সব্যসাচী সান্যাল-এর কবিতা
এসব কেউ লিখবেন না
১
কবিতা বাইসেক্সুয়াল। তার উপমাকে ভালো লাগে, রূপককেও। রূপক ভালো ছেলে তবে উপমা আমি পছন্দ করি না। সুজির উপমা হলে অন্য কথা। সুজি এক ব্রিটিশ মহিলা, ভারতীয় খাবার পছন্দ করেন–সুজি’কে উপমা দাও। চালে-ডালে মিলিয়ে যে উপমা তাকে পোঙ্গল বলে। পোঙ্গল একটি ফসল-কাটার তামিল উৎসবও বটে। পোঙ্গল শুনলে ক্যানো জানি বেতালের কথা মনে পড়ে। ফ্যান্টম। ফ্যান্টম, অপেরায় ভীতিউদ্রেককারী গান গায়। ওপরা (উইনফ্রে) -র ও ফ্যান্টম আছে। আর আছে পোলাপান একখান একখান, কচি তারা কথা শেখে নাই। ওরা কচি তারা, অর্থাৎ আইবুড়ো নক্ষত্র। দড়কচা মারেনি এখনো। এইসব কবিতার কথা। ছেঁদো কথা। একে বলে অ্যালিটেরাশেন। এ’সব কেউ লিখবেন না।
২
কবিতার বাড়ি শব্দদের পাড়ায়। শব্দ ভৌমিক। শব্দের ভূমির প্রয়োজন। চাষাবাদ, জবরদখল, বর্গাদারি। ভূমি ছাড়া শব্দ কী? জল আর আকাশই বা কী? জঙ্গল মে মোর নাচা কিসিনে-না দেখা। ওই যে সাড়ে চারশো বছর আগে ওলন্দাজ পর্তুগীজ ইস্পাহানি ব্রিটিশ রণতরীর প্ররোচনায় বিগ ব্যাং হল, শূন্যতা থেকে তৈরী হল বস্তু। ভূমির প্রয়োজনেই তো। দ্বিতীয় লিওপোল্ডের কঙ্গো ফ্রী স্টেট। তার রাবারবাগান। আইভরি। দেড় কোটি মানুষের গোঙ্গানি। পৃথিবী নামের এক ভূমিখন্ডের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা মহাশূন্যে পাতা টেলিস্কোপ দিয়ে সেই সব ধ্বনি দেখি, প্রতিধ্বনি দেখি। তার ফ্রিকোয়েন্সি, তরংদৈর্ঘ। গুমগুম শব্দে কান ভরে ওঠে। শুনে দেখো আমাদের সমস্ত গানে একটিই শব্দ বসানো –‘গুম’। কবিতার প্রতিবেশী উৎপ্রেক্ষা মৌলিক। নাকে নথ। চূড়োবাঁধা গোলাপী বেগনি চুল, কপালে রসকলি। পাড়ার ইশকুলে বাংলা পড়ায়। আর অলংকারের সাথে প্রেম করে। অলংকারকে চেনো না? অবভিয়াস নেহাত। সোনার দোকান। গলায় ভারি চেন। আফ্রিকান ক্রীতদাসদের পায়ের বেড়ি, গলার শেকল। অলঙ্কার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। উৎপ্রেক্ষা জানেও না, অলঙ্কার সমস্ত জাগরণে তার গলার দিকেই চেয়ে থাকে। ঘুমোতে ঘুমোতেও দেখে উৎপ্রেক্ষার কালো দীঘল নিরাবরণ গ্রীবার দিকে গুঁড়ি মেরে এগিয়ে যাচ্ছে অলংকার বণিকের পোষা বিছে হার।
৩
আমি বরং সেই মেয়েদের কথা ভাবি যারা স্বচ্ছ বসে থাকে কবিতার ভেতর
দূর থেকে তাদের কাপড়-কাচা মশলা-কোটার শব্দ। আর অর্থহীন গান,
স্মৃতির ভেতর শুকোতে দেয়া কাঁথাকম্বলে যা রোদ হয়ে লেগে থাকে,
রাতের চুলহার পাশে যে রোদ হয়ে বসে থাকে আর খুঁটে খুঁটে
বাজরার রুটি, একটু ভিন্ডিভাজা, সামান্য আচার
সাদা এক টানা নিস্তব্ধতার ভেতর
বাংলাভাষা যখন আমাকে ছেড়ে কলকাতা যায়
আমি তখন সেইসব মেয়েদের সাথে কথা বলি
জলের দিকে এগিয়ে যায় গানগুলো, মানুষ হয়ে উঠতে চায়
Posted in: January 2019, Poetry
Great! Suji-ke Upoma dao . Er pare kono katha hobe na,dur theke vese aasbe swachho meyeder vaaabna
Alankaar boniker posha biche haar _emon kalponake saatnori kurnish