জাতীয়তাবাদ আত্তীকরণ ও বর্জন – সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

বর্তমানে আমাদের দেশে জাতীয়তাবাদের নামে হিন্দুরাষ্ট্র-বিরোধীদের ওপর নানা ধরণের আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। সংবিধানের ১২৪এ ধারাতে ২০১৪ সালে ৪৭টি, ২০১৫ সালে ৩০টি, ও ২০১৬ তে ৩৫টি এফআইআর করা হয়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরো এই তথ্য জানিয়েছে। [ফ্রন্টলাইন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯] ১২৪এ ধারাতে ব্রিটিশ শাসনকালে বহু সংগ্রামী ভারতীয়কে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিলক ও গান্ধীর বিরুদ্ধেও এই ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল। গান্ধীজী বলে দিলেন: “যে ১২৪ এ ধারায় আমি সানন্দে অভিযুক্ত হয়েছি সেই ধারাটি বোধ হয় নাগরিকদের স্বাধীনতা হরণের উদ্দেশ্যে রচিত ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের (ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের) রাজনৈতিক অধ্যায়গুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ”। (মহাত্মা গান্ধীর নির্বাচিত রচনাবলী, ৫ম খণ্ড, নবজীবন, আমেদাবাদ, ২০০০, পৃষ্ঠা ১৩)। ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি  দিল্লীর পুলিশ কানহাইয়া কুমার সহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে এই ১২৪এ ধারা আর কয়েকটি ধারায় ১২০০ পাতার চার্জশীট জমা দিয়েছে। মোদী শাসিত ভারতে ১২৪এ ধারার প্রয়োগ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ‘দেশদ্রোহী’ মানুষদের সংখ্যাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোদী বা বিজেপি শাসিত ভারত আসলে আরএসএস শাসিত ভারত।                   

আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদের যে সাধারণ ধারণা গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে নাগরিকত্বের সঙ্গে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গের কোন সম্পর্ক ছিল না। ভারতের জাতিরাষ্ট্রকে মেনে নিলে, রাষ্ট্র সব নাগরিককে সমানভাবে দেখবে, এমনি ধারণাই নির্মিত হয়ে উঠেছিল। আমরা যদি ফরাসী ‘ডিক্লারেশন অব ম্যান অ্যান্ড দ্যা সিটিজেন’-এর দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, তা থেকেও নাগরিকত্বের যে ধারণা নির্মিত হয়ে উঠেছিল সেটাও ছিল রেস, রিলিজিয়ন ও অন্য কোন জন্মগত অভিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কহীন। তার ফলে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তিমানুষের মধ্যে এক নতুন ধরণের সম্পর্ক ও মিথস্ক্রিয়া গড়ে উঠল। অধীনতা অপসারিত হয়ে নাগরিকতা, বাধ্যবাধকতার জায়গায় এলো অধিকার। এই আধুনিক নাগরিকত্বের ধারণা জনপ্রিয় প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের কাজকে অধিকার হিসেবে স্বীকার করে। এই ধারণাকে সামাজিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকার করা হয়।     

তাই যে কোন আধুনিক জাতিরাষ্ট্র বা নেশন ষ্টেট নির্মিত হয়ে উঠেছে পার্থিব, সভ্য অবস্থান থেকে। সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, কোন না কোন ধর্মীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বা ঔপনিবেশিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই এর মধ্যে দিয়ে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র নির্মিত হয়ে উঠেছে ও নাগরিকত্বের বর্তমান ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সেকারণেই আধুনিক ‘নেশন স্টেট’ এর ধারণা এমন এক নৈতিকতার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে যা স্বীকার করে যে আর্থিক ও সামাজিক পরিসরে নাগরিকদের চাহিদাকে মান্যতা দিয়ে সংস্কারমূলক ও প্রগতিশীল বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই নৈতিকতার ধারণা অবশ্যই এনলাইটেনমেন্ট ও যুক্তিবাদের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে।

এর পাশাপাশি আমরা যদি রাষ্ট্র সম্পর্কে লেনিনের ধারণার দিকে তাকাই তাহলেও দেখব, রাষ্ট্র যখন সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে গিয়ে, সম্পদ উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে গিয়ে, শ্রম শক্তির আধার শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে শ্রম ও পুঁজির অমীমাংসেয় দ্বন্দ্বে শ্রমের বিরুদ্ধে গিয়ে, শুধু পুঁজির মালিকদের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত থাকে তখন সেই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে সর্বহারার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা নাগরিকদের নৈতিক কর্তব্য ও অধিকারের মধ্যে পরে। কারণ সর্বহারার রাষ্ট্রই উৎপাদনের উপকরণগুলির ওপর থেকে ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান ঘটিয়ে, সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে, আর্থিক সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি দিক থেকে নাগরিকদের  যথাযথ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ এনলাইটেনমেন্ট-এর যুগ থেকে রুশ বিপ্লব পর্যন্ত কোথাও নাগরিকত্বের সঙ্গে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত এথনিক পরিচয়, রেসিয়াল অভিজ্ঞান, ধর্মীয় নিদর্শন বা সাংস্কৃতিক লক্ষণগুলিকে যুক্ত করা হয়নি। নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে কোথাও  এক্সক্লুসিভ বা বর্জনমূলক অবস্থান নেওয়া হয়নি। সব সময়েই ইনক্লুসিভ বা আত্তীকরণমূলক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।      

রাষ্ট্র নাগরিকদের কীভাবে দেখবে তার সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ধারনার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। যে কোন ধর্মীয় রাষ্ট্রই একটি বিশেষ ধর্মকে গুরুত্ব দেয় ও অন্য ধর্মের মানুষদের ‘আদার’ বা অপর হিসেবে বিবেচনা করে।  স্বাভাবিকভাবেই অপর’দের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের অধস্তন হয়ে থাকতে হয় অথবা তাদের হত্যা বা বিতাড়ন করা হয়। তাই যে কোন ধর্মীয় রাষ্ট্রই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র। হিটলারের সময়ে বিশুদ্ধ আর্যরা ছাড়া অন্য সবাই ছিল ‘অপর’। ইহুদী, ভবঘুরে, জিপসি, পাগল, সমকামী, ভিক্ষুক, ইত্যাদি সবাই ছিল ‘অপর’। যে কোন ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে কমিউনিস্টরা হচ্ছে ‘কমন’ বা সাধারণ শত্রু। কোন রাষ্ট্রে নাগরিকদের বিষয়ে ইনক্লুসিভ বা আত্তীকরণমূলক অবস্থান নিলে জাতীয়তাবাদের চেহারা হবে মোটামুটি গণতান্ত্রিক—‘দেবে আর নেবে মেলাবে মিলিবে।’ অন্যদিকে কোন রাষ্ট্রে নাগরিকদের বিষয়ে এক্সক্লুসিভ বা বর্জনমুলক অবস্থান নিলে ‘আদার’ বা অপরদের প্রতি ফ্যাসিস্ট  অবস্থান নেওয়া হয় ও সেক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদের চেহারা হয় শভিনিস্টিক বা উগ্র জাতীয়তাবাদী – ‘অ্যানিহিলেট, আউটকাস্ট, ফাইনাল সলিউশন’।         

সংঘ পরিবারের ‘গুরুজী’ গোলওয়ালকরের ‘We or Our Nationhood Defined’ বইটি আরএসএস বহু বছর ছাপে না। বইটির ১৯৩৯ সালের সংস্করণের ফ্যাক্সিমিলি ছেপে প্রকাশ করেছেন দিল্লীর PHAROS প্রকাশনা সংস্থা (২০১৫)। বইটির শুরুতে একটি মূল্যবান ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক শামসুল ইসলাম।  বইটি থেকে নেওয়া নিচের উদ্ধৃতিটি থেকে বোঝা যায় নাগরিকত্ব সম্পর্কে সংঘ পরিবারের প্রধান তাত্ত্বিক গোলওয়ালকর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল। “From this standpoint, sanctioned by the experience of shrewd old nation, the foreign races in Hindusthan must either adopt the Hindu culture and language, must learn to respect and hold in reverence Hindu religion, must entertain no idea but those of the glorification of the Hindu race and culture, i.e of the Hindu nation and must lose their separate existence to merge in the Hindu race, or may stay in the country, wholly subordinated to the Hindu nation, claiming nothing, deserving no privileges, for less any preferential treatment – not even citizen’s right”.  [‘We or our Nationhood Defined’, PHAROS, DELHI, page 184] অর্থাৎ সমস্ত নাগরিকরা সমানাধিকার ও ভোটাধিকার পাবে না। গোলওয়ালকর ও সাভারকরের হিটলার-প্রীতি এখন সকলের জানা। হিটলার ক্ষমতায় এসে ইহুদীদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। গোলওয়ালকরের দৃষ্টিভঙ্গি নাগরিকত্ব ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর। আরএসএস চেয়েছিল ভারতের সংবিধান রচনা করা হোক মনু সংহিতার মডেলে [‘Know The RSS’, Shamsul Islam, PHAROS, Delhi, 2010. Page 13]। তাহলে শূদ্র, ম্লেচ্ছ, দলিত-সহ সমগ্র নিম্নবর্ণের মানুষদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ‘ফরেন রেস’ হিসেবে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব বাতিল করা সম্ভব হবে ও হিন্দুরাষ্ট্র  গঠন সম্ভব হবে।  

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ মনীষীরা জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলিতে ইনক্লুসিভ বা আত্তীকরণমূলক বা এক্সক্লুসিভ বা বর্জনমূলক, দুই ধরণের জাতীয়তাবাদের সন্ধান পাওয়া যায়। ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত বা সমর্থক মানুষদের জাতীয়তাবাদ ছিল সব সময়েই আত্তীকরণমূলক যা সব ধরণের বহুত্ব ও বৈচিত্র্যকে আত্তীকরণ করা ও ঐক্যবদ্ধ রাখার ওপরেও গুরুত্ব দিত। পাশাপাশি বর্জনমুলক জাতীয়তাবাদ ছিল হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িক ভাবনার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন। উপনিবেশিক শক্তি হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠীকে যেভাবে শত শত বছর ধরে বিচ্ছিন্ন দুটি ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে দেখাতে চাইত দুই সাম্প্রদায়িক শক্তিই সেইভাবে দুই গোষ্ঠীকে উপস্থাপিত করত। কিন্তু দুই সাম্প্রদায়িক শক্তিরই ঔপনিবেশিকতা বিরোধী  আন্দোলনে কোন ভূমিকা ছিল না। তারা সব সময়েই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে, তাকে ভুলভাবে ব্যবহার করে, নিজেদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও মতাদর্শকে সঠিক বলে প্রমাণের চেষ্টা করত এবং রাজনৈতিক সমর্থন বৃদ্ধির চেষ্টা চালাত। দ্বি-জাতি তত্ত্ব বিষয়ে সাভারকর ও জিন্নাহ’র মধ্যে কোন মতভেদ ছিল না। ভারতের ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে, উপনিবেশের অ্যান্টিথিসিস হিসেবে আত্তীকরণমূলক জাতীয়তাবাদ গড়ে ও বেড়ে উঠেছিল। এই ধরণের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা-ব্যবস্থা, বিজ্ঞান চর্চা ও সমাজের বিভিন্ন পরিসর ও স্তরে গভীর প্রসারী পরিবর্তন এনেছিল যা গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলির বিকাশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে গেছে।     

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বর্জনমূলক জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতায় এসেছে এবং জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতি একটা কুৎসিত চেহারা নিয়েছে। জাতি ও সংস্কৃতি বিষয়ে তাদের কোন লক্ষণীয় উদ্বেগ নেই। পক্ষান্তরে এক ধরণের স্থূল জঙ্গিবাদী ও যুদ্ধবাদী অবস্থান নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের বর্জনবাদকে (মেজরেটেরিয়ান এক্সক্লুসিভিজম) সঠিক বলে প্রমাণের চেষ্টা চলছে।  অসার বাগাড়ম্বর পূর্ণ বক্তৃতা-নির্ভর বর্জনমূলক জাতীয়তাবাদ সব সময়ে খুব দ্রুত সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে মেরুকরণ ঘটায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরণের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, বর্তমানেও ঘটছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তার পরিণতি হয়েছে ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসাত্মক। মানুষের প্রবৃত্তির মধ্যে মৃত্যু- ধ্বংস-বিদ্বেষ (ফ্রয়েডের থ্যানাটস)  জাগিয়ে তুলে ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণ ঘটায় এই মেজরেটেরিয়ান এক্সক্লুসিভিজম। অপরদের জাতির শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে, সংখ্যাগরিষ্ঠের অস্তিত্বের পক্ষে বিভ্রম জাগিয়ে তুলে কীভাবে সফল হওয়া যায় তার সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ হল: ভ্লাদিমির পুতিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, সিনজো অ্যাবে ও নরেন্দ্র মোদী। এই মডেলের প্রচার ও জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন এমন একজন শত্রু, যার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা জাগিয়ে তুলে নির্বাচনে জেতা যায়।  ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের দিকে তাকালে বিভিন্ন ধরণের জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজি, ধান্দার ধনতন্ত্র ও বৃহৎ বুর্জোয়াদের সমর্থন পেয়ে হিন্দুত্ববাদীরা জাতীয়তাবাদের যে কুৎসিত চেহারা সামনে নিয়ে এসেছে দেশ ও জাতির

পক্ষে, ইতিহাস ও সমাজের পক্ষে এক ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনছে।




[লেখক – যুগ্ম সম্পাদক, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ সোস‍্যাল সায়েন্সেস, কলকাতা । ]

Facebook Comments

Leave a Reply