ভণ্ড জাতীয়তা নয়, বহুত্ববাদিতাই আমাদের বাস্তব – অনীক রুদ্র

এখানে, এই উপমহাদেশে সময়ান্তরে সামাজিক ও ইতিহাসবেত্তারা নানা ভাবে বিবিধের মধ্যে মহামিলন দেখার প্রয়াস রেখে গেছেন। আদতে কি তাই? দেশ ভাগ-টাগ হয়ে আমাদের রাষ্ট্র গঠিত হল পণ্ডিতদের হাতে বহুত্ববাদিতায়। একদিন সমাজতন্ত্র শব্দটিও ঢুকিয়ে দেওয়া হল ছোট্ট করে। একদা-র চিন্তানায়করা নিয়ম ও শৃঙ্খলার নিগড়ে তাকে বেঁধে রাখলেন বহুত্ববাদিতায়। অতীতেও, আমাদের ভূগোলে, ‘এক জাতি, এক প্রাণে’র ভারতভূমি ছিল না। কাজেই বৃহত্তর অর্থে ‘জাতীয়তাবাদ’ নামের বস্তুটি এখানে তৈয়ারই হয়নি। এসব হচ্ছে ভণ্ড, রাজনৈতিক সুবিধাবাদী নেতাদের স্বপ্ন-বেসাতি। তাদের নিজেদের স্বার্থে রাজনীতিকরা যার সদ্ব্যবহার বা অপব্যবহার করে চলেছেন।

        শাসন-শৃঙ্খলায়, দেশ জয়ের স্বপ্নে, ক্ষমতার অলিগার্কিক রূপান্তরেও এদেশের বিভিন্ন সময়ের রাজা বা সম্রাটেরা, তাদের ব্যবসা আর ব্যক্তিস্বার্থে এমন রূপকথাগুলোই ছড়ানোর চেষ্টা করে গেছেন। বর্তমান কাল, তার চেয়ে বেশি কিছু না। হয়তো আধিভৌতিক বা কিছুটা আধি-দৈবিক। এখন যে মানচিত্রের খণ্ডে আমাদের বাস, সেখানে প্রায় ১৬০০ রকমের ভাষা ও উপভাষা। স্কেডিউলের অন্তর্ভুক্ত ভাষাগুলো হয়ত কিছুটা বাড়তি করুণা পায়। Linguistic Nation আমাদের এখানে একটি অসম্ভব প্রতিপাদ্য। সাধারণের সমাজ-অভ্যাসকে এখানে একটি ধর্মের বন্ধনে বা আওতায় আনার চেষ্টা করে চলেছেন অধুনার শাসকগোষ্ঠী। সুমের-আক্কাড, মেহেরগড়, সিন্ধু সভ্যতা, মিশরীয় বা আজটেক সভ্যতা প্রভৃতি ধ্বংসের পর, কালের কলকব্জায়, ইউরোপ আমেরিকা সহ অধুনা বাণিজ্যের উন্নততর দেশগুলিতেও যেসব কাণ্ডকারখানা চলছে বা চলেছে সেখানে, রক্ষিত ইতিহাসকে শ্বেত-বর্গের সন্ত্রাস, ধ্বংস করতেও এতটুকু কুণ্ঠিত নয়। যদিও আধুনিকতার সৌন্দর্য বা সনাতনী ধারণা (Age-old Culture) নিম্নস্তরের এই মানসিকতাকে অভ্যর্থনা জানায় না। এগুলো, বেশিরভাগটাই সাহেবি বদমাইশি। এই সাহেব-চাটা, ধর্ম বস্তুটির মধ্যে সযত্নে গুছিয়ে রাখা কুসংস্কারের জন্য, আমরাও ক্রমাগত পিছু হঠছি।

       জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ তুলে, অধুনান্তিক বিজ্ঞানের বিশ্বে, যারা উচ্চকিত হচ্ছেন, সেই শ্রেণি হচ্ছে, ভণ্ড ও ধান্দাবাজ। এমন কিছু আমাদের নেই বা ছিল না।

Facebook Comments

Leave a Reply