বাঙালির জাতীয়তাবাদ: সেকাল ও একাল – কৌশিক চট্টোপাধ্যায়
গোড়ার কথা
বাঙালির জাতীয়তাবাদ! সেটা কেমন হল? এখানে কি কেবলমাত্র বাঙালির রাজনৈতিক মুক্তির কথা বলা হবে? অখণ্ডিত অবস্থায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনায় বাঙালির অবস্থান সম্পর্কিত বিচারটাই কি তবে এখানে মুখ্য? কোন ভাষা-সংস্কৃতি চেতনায় বাঙালির জাতিসত্তা সেদিন জাগরিত হয়েছিল সেই কথাটাই কি এখানে আলোচিত হবে? কিভাবে খণ্ডিত বাঙালি নতুন করে বাংলাদেশ গঠন করলো তার ইতিহাসটাও কি এখানে ধরা হবে না? এই ভাগ হয়ে যাওয়াতেও কি বাঙালির জাত্যাভিমান ভাগ হয়েছিল? যদি হয়, তবে কোন অংশ মূল ধারার ধারাবাহিকতা বয়ে চলছে? এক প্রকার মানসিক ঐক্যবোধে উদ্বুদ্ধ জনসমাজ পরিচয়ে বাঙালির কি সত্যিই কোনোদিন জাতীয়তাবাদী চেতনা জেগেছিল?
আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান। দেখছেন তো কিভাবে প্রশ্নবাণে জটিল হয়ে উঠছে বিষয়টা।
এটাই নিয়ম। মানুষের মাথার এটা একটা গুণ। দিন যত যায় মানুষ ততো জটিল করে ভাবতে শেখে। সহজ ভাবনার পরিসরটাকে সে তার পূর্বপুরুষের জন্য ছেড়ে রাখে। তাই আকাশে বিদ্যুৎ হানলে তার পূর্বপুরুষ যখন প্রকৃতির আরাধনায় মত্ত হোত, এখন সে সেখানে বিজ্ঞান সাধনায় মগ্ন হয়। সেদিনের জটিল, আজ জলের মতো সরল। হারান চাচার নাতনি তাই সহজেই প্রশ্ন করে বসে: সব কিছুর জন্য যদি সেই ওপরওয়ালার মঙ্গলময় হাত দায়ী থাকে, তবে আমাদের গরিবি হটে না কেন?
বাঙালির জাতীয়তাবাদেও সেই দীনতা আছে।
আলোচ্য প্রবন্ধ কেবলমাত্র সেই অন্তরায়ের জায়গাটাকেই দেখতে চায়। বাঙালির আত্মপ্রত্যয়, আর সেই সঙ্গে তার স্বজাত্যবোধ, বাঙালি মননে যে জাতীয়তাবাদের ভিত রচনা করে তার বিপরীতে জাতীয়তাবাদকে কেমন চোখে দেখা হয় সেটাও এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদী প্রেরণা প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে চললেও সাহিত্য-সংস্কৃতি সেদিন থেকে আজ কোন ধরণের বিপরীত ধারাতেও পুষ্ট হয়ে চলেছে তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। সেই বৈচিত্র্যের আলোকে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার পরম্পরাকে তাই সমৃদ্ধি বিবেচনায় অন্যায় নেই। সেদিনের দীনতা হয়তো আজকে কোথাও সমৃদ্ধি। জাতীয়তাবাদের প্রবণতা বহুধায় তখন উজ্জ্বল ও অনন্য।
এই ব্যাখ্যায় ঘটনার ঘনঘটা থাকবে। সেটা থাকতে বাধ্য। কারণ এই ব্যাখ্যামূলক আলোচনায় বাঙালির জীবন ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, মতাদর্শগত ও আধ্যাত্মিক চেতনার ঐক্যে জাতীয়তাবাদী সত্তার উন্মেষকে দেখা হয়েছে। বোঝার চেষ্টা হয়েছে কখন এবং কিভাবে জনসম্প্রদায় বিবেচনায় বাঙালি জাতি আমরা-বোধে দীপ্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। গোষ্ঠী সচেতনতায় স্বাতন্ত্র্যবোধ জেগেছে বাঙালির মনে। আবার সেই স্বাতন্ত্র্যবোধে অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে চেয়েছে যে বাঙালি, সেই বাঙালিই আবার কিভাবে জাতি চেতনার মধ্যে সংকীর্ণতা খুঁজে পায় সেটাও এই ব্যাখ্যার অভ্যন্তরে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র গঠনের সচেষ্টতায় অবশ্য এই বাঙালি সফল। জাতিরাষ্ট্রের ভাব প্রকাশেও সে সফল হয়েছে। সেই ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। আলোচ্য প্রবন্ধ সেই সকল বৈপরীত্যের স্রোতধারাকে সমকালের আগুনে সেঁকে নিতে চায়।
জাতি ও জাতীয়তাবাদ: বাঙালির অবস্থান
বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় আমরা প্রথম পর্বে কিছুটা পেয়েছি। অতুল সুর (১৯৭৭, ২০১২), রাধাকমল মুখোপাধ্যায় (১৯৪০), সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৯৪৫), প্রবোধ চন্দ্র ঘোষ (১৯৪৯) পড়লে সেই ধারণা আরও স্পষ্ট হয়। বাঙালি সংস্কৃতির ধারাগুলোতেও সংকরায়ন তার রক্তের মতোই যে ঘটেছে তাও বলা হয়েছে প্রথম পর্বের সেই বর্ণনায়।
এখানে কিছু কথা বাড়তি বলার প্রয়োজন আছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের পার্বত্য অংশে বসবাসকারী মানবগোষ্ঠী ভাষার ঐক্যে জাতি পরিচয় লাভ করে। তাই বাঙালি জাতি বললে সেই জনসমষ্টিকে আমরা বুঝি যারা বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসাবে অথবা ঘরোয়া ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই ভাষা বৈশিষ্ট্যে বাঙালি জাতিকে অন্য জাতি বহির্ভূত গোষ্ঠী থেকে আমরা আলাদা করতে পারি। বাঙালির জাতি পরিচয়ের এটা একটা প্রধান দিক।
দ্বিতীয়ত, ভৌগোলিক অঞ্চলের নিরিখে বসবাসের সুনির্দিষ্টতায় বাঙালির জাতি পরিচয় স্পষ্ট হয়।
এই দুই উপাদানের বাইরে বাঙালির জাতি পরিচয় বড় আবছা। প্রোটো-অস্ট্রালয়েড রক্তে ইন্দো-আর্য ও শক-পামিরীয় উপাদান এবং তার সঙ্গে মঙ্গোলীয় প্যারোইয়ান ও মালয়-ইন্দোনেশীয় উপাদান যখন মেশে তখন জাতি পরিচয়ে পাঁচ মিশেলি গুনাগুণ তার সামাজিক চরিত্রেও প্রতিফলিত হয়। সমাজ সংস্কৃতিতে সেই ছাপ ব্যাখ্যা পেয়েছে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৯১৫), সমরেন রায় (১৯৬৬), ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত (১৯৭৬, ১৯৮৩), অক্ষয় রমণলাল দেশাই (১৯৮৯, ২০০০) প্রমুখের রচনায়। সেখানে দেখা যায় যে জাতি বিশুদ্ধতার উন্নাসিক চেতনার ও অনুভূতির একটাও বাঙালির কোনোকালেই ছিল না। বাঙালি সকলকে নিয়ে চলতে পারে।
বাঙালি জাতি তার ইতিহাসের মধ্যে বাঁচে। বেড়ে ওঠে। জীবনপ্রবাহে এগিয়ে চলে। এটা যেকোনো জাতির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। বাঙালি সেখানে ব্যতিক্রমী নয়। এই ইতিহাস বাঙালি জাতির সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় ধারণাকে তুলে ধরে। শুধু বাঙালির বিজয় ইতিহাস নয়, বিজিত বাঙালির ইতিহাসও সমান ছন্দে এখানে রচিত হয়। পুণ্ড্র জাতি পরিচয় হতে আজকের বাঙালি পরিচয় দেওয়ার সেই কাজে আমরা পাই রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৯৪৫), যদুনাথ সরকার (১৯৪৩), রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৯৫), দীনেশচন্দ্র সেন (১৯৩৪, ১৯৩৫), সিরাজুল ইসলাম (১৯৯৩) প্রমুখ ইতিহাসবিদকে। তাঁরা কোথাও দেখাননি যে সর্বতোগ্রাহ্য প্রশাসক সম্পর্কে বাঙালির জাতিসত্তা জাগরিত হয়েছিল। ফলে জাতি পরিচয়ের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হিসেবে যদি একটি জাতির সর্বজনীন আগ্রহকে আমরা দেখি, তবে বাঙালি সেখানে নির্ঘাত ফেল।
ভাষাগত স্বাজাত্য বোধ থেকে এবং ভৌগোলিক অঞ্চলের সুনির্দিষ্টতায় বাঙালির জাতি পরিচয় তার জাতীয়তাবাদের উন্মেষে কতটা সাহায্য করেছিল? এই প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক।
এর উত্তরে আমি বলবো কিছুই করেনি। ভাষাগত ঐক্য মানসিক একাত্মতার পরিবেশ নিশ্চিতভাবেই গড়ে তুলতে পারতো, কিন্তু সেখানে আঞ্চলিক উচ্চারণ রীতি পরিচিতিসত্তায় পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। বাঙালি সেই পার্থক্যকে আয়েশ করেছে, কখনোই তাকে বৈর মনোভাবে বিচার করেনি। ভাষা তার কাছে ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক শুধু হয়নি, বাহকও হয়েছে।
ভাষা জাতিসত্তার একটা স্বয়ম্ভূ অস্তিত্ব। এই অস্তিত্ব বাঙালি জীবনে মূর্ত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের প্রাক্-মুহূর্তে। উর্দু ভাষা ও সাহিত্যের আঘাত যখন বাঙালি তার ভাষার উপর পড়তে দেখলো, তখনই বাঙালির জাতিসত্তা ভাষাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে সফল হল। এর বাইরে বাঙালি তার দৈনন্দিন জীবনধারায় জাতীয়তাবাদকে একটা আধুনিক ধারণা হিসেবেই মেনে চলেছে।
আধুনিকতার সঙ্গে বাঙালির বিরোধ তেমনভাবে বাঁধেনি। বাঙালি খাপ খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়েছে সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পশ্চিমী ধাঁচের আধুনিক সংস্কৃতিতে বাঙালি তার জীবনের চার আনা অংশকে সম্পৃক্ত করেছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে এই অংশ অবশ্যই সম্পর্কযুক্ত। ভারতীয় সংস্কৃতির জন্য আট আনা ছাড় রাখলে, বাঙালির নিজের বলতে পড়ে থাকে চার আনা। এই চার আনাই হল বাঙালির নিজস্বতা। ফলে জাতিসত্তার চেতনায় সে বড়ই স্থিতিস্থাপক। বাঙালির জীবনে জাতীয়তাবাদ সেই স্থিতিস্থাপকতায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
চরিত্রে বাঙালি তা ছিল না। বাঙালিয়ানা তখন তার নিজস্ব ঐতিহ্যে স্বয়ম্ভূ।
এই জাতিসত্তা তাই তার কাছে আমদানি যোগ্য নয়। এটা তার নিজস্ব গুণ। প্রকৃতিতেও সেটা তার নিজস্ব ধরণের। বাঙালিত্বের সেই সত্তা নমনীয় গুণের। অন্যান্য সকল ভাষাভাষী, সংস্কৃতি, সাহিত্যের মধ্যেই সে বেড়ে ওঠে। নিজস্বতা বজায় রেখে সে চলতেও পারে। এবং সে জানে যে তার জীবনে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ও প্রসার ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার এক অনিবার্য ফল। ফলে জাতীয়তাবাদ তার কাছে আমদানিকৃত বিষয়।
ভৌগোলিক এবং ভাষার ঐক্য জাতীয়তাবাদের বাহ্যিক উপাদান। বাঙালি সেটা জানে। তারা এটাও মানেন যে এই দুই বাহ্যিক উপাদানের সাহায্যে তার জাতি পরিচিতি ও জাতীয়তাবোধ ব্যাখ্যা করার সুযোগ তৈরি হলেও বংশগত ঐক্যের মতো আর এক বাহ্যিক উপাদানে তার সেই জাতীয়তাবোধকে বিশ্লেষণ করা যায় না। উচ্চ-বর্ণের সঙ্গে নিম্ন-বর্ণের প্রভেদে যে সমাজ দীর্ণ সেখানে বংশগত সাদৃশ্যে ঐক্য খুঁজতে চাওয়া অর্থহীন। একইভাবে অপরদিকে দেখা যায় যে ধর্ম, ঐতিহ্য চেতনা, রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মতো অভ্যন্তরীণ উপাদানে বাঙালির জাতীয়তাবোধকে কোনোদিনই সম্পৃক্ত করা যায়নি।
জাতি ভিত্তিক স্বজনপ্রীতি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ঐতিহাসিক ভূখণ্ড, ইতিহাস বিজড়িত স্মৃতি, উল্লাসের অতিকথন, গণ-সংস্কৃতি, জাতি-অর্থনীতি এবং অধিকার ও দায়িত্বের নিবিড় সম্পর্ক বন্ধন, প্রতীকী সংবদ্ধতায় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায়। বাঙালির জীবনেও সেই সব উপাদান ছিল। আজও আছে। কিন্তু সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সেদিন যখন জাতীয়তাবাদ জাগলো, তখন তা হয়ে গেল বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি, অথবা আসামে থাকা বাঙালি তার স্বাদ পেল না। এই জাতীয়তাবাদের দুর্বলতা প্রসঙ্গে পরে আসছি। এখন প্রশ্ন তোলা যেতে পারে যে একাত্তরের আগে কি বাঙালির জাতীয়তা বোধ জাগেনি?
সকলেই সমস্বরে বলবেন যে জেগেছিল। বঙ্গভঙ্গের সহজ উদাহরণটাও কেউ সামনে আনবেন। কেউ আবার বারাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনের কথা বলবেন। এই আন্দোলন প্রসঙ্গে গত সংখ্যার দ্বিতীয় পর্বে কিছু কথা আমি বলেছি। এখানে আমি বলবো যে একষট্টির কাছার আন্দোলন আধিপত্যবাদ এবং ওখানকার বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে জন্ম নিয়েছিল। অসমীয়া জাতীয়তাবাদ তার নেপথ্যে থাকলেও এবং একাত্তরের জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগাতে তা বাংলাদেশকে সাহায্য করলেও, এই ভাষা আন্দোলন জাতীয়তাবাদের প্রকাশ নয়। ভাষাপ্রেমের থেকে জাতীয়তাবাদ অনেক বেশী রাজনৈতিক।
বঙ্গভঙ্গের অধ্যায়কে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা উন্মেষের একটা পরিসর হিসেবে আমরা দেখতে পারি। বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা (১৯০৫) আর বঙ্গভঙ্গ রদ (১৯১১) – এই ঘটনাবহুল অধ্যায় বাঙালি জনমানসে দেশাত্মবোধক আবেগের জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। বাঙালির মানসিক অনুভূতিতে এই সময় থেকে দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদ জোরালোভাবে সহগামী হয়। সেই প্রথম বাঙালির দেশপ্রেম ও জাতীয়তার আবেগী সমন্বয় বাঙালির জাতীয়তাবাদী ভাবের প্রকট প্রকাশ ঘটায়। মনে করা হয় যে বঙ্গভঙ্গ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলে কুঠারাঘাত করে।
একটু গভীরভাবে দেখলে দেখা যাবে যে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান দুর্বলতার জন্ম এই সময়ে। বাঙালির জাতীয়তাবাদী ধারাতেও জোরালো ফাটল ধরে এই সময়। বস্তুত, জাতীয় কংগ্রেস আর মুসলিম লিগের অনৈক্য এই সময় থেকেই দেখা দেয়। হিন্দু-মুসলিমে বাঙালির বিভাজন এই সময় থেকেই স্পষ্ট হতে থাকে। পরবর্তীতে হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠা সেই বিভাজনকে সিলমোহর দেয়। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে দুটি অভূতপূর্ব গণজাগরণের সূচনা হয়। প্রথমটি হল এদেশে বিলাতি পণ্য বর্জন তথা স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রপাত হওয়া। বিলাতিবস্ত্রের বহ্নুৎসবে সেই ধারা ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পরে। ভারতের বাইরেও ভারতীয় বিপ্লবী ধারণা সম্পর্কে আলোচনা জোরদার হয়। আর দ্বিতীয়টি ঘটে বাঙালির পক্ষপাতদুষ্ট জাতি চেতনায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ যখন হাতুড়ির আঘাত করেন। তিনি দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদকে এক মহান জীবনাদর্শ হিসেবে স্থান দেন না। তাঁর ধারণায় অন্যান্য সকল আদর্শের মত দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদ কোন স্বতন্ত্র বস্তুনিষ্ঠ ভিত্তিতে বা যুক্তিবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আদর্শ নয়। তিনি সার্বজনীন মানবাধিকার, নারী পুরুষের সমানাধিকার, বিশ্বাসের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ইত্যাদির বিপরীতে দেশপ্রেম অথবা জাতীয়তাবাদের নেপথ্যে থাকা ক্ষমতা লাভের চক্রান্তকে চিনিয়ে দিতে চান। সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত আদর্শের বাইরে থাকা সেই জাতীয়তাবাদী আদর্শকে বাঙালির একটা অংশ যখন চিনছেন, তখন বাঙালির আর এক অংশ জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত হয়ে পারস্পরিক অবিশ্বাসের প্রতিবেশের প্রতি অনুরক্ত হন।
জাতীয়তাবাদের প্রকারভেদ ও বাঙালির অবস্থান
১৯০০ পরবর্তী বাংলা, প্রায় ১৫০ বছরের ইংরেজ প্রশাসনিক কাঠামোর অংশ। সেই বিদেশী আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক নীতি, জাতি হিসেবে বাংলার নিজস্ব ঘরানার বিকাশ পথে প্রবল বাধা হয়ে ওঠে। ফলে এই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ, বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের পথে সহায়ক হয়।
প্রসঙ্গত, এই অঞ্চলের মানুষের কারুশিল্প, বস্ত্রশিল্প, শিক্ষা এবং প্রশাসনিক পরিসরের যাবতীয় অর্জিত গরিমা, ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বকীয়তা রক্ষার তাগিদে বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ছিল প্রথমবারের বঙ্গভঙ্গের প্রতিরোধ। এই সময় আত্মোপলব্ধির সম্ভাবনায় তীব্র দেশাত্মবোধের জন্ম হয়, যার হাত ধরে বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। খুব স্বল্প সময়টুকুর মধ্যেই তা আবার বহুবিভক্তও হয়।
এই বিভক্তির প্রাথমিক কারণ ছিল জাতীয়তাবাদে ধর্মের প্রবেশ। নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাঁদের অধিকাংশই ধর্মের প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তাকে মানতেন বলেই যে এমনটি ঘটেছিল, তা নয়। অন্য অনেক কারণ ছিল। প্রথমত, সামাজিক জীবনে সংস্কৃতি, অভ্যাস ও অনুভূতির দিকগুলো ধর্মীয় আচার-ব্যবস্থার সঙ্গে মিশে থাকার কারণে বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে বিশ্বাসের সহজ পথ হয় সেই ধর্ম। দ্বিতীয়ত, ধর্মাশ্রয়ী মানুষ মুক্তির পথে কাজ করে যাওয়াকেই লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে। ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায়, ভরসায়, আর সাহসে সে সেটা করে চলে। কর্মফলের আশা সে করে না। এই ধর্মাশ্রয়ী হওয়ায়, পীড়নকারীর পরাজয়ের নিশ্চয়তায় পীড়িতের ঐক্য এখানে সহজেই গড়ে ওঠে। তৃতীয়ত, লৌকিক ভাষার তুলনায় ধর্মীয় ভাষা সব সময়েই সরল ও সহজবোধ্য। উচ্চশিক্ষিত নেতৃত্ব সেই সহজ পথটাই বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা মানতেন যে ধর্মের ভাব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং দ্রুত অনুপ্রাণিত আবেদনে মানুষের ঐক্য গড়ে তোলে। প্রসঙ্গত, শাসক ইংরেজ কেবল বিদেশী নয়, সে বিধর্মীও – এই বোধটা যে জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রাণ ভ্রমর ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ধর্ম ভারতবাসীর আত্মপরিচয় লাভে যে সাহায্য করে তা কংগ্রেস নেতৃত্ব জানতেন। তাঁরা কোথাও বুর্জোয়া অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের স্বপ্নকে স্বদেশী আন্দোলনের ধারায় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। না-বাচক বয়কট আর হ্যাঁ-বাচক স্বদেশীর সহাবস্থানে কংগ্রেস, বাঙালির জাতীয়তাবাদী ধারাকে ভারতীয় জাতিবাদের আলোকে দেখতে চায়। ফলে সেই সময়ের কংগ্রেসি জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় বাঙালি জাতি পরিচয়ের থেকে ভারতীয় পরিচয় প্রাথমিক হয়ে দাঁড়ায়। বেগম রোকেয়ার কথাই ধরুন। তিনি মুসলিম লিগের আন্দোলনের ধারাকে ভারতীয় রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রসার হিসেবে দেখছেন। অর্থাৎ ধর্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে রোকেয়া থাকছেন না। কংগ্রেসের নীতিকে সমর্থন করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি যা বলেন তাতে কোথাও বাঙালি জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাই না। “সুগৃহিণী” রচনায় তিনি লিখছেন, “আমরা শুধু হিন্দু বা মুসলমান কিম্বা পারসী বা খ্রীষ্টিয়ান অথবা বাঙালী, মাদ্রাজী, মাড়ওয়ারি বা পাঞ্জাবী নহি – আমরা ভারতবাসী। আমরা সর্বপ্রথম ভারতবাসী তারপর মুসলমান, শিখ বা আর কিছু” (কাদির, ১৯৭১ঃ ৩৮)।
রাজনৈতিক বয়ানে হিন্দু-মুসলমান প্রসঙ্গ তখন অনিবার্য হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যে রাখীবন্ধনের নেতৃত্ব দেন সেখানেও হিন্দু-মুসলমান প্রসঙ্গ হাজির থাকে। ফলে বাঙালির জাতীয়তাবাদ খণ্ডিত ধরনের জাতীয়তাবাদ হয়ে ওঠে। এই জাতীয়তাবাদে মুসলমানদের সহানুভূতি বা অংশীদারিত্ব কম ছিল। তারা তাদের ধর্ম, প্রথা ও আচার ভিত্তিক সনাতন জাতীয়তাবাদে সম্পৃক্ত ছিল। হিন্দু ভদ্রলোক এবং আশরাফ শ্রেণীর মুসলমানরা ধরেই নিয়েছিলেন যে বাঙালি বলতে হিন্দু এবং বাংলা বলতে হিন্দুর ভাষাকেই বোঝায়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির এই অনৈতিহাসিক বিস্তার ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের প্রত্যক্ষ বিষফল।
কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে ঘোরতর দ্বন্দ্ব স্বরাজ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতার পথে অধ্যাত্মবাদী জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়। শ্রী অরবিন্দ ঘোষের কথা ধরা যাক। তিনি (১৯৬০ঃ ২২-২৩) জাতীয়তাবাদকে কেবলমাত্র একটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখছেন না। দেশমাতাকে দেবীমাতার বেদিতে বসিয়ে তিনি পূজা করছেন। তিনি অনুধাবন করেন যে সনাতন ধর্মের মধ্যেই রাষ্ট্রবোধ লুকিয়ে থাকে। একজন জাতীয়তাবাদী সবসময়েই জাতীয়তাবাদের ধর্মকে মেনে চলবে। অরবিন্দের বিশ্বাসে তাই বাংলার জাতীয়তাবাদ বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে সনাতন হিন্দু ধর্মদর্শনের মধ্যেই বিরাজ করে। বাঙালি জাতি ঈশ্বরের প্রেরণা উপলব্ধি করতে পেরেছে বলেই বাঙালির প্রাণে জাতীয়তার বন্যা বয়।
সমাজে জাতের বিভাজন ও বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও হিন্দু জাতীয়তাবাদ পরিপূর্ণতা পেতে থাকে পরবর্তী সময় জুড়ে। কংগ্রেস যখন রাষ্ট্রের ভিত্তিতে জাতি গঠন চায়, হিন্দু জাতীয়তাবাদীগণ তখন ধর্মের ভিত্তিতে জাতি গড়তে চান। বাংলার বাইরে হিন্দুত্ববাদীদের কর্মকাণ্ড এবং ভারতবর্ষকে পিতৃভূমি বিবেচনার বাইরে বাংলায় জনসঙ্ঘ, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা তাদের কাজে সেই জাতীয়তাবাদী ধারাকে পুষ্টি যোগায়। দামোদর সাভারকার, কেশব বলীরাম হেডগেওয়ার, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, স্বামী প্রণবানন্দ, প্রমুখ সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যান। হিন্দু জাতি গঠনের কাজে ধর্ম এবং রাজনীতি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। বাঙালির খণ্ডিত জাতীয়তাবাদের একটা অংশ হিন্দু জাতীয়তাবাদের নামে মাথাচাড়া দেয়। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪১ – এই পর্বে হিন্দু সেবার নামে হিন্দু জাতীয়তাবাদের জোরালো রূপ বাংলায় দেখা যায় (সেনগুপ্ত, ২০১৬: ৩০-৩১)।
এই অধ্যাত্ববাদের নিরিখে বাংলার জাতীয়তাবাদের প্রাণপুরুষ হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দের কথা বলতে হয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদের বীজ তিনিই রোপণ করেছিলেন। ম্যাকিয়াভেলিকে যদি ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের পথিকৃৎ বলা হয়, তবে জাতীয়তাবাদ ও অধ্যাত্মবাদের সমন্বয়ে সাহিত্য রচনার যে নন্দনতত্ত্ব বাংলায় গড়ে ওঠে তাঁর জনক হলেন বিবেকানন্দ। ফলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রকল্পের সমালোচনা যেভাবে করা হয়, বিবেকানন্দের সমালোচনাও সেইভাবে করা সম্ভব (রায়, ২০১৭: ৮৯)।
সমালোচনার প্রয়োজনও আছে। কারণ বঙ্গভঙ্গের মধ্য দিয়েই বাংলায় আধুনিক সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের ইতিহাসটিরও শুরু হয়। হিন্দু-মুসলিম জিগির দুই জনসম্প্রদায়ের মধ্যে এক মারমুখী পরিস্থিতির জন্ম দেয়। হিন্দু ভদ্রলোকেরা বাংলার অখণ্ড সত্তার নামে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে, আর মুসলিম তার জনসম্প্রদায় কল্যাণের দোহাই দিয়ে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করে। মুসলমানদের পৃথক প্রতিনিধিত্বের দাবি থেকে দ্বিজাতি-তত্ত্বের প্রচার – সবই মুসলিম জাতীয়তাবাদী চেতনাকে চরম পর্যায়ে উন্নীত করার প্রয়াস। সুতরাং, স্বদেশী আন্দোলনের সাফল্য যদি বঙ্গভঙ্গ রদ করায় অর্জিত হয়, তাহলে এটাও মানতে হবে যে সাম্প্রদায়িকতার অগ্রযাত্রার পথকে প্রশস্ত করে দেওয়াই হল এই আন্দোলনের ব্যর্থতা। ১৯৩৫ ও ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলমানরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের পক্ষে ভোট দেয়, ভারতীয় বা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে নয়। ১৯৪৭র বাংলা ভাগের ফলে অন্তত আঞ্চলিক অর্থে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সকল সম্ভাবনাই তিরোহিত হয়।
মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্র-কাঠামো গঠনের কাজ সফল হয়। বাংলা ভাগের মধ্যে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্মের ফলে আপাতদৃষ্টিতে হিন্দু-মুসলিম – এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। কিন্তু অচিরেই পূর্ববাংলার মানুষ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারেন। আত্মপরিচয়ের চেতনা থেকে অনুপ্রেরণা ও সংসক্তি আহরণ করে একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদ যে জেগে ওঠে, সেই বাস্তবতা পূর্ববাংলার মানুষ অচিরেই টের পান। তাঁরা বোঝেন যে তাঁদের ইতিহাস, ভূগোল, জাতিসত্তা, ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও দৈনন্দিন জীবন অভিজ্ঞতার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠেনি। এখানে ধর্ম ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দুভাষী মুসলিমের সঙ্গে তাদের জীবন অভিজ্ঞতার কোনো সংস্রব নেই।
অন্যান্য সমন্বয়কারী উপাদান না থাকলে জাতিগঠনে কেবলমাত্র ধর্মের সুড়সুড়ি কোনো বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। এই ক্ষেত্রেও সেই দুর্বলতা প্রাথমিক কারণ হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এই দুই অঞ্চলের জনগণের বন্ধন আরও শক্তিশালী করার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ কিছুই নেওয়া হয় নি। তৃতীয়ত, পাকিস্তান সরকার তার উন্নয়ন, জাতীয় সংহতি ও কল্যাণকর কাজের সাহায্যে বাঙালির মনে জাতীয়তাবাদী উপাদান সৃষ্টিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। তার সদিচ্ছা সম্পর্কে বাঙালি মুসলিম সন্দিহান হন। চতুর্থ কারণটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব, দুই অংশের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্পদ ও চাকরির সুযোগ বণ্টনের বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে পূর্ববাংলার জনগণের তীব্র মতানৈক্য দেখা দেয়। রাষ্ট্রের সকল সাংগঠনিক স্তরে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম ছিল। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য বাঙালিদের মনঃকষ্টের কারণ হয়ে ওঠে। তারা তো একদিন এই জাতিগত আধিপত্য অবলুপ্তির জন্যই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিল, তাহলে! এই হতবাক পরিস্থিতি মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তি নাড়িয়ে দেয়। তাকে দ্বিখণ্ডিত করে।
সংঘটিত হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করে। এবং সেখানে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা বাঙালি জাতিসত্তার আদর্শগত কাঠামোকেও প্রভাবিত করে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাঙালির জাতীয়তাবাদের ফল হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম দেয়। বাঙালি তার রাষ্ট্রসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ধারণা বাঙালির জাতীয়তাবাদের দুটি অন্যতম উপাদানে পরিণত হয়। এই জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ‘বাঙালি’ শব্দটির ব্যবহার বাংলাদেশের ভেতর ও বাইরে কঠোরভাবে সমালোচিত হতে থাকে। বাংলাদেশের ভেতরে চাকমা উপজাতির জনগণ তাদের জাতিসত্তা কে বাঙ্গালী জাতিসত্তা থেকে পৃথক বিবেচনা করে। আর ভারতের বাঙালি তাকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলাই সঙ্গত বিবেচনা করেন। যদিও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। মতবাদের দিক থেকে প্রথমটিকে ইউরোপ প্রভাবিত এবং দ্বিতীয়টিকে ইসলাম প্রভাবিত বলে মনে করা হয়।
যাইহোক, মুসলিম জাতীয়তাবাদের কথা প্রসঙ্গে আমরা অনেকটা সময় এগিয়ে এসেছি। জাতীয়তাবাদের রূপগত প্রভেদের আলোচনায় আবার আমাদের একটু পিছনের দিকে ফিরে যেতে হবে। দেশপ্রেমিক আন্দোলনের স্রোতধারার ভেতর সাম্প্ৰদায়িকতার বিপজ্জনক চলাফেরার কথা আর একবার আমাদের স্মরণ করতে হবে। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে বাঙালি পরিচয়ের চিহ্ন হিসেবে ধর্মকে আর দেখা হয়নি। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ধাৰ্মিক মানুষ মৌলবাদী হতে পারেন। মৌলবাদের ভেতর সাম্প্রদায়িক উপাদান থাকে। কিন্তু সমাজতাত্ত্বিক ধারণায় ধর্মীয় মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতা এক নয়। এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। মৌলবাদের তুলনায় সাম্প্রদায়িকতা অনেক বেশী রাজনৈতিক। ফলে রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িক গুণের অধিকারী হয়ে উগ্র বিধ্বংসী মূর্তি ধারণ করে। বাঙালির জীবনে সেই অভিজ্ঞতা আছে।
জাতীয়তাবাদের সেই উগ্র রূপের সন্ধান রবীন্দ্রনাথ আগেই পেয়েছিলেন। তাই জাতীয়তাবাদীদের জন্যে তিনি জোরালো সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। ইউরোপীয় ধাঁচে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে তিনি দেখেন নি। তাঁর ধারণায় দেশপ্রেমের ধারা যদি নৈতিক অন্ধত্বে লালিত হয় তবে তার ফল হয় মারাত্মক। উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রথমে সাম্রাজ্যবাদ এবং পরে ফ্যাসিবাদের চেহারা নেয়। তখন আকস্মিক এবং হিংস্র মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় একটা জাতিকে। তাই তিনি জাতির বর্ণসংকর অবস্থানকে স্মরণ করান। স্বজাতির মধ্যে দিয়ে সর্বজাতিকে, আবার সর্বজাতির ভাতৃবোধে স্বজাতিকে সত্যরূপে পাওয়ার কথা তিনি বলেন। মনুষ্যত্বের মঙ্গল যে জাতীয়তাবাদীরা বিকিয়ে দিচ্ছেন, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ যে একদিন এই জাতীয়তাবাদীদের মঙ্গলকেও বিকিয়ে দেবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন (রবীন্দ্রনাথ, ১৯১৭)। চলনশীল মনে মানবজাতির সচেতন অগ্রগতির স্বপ্ন তিনি খোলা চোখেই দেখেন।
জাতীয়তাবাদীর অনুভূতিতে সচেতনার গুরুত্ব বঙ্গভঙ্গের পরবর্তী সময় থেকেই বাঙালি হাড়েহাড়ে বুঝেছে। এই অনুধাবনে বাঙালি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের একজন। হিন্দু এবং মুসলমান জাতীয়তাবাদের বাইরে দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদে বাঙালির সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামরিক জীবন প্রভাবিত হয়েছে। এই ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের নেপথ্যে যে বাঙালি ছিলেন তাঁদের মধ্যে কমিউনিস্টরা ছাড়াও সুভাষচন্দ্র বসুর কথা বলতে হয়। সুভাষচন্দ্রের কাছে জাতীয়তায় যুব আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল। সেই উদ্দেশ্য হল নতুন আদর্শে বাঙালি জাতিকে গড়ে তোলা। জাতিগঠনের কাজে তরুণ সমাজের এগিয়ে আসার কথা তিনি ভাবতেন। এই শক্তিই হল একটি জাতির জীবনীশক্তি। ফলে যুব আন্দোলনে রাষ্ট্রনীতির স্থান থাকবেই তেমনটাই তিনি মনে করতেন (বসু, ২০১৬: ১১৬-১১৭)।
ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের প্রসারে কমিউনিস্ট মেয়েদের ভূমিকা বাঙালি ভুলতে পারে না। ধর্মান্তরকরণ, অপহরণ, জবরদস্তি বিয়ে, লুটতরাজ, কালোবাজারি, দাঙ্গা, খুন ইত্যাদির বিরুদ্ধে নারী আন্দোলন গড়ে তোলায় কমিউনিস্ট মেয়েরা এগিয়ে আসে। ক্ষুধা ও নিরন্নদের হাহাকার থামানোর কাজে তারা মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। রেণু চক্রবর্তী (১৯৮০), সুধাংশু দাসগুপ্ত (১৯৮৯) প্রমুখ সেই কাজের প্রসঙ্গে বিশদে বর্ণনা করেছেন। কমিউনিস্টদের এই কাজ কি বাঙালির জাতীয়তাবোধে প্রভাব ফেলেছিল?
এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে বাংলার যুবক-যুবতীর যে অংশ ধর্মীয় হানাহানির বাইরে দাঁড়িয়ে জাতির সামগ্রিক বিকাশের লক্ষ্যে যখন সংঘবদ্ধ হতে চায় তখন তাতে সমস্যা থাকার কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল কিম্বা সুভাষচন্দ্র হয়ে রেণু চক্রবর্তী, তাঁরা সকলেই বাঙালির সেই ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের পক্ষে দাঁড়িয়েই জাতি গঠনের সদর্থক কাজটা করতে চেয়েছেন। উগ্র জাতীয়তাবোধের বিরুদ্ধেই তাঁদের সচেতন উপস্থিতি ছিল। তবে চিন-ভারত যুদ্ধের সময় বাঙালির এই ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের খণ্ডিত রূপ এপার বাংলায় আমরা দেখেছিলাম।
মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিপরীতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রসার এবং পরবর্তীতে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের উন্মেষ হল বাঙালির জীবনযাত্রার নানা বাঁক। এই বাঁকে কোথাও জাতীয়তাবাদের উপকথা আন্তর্জাতিকতাবাদের দরজায় কড়া নাড়ে। বিশ্বমানবতা বাড়ি আছো? এই বাঙালি মনে করে যে ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ বা জাতিকে প্রাধান্য দেওয়াটা যদি মহান আদর্শ বলে সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত হয় তাহলে জাতিকেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে উঠে মানব জাতির কল্যাণ এবং বিশ্বভ্রাতৃত্বের বোধকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাও মহান আদর্শ বলে বিবেচিত না হওয়ার কোন কারণ নেই।
শেষের কথা
নিরাসক্তভাবে জাতীয়তাবাদের সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক দৃষ্টিতে সব কিছু দেখার উপর জোর দেয় আন্তর্জাতিকতাবাদ। বাঙালির বিশ্ব-মানব অস্তিত্ব সেই আন্তর্জাতিকতাবাদকে মেনে নেয়। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদী মতবাদে আস্থা হারায়। বিশ্বমানবতার পক্ষ নেয় এই বাঙালি। দুই বাংলাতেই আজ আমরা এমন বাঙালির সন্ধান পাই। এপার বাংলার সেই বাঙালি অবশ্য আজ সহজেই দেশদ্রোহী আখ্যা পান।
ওপার বাংলায় আজকের বাঙালি যখন পাকিস্তান জেতার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পটকা ফাটান, এপার বাংলায় আজকের বাঙালি তখন ঐ ঘটনায় ধর্মটাকে উদাহরণ করে জনসম্মতি উৎপাদন করতে চান। ফলে ওপার বাংলায় আজকের বাঙালির মনে পড়ে না যে একাত্তরে তার ঘরের মা-বোনেরা পাকিস্তানিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিল, ঠিক তেমনই এপার বাংলায় আজকের বাঙালি ভুলে যায় যে তুর্ক-আফগান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষা বিকাশের পাশাপাশি আঞ্চলিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সুশাসনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলা ভাষা বিকাশের কাজে এই সহায়তা করা ছাড়াও তারা হিন্দু ও মুসলমানদের সামাজিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ঘটিয়ে ছিলেন।
এই বাঙালি অবশ্য সংখ্যায় বেশী নয়। তবু আছেন। আজও তারা ধর্মের জিগির তোলেন। এপার বাংলায় দুর্বল, অরক্ষিত হিন্দু বাঙালিকে তারা দেশপ্রেমে সংঘবদ্ধ করতে চান। এই অংশ মনে করেন যে সমাজ চেতনায় অনুমোদন ধর্মনিরপেক্ষ নয়। ন্যায় বিচারের হক তাই এই সংখ্যাগুরুর হাতে রক্ষিত থাকে। ওপার বাংলায় সেই অংশ তখন সাম্যের নীতিতে শ্লেষাত্মক অবস্থান নেয়। সহিষ্ণুতার প্রয়োজন এবং অসহিষ্ণুতা বর্জন সম্পর্কিত বিতর্কে তারা কেউই অংশ নিতে চান না। তাদের সামনে একটাই এজেন্ডা – তা হল মগজ ধোলাই। প্রয়োজনে যুদ্ধের ডঙ্কা বাজিয়ে দেশপ্রেমের জোয়ার আনতে চান তারা (চট্টোপাধ্যায় ও ঘোষ, ২০১৮)। তারা জাতি অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে অভিলাষী হন।
তারা কেউই মানেন না যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার অনুধাবন ক্ষমতা, যুক্তিনিষ্ঠতা এবং সৃজনশীলতার মাপকাঠিতে বিচার করা সম্ভব। এই সৃজনশীলতা উগ্র জাত্যাভিমানে বিকশিত হয় না। উগ্রতার কোন স্থান এখানে নেই। সংস্কৃতির শেকড় চিনে চলতে পারাতেই এখানে তার বন্ধনমুক্তি সম্ভব হয়। নৈর্ব্যক্তিক আত্মসচেতনতায় সে সর্বমানবের মধ্যে বাঙালির মেলবন্ধন ঘটাতে পারে। বিশ্বমানব রূপে এই বাঙালি জাতিবাদের তোয়াক্কা করে না। নষ্ট হয়ে যাওয়া সমাজবোধকে সে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলতে চায়। ফলে সমাজবোধের অভাবজনিত শূন্যতা ভরানোর জন্যে যে জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন একদিন তার হয়েছিল, আজ জাতির প্রতি অটুট ভালোবাসাতে ভরে ওঠা সমাজবোধের বৃত্তে সেটা গুরুত্বহীন। তাই এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে বিশ্বমানবের স্বরূপকে এক করে তুলতে সক্ষম।
সহায়ক গ্রন্থসমূহ :–
ইসলাম, সিরাজুল। (১৯৯৩)। বাংলাদেশের ইতিহাস ১৭০৪–১৯৭১, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড। কলকাতা: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ।
কাদির, আবদুর (সম্পা.), (১৯৭১)। রোকেয়া রচনাবলী। ঢাকা: বাংলা একাডেমী।
ঘোষ, প্রবোধ চন্দ্র। (১৯৪৯)। বাঙালী। কলিকাতা: সিটি কলেজ প্রকাশনী।
চক্রবর্তী, রেণু। (১৯৮০)। ভারতীয় নারী আন্দোলনে কমিউনিস্ট মেয়েরা। কলকাতা: মনীষা।
চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক এবং ঘোষ, বিশ্বজিৎ। (২০১৮)। “দ্যা সোশিওলজি অব টলারেন্স এন্ড লাইফ ইন ডেমোক্র্যাসি”, জার্নাল অব হিউম্যানিটিজ এন্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, নম্বর ১৫, সেপ্টেম্বর সংখ্যা। পাতা, ৩৬-৫২।
চট্টোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার। (১৯৪৫)। জাতি, সংস্কৃতি, ও সাহিত্য। কলিকাতা: মিত্র ও ঘোষ।
চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম। (২০০০)। বাঙলির জাতীয়তাবাদ। ঢাকা: দ্যা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ। (১৯১৭)। ন্যাশানালিজম। সানফ্রানসিসকো: দ্যা বুক ক্লাব অফ ক্যালিফোর্নিয়া।
দত্ত, ভূপেন্দ্রনাথ। (১৯৭৬)। বাঙলির ইতিহাস। কলকাতা: নবভারত পাবলিশার্স।
দত্ত, ভূপেন্দ্রনাথ। (১৯৮৩)। ভারতের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। কলকাতা: নবভারত পাবলিশার্স।
দাসগুপ্ত, সুধাংশু। (১৯৮৯)। আন্দামান জেল থেকে কমিউনিস্ট পার্টিতে। কলকাতা: পত্রভারতী।
দেশাই, অক্ষয় রমনলাল। (১৯৮৯)। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সাম্প্রতিক প্রবণতা। কলিকাতা: কে. পি. বাগচি।
দেশাই, অক্ষয় রমনলাল। (২০০০)। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সামাজিক পটভূমি। কলিকাতা: কে. পি. বাগচি।
বন্দ্যোপাধ্যায়, রাখালদাস। (১৯৯৫)। বাঙ্গালার ইতিহাস। কলিকাতা: দে’জ পাবলিশিং।
বসু, সুভাষচন্দ্র। (২০১৬)। তরুণের স্বপ্ন। কলকাতা: আনন্দ।
ভট্টাচার্য, অবিনাশচন্দ্র, (১৯৭৮)। ইয়োরোপে প্রথম ভারতীয় বিপ্লবের সাধনা। কলিকাতা: পপুলার লাইব্রেরী।
মজুমদার, রমেশচন্দ্র। (১৯৪৫)। বাংলাদেশের ইতিহাস। কলিকাতা: জেনারেল প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স।
মতিলাল, সঙ্ঘগুরু। (১৯৬০)। যুগপুরুষ শ্রীঅরবিন্দ। কলিকাতা: প্রবর্তক পাবলিশার্স।
মান্নান, মহম্মদ আবদুল। (২০১২)। বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ। ঢাকা: কথামেলা।
মুখোপাধ্যায়, রাধাকমল। (১৯৪০)। বাঙলা ও বাঙালী। কলিকাতা: রসচন্দ্র-সাহিত্য-সংসদ।
রায়, নীহাররঞ্জন। (১৯৪৯)। বাঙালীর ইতিহাস। কলিকাতা: দে’জ পাবলিশিং।
রায়, বিশ্বজিৎ (২০১৭)। “বিবেকানন্দের বাংলা সাহিত্য”, রামকুমার মুখোপাধ্যায় (সম্পা.), স্বামী বিবেকানন্দঃ সার্ধশতবর্ষের ভাবনা। কলিকাতাঃ সাহিত্য অকাদেমি। পাতা, ৮৫-৯০।
রায়, সমরেন। (১৯৬৬)। দ্যা রুটস অব বেঙ্গলি কালচার এন্ড আদার এসেস। কলকাতা: ইউরেকা পাবলিশার্স।
শাস্ত্রী, হরপ্রসাদ। (১৯১৫)। হরপ্রসাদ গ্রন্থাবলী। কলিকাতা: বসুমতী সাহিত্য মন্দির।
সরকার, যদুনাথ। (১৯৪৩)। হিস্ট্রি অব বেঙ্গল। খন্ড-২। দিল্লী: বি.আর. পাবলিশিং করপোরেশন।
সুর, অতুল। (১৯৭৭)। বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। কলিকাতা: জিজ্ঞাসা।
সুর, অতুল। (২০১২)। বাঙলা ও বাঙলীর বিবর্তন। কলিকাতা: সাহিত্যলোক।
সেন, দীনেশচন্দ্র (১৯৩৪)। বৃহৎ বঙ্গ, প্রথম খন্ড। কলিকাতা: ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি প্রেস।
সেন, দীনেশচন্দ্র (১৯৩৫)। বৃহৎ বঙ্গ, দ্বিতীয় খন্ড। কলিকাতা: ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি প্রেস।
সেনগুপ্ত, রন্তিদেব। (২০১৬)। “স্বামী প্রণবানন্দ এবং হিন্দু জাগরণ”, জিষ্ণু বসু ও সুকেশ মণ্ডল (সম্পা.), বাংলার মনীষীদের ভাবনায় হিন্দুত্ব। কলিকাতা: ভারতীয় সংস্কৃতি ট্রাস্ট। পাতা, ২০-৪৪।
[লেখক – এম. এ, পি এইচ. ডি, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, প্রফেসর নুরুল হাসান কলেজ, ফারাক্কা, মুর্শিদাবাদ]
Posted in: April 2019, Cover Story