প্রদীপ চক্রবর্তী-এর কবিতা

ভালুবাসা

এক

পাখিদ্বৈতের করঙ্গ ভরে নি।

ফিনকিপুরী নীল …

রক্তের দশ আলোকবর্ষ দূরে 

চরাচর প্ররোচিত মেলে,

ছায়াগুলো ফুটছে না। ছায়া সবার ভেতর।

ঢুকছে বেরুচ্ছে ফলের টিউমারে …

ঝরা চকিত যোনি তট। কাঠচেরা রোদে 

থিতোয় পৃথিবীর কিছু ভাজা মাছ …

পৃথিবীর কিছু মাছ কফির মতো গভীর।

প্রসবের জঠর রস 

কাকজ্যোৎসনার ওপারে মিলিয়ে যায় …

পাখি ও বিড়াল ভেঙে।

জিভ দাঁত লালা ও অশ্লেষা  

রোশনচৌকি খসে পড়ার আগে মাছ 

                      এই মতো অবয়ব 

                             এই মতো অপব্যবহার …

দুই

রেকাবি নেই আর ,

চাঁদ নেই

ছোটো ছোটো ট্রে 

জল তবে দেহাতি রোঁয়া,

শ্রোণী – বিষাদ 

পৃথিবী শয্যাশায়ী বাবার মতো…

সোঁদা গন্ধ।

ঠান্ডা দেশান্তরী অখিল।

জানলা মালকোষ চিহ্ন স্মারক 

শিশির গঞ্জ পেরিয়ে যাচ্ছে পূর্ব রেলওয়ে

খয়েরবাড়ি মৃদুভাষী অম্বুরী …

অল্পভাঁজ ফুল কেন ফোটে 

                               থেকে থেকে 

                                      সমূহসর্বস্বে,

পশুর প্রেয়সী দ্রুম

অনবসান জেগে থাকা 

পরিণতি স্পৃহা থেকে ধীরে 

হেলে সাপ জলে নামে।

নিলামের মেয়েটা কি নেবে ?

ব্যথাচূড়ো নীল শিশি , গানের রুবিয়া ভয়েল ?

পাণির নদী সাদা কালো 

পাণিনী যার মেয়ে …

(অপ্রকাশিত কবিতা | সদ্য লেখা …)

 শ্রীমতী তন্তুশ্রী 

বেনামী চকোলেট প্যারাট্রুপার থেকে রাশিরাশি  

আধো নীলানো খাবার রোববার 

মনের মনালি বর্ষণ 

আপন মনের অন্ধকারে ঢাকলো যারা 

ছুপানো বিকেল 

              সেই ঝিরি ঝিরি রোড

পুরোনো মুদিয়ালী  

পলাশের ব্যথায় ছুটি হ’য়ে যায় অফিস …

শূন্য থেকে লেবুরং মেঘের যত কাছাকাছি থাকছে 

তত তারা চিনতে পারছে না 

মণিকর্ণিকার সামান্য গাছে পরিযায়ী কত 

শীতের ফুরিয়ে যাওয়া 

বসে থাকতে থাকতে 

          একা হঠাৎ ভেতর ভিজে ওঠে 

টোপানো কতো শাড়ির গোপন অসুখে ,

মেঘলা সেরেছে বেলুনকর্মীদের জড়ুল …

(রচনাকাল – ১৯৯৬ / প্রকাশিত / কবিতার বই: রেনবো গ্যালারিনী)

শাঁখারী অবলাকান্ত 

যখন শীতের শুরু। হঠাৎ পাওয়া ছুটির পাতা উড়বে যখন। সফল প্রসাধনীখোলা হাতে ঘুমের খোসা লেগে। যে সব কথা বলছি মনে মনে। শীত কুয়াশা যারা আঁকতে পারে। কথার ভেতর।

হাতের মুঠোয়। রোজ একটু একটু বাসের শেষ পাদানিতে দাঁড়িয়ে …

জানলায় নীল নীলান্ত  হলো।  

                        এবং ইমনের গন্ধটা পহর …

পুরোনো মহল্লার আকাশে কড়িবর্গার চক্কর।  

বধির একজন পথ খুলছে।

রংগুলো  ছড়ানো ছিটোনো ভিখারিনী …

চৌমাথায় শুনতে পাচ্ছি। ডাকপিওন ভরদুপুরে বাদী ও বিবাদী। পাঁজরে  ক্ষত। নিরুপায় শব্দভাঙা খাগের কলম। ডেসিবেলে ডেসিবেলে ছ ‘টা পাঁচের লোকাল। ট্রেনের আগে তুমিও খুঁজে নাও আমাখা ভাত মাছের টুকরো বেগমবাহার শাড়িতে লুটানো এঁটো আর চোখপূর্ব ইস্তক শীতের দোষারোপ।

সমস্ত রাস্তা আজ বাই লেন …

এক অপুষ্ট গলির এপারে নরেশ দত্তের গ্যাসের দোকান। বুকভর্তি, বস্তুত তামাদি রুমাল। যার মৃদু ঝরা পাতাপল্লীর বাড়িগুলো। কেমন যেন ট্র্যাপিজের ঝুঁকি নিচ্ছে দূরের অলীক জাহাজে চেপে। দু ‘ একটা ডুবে যাওয়া দ্বীপের অতল |ছুঁয়ে অস্থায়ী ভাড়াটে শাঁখারী অবলাকান্ত।

নিজের হত্যাস্থলে নিজের রক্তাক্ত দাগ খুঁজে খুঁজে সেভাবেই চিহ্নিত অনেক হয়ে আছে …

(২০০৮ সালে লেখা। প্রকাশিত। ‘সুফি রং’ বই থেকে নেওয়া)  

নাম নেই এমন কিছু 

তার কানে একটা মেঘদুল ছিলো

তার

       কানে 

                মেঘ 

                         দুলছিলো …

টুকরো , একফোঁটা বৃষ্টি পড়লো হয়তো 

হয়তো, শুধু।

হয়তো, বস্তুর ছায়া 

                          তারও আগে আলো।

ক্রমেই বেরিয়ে আসছে 

                     অর্ধেক হয়তোর অসংখ্য ফানুস  

সাদা পাতার অন্ধকার আঁকাবাঁকা গলি।

ভুল আর আবর্জনার মধ্যে অর্জিত।

উচ্চতা উড়েই চলেছে অবদমনের মানে থেকে।

চোখের পাতা থেকে ভালোভাবে ঘুমিয়ে উঠছে চোখ …

একটু জল,

এই নিবিড় জলকণাহীন

মর্জিমাফিক মলিন অম্বর।

খুচরো এক লাইন থেকে 

সারাবছর ধরে টানা 

সহসা পুলকিত 

নীলাভ অন্ধকার …

                                রংরেজ …

তার মতো করে গেলাম ভেতর অব্দি।

কাল্পনিক মিথ্যেয় হাল্কা হয়ে গেলো 

                                তার বিরলতর মেঘদুল

একটা ছিলো হয়তো,

                                কখনো একটা …

                                                উদ্বৃত্ত …

[প্রকাশিত কবিতা। বইয়ের নাম, ‘নয় আঁকা শূন্য’ (যৌথ), প্রকাশ কাল –  ২০১৫]

Facebook Comments

Leave a Reply