অনুবাদ: সমান্তরাল প্রেম, অসমান্তরাল কবিতা – স্বপন রায়

বিকেলটা নেয়া যাক। প্রাক্‌সন্ধ্যার আলো অস্তে যাচ্ছে, কাফের ভেতরে কফির গন্ধ। কড়া সিগারেটের ধোঁয়া। ফ্যানের ব্লেড ভেঙে দিচ্ছে ধোঁয়ার বৃত্ত, ইতিবৃত্ত। ঝিম ধরা আলো। দু’জন বসে আছে। পুরুষ, সুপুরুষ। মহিলা, সুমহিলা। কফির কাপে মহিলার শব্দ পড়ছে, প্লেটে নিঃশব্দ হচ্ছে যাবতীয় ইচ্ছে, আকুতি। পুরুষ কিছু বলবে না? শুধু শুনে যাবে? এরা কি অনন্তকাল ধরে বসে আছে। মহিলা বলছে আর পুরুষ শুনছে। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে। অনেকক্ষণ এভাবেই। পুরুষ চলে যায়। মহিলা ‘চেন-স্মোকার’ পুরুষের ফেলে দেয়া সিগারেট তুলে নিয়ে পুরুষালি ঠোঁটের ছাপ খুঁজতে থাকে। পায় হয়ত। সেই ছাপের বিন্যাসে নিজের ঠোঁট লাগিয়ে টান দেয়….

এই পুরুষ স্বভাবতই একদিন লিখবে, ‘মিলোঁ হ্যায় খামোশি/বরষোঁ হ্যায় তনহাই..’( মাইল মাইল নৈশব্দ/ নিঃসঙ্গতা বহু বছরের)। আর মহিলাটি লিখবে:

 Me—a book in the attic.

 Maybe some covenant or hymnal.

 Or a chapter from the Kama Sutra,

or a spell for intimate afflictions.

But then it seems I am none of these.

(If I were, someone would have read me.)

 এমনকি সোনার চামচও রাতারাতি কাঁটার হতে পারে, যেমন হয়েছিল এক রাতে আব্দুল হাই-এর সঙ্গে। পাঞ্জাবের লুধিয়ানার করিমপুর অঞ্চলের জমিদার ফজল মহম্মদের ছেলে আব্দুল। ৮ মার্চ, ১৯২১-এ জন্ম, সোনার চামচ মুখে নিয়েই। অবিভক্ত পাঞ্জাব তখন। স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে। আসমুদ্রহিমাচল তোলপাড়। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যু থেকে কুড়ি বছর দূরে। ১৯২১-এর ২৩ এপ্রিল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করে ভারতে ফিরে এসেছেন। আব্দুল হাই তখন দেড় মাসের শিশু। ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ তখন সদ্য একুশে পা দেয়া যুবক। পা বাড়াচ্ছেন শিয়ালকোটের ‘মারে’ কলেজের দিকে। আব্দুল হাই-এর কোন অভাব ছিলনা। সমৃদ্ধ জমিদার ফজল মহম্মদ আব্দুলের তেরো বছর বয়সে আবার ‘নিকাহ’ করলেন।  ১৯৩৪ সাল। মা, সর্দার বেগম আলাদা হয়ে গেলেন স্বামী ফজলের থেকে। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটা কোনও সাধারণ ঘটনা ছিলনা।আব্দুলের জীবনে এবার দুনিয়াদারি নামল অভাবের হাত ধরে। আর ওই মা, সর্দার বেগম। আব্দুলের যা জন্মাবধি ছিল নিজস্ব:, এক রাতের ব্যবধানে সেই খেতিবাড়ি, জমিন-জায়দাদ পরের হয়ে গেল। সে ওই তেরো বছর বয়স থেকেই জন্মাবধি দেখা সবুজ খেত আর নীলচে আকাশের রঙগুলো ফিকে হয়ে যেতে দেখল। পাণ্ডুর হয়ে গেল তার বয়ঃসন্ধির জৈবিক উত্থান। পরে সেতো লিখবেই, ‘দেখা হ্যায় জিন্দেগি কো কুছ ইতনা করীব সে/চেহরে তামাম লগনে লগে হ্যায় অজীব সে..’

আর সেই মহিলা, অনন্য সৌন্দর্যের মালকিন এক তরুণ শায়রের আঁচে পুড়তে শুরু করল! সারাজীবন ওই ধিকি ধিকি আঁচের আদরে যে সে এরপর পরিণত হতে থাকবে, ওই সময়ের লাহোরে তা ভাববার অবকাশ ছিলনা। লাহোর ওয়াজ অন ফায়ার দেন! স্বাধীনতা আন্দোলন গোটা লাহোরকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছে। আর তরুণ সমাজের মননশীলতায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এক সদ্য কুড়ি পেরনো তরুণ শায়র! তার সদ্য প্রকাশিত কবিতার বই  ‘তলখিয়াঁ’  কবিতাপ্রেমীদের হাতে হাতে ঘুরছে। ‘তলখি’ হল কটুতা, উগ্রতা। ১৯৪০-এর স্বাধীনতাপিয়াসী বিপ্লবী তরুণের শায়েরিতে যা স্বাভাবিক ছিল! এই তরুণ শায়রই আব্দুল হাই। যে তার অনমনীয় মা সর্দার বেগমের ছায়ায় চরম দারিদ্র আর অবহেলার মধ্যেই ক্রমশ ঋজু হয়ে উঠেছে। শাসক বৃটিশদের  বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামনে থাকা আব্দুল হাই আকৃষ্ট হচ্ছে বামপন্থায়। সে তো লিখবেই:

 ‘অন্ধেরি শব মে ভি তামির-এ-আশিয়াঁ না রুকে

 নহি তো চিরাগ তো ক্যা বর্ক তো চমকতি হ্যায়

 আপ দৌলত কা তরাজু মে দিলোঁ কো তৌলেঁ

 হম মোহব্বত সে মোহব্বত কো সিলা দেতে হ্যায়’

(ঘন সঘন রাত্রি তো কি, বাসা বুনে যায় পাখিরা

প্রদীপ জ্বলেনি, তাতে কি? বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে

তুমি ওজন করছ হৃদয় কেমন অর্থের বিনিময়ে

আর আমি ভালবাসা দিয়ে দিচ্ছি তাকে যে ভালবাসাটুকু দিচ্ছে)

এবার সেই মহিলার কথা বলি। সেই সুমহিলা যে সিগারেটে ছাপ খুঁজেছিল এক সুপুরুষ ঠোঁটের। তবে এটাই তার একমাত্র খোঁজ ছিলনা। ‘আব্দুল হাই’-এর মতই এক ঘটনাবহুল সময়ে এই মহিলা তরুণী হয়ে উঠছিল। জন্ম ৩১ অগাস্ট ১৯১৯, পাঞ্জাবের ‘গুজরনওয়ালায়’। আব্দুলের চেয়ে দু’বছরের বড়। সর্দার কর্তার সিং আর রাজ বিবি’র একমাত্র সন্তান অমৃতা শিক্ষক পিতার সূত্রে ‘কবিতা’কে পেয়েছিল। কর্তার সিং ছিলেন কবি আর জীবনযাপনে ফকির। স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ উঠছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইওরোপের রাজনৈতিক পটভূমি পালটে গিয়েছে পুরোটাই। অটোমান, রাশিয়ান, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং জার্মান সাম্রাজ্য নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। লেনিনের নেতৃত্বে দুনিয়ার প্রথম সমাজবাদী রাষ্ট্র ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ গড়ে উঠেছে। এই  শিশুকন্যা যখন বয়ঃসন্ধি পেরোবে সেই চল্লিশের দশকে তখন সারা দুনিয়া জুড়ে চলবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ফ্যাসিবাদ নামের এক ভয়ঙ্কর বিপদের বিরুদ্ধে একজোট  হতে গিয়ে সারা দুনিয়ার রাজনৈতিক সমীকরণ পালটে যাবে। ১৯৩৬ সালে গড়ে ওঠা প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘ ভারতের অগ্রণী সাহিত্যিক, কবি, শিল্পী, নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কেন্দ্রীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করতে শুরু করবে। বলা বাহুল্য আব্দুল হাই এবং এই তরুণীও আকৃষ্ট হবে বামপন্থায় চালিত এই সংগঠনের দিকে। সময়টাই তখন এমন। ভালবাসায় জড়িয়ে থাকতো বিদ্রোহের চাপা আগুন।

 ‘ম্যায় চুপ শান্ত আউর অডোল খড়ি থি

 সির্ফ পাস বহতে সমুন্দর মে তুফান থা, ফির সমুন্দরকো খুদা জানে

 ক্যায়া খয়াল আয়া

 উসনে তুফান কি এক পোটলি সি বাঁধি

 মেরে হাথোঁ মে থমাই

 আউর হস কর কুছ দূর হো গয়া…’

 (‘আমি চুপচাপ, শান্ত, নিস্পন্দ দাঁড়িয়েছিলাম

 শুধু পাশে বইতে থাকা সমুদ্রে তুফান উঠেছিল, তারপর ঈশ্বর জানেন

 সমুদ্রের কি মনে হয়েছিল

 সে একটা পুঁটলি বাঁধল সেই তুফানের

 আমার হাতে দিল

 আর হেসে একটু দূরে চলে গেল…’)

 ১৯৪৪, প্রীতনগর নামের একটি আধা শহর, লাহোর আর দিল্লীর মাঝখানে। দেখা হল সিগারেটে সমাচ্ছন্ন উদাসীন  আব্দুল হাই আর অমৃতার। আব্দুল হাই তখনো সাহির লুধিয়ানভি হয় নি। পার্টিশনের পরে স্বেচ্ছায় পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে এসে আব্দুল হাই সাহির লুধিয়ানভি নাম নেয়, আর বিখ্যাত হতে থাকে। অমৃতা ইতিমধ্যেই জীবনের গরল চেখে নিয়েছে। এগারো বছর বয়সে মা’কে চিতার আগুনে পুড়তে দেখে অমৃতার ঈশ্বর বিশ্বাস নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ষোলো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় প্রীতম সিং নামের এক হোসিয়ারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। এই বিয়ে পরিণত হতে পারেনি। মানসিক সাযুজ্যই ছিলনা দুজনের। অমৃতার ছিল অফুরন্ত পিপাসা, কবিতার। সেক্স গৌণ ছিল বা গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছিল এই মানসিক খিদের অপ্রাপ্তি থেকে। অপ্রাপ্তিই ছিল অমৃতার প্রাপ্তি। সারাজীবন সে যাকে ভালবেসেছে তাকে পায়নি, আবার বয়সে অনেকটাই ছোট শিল্পী এবং কবি  ইমরোজকে বিয়ে করার পরেও ভুলতে পারেনি সাহিরকে। অন্যদিকে ইমরোজ ভালবাসার সব সীমার বাইরে এক অসীমতায় নিয়ে গিয়েছিল তার প্রেমকে। বাইকের পেছনে বসা অমৃতা ইমরোজের পিঠে নখের আঁচড় দিয়ে লিখে চলেছে সাহির সাহির….খেয়াল হতেই ইমরোজকে বলেছে, ম্যায় সাহিরকে নাম লিখ রহি থি, তুমহে খারাব লগা, নহি? ইমরোজ বাইক চালাতে চালাতেই বলেছিল, তুমহে লিখনে কি আদত হ্যায়, মুঝে সহনে কি….এ এক অদ্ভুত ত্রিকোণ, সাহির যেখানে মিসফিট। কারণ তার অসম্ভব মাতৃভক্তি তাকে কখনোই কোনও মহিলার প্রতি আসক্ত হতে দেয়নি। বহু নারী এসেছে, অমৃতা প্রথমও নয়, শেষও নয়। কিন্তু একমাত্র অমৃতাকেই সাহির চেয়েছিল স্ত্রীর মর্যাদা দিতে। মা’কে বলেওছিল, অমৃতা তুমহারি বহু বন সক্তি থি….সক্তি থি বা হতে পারতো এই দ্বিধাতেই থাকতে চাইত সাহির। এ সেই সময়ের কথা যখন ভারতে রোমান্টিক যুগের রমরমা আরম্ভ হচ্ছে। আর সাহির এক বিপ্লবী প্রেমিক, যার মনোজগতে ‘বিরহ’ই ছিল সেই ‘স্টিমুলান্ট’, যা তাকে দিয়ে অসাধারণ ‘শের’, ‘নজম’ আর ‘গীত’ লিখিয়ে নিত! সাহির অহরহ যেমন প্রেমে  পড়ত, একইভাবে প্রেমের ব্যর্থতাকে আহ্বান করত, নিজেকে নিপীড়ন করত আর লিখত! ১৯৬৪ সালে অমৃতা যখন ইমরোজের সঙ্গে মুম্বই আসে এবং দেখা করে সাহিরের সঙ্গে, সাহির যে নিজেকে কখনোই কমিট করেনি অমৃতার প্রেমে, ইমরোজকে দেখেই তার ‘বিরহ’ চাগাড় দেয়, সে লেখে:

 ‘মেহফিল সে উঠ যানে ওয়ালোঁ

 তুম লোগোঁ পর ক্যা ইলজাম

 তুম আবাদ ঘরো’কে বাসী

 ম্যায় আওয়ারা বদনাম…’

 (‘মেহফিল থেকে উঠে যাওয়া বন্ধুরা

 তোমাদের আর দোষ কি বলো

 তোমাদের আছে সুখী গৃহকোণ

 আর আমি আওয়ারা বদনাম’)

 এ এক অদ্ভুত মানসিকতা সাহিরের। অমৃতার ভালবাসা ছিল সাহির, একমাত্র সাহির। অমৃতার জীবনসঙ্গী ইমরোজ এটা জানতো, জেনেই আজীবন ভালবেসেছে অমৃতাকে। সাহির কিন্তু একনিষ্ঠ ছিলনা। ছটফট করতো অমৃতার জন্য, দেখা হলে কথার চেয়ে বেশি নীরবতাকে প্রশ্রয় দিত, একেবারে ‘অনেক কথা যাও যে বলি/কোনও কথা নাই বলি’র মত। আগেই বলেছি ১৯৪৪-এ প্রীতনগরে অমৃতা প্রথম দেখে সাহিরকে। সাহির তখনো আব্দুল হাই। পার্টিশনের পরে সাহির স্বেচ্ছায় মুসলিমপ্রধান পাকিস্তানের নাগরিকত্ব ত্যাগ ক’রে ভারতে চলে আসে। প্রথমে দিল্লিতে। তার শের-শায়েরি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। আব্দুল হাই সেইসময় থেকেই সাহির লুধিয়ানভি।তবে এর পেছনেও একটি গল্প আছে। সাহির লুধিয়ানার ভূমিপুত্র। স্থানীয় খালসা স্কুল থেকে পাশ করে এস.সি.ধাওয়ান সরকারী কলেজে ভর্তি হয়। এক বান্ধবীর সঙ্গে কলেজের প্রিন্সিপালের লনে বসে আড্ডা মারার জন্য সাহিরকে বহিষ্কৃত করা হয় কলেজ থেকে। এখন ভাবলে হাস্যকর মনে হলেও, তখনকার রক্ষণশীল ভারতবর্ষে গুরুতর অপরাধই ছিল, নইলে বহিষ্কার করা হবে কেন? এতে অবশ্য শাপে বর হয় সাহিরের। সে লাহোর চলে আসে। ১৯৪৩ সালে সাহির লাহোরের দয়াল সিং কলেজে পড়ার সময় উর্দু শায়র হিসেবে বিখ্যাত হতে শুরু করে। ১৯৪৫-এ ছাত্রাবস্থাতেই সাহিরের প্রথম বই ‘তলখিয়াঁ’ প্রকাশিত হয়। তবে তখনো সে আব্দুল হাই। তরুণ বিপ্লবী। কলেজের ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি। তার আগেই প্রীতনগরের সেই ‘মুশায়রা’। সাহির একুশ, অমৃতা তেইশ। দুজনেই প্রথম দেখায় পরস্পরের প্রতি আকর্ষিত, তবে ‘লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ হয়েছিল অমৃতার ক্ষেত্রেই। প্রীতনগরের ‘মুশায়রা’ চলাকালীন প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছিল। প্রীতনগর থেকে কিছুটা দূরে ‘লোপোকি’তে ফিরে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা ছিল। কবিরা হেঁটেই পথটুকু পেরোবার সিদ্ধান্ত নিল। অমৃতা সাহিরের থেকে সামান্য পিছিয়ে হাঁটছিল। নিজের আত্মজীবনী ‘রশিদি টিকেট’-এ অমৃতা লিখতে ভোলেনি তার প্রথম প্রেমের অঙ্কুরিত হওয়ার সময়টিকে। সাহিরের ছায়া পড়ছিল, আর সেই ছায়ার দিকেও অমৃতা তাকাচ্ছিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। সেদিনই বোধহয় নির্দিষ্ট হয়ে যায় যে অমৃতা এবার দীর্ঘ সময় ধরে সাহিরের ছায়ায় হেঁটে যাবে!

সাহিরের বিখ্যাত বা কুখ্যাত ইগো’র জন্যও বহু সম্পর্কের ইতি ঘটেছে। শচীনদেব বর্মণের সঙ্গেও সাহিরের যৌথতা শেষ হয় ওই ইগোর কারণে। শচীনদেব সঙ্গীত, ফুটবল আর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বাইরে অন্য কোনও কিছুরই সেভাবে খোঁজ রাখতেন না। শের শায়েরির তো নয়ই। সাহির’কে যেদিন প্রথম দেখেন তিনি জানতেনই না যে সাহির ওই সময়েই ভারত আর পাকিস্তানের বিখ্যাত শায়র। তিনি একটা সুর দিয়ে  তাঁর পূর্ববঙ্গীয় টানে বললেন, ইসমে লিখো, ক্যা নাম হ্যায় তুমহারা? সাহির নাম বললেন আর সঙ্গে সঙ্গেই ওই সুরের ওপর লিখে ফেললেন এমন একটি গান যা আজো জীবন্ত! ‘ঠান্ডি হাওয়ায়েঁ লহেরাকে আয়েঁ/রুত হ্যায় জঁওয়া, তুম হো ইঁহা, ক্যায়সে বুলায়েঁ’ সিনেমার নাম ‘নওজওয়ান’, ১৯৫১। শচীনদেব আর সাহিরের যুগলবন্দীতে একে একে ‘বাজী’, ‘দেবদাস’, ‘হাউস নাম্বার ৪৪’, ‘হাম দোনো’, ‘প্যাসা’ হিট করতে থাকে। হাম দোনো’র ‘অভি না যাও ছোড়কে/কে দিল অভি ভরা নহি’ অথবা ‘ম্যায় জিন্দেগিকা সাথ নিভাতা চলা গয়া/হর ফিক্র কো ধুয়েঁ পে উড়াতা চলা গয়া’, দেবদাসের ‘আন মিলো আন মিলো শাম সবেরে/ব্রজ মে অকেলি রাধে খোই খোই সে রে’ কিংবা ‘বাজী’র ‘তদবীর সে বিগড়ি হুই তসবীর বনা দে…’ লোকের মুখে মুখে ফিরেছে। এই গানগুলো  জনপ্রিয়তার চূড়ান্তে থাকার সময়েই গুরু দত্তের ‘প্যাসা’ রিলিজ করে। ১০ টা গান। ১০ টিই সুপার ডুপার হিট। সাহির বলে বসে, এই গানগুলো হিট করেছে শুধুমাত্র তার কথা’র জন্য, সুরের জন্য নয়। শচীনদেব মুখে কিছু বলেন নি তবে এরপরে আর কাজও করেন নি সাহিরের সঙ্গে। সাহির জোড় বেঁধেছে এরপরে ও.পি. নাইয়ার, রোশন, খৈয়াম, এমনকি বহুপরে আর.ডি.বর্মণের সঙ্গেও। ও.পি.নাইয়ারের সুরে রফি সাহেবের গাওয়া ‘টাঙ্গা সঙ’ ‘ইউঁ তো হমনে লাখ হসিঁ দেখে হ্যায়/তুমসা নহি দেখা’ ট্রেন্ড সেটিং গান হিসেবে এখনো বিখ্যাত। খৈয়ামের সুরে রফি সাহেবেরই গাওয়া ‘উও সুবাহ কভি তো আয়েগি’ সাহিরের কবিতা ‘উম্মীদ’-এর অংশ। পঞ্চমের সুরে ‘তেরা মুঝসে হ্যায় পহেলি কা নাতা কোই’(আ গলে লাগ যা) আর ‘ কিসকা রাস্তা দেখে, এয় দিল, এয় সৌদাই/ মিলোঁ হ্যায় খামোশি বরষোঁ হ্যায় তনহাই’ (জোশিলা) এখনো ছুঁয়ে যায়। কিন্তু এই বলিউডি চাকচিক্য এবং নিজের দুঃখবিলাসী মানসিকতার ভেতরেই আজীবন বেঁচেছিল এক ‘শায়র’। যে সব কিছু ছেড়ে দিতে পারে শুধু কবিতার জন্য। যে সারাজীবন শুধু কবিতাকেই ভালবেসে গেছে। তাহলে অমৃতা কোথায় তার জীবনে?  দ্বিতীয় ভালবাসা, আর কিছু নয়।। কেমন সে ভালবাসা? 

১. লাহোরে অমৃতাদের ঘরের সামনে একটা পান সিগারেটের দোকান ছিল। নিজের জীবনকথা ‘রশিদি টিকিটে’ অমৃতা নিজেই লিখেছে, ‘সাহির আমায় বলেছিল, সিগারেট মুখে নিয়ে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতো আমাদের জানলার দিকে তাকিয়ে। যদি একবার পর্দা সরে যায় আর দেখতে পায় আমায়!’

২. সুরকার জয়দেব গিয়েছেন সাহিরের বাড়ি। সাহির অসুস্থ। শুয়ে আছে। টেবলের উপরে একটা ময়লা কাপ। চায়ের অবশিষ্ট পড়ে আছে তলানিতে। জয়দেব কাপটা ধোয়ার জন্য হাতে নিতেই চিৎকার করে উঠল সাহির, ওই কাপ যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে। অমৃতা শেষ যেবার এসেছিল ওই কাপ থেকে চা খেয়েছিল। ওটা ধোয়া যাবেনা!

৩. একবার অমৃতাকে সাহির বলল, চলো হমলোগ কহিঁ চলে যাতেঁ হ্যায়

 -কাহাঁ?

 – চীন মে

 -কিঁউ চীন মে কিঁউ?

 – তা কি হম ওয়াপস না আ পায়ে

 বলার সময় সাহির ছিল সিরিয়াস। যেন অমৃতার সঙ্গে থাকার জন্য তাকে মুম্বই, ভারত, তার মায়ের আশ্রয় ছেড়ে বহুদূরে চলে যেতে হবে। অমৃতা একটু হেসেছিল। কিছু বলেনি।

 অমৃতার প্রথম প্রেম ছিল সাহির। যাকে সে চিঠিতে সম্বোধন করতো, ‘মেরা শায়র’, ‘মেরা খুদা’, ‘মেরা মেহেবুব’, ‘মেরা দেবতা’ হিসেবে। সাহির চলে যাওয়ার পরে ওর ফেলে যাওয়া সিগারেটে টান দিতে দিতে সাহিরের ঠোঁটের স্পর্শ নিত। কখনো আনমনে সে খাতার পাতায় লিখে ফেলতো ‘সাহির’ ‘সাহির’। কখনো ভাবত তার নতুন লেখাটা নিয়ে সাহির নিশ্চয় কিছু বলবে। কিছুই বলতো না সাহির। বললে যদি বন্ধুরা হাসাহাসি করে? অসুস্থ সাহিরকে দেখতে গেছে অমৃতা। সর্দি বসা সাহিরের খোলা বুকে ‘ভিক্স’ মালিশ করতে করতে ভেবেছে যদি সারাজীবন এভাবে সাহিরের সেবা করার সুযোগ পেত! বহুবছর পরে বয়সে অনেকটাই ছোট ইমরোজের প্রেমে অমৃতা তার ভালবাসার একটা ঠিকানা পেয়েছিল। ‘রশিদি টিকেট’-এ তাই সে লিখেছিল ইমরোজ আমার জীবনে মুক্তি নিয়ে এসেছে। দীর্ঘ জীবন এই অসম বয়েসী যুগল অবিচ্ছিন্ন কাটিয়েছে। আর সুদীর্ঘ জীবনে অমৃতা এই পু্রুষ শাসিত রক্ষণশীল সমাজের সব রকম বিধি নিষেধ হেলায় উড়িয়ে দিয়ে নিজের শর্তে বেঁচে থেকেছে। ভালবাসাকে অপরাধ ভাবেনি, আসক্তিকে পাপ ভাবেনি, অমৃতা প্রীতম যে কোনও মাপেই অসাধারণ। অনন্যা।

 অমৃতার বিখ্যাত কবিতা ‘সিগারেট’। সাহির ছিল  ‘চেন স্মোকার’। অমৃতা প্রীতমের কাছে সাহিরের উপস্থিতি আর সিগারেটের অনির্বাপিত ধোঁয়া সমার্থক ছিল। দু’জনের দীর্ঘ কিন্তু অমিলনান্তক ভালবাসায় একটা বড় জায়গা ছিল নীরবতার। দেখা হলে সাহির ধোঁয়া ওড়াত লাগাতার। অমৃতা কিছু বলত, একতরফাই প্রায়শ। দেখা খুব কমই হত তাদের। এমনকি পারস্পরিক টানের ক্ষেত্রেও অমৃতা যতটা কমিটেড ছিল, সাহির ছিল না।সাহির প্রেমে পড়ত যত্রতত্র। আর বলত, ব্যর্থ প্রেমই তাকে লেখা জুগিয়ে দেয়। যাইহোক, অমৃতার কাছে ‘সিগারেট’ ‘অবসেশন’ হয়ে উঠেছিল।পড়া যাক অমৃতার সিগারেট কবিতাটি।

 সিগারেট
…………………..
এই কথাগুলো আগুনের
যা তুমি বলেছিলে
আর এই জীবন থেকে নেয়া সিগারেট
যা তুমি কখনো জ্বালিয়েছিলে

তুমি ফুলকি মাত্র দিয়েছিলে
এই হৃদয় জ্বলতেই থাকল
সময় ধরল কলম
লিখতে শুরু করল কোনও হিসেব

চোদ্দ মিনিট হল
ওর খাতা দেখো
আসলে চোদ্দ বছর পেরিয়েছে
জিজ্ঞেস করো কলমটাকে

আমার এই শরীরে
তোমারই নিশ্বাস
দুনিয়া সাক্ষী আছে
ধোঁয়া শুধু ধোঁয়া বেরোনোর

সিগারেট বয়স জ্বালিয়ে দিয়েছে
আর আমার ভালবাসার মিষ্টি গন্ধ
কিছুটা তোমার নিশ্বাসে আর কিছুটা হাওয়ায়
মিশে গেছে

দেখো এই শেষ সিগারেটের টুকরো
এক্ষুনি ফেলে দাও
নইলে আমার ভালবাসার আঁচ
তোমার আঙুল ছুঁয়ে ফেলবে

আর কোনও দুঃখ নেই জীবনে
এবার আগুন সামলাও
ওই হাতের জন্য শুভেচ্ছাও রইল
সিগারেট ধরাও আবার

সাহিরের একটা গান, ‘চলো একবার ফিরসে আজনবি বন যায়েঁ হম দোনো’ খুবই বিখ্যাত। আর এই গানে তার বিরোধাভাসি মানসিকতা স্পষ্টত ধরা যায়। সাহির একমাত্রার ভালবাসায় থাকতে চাইতো না। বেরিয়ে যেত। অমৃতাকে ছেড়ে। কিছুদিন পরে আবার চক্ষে হারাতো অমৃতাকে। এই ঘটনা আর এই বিখ্যাত গানটিতে এসবই রয়ে গেছে, হয়ত দ্বিধাদীর্ণ সাহিরের প্রমাণপত্র হিসেবে!

১৯৬০ কালো টেলিফোনের সময় তখন। একদিন অমৃতা কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে ঘরেই বসে ছিল। এ সব সময়ে ও সাহিরের সঙ্গে কথা বলে। সাহিরের গলার আওয়াজ সব সময়েই অমৃতাকে সারিয়ে তোলে। গুছিয়ে দেয়।  আঙুল  যখন ডায়াল করতে উদ্যত, চোখে পড়ল কাগজের হেডলাইন। অবশেষে বিখ্যাত শায়র সাহির লুধিয়ানভি তার নতুন প্রেম খুঁজে পেয়েছে। প্রেমিকা প্লে-ব্যাক সিঙ্গার। নাম সুধা মালহোত্রা। আঙুল থেমে যায়। চাঁপার আঙুল। তাহলে সব শেষ ?সেই ১৯৪৪ এর এক ‘মুশায়ারা’য় যে অশরীরী ভালবাসা তাকে অবসর বুনে দিত, তার নিভৃত না পাওয়াগুলোকে অমূল্য করে তুলত, আজ সব শেষ হয়ে গেল তাহলে!
অমৃতা, অমৃতা প্রীতম এরকমই কিছু ভেবেছিল তখন আর সাহির  লিখেছিল এক আশ্চর্য প্রেমের কবিতা। অসমাপ্ত প্রেমের। পরে ১৯৬৩ সালেগুমরাহসিনেমায় এই কবিতাটিকে মহেন্দ্র কাপুর কণ্ঠ দেন। সুরকার ছিলেন, লক্ষীকান্তপ্যারেলাল।

‘চলো একবার ফিরসে আজনবী বন যায়েঁ হম দোনো

না ম্যায় তুম সে কোই উম্মীদ রক্ষুঁ দিলনওয়াজি কি
না তুম মেরি তরফ দেখো গলতআন্দাজ নজরোঁ সে
না মেরি দিল কি ধড়কন লড়খড়ায়ে মেরি বাতোঁ সে
না জাহির হো তুমহারে কসমাকাশ কা রাজ নজরোঁ সে
তুমহে ভি কোই উলঝন রোকতি হ্যায় পেশকদমি সে
মুঝে ভি লোগ কহতে হ্যায় কে ইয়ে জলওয়ে পরায়ে হ্যায়
মেরে হমরাহ ভি রুসওয়াইয়াঁ হ্যায় মেরি মাজি কি
তুমহারে সাথ ভি গুজরি হুই রাতোঁ কে সায়ে হ্যায়
তারুফ রোগ হো যায়ে তো উস কা ভুলনা বেহতর
তঅল্লুক বোঝ বন যায়ে তো উস কো তোড়না আচ্ছা
অফসানা জিসে আনজাম তক লানা না হো মুমকিন
উসে এক খুবসুরত মোড় দে কর ছোড়না আচ্ছা’
……………………………………….
(চলো হয়ে যাই আরো একবার অজানা আমরা পরস্পরের

না, আমি শুনবো না ভালবাসবার কথা অযথা কখনো তোমার মুখে
তুমি আড়চোখে দেখবে না আর, ফিরে দেখবে না তরুণ আমাকে
আমার হৃদয় লে উঠবে না শুধুমাত্র এই কথার কথায়
ঝামেলাপ্রবণ হবে না তোমার নিগূঢ়কালীন অবাক দেখা
তুমিও চাইছ আমাকে, শুধু আমাকেই,  বিভ্রমের আঁচে
আমার যা কিছু অন্য কারো, কথা কিন্তু অনেকে বলছে

সঙ্গী আমার, ফেলে আসা এই আমাকে নিয়ে কি যে বিব্রত
অথচ  সঙ্গে কেবলই চলেছে ফেলে আসা ছায়া গভীর রাতের
দু’ দুটো মন  অসুখী যখন, মন নিয়ে কী করবে বলো
কতদূর যাবে ভাঙা মন নিয়ে, অসুখ যখন অপরিমেয়
শেষ নেই যে গল্পের কোনও তাকে টেনে আর কীইবা হবে
সুন্দর কোনও বাঁকের প্রশ্নে তাকে রাখা যাক ছেড়ে দেয়া যাক

চলো হয়ে যাই আরো একবার অজানা আমরা পরস্পরের)

ব্যক্তিগত টানাপোড়েনে সাহির বা অমৃতার সৃজনশীলতা কিন্তু থেমে থাকেনি। সাহি্র মাত্র ৫৯ বছরে (১৯২১-১৯৮০) শেষ নিশ্বাস ফেলে দুনিয়াকে ‘আলবিদা’ জানায়। তার কবিতার বইগুলি হল, ‘আও কুছ খ্বাব বুনে’, ‘বচ্চে মনকে সচ্চে’, ‘গাতা যায়ে বনজারা’, ‘কুল্লিয়ত-এ-সাহির’, ‘মুখত্‌সর ফরহাং তলমিহত্‌-ও-মুস্তলিহত্‌’, ‘পরছাইয়াঁ, ‘তখলিয়াঁ’, ‘তনহাইয়াঁ’। সাহিরের অনেকটা সময় কেটেছে ফরমায়েশি ফিল্মি গানের গীতিকার হিসেবে। তবে এর বাইরেও ছিল তার নিজস্ব সৃজনের পরিসর, পড়া যাক সেই পরিসরের একটি লেখা:

বহত ঘুটন হ্যায় কোই সুরত-এ-হাল নিকলে

অগর সদা না উঠে কম সে কম ফুগাঁ নিকলে

(খুবই কষ্ট এখন, দমচাপা, কিছু তো হোক এই সময়ে

শব্দ ফুরিয়ে গেলে হোক হাহাকার এই সময়েই)

ফকির-এ-শহর কে তন পর লিবাস বাকি হ্যায়

আমীর-এ-শহর কে আরমাঁ অভি কহাঁ নিকলে

(এই গরীব শহরের গায়ে সামান্য পোশাক আছে এখনো

নগরপ্রধানের তো সবে কেনাকাটাই শুরু হল )

হকিকতেঁ হ্যায় সলামত তো খ্বাব বহুতেরে

মলাল কিঁউ হো কি কুছ খ্বাব রায়েগাঁ নিকলে

(সত্যিরা যদি ঠিক মত থাকে স্বপ্ন তখনই অজস্র হয়

দুঃখ কেন, স্বপ্নে যদিবা ভেজাল থাকে)

উধার ভি খাক উড়ি হ্যায় ইধর ভি খাক উড়ি

জাহাঁ জাহাঁ সে বাহারোঁ কা কারবাঁ নিকলে

(এদিকেও ধুলো ওদিকেও ধুলো উড়লো

বেরোল যখন যেদিকে যেমন বসন্ত-ক্যরাভান)

সিতম কে দৌর মে হম এহলে-এ-দিল হি কাম আয়ে

জবাঁ পে নাজ থি জিসকো উও বেজবাঁ নিকলে

(এই আতঙ্ক আর ভয়ের সময়ে ভালবাসা ছাড়া মুখ কে খুলবে

আর যারা ছিল কথার রাজা, রা শব্দ নেই, তারা চুপচাপ কিযে চুপচাপ)

অমৃতা প্রীতমের জনপ্রিয় ফিল্মি রচনায় কোনও আগ্রহ ছিল না। ৮৬ বছরের জীবনে অমৃতা লিখেছে অজস্র, লেখাই গন্তব্য ছিল যে! অমৃতার সব চাওয়া লেখার খাতাতেই পূর্ণ হত! অমৃতার বইগুলি হল, ‘পিঞ্জর’, ‘রশিদি টিকেট’, ‘ম্যায় তেনু ফির মিলুঙ্গি’, ‘কোরে কাগজ’, ‘পাঞ্জাবি পোয়েমস অফ অমৃতা প্রীতম’, ‘ইন দি টাইমস অফ লভ অ্যান্ড লংগিং’, ‘মেরে প্রিয় কহানিয়াঁ’, ‘অমৃতা প্রীতম কে অফসানে’, ‘খামোশি সে পহলে’, ‘ঊনচাস দিন’, ‘কাগজ তে ক্যানভাস’, ‘আক কে পত্তে’, ‘ডঃ দেব’, ‘অক্ষরোঁ কি আজামত’, ‘খতোঁ কি সফরনামা’, ‘নাগমণি’, ‘ ৬ রত্তন’, ‘ঈশক আল্লাহ, হক আল্লাহ’, ‘দ্য স্কেলিটন অ্যান্ড দ্য ম্যান’, ‘কম্মি আউর নন্দা’, ‘এক খালি জগাহ’, ‘এক থি সারা’, ‘কচ্চে রেশম সি লরাকি’, ‘ভিলেজ নং ৩৬’ ইত্যাদি। অমৃতা জ্ঞানপীঠ সহ দেশ বিদেশের বহু পুরষ্কারে ভূষিতা। পদ্মবিভূষণ অমৃতার (১৯১৯-২০০৫) সাহিত্যজীবন ছিল দীর্ঘ এবং বর্ণময়। আর তার প্রেম ছিল প্রেমাষ্পদের কাছে অমূল্য জ্বালানি যা সাহির  সহ্য করতে পারেনি আর ইমরোজ যা আত্মস্থ করে নিয়েছিল। অমৃতার একটি বিখ্যাত কবিতা পড়া যাক।

কুফ্র

…..

আজ হমনে এক দুনিয়া বেচি

আউর এক দিন খরিদ লিয়া

ম্যায়নে কুফ্র কি বাত কি

সপনো কা এক থান বুনা থা

এক গজ কাপড়া ফাড় লিয়া

আউর ওম্র কি চোলি সিল লি

আজ হমনে আসমান কে ঘড়ে সে

বাদল কা এক ঢকনা উতারা

আউর এক ঘুঁট চাঁদনি পি লি

ইয়ে জো এক ঘড়ি

ম্যায়নে মৌত সে উধার লিয়া

গীতোঁ সে উসকা দাম চুকা দেঙ্গে

…………..

অবিশ্বাস্য

…….

আজ আমি একটি দুনিয়া বেচে দিলাম

আর কিনে নিলাম একটি দিন

আমি এই অবিশ্বাস্য কথাটাই বলছি

স্বপ্নের এক থান কাপড় থেকে

আমি এক গজ কাপড় ছিঁড়ে

সেলাই করলাম জীবনভরের ‘চোলি’

আজ আমি আকাশের ঘড়া থেকে

একটা ঢাকনা নামিয়ে

এক ঢোঁক চাঁদনি পান করলাম

এই যে একটা মুহূর্ত

আমি ধার নিলাম মৃত্যুর থেকে

তার দাম আমি গানে গানে মিটিয়ে দেবো..

সাহির লুধিয়ানভি আর অমৃতা প্রীতম দু’জনেই একটা সময় নিয়ে চলে গেছে। রোমান্টিক সময়। এখনকার এই সময়ের শারীরিক পার্থিবতা থেকে দু’জনকে দেখলে মনে হয় যেন ভিন গ্রহের কাউকে দেখছি। দেখছি সুপুরুষ একটি লোক একটা অসমাপ্ত সিগারেট অ্যাশট্রেতে ফেলে চলে গেল আর একজন সুমহিলা সেই অসমাপ্ত সিগারেটে টান দিল, ঠোঁটের বিকল্প ভাবতে ভাবতে। এরপর বাইরে বৃষ্টি নেমেছিল কিনা আমরা জানিনা। কি হবে জেনে? আমরা বরং সাহিরের ভাষায় গেয়ে উঠি, হর ফিক্র কো ধুয়েঁ পে উড়াতা চলা গয়া, ম্যায় জিন্দেগি কা সাথ নিভাতা চলা গয়া…. 

Facebook Comments

Leave a Reply