তুষ্টি ভট্টাচার্য-এর কবিতা
রিয়ার ভিউ মিরর
১০)
দুটো মাছ সমুদ্রে সাঁতার কাটছে
দুটি পাখি আকাশে উড়ছে
হয়ত ওরা বন্ধু
হয়ত ওরা একে অন্যের ওপর বিরক্ত
ঝগড়া, মারামারি, হাসাহাসিও করে ওরা
আমি মাছ হয়ে যাওয়ার চেয়ে, পাখি হয়ে যাওয়ার থেকে
ছেনি হাতুড়ির জুটি পছন্দ করছি
একে অন্যকে মারবে, ঠুকবে আর তারপর
হেসে উঠবে উদাত্ত কণ্ঠে।
ওরা পৃথিবীর বলটাকে গড়িয়ে দেবে
বলটা ক্রমশ ছোট্ট হয়ে আসবে
ওরা এই মাটিকে, মাটিতে চড়তে থাকা ঘোড়াগুলোকে,
সমুদ্র, আকাশকে নিজের মুঠিতে নিয়ে আসবে,
গলিয়ে ঝালাই করে নিজেদের ইচ্ছেমত আকার দেবে,
পুরনো যন্ত্রপাতিও ভেঙে ফেলবে
নতুন রেঞ্জ দিয়ে মেঘের চেহারাটা বাঁকিয়ে
এক অশান্ত সমুদ্রকে নিয়ে পড়বে ওরা।
পৃথিবীকে একটা ঠাট্টার মত দেখাবে এরপর
বেল্ট দিয়ে বেঁধে রাখা কোন ভাঙাচোরা গাড়ির মত
রাতে শুয়ে ওরা ঝড়ের গল্প করবে
নুনের কাহিনী
মেশাবে হাওয়া ও যুদ্ধের সাথে।
পরিকল্পনা মাফিক ওদের জন্য
যন্ত্ররা ড্রাম বাজাবে চামড়ার জামাকাপড়ে
ওরা সমুদ্রের নীচে যাবে
তারাদের ওপরে ঘুরে বেড়াবে।
১১)
গতকাল এক শিশুর জন্য, একটা বোকার জন্য
আমি এক গুচ্ছ শব্দ হারিয়েছি
এক বৃদ্ধ বন্ধু আঙুল দিয়ে রোদ মুছে দিচ্ছে,
ঘড়িগুলোকে বাক্সবন্দী করে রেখে দিচ্ছে-
এমন এক বৃদ্ধের জন্য আজ আমায় একটি শব্দ নিয়েই থাকতে দাও
ফাঁকা যুদ্ধক্ষেত্রে এখন কিছু অতৃপ্ত আত্মার বাস
এই গ্রীষ্মের সন্ধের দমকা হাওয়ায়
কিছু বেগুনি রঙা ঘাসফুল দুলে উঠল –
যাদের শেকড় মর্চে পড়া বেয়নেটে জড়িয়ে গেছে
পুরনো কামানের চাকার ওপর হামাগুড়ি দিচ্ছে ঘাস
ছড়িয়ে থাকা ভাঙা একটা গাড়ি
কুকুরের চিৎকারে কেঁপে উঠল যেন!
দূর থেকে কুয়াশা ভেদ করা এক হেডলাইটের আলো
রাতের ঠাণ্ডা ও মিহি বৃষ্টিকে হলুদ করে চলে গেল।
মাথার যন্ত্রণায় কপাল চেপে ধরে দেখলাম
দেওয়ালের গায়ে এক ঘোলাটে ছায়াকে –
হেডলাইট নিজের পথে গেছে
ভেজা, স্যাঁতসেঁতে ঘর থেকে চলে গেছে ওরা
কেবল এক বৃদ্ধা অন্য রাস্তায় কাঁপতে কাঁপতে
দরজায় দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে হারিয়ে যাচ্ছে
গৃহহীন একা-
Related posts:
Posted in: January 2019, Poetry
দারুণ লেখা প্রিয় কবি!
আপনাকে প্রণাম কবিবরেষু
খুব ভাল লাগলো।
মেঘ, এবার তবে পানি দে
আচ্ছা এক ঘটি দিলে হবে না?
মেঘ তবে এবার পানি দে