রঙ্গন রায়-এর কবিতা

মা

মা শুয়ে ঘুমোলে কপালে অনেক ভাঁজ পড়ে

দেখে মনে হয় আমি কতগুলো ভাঁজ হয়ে

পড়ে আছি ওখানে, ওখান থেকে বেরোলেই হয়তো সমান হবে

কপাল। মায়ের স্বপ্নের ভেতরঘুমের ভেতর

সংসার দেখার চেষ্টা করি। দেখা হয়না।

মায়ের সাথেই দেখা করে ফিরে আসি প্রতিবার

বিকেল বেলা, তোমাকে

ব্যালকনি থেকে ওইটুকু ধরা যায় যতটুকু হাতের তালু,

চেটোয় জমা জলে কিছু বাঁশপাতা মাছ লাফিয়ে

নেমে আসে করলায় – প্রতিধ্বনি ফেরে, পাথরে-কাপড়ে বিকেলবেলা।

তুমি বললে মাঝিমাল্লা হতে পারি,

নৌকার সন্ধানে ঘাট থেকে উঠে আসে পদধূলি সমন্বিত

কিংসাহেব। কেউ কেউ গল্প করে, আমাদের যেটুকু সময়

সেটুকুই তার … এইসব কালো জলে ফলি মাছ উঠে আসে

বর্ষায় কালো জল ঘোলা হয়ে স্বয়ং – থাকতে হলে সমস্ত

বস্তি মোহিনী হয়ে যায়, মাটির দাওয়ায় ছোটবেলার পশ্চিম

ভ্রমণ। ওদিকে রেসকোর্স আছে, দূরে আবছায়া হাইটেনশন

তার – যতটা উপরে তাকিয়েছো ততটাই নিচে নেমে দেখো

তিস্তা আজও স্থানু হয়ে আছে।

আঁধার লিপি

আজ আমরা কোনো কথা বলবোনা পরস্পরের সাথে

আজ শুধু স্বপ্ন দেখবো –

জীবন কেমন আমার দিকে নারীর মত এগিয়ে আসছে।

 আমি জীবনের সাথেও কথা বলবোনা আজ,

কিছু কিছু দিন শুধু চুপ করে থাকার …

আমার কুড়ি বছর বয়স হতে চললো

হয়তো আর কুড়ি বছর পর আমরা প্রেমিক থাকবোনা

বাবা হবো –

জীবন তখন নারীর মতোই দূরে সরে যাবে

শুধু স্বপ্ন দেখবো –

আমার প্রথম লেখা প্রেমপত্র তুমি দূরে বসে পড়ছো,

পাতার কোনে জমা শিশির বিন্দুর মত আমি টলমল করছি

নভেম্বর , এসো

দেখো অনেক দিন পর আমি ক্লিন শেভ করেছি

এখন আমি সভ্য ভীষণ, তুমি বলো এমন দিনেই আমাকে রোমান্টিক লাগে –

বারান্দায় বৃষ্টি শেষ হয়ে গেছে গত বর্ষায়, তবুও স্বপ্নে তুমি খুব বৃষ্টি দেখো

বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তোমার একটি পুরুষ দরকার, খুব মন খারাপ হলেও –

তোমার হাতে মশা কামড়ালে ফুলে ওঠা জায়গায় আঙুল দিয়ে  নক্সা আঁকো

আমি সত্যিই ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ি –

বান্ধবীরা আমায় কাপুরুষ বলে চলে যায়, আমি কালপুরুষ শুনি

কোমড়ে অসি নিয়ে তারকা খচিত এক দুর্দান্ত পুরুষ!

শিউলি ফুলের মত অক্টোবর ঝরে পড়ে,

তোমার শুকনো ঠোঁটের মত শীত আসে

এখনও তুমি প্রতিদিন শ্যাম্পু করবে, আর আমি গন্ধ খুঁজে পাবো আমার পাড়ায়!

এখনো তুমি শাসন করবে রাত করে বাড়ি ফিরলে, ঠান্ডা লাগালে –

আর আমি চিৎকার করে তোমায় ডাকলেই মায়ের মত বলবে, ‘এই তো আমি’

অথচ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ভালবাসার কথা বলা হলোনা কোনোদিন –

তুমি জানো, ভোরের প্রথম আলোর গন্ধ ফুঁটে উঠলেই

আমি ফিসফিস করি, গালে হাত বুলাই, তারপর ফের পাশ ফিরে শুয়ে পড়ি

[চারটি প্রিয় কবিতা। যদিও এভাবে যাচাই করা যায়না। আজ যা প্রিয় কাল তা বদলে যায়।]








Facebook Comments

Leave a Reply