলেন )
নারীজন্মের সাথে কী বিরোধ এর?
সত্যকে দেখেছে যে চোখ
ধারণ করেছে সমাহিত মনে
এ পথ তারই।
আনন্দ যা তোমার
আমার তা নয় কখনও।
অন্ধকার মুছে গেছে।
দুরাত্মা জেনো এ’কথা
পরাজিত তুমি, নিশ্চিহ্ন।
অন্যতর এক ভিক্ষুণী
ঘর ছেড়ে পথে,
পঁচিশ বছর করেছি পার
তবুও শান্তি পাইনি লহমার।
রতি কাতর মন শোকে, বিলাপে
আঁকড়াতে চায় মঠের আশ্রয়।
সেথায় ভিক্ষুণীকে দেখে মনে হয়,
বিশ্বাস করি একে।
তিনি শেখান ধম্ম।
দেখান মানুষ হওয়ার পথ,
বলেন সেই উপাত্তসমূহ যা সকল বস্তুর আধার।
ধম্ম আমায় নিয়ে আসে তাঁর পথে।
অদৃশ্যকে দেখার দৃষ্টি পাই;
অজ্ঞাতকে জানি।
জানি পূর্বাপর জন্মকথা।
এখন নিজ মনপথ হয়েছে জানা।
দেখি অতিলৌকিক শক্তিপুঞ্জ।
অবদমন আর চুঁইয়ে পড়ে না মনের ভিতর,
ক্ষয়ে গেছে তা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের খোঁজে।
বুদ্ধজ্ঞান হয়েছে সমাপন।
ভিমলা
নিজ দেহ, সৌন্দর্য, সুখ্যাতিতে
নেশাতুর আমি , উদ্ধত যৌবন আমি
তাচ্ছিল্য করেছি অন্য নারীদের।
সাজিয়েছি এই দেহ, সৌষ্ঠবে এর জ্ঞানহীনরা মেতেছে প্রলাপে।
দাঁড়িয়েছি দরজায় দেহপসারীণী , যেন ব্যাধ পেতেছে ফাঁদ।
কটাক্ষ, ভূষণে সৃষ্টি করেছি এমন বিভ্রম,
যেন গহনা নয়, এ দ্যুতি আমার গোপন অঙ্গের!
আজ আমি ভিক্ষা করি!
কামানো মাথা কাপড়ে দিই ঢেকে।
বসে থাকি গাছের তলায়।
ছলাকলা চুকে গেছে সব।
বাঁধন যা কিছু দৈবী বা মানুষিক
সব গেছে ছিঁড়ে।
মনের কলুষ ছুঁড়ে ফেলে
আজ আমি শান্ত, মুক্ত।
সোনা
এই শরীর দশটি সন্তানের জন্মের পর পরিতক্ত্য।
দুর্বল আমি ভিক্ষুণীর শরণে আসি।
তিনি শেখালেন ধম্ম।
দেখালেন মানুষী হওয়ার পথ।
জানালেন ইন্দ্রিয়ের অসারতা।
চুল কেটে ফেললাম।
বেরিয়ে পড়লাম পথে।
তাঁর শিক্ষায়
অদৃশ্য হয়েছে দৃশ্যমান।
পূর্বাপর জন্ম হয়েছে স্পষ্ট।
মন আর নির্ভরশীল নয় কিছুতে।
অতল গহনে ডুবে হয়েছি স্থির, সংহত ।
মুক্ত আমি।
এ মুক্তি চিরায়ত।
মানুষ গড়া যে পাঁচ বিষয়ে
বস্তুতে খোঁজ পেয়েছি তার।
সেই পাঁচের সাথে শিকড় গেছে ছিঁড়ে।
এখন শুধু জরা, যন্ত্রণা ।
কিন্তু জন্মানোর যন্ত্রণা শেষ।
কোনো জন্ম পড়ে নেই আর
উপ্পালাভান্না
মা ও মেয়ে আমরা
সম্ভোগ করেছি একই পুরুষ।
শিহরিত হয়েছি, শঙ্কায় কেঁপেছে মন।
রতি ইচ্ছা সকল মুছে যাও
যা অশুচি, নিষিদ্ধ, বিপজ্জনক।
কিন্তু এইসবই শুচি, স্বাভাবিক
যখন সম্ভোগ করেছি একই পুরুষ
মা ও মেয়ে।
রতি কামনা কাঁটার পথ।
কাম থেকে মুক্তি চেয়ে
সে চলে যায় রাজগাহে,
গৃহ থেকে হয় গৃহহীন।
[নিজ অর্জনের দিকে তাকিয়ে তাঁর উক্তি]
আমি জানি পূর্বাপর জীবন।
দেখি সেই অদৃশ্যকে,
জানি সেই মনপথ,
ধ্বনি শুনি স্পষ্ট।
কুরে কুরে খাওয়া অভাববোধ নেই আর
বুদ্ধ দিয়েছেন দিশা
ষষ্ঠ শক্তির।
[অলৌকিক ঘটনাদ্বয়ের সময় তিনি বুদ্ধকে বললেন]
সেই সকল শক্তি দিয়ে
শূণ্য থেকে তৈরি করেছি এক রথ,
চার ঘোড়ায় টানা।
অদ্বিতীয় বুদ্ধের
শরণে আমি।
[বিশ্রামরত তাঁকে দেখে মারা এসে বলে]
ফুলে ছেয়ে থাকা এই অপরূপ শালগাছের
নিচে তুমি সম্পূর্ণ একা।
কেউ কোথাও নেই।
তোমার ভয় নেই বোকা মেয়ে?
[ উপ্পালাভান্না বললেন]
যদি লাখ দুর্বৃত্তও আসে
নড়বো না আমি।
সরবো না এক চুলও।
মারা তুমি কী করবে আমার?
[ মারা বলল]
হয়তো ঢুকে যাব তোমার উদর গহ্বরে,
হয়তো দুই ভ্রূ মাঝে।
তুমি আমায় দেখতে পাবে না,
তোমার চিত্ত আমার অধীনে।
[ উপ্পালাভান্না বললেন]
বোধিতে অতিপ্রাকৃত শক্তিকে জেনেছি আমি,
ষষ্ঠ শক্তি করায়ত্ত আমার।
তরোয়ালে গাঁথা মাংসটুকরো সম রতি,
যেন মন, ইন্দ্রিয়, দেহ টুকরো টুকরো করে কাটা।
রতি আনন্দ বলে যাকে
আনন্দ পাই না তাতে আর।
মনের আঁধার কেটে গেছে,
দুরাত্মা তুমি পরাজিত, বিনষ্ট।
জিভাকাম্ভা বনের সুভা
ভিক্ষুণী সুভা মনোরম জিভাকাম্ভা বনে প্রবেশ করা মাত্র এক দুর্বৃত্ত তাঁর পথ আটকালে সুভা তাকে বলেন:
সুভা
ভিক্ষুণীকে ছুঁতে চাওয়া কি পৌরুষ?
পথ আটকাচ্ছ কেন?
শুদ্ধ আমি; অমলিন
সুগতের শিক্ষায়।
কেন পথ আটকাও আমার?
অস্থির তুমি, আমি নই।
অশুদ্ধ তুমি, আমি নই।
মুক্ত আমার মন।
কেন পথ আটকাও?
দুর্বৃত্ত
সরল যুবতী
এ কি ত্যাগের সময়?
গেরুয়া ত্যাগ করে এসো
এই ফুল্লরিত বনে
আমি, তুমি এক হই।
দেখো, চারদিকে উড়ছে ফুলরেণু,
গাছেরা দাঁড়িয়ে, উর্ধ্বমুখী।
বসন্ত বাতাস কেমন মধুময়;
এই মধুমাসে একে অপরে
বিভোর হই, এসো।
ফুলে ফুলে যেন শিউরে উঠছে গাছ।
হাওয়ার ছোঁয়ায় শীৎকার ওঠে, শোনো।
এ সময়ে বনে একলা গিয়ে কী সুখ?
ও মেয়ে, তুমি একলা যেও না বনে।
বুনো গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে আসে,
মদমত্ত হস্তিনীর ডাক শোনা যায় ওই;
কাম ভারী হয়ে ওঠে শরীর
—- দূরত্ব অসহনীয় এখন।
সোনার পুতুল তুমি,
অপূর্ব বনদেবী এক।
মনোরথে একলা বেড়াবে বলো!
অতুল্য তুমি, কাশীর চাদরে
ঢাকা মোহনীয় শরীর।
কিন্নরীসম তোমার চোখ।
কাছে এসো;
এই অরণ্যে ঘর বাঁধলে
দাসানুদাস হব আমি।
আমার কথা মেনে নিলে
সুখী হবে।
এসো ঘর বাঁধি
সেখানে দাসীরা করবে সেবা।
পরো কাশীর চাদর,
প্রসাধন সেরে , সুগন্ধি ছড়াও শরীরে,
এসো সাজাই তোমায় সোনা, জহরতে।
চন্দন কাঠের সুগন্ধিত পালঙ্কে উঠে এসো,
দুধসাদা সুজনী ঢাকা শয্যায়
আরামে বিছাও নিজেকে।
তা না হলে , হে ভিক্ষুণী
কেউ ছোঁবে না, বৃদ্ধা হয়ে যাবে।
দীঘিতে ফোটা নীলপদ্ম সম
অনাঘ্রাত থাকবে এ জীবন।
সুভা
তুমি বদ্ধ উন্মাদ।
এ শরীর মৃত বস্তুর সংশ্লেষ।
কবরের শূণ্যতাই ভরাট করবে এ দেহ।
দুর্বৃত্ত
কেবল তোমার হরিণীর মতো চোখ দেখে যাই ,
পার্বত্য কিন্নরীর মত চোখ!
অদম্য কাম জাগানো চোখ!
টলটলে জলে যেন দুটি নীলপদ্ম!
কাম উথলে ওঠে!
তুমি দূরে চলে গেলেও
তোমার চোখ চোখে ধরা থাকে।
দীর্ঘ আঁখিপল্লব, দীঘল চোখ,
স্বচ্ছ দৃষ্টি।
এর চেয়ে সুন্দর কিছু নেই আর।
সুভা
বুদ্ধের কন্যাকে কামনা করো!
চাঁদকে খেলনা ভেবে খেলতে চাও!
ঝাঁপ দিতে চাও মেরু পর্বত থেকে।
যেতে চাও সেইখানে যেখানে যায় নি কেউ!
স্বর্গ, মর্ত্য জুড়ে কিছু চাওয়ার নেই আমার!
কিছু যদি থেকেও থাকে বাসনা, অবশিষ্ট;
জানি না তা।
শিকড় সমেত উপড়ে ফেলেছি সব।
কিছুই চাই না আমি,
কিছুই নেই চাওয়ার মতো।
উনুন থেকে ছিটকে পড়া অঙ্গারের অবশেষ যদি থেকেও থাকে,
সেই বিষপাত্র থেকে বিষ মিলায় বাতাসে;
সকল ছোঁয়া এড়িয়ে।
যারা বুদ্ধকে জানে না তাদের কাছে যাও ,
যারা বুদ্ধকে জানে তাদের নৈকট্য যন্ত্রণার ।
প্রশংসা বা নিন্দা, আনন্দ বা বেদনা
সকল মাঝে স্থিরচিত্ত আমি।
সুগত শিষ্যা আমি,
অষ্টমার্গ যানে আমার চলাচল।
কুরে কুরে খাওয়া অভাববোধ নেই আর।
নির্জনতায় মুক্তি আমার।
দেখেছো তো রঙিন পুতুলদের নাচ,
সুতো, লাঠি দিয়ে তারা আঁকড়েছে নিজেদের;
ছেঁড়া সুতোয় জড়িয়ে পড়ে টুকরো টুকরো তারা।
দেখতেই পাবে না যারে
কামনা করবে তারে কী উপায়ে!
আমার দেহও তেমন,
ছোটো ছোটো টুকরো।
জোড়া দিলে এক দেহ ধরে
কোন টুকরোকে কামনা করবে?
দেওয়ালে যে ছায়া দেখো মানুষ মতো
তা তো ভ্রম।
যা দেখো তা ভাবনার বিপরীত।
যার পিছে অন্ধ হয়ে ধাও
স্বপনে দেখা সোনার গাছ সে।
জাদুকরের মায়া!
ভিন্ন আকারের গোলোক শুধু,
আর কিছু নয় চোখ!
শ্যাওলা ধরে রাখে যেমন পোকায় কাটা ফাঁপা গাছের কোটর
আঁখিপল্লব মাঝে চোখ ধরে রাখে জল।
এই কাব্যগ্রন্থের সংকলিকারা বলছেন কোনো মায়া না রেখে উদাসীন সুভা খুবলে আনেন চোখ, তুলে দেন কামার্ত পুরুষের হাতে।
যে চোখের প্রতি এত কাম
এই নাও সেই চোখ।
কামনা উবে যায় পুরুষের,
ভয়ার্ত আর্তি ছিটকে আসে: এই চোখ ফিরিয়ে নিন,
ফিরে যান নিজ সম্পূর্ণতায়।
অগ্নিসম মানুষীকে ছোঁয়া
যেন হাতে ধরতে চাওয়া বিষধর সাপ।
চাইছি অনন্ত ক্ষমা,
ফিরে যান সম্পূর্ণতায়।
ভিক্ষুণী পা বাড়ান বুদ্ধের পথে
ফেলে যাওয়া সুগত চিহ্ন
ফুটে ওঠে দেহে।
ফিরে আসে চোখ
চোখের স্থানে।
——————————-
Posted in: May 2019, Translation