তাপস কুমার দাস-এর কবিতা
বিদর্ভ
অভিজাত লালরঙা নামাবলি উত্তরীয় ধুতি ও চাদরে
শহুরে পুরোহিত একদিন আমাদের ভাঙ্গা ঘরে
এসেছিলো। প্রলম্বিত চুল ও দাড়ি, টাক মাথা ছুঁচলো শ্মশ্রূধারী
চকচকে কামানো পীত মুখ দীর্ঘতম পাঁচিলের ওপারে
ইত্যাকার হরেক বিদেশী দেবতার মূর্ত্তি নিয়ে এসেছিলো হাতে করে।
ভয়ে ও ভক্তিতে কম্পমান তাই, ত্রস্ত সমীহে সারি সারি বসে গেছি নীরব দাওয়ায়
পাপ হবে, এই ভয়ে কয়েক দশক ধোঁয়ানো ভাতের ঘোরে
বিপ্লব হবে শুধু এই ভেবে পা মুড়ে বসে অনর্গল নিয়ে গেছি
শান্তির জল। পাপ হবে! গার্গী, মহাপাপ! মাথা খসে পড়ে যাবে!
এই ভয়ে জানা হয়ে ওঠেনিকো পুরোহিত কোথা থেকে আসে
কেন আসে, কেন পুরোহিত হয়ে ওঠেনা কখনো সন্তান আমার
অথবা হলেও সে আমার সন্তান নয় আর,
কেউ নয় কিছু নয়। এ কৌম জুড়ে ঘোর বন্যা বয়ে যায়
প্রেতীনীর যোনির মতো হাঁ করে খরাক্লিষ্ট ফাটা জমি গিলে নেয়
আমার থালার ভাত – অবধারিত গতিপথ ফলিডল দড়ি
ইঁদুরের শব দাঁতে চেপে বীভৎস আছড়ে গিয়ে পড়ি – খা!খা!খা!
ভয়ঙ্কর আগুনের ঝাঁঝ লেগে পুড়ে গেছে ভয়
পুরোহিত এলো কি না এলো গ্রামে তাতে কার কী বা আসে যায়
আমার হৃদয় লাল থেকে আরো গাঢ় লাল
ফাটা গোড়ালি নিয়ে ঘরে ঘরে রক্তিম সকাল
রাস্তা থেকে রাস্তায় মেশে, চন্ড মহাকাল
পাঁচ থেকে তিরিশ হাজারে, প্রতিমুহূর্তে বাড়ে
রক্তবীজের ঝাড়, আমরাই ভবিতব্য! অন্ধকার অথবা সমূহ সকাল –
আমরাই বুঝে নেবো, ভাতে ফ্যান ধোঁয়ার গন্ধ
সোনালী গমের দানা আর যতো সুপ্রাচীন আরণ্যক অধিকার।
Posted in: January 2019, Poetry